রাশেদুল হাসান
মানোবিক ও সামাজিক দায়বোধ থেকে অনেকেই সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে থাকেন। মনুষত্ববোধ সম্পন্ন কোন ব্যাক্তির পক্ষে এ দায় এড়ানো সম্ভব হয় না। মানোবিক ও সামাজিক দায়বোধ থেকে মানুষ, সমাজ ও দেশের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ শামসুল হুদা। শিক্ষাজীবন থেকে দেশের সামাজিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাথে ঔতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। অন্যায়, অত্যাচার ও নিপিড়নের ব্যাপারে তিনি সব সময় ছিলেন সোচ্চার। পাকিস্তান সরকারের আন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেয়া অসংখ্য অন্যায়, অত্যাচার ও নিপিড়নের জবাব দিয়েছিলেন কঠোর ভাষায়। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গেট থেকে গ্রেফতার হন তিনি। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর মুক্ত হন এ কৃর্তিমান ভাষা সৈানিক।
শামসুল হুদা ১৯৪৭ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে নোয়াখালী জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। পরবর্তিতে তিনি ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ডিগ্রি, করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি ও অস্ট্রেলিয়ার ইউনির্ভাসিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস্ থেকে এমএস ডিগ্রি লাভ করেন।
ছাত্রজীবনে গঠনমূলক ছাত্র রাজনীতির ও ভাষা আন্দোলনের সক্রিয়ভবে সাথে যুক্ত ছিলেন বিধায় তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের সেন্ট্রাল সুপেরিয়র সার্ভিস (সিএসএস) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাথে উত্তিন্ন হওয়ার পরও ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের অভিযোগ এনে পিএসসি সার্ভিস থেকে বঞ্চিত করা হয়। পরবর্তিতে পাকিস্তান সরকারের পুণঃবিবেচনায় ও অনুসতিক্রমে পাকিস্তান সেন্ট্রাল পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরিচালিত প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাথে পাশ করার পর সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেন। কর্মজীবনে শামসুল হুদা পাকিস্তান সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে করাচী ও ঢাকায় উচ্চ পদমর্যাদার প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ বেসরকারী বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয় এবং বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনে উচ্চ পদে অসীন থেকে ১৯৮৯ সালে সরকারী চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। সরকারী চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণের পর বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনে উলে¬খযোগ্য অবদান রাখেন। ১৯৯০ সালে পারাবত গ্রপের এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর এবং ১৯৯৯ সাল থেকে ইসলামী ইনন্সুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর পদে কর্মরত আছেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি দৈনিক ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সহ সম্পাদক হিসেবে সাংবাদিকতায় নিয়োজিত ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি কিছুদিন কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার বামনী হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।
শামসুল হুদা তার বর্ণিল জীবনে সরকারী বেসরকারী গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন ছাড়াও অসংখ্য সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনেরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘদিন তিনি ঢাকাস্থ কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। বর্তমানেও তিনি ঢাকাস্থ ফেনী সমিতি, বাংলাদেশ লায়নস্ ফাউন্ডেশনের আজীবন সদস্য ও ঢাকাস্থ লায়ন্স ক্লাবের সদস্য। এছাড়াও শামসুল হুদা নানা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমাজকল্যাণে কাজ করে চলেছেন।
বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক শামসুল হুদা ১৯৩২ সালের ১ ডিসেম্বর ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মরহুম মোঃ ইদ্রিস মিয়া একজন প্রখ্যাত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক। তিনি চিকিৎসা ক্ষেত্রে এতটা সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন যে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাধনা ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রখ্যাত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক অধ্যক্ষ যোগেশ চন্দ্র ঘোষ তাঁর চিকিৎসা পদ্ধতিতে মুগ্ধ হয়ে সাধনা ঔষধালয়ে বিভিন্ন সেমিনারে আমন্ত্রন জানাতেন। মা মরহুমা রহিমা খাতুন একজন গৃহিনী। এক ছেলে ও ছয় মেয়ের জনক শামসুল হুদা। ছেলে মেয়েরা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।
মানবকল্যাণে ব্রত শামসুল হুদা মানুষের মৌলিক চাহিদা পুরণের প্রতি লক্ষ্য রেখে সব সময় মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। শিক্ষা, সংস্কৃতির উন্নতির পাশাপাশি আগামীতেও দেশ মাটি ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাবেন।