রাশেদুল হাসান
মনজুর তাজিম। একাধারে কবি, নাট্যকার ও সংগঠক। কবিতার কোমল সবুজ ঘাসের মাঠে বিচরণ করলেও শক্ত হাতে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেন। সম্মুখ যুদ্ধে একটানা ৩ দিন জীবন বাজী রেখে লড়েছেন পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে। ১৯৭১ সালের এপ্রিলের প্রথম দিকে ফেনীর প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ খ্যাত সিও অফিস (বর্তমানে উপজেলা সদর) অবরোধ করেন। তৎকালিন ফেনী কলেজ ইউওটিসি’র ক্যাডেট হিসেবে পাওয়া থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে তৎকালিন এমপি খাজা আহাম্মদ, আবদুল মালেক, মোস্তফা আজিজ আহমেদ রনজু, এডভোকেট জাফরুল্লা খান, আবদুর রহীম, তৈাফিক আহমেদ (বর্তমানে যুগ্ম সচিব) নেতৃত্বে আরো ছিলেন ফেনী কলেজের ইউওটিসি’র তৎকালিন অধিনায়ক অধ্যাপক মুজিববর রহমান যিনি পরবর্তীকালে অনারারী ক্যাপ্টেন পদ লাভ করেন ও স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ফেনী কলেজের অধ্যক্ষ হন । তিনিসহ একদল মুক্তি পাগল মুক্তিযোদ্ধা সিও অফিস ঘেরাও করে। সিও অফিস অবরোধ কালে ঐ ভবনের দোতলা থেকে পাক বাহিনীর গুলি বর্ষণে তিন মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়। প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধারা একটু বিচলিত হলেও পরবর্তীতে সংঘবদ্ধ হয়ে মুক্তিযোদ্ধরা আরো সংগঠিত হয়ে পাক বাহিনীর উপর আক্রমন চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে ১জন ক্যাপ্টেনসহ ৯জন নিহত হয়।
রাজাকারদের ভয়ে এ মুক্তিযোদ্ধা কবি চট্টগ্রামে আতœগোপন করেন। আশ্রয় নেন চাকতাইয়ের এক ব্যবসায়ির কাছে। এরপর তার ব্যবসা দেখা শোনার ভার পড়ে কবির উপর। কিন্তু বাঙালির মুক্তির মিছিলে পিছিয়ে পডতে রাজি নন। খুঁজে বের করেন চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের একটি টিম। তাদের সাথে যুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন।
কবি মনজুর তাজিম সত্তরের দশকের লেখা লেখি শুরু করেন। জড়িয়ে পড়েন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে। যুদ্ধ পরবর্তী ফেনীতে প্রতিফলন নাট্য গোষ্ঠি, সংলাপ নাট্য গোষ্ঠি, সুবচন নাট্য দল, আলাপন আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রসহ অসংখ্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানেও ফেনীর শিল্প সাহিত্যের সংগঠনগুলোর সাথে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সম্পাদনা করতেন ডাহুক, চেতনার সূর্য ও শালফুলি বৃষ্টি। এবং ১৯৯২সাল থেকে আনন্দ ভৈরবী নামক মাসিক সম্পাদনা করছেন। উল্টো দেয়ালে চুনকাম, অচিন কবির পদাবলি, এখনো ট্রিগারে আগুন, বুক পকেটে ভালোবাসা নামক চারটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। পেয়েছেন কিশোর পত্র সাহিত্য পুরস্কার ও আবৃত্তি সংসদ সম্মাননা পদক।
যৌবনের প্রথম দিকে রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও পরবর্তীতে নিজেকে সরিয়ে নেন বুর্জোয়া।
ফেনীর স্বভাব কবি খ্যাত মনজুর তাজিম জম্ম গ্রহণ করেন ১৯৫২সালে ৮ ডিসেম্বর। পিতা ফারুক আহমদ ছিলেন পাকিস্তান সরকারের মুখ্য খাদ্য পরিদর্শক। ৪ ভাই, ৪ বোনের মধ্যে কবি জৈষ্ঠ। তার দুই ছেলে মনজুর আলিফ অপু একটি পাইভেট কোম্পানীতে চাকুরী করেন। অপর ছেলে মনজুর আসিফ তপু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ধানমন্ডি শাখায় কম্পিউটার ল্যাব ইনচার্জ হিসাবে কর্মরত আছেন।
উনষাট বয়সের জীবনে কবিতাই সব। আগামী দিনগুলো শিল্প সাহিত্যের সাথে কাটিয়ে দিতে চান। ফেনীকে শিল্প ও সাহিত্যের নগরী হিসেবে দেখতে চান।
১৪ এপ্রিল ২০১১ ( প্রকাশিত), দৈনিক ফেনীর সময়।