somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাকে জন্ম দেয়া এক রাত্রী।

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাপের মত ঢেউগুলো তেড়ে আসছে, মনে হচ্ছে এই বুঝি ছোবল মারবে। ডিসকোভারীতে দেখা নীল সবুজ সাপের মত এই ঢেউয়ের চলনেও তেড়ে আসার তাড়না আছে। কিন্তু ছোবলের বদলে তারা এসে আমার পায়ে লুটোপুটি খায়। নিজেকে ক্ষমতাবান রাজা মনে হচ্ছে। এই মাঝরাত্রীতে আমি বোধহয় জলসা বসিয়েছি সমুদ্রপাড়ে। নর্তকী ঢেউগুলো আমার মনোরন্জনের জন্য নেচে যাচ্ছে। কত মানুষতো সাগরের দর্সিপনায় মারা যায়। এইতো সেদিন ট্রলার ঢুবে মারা গেল কয়েকজন জেলে, মাত্র কিছুদিন আগে ছেড়ে গেল আবিদ নামের তরতাজা এক গায়ক। কিন্তু ঠিক এখন আমি সমুদ্র শাষনে নেমেছি। আমি শাসকের আসনে বসে নর্তকীর নাচ দেখছি, যৌবনবতী সে নর্তকী তার পুরোটাই আমাকে উগড়ে দিচ্ছে, আমিও নিচ্ছি। আমার সামনে কেবল সমুদ্র নামক কুড়ি বছর বয়সী এক উত্তাল যৌবনবতী, আমি মাত্র জন্ম নেয়া এক তাগড়া যুবক। এই রাত্তীর আগে আমার কোন জীবন ছিল না, এর আগে কোন পৃথিবী আমি দেখিনি।



সময়ের রক্তে দ্রুতই বিষক্রিয়া ছড়িয়ে যাচ্ছিল। মস্তিস্কে বাসা বাঁধছিল ক্যারিয়ার নামক ক্যান্সার। হৃৎপিন্ডের মানচিত্রে বেঁচে থাকার বাজে আগ্রহ । যন্ত্রনার ব্যবচ্ছেদের ভাগসংখ্যা অসীমের চেয়ে খানিকটা বেশী। জীবনটা বাঁচার জন্য না হয়ে মৃত্যুর ভয়ে বেঁচে থাকা হয়ে যাচ্ছিল। না না আত্নহত্যা সে তো ভীতুদের কাজ কারবার। তবুও কেন যেন মনে হচ্ছিল মৃত্যূ ভয়ে কেবল মরতে পারছিলাম না। বন্ধুদের সাথে পাখনা মেলার সাহসটুকুও নেই, তবুও সবাই মিলে কেমন করে যেন সমুদ্র সন্ধান পেলাম, আমি পেলাম একটি রাত, একটি বেঁচে থাকার গান অথবা এক টুকরো বেঁচে থাকা। বন্ধুরা সবাই হৈ হল্লোড়ে ব্যাস্ত আমি আপন মনে জীবন বাঁধছি, কখনো জীবনটা এভাবে বাঁধিনি। বইয়ের পৃষ্ঠা ছিড়ে গেলে ছোটবেলায় মা লম্বা সুঁই দিয়ে, মোটা সুতা দিয়ে বাঁধাই করে দিত। এরপরও কিছুদিন পরও আমার বই ঠিকই ছিড়ে যেত। আজ সুযোগ পেয়ে জীবনের কিছু টুকরো জীবনকে বেঁধে ফেলার চেষ্টা করছি। হুঙ্কারের মত সমুদ্র গর্জন আর আমার পা ছুয়ে যাওয়া নর্তকী ঢেউ দিয়ে গাঁথুনী দিচ্ছি। আপন মনে কতকিছু একসাথে বাঁধাই করলাম। আমি জানি আমিও আমার বইয়ের মত কয়েকটা দিন পরই আবার ছিড়ে যাব। তবুও এই কিংবদন্তী রাতে ক্ষতি কি জীবনটাকে একটু সেলাই করতে। সুঁই সুতাতো আছেই।



যৌবনবতী ঢেউ নেচেই চলেছে। তাল দিচ্ছিল পরিস্কার জোছনার আলো। চাদেঁর আলো ঢেউকে নাকি অনেক মহিমান্বিত করেছে। আমি সেটা বুঝি না। বরাবরের মতই আমি বে-রোমান্টিক। বে-রোমান্টিক শব্দটা আমার না। কেউ কেউ বলে। অকাতরে টানতে থাকা সিগারেটের ধোঁয়া ছুড়ে দিচ্ছি আলোকজ্জল আকাশে। বিরাট ধোঁয়ার কারখানায় সিগারেটের ধোঁয়ার কোন জায়গা নেই। কেবল সিগারেটের টানটাই বুঝেছি,দেখেছি । আজ দেখলাম আমাকে দূষিত করা ধোঁয়াগুলোও আকাশে উড়তে পারে, অসীমের মাঝে হারাতে পারে। ঠিক নিশ্চিতভাবে নিজেকে সিগারেটের ধোঁয়া ভাবছি না। তবে জীবনটাকে ঠিক জীবন ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছে না।তবে আমিও ক্রমাগত অসীমের মাঝে হারিয়ে যাওয়া হতচ্ছাড়াদের একজন। কাতারে কাতারে মানুষের দলে আমি গেলেই কেবল কাতার পাই না। একাকীত্বের একটা ধোঁয়াটে বোধ কাতরাতে থাকে। তাই নিজের অসীম অন্ধকারকে এক ধরনের ভাগ্য ভাবছি।আসলে কি ভাববো আর কি ভাববো না কি যে সেটা এক সংশয়। ভাবনার চুরুটে সংশয়ের ফ্যাকাশে আগুন প্রতিনিয়তই জ্বলছে। সে সংশয়কে ছুড়ে ফেলে দিলাম দারুচিনির দ্বীপের নীল পানিতে এই মাঝ রাত্তিরে।চুরুট নিভিয়ে দিলাম। আমি জানি আমার সামনে আমার শাষিত সমুদ্র আছে, যৌবনবতী নর্তকী ঢেউ আছে, আমার পাইক পেয়াদা চাঁদ, জোছনা আছে।পিছনে কিচ্ছু নেই। আমার শুধু সামনে আছে পিছনে নেই। অতীত ফেলে এসেছি সমুদ্র সঙ্গমের আগিই।আমি জানি এ সঙ্গম শেষ হবে কিন্তু যতক্ষন হবে আমাকে কাঁপিয়ে দিয়ে যাবে।যতবার হবে ততবার এক একজন আমিকে আমি জন্ম দিব। এই রাতেই আরো হাজারবার জন্ম নিব।



খুব ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে হচ্ছে আমার বন্ধুদের আমি সেন্টমার্টিন যেতে চাইনি রীতিমত জোর করে তারা আমাকে নিয়ে গেছে। তাদের জন্য অন্তত একটি কিংবদন্তি রাত পেলাম।

সেন্টমার্টিন ঘুরে এসে লেখাটি লিখেছিলাম।।
লেখাটি আমার সব বন্ধুদের উৎসর্গ করলাম। যারা ছাড়া আসলেই অনেক কিছু চিন্তা করতে পারি না।
ছবি :ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১২ রাত ৩:৪৫
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×