somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পটকা ভাই: জাজ সাহেব রান

২১ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পটকা ভাইকে মোটামুটি সু-নাগরিক বলা যায়। রাস্তায় বেরুলেই সকল রকম ট্রাফিক আইন কানুন মেনে চলার চেষ্টা করেন। কেবল নিজেই মানেন তা নয়, সাথের বাহনটির ড্রাইভারকে মানতে বাধ্য করেন। সকাল সকাল পটকা ভাইয়ের ডেটিং পড়ে গেছে। বলা নেই কওয়া নেই প্রেমিকা হুট করে বলল “দেখা করতে চাই। কেবল ট্রাফিক সিগন্যাল নয় প্রেমিকার সকল সিগন্যালও তিনি মেনে চলেন। এখানে অবশ্য অন্য কাউকে মেনে চলতে উৎসাহ দেন না। পৃথিবীতে কিছু নিয়ম আছে। তার মধ্যে একটি অলিখিত নিয়ম হল যেদিন আপনার প্রেমিকা খুব করে আপনাকে চাইবে সেদিন রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম থাকবে। জুতার ফিতা ছিড়ে যাবে, রিকশা পাশ দিয়ে যাবার সময় টি-শার্ট ছিড়ে নিয়ে যাবে। পটকা ভাইয়ের দশা ব্যতিক্রম না। প্রেমিকা পইপই করে বলেছে “পটু আজ যদি তুমি দেরী করো তাহলে তোমার খবর আছে, তোমাকে নিয়ে ভাইয়ার অফিসে যাবো”
-অবশ্যই, আমি রকেটের বেগে পৌছে যাবো। তুমি কেবল হাতে আঙ্গুল গুনতে থাকো। গুনে গুনে চল্লিশ মিনিট।
-আমার হাতে আঙ্গুল চল্লিশটা?
-ওহো,তাহলে পাঁয়েরগুলাও গুনবে।
-বেশী কথা বলছো, পটু তুমি দ্রুত আসো। নইলে ঝামেলা হয়ে যাবে।
-ইয়ে আসতেছি, একটা আবদার ছিলো।
-বলো
-আদর করেও আমাকে পটু ডেকো না প্লিজ
কথা শুনে পটকা ভাইয়ের প্রেমিকা তেঁতে উঠলেন। উনার নাম রেখা। রেখায় রেখায় রাগ “কেন ডাকবো না, অবশ্যই ডাকবো। তুমি আমার পটু, আমার সুন্দর পটু,আমার আদরের পটু”

পটকা ভাই বের হলেন। প্রেমিকার সাথে দেখা করবার নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে উনার জুতোর তলা খুলে গেলো। বেশ পুরান হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে আশে পাশে মুচি পাওয়া যায় না। অতি প্রেমিকরা প্রেমিকার সাথে দেখা করবার কালে জুতোর তলা খুলে ফেলে দেন। কেউ কেউ জুতোর তলা পকেটেও ভরে ফেলতে পারে।পটকা ভাই দ্বিতীয় দলে। আপাতত উনার বাম পা বেশ হালকা লাগছে। মাটি থেকে যেন কত কাছে। জুতোর তলা না থাকলে পা মাটির কাছাকাছি থাকে। মালিবাগ থেকে শান্তিনগর যাওয়া তেমন বড় ব্যাপার না। কিন্তু সকাল সাড়ে ন’টায় যাওয়া আর ঝর্নার পানি বেয়ে উপরের উঠা একই কথা। রিকশাওয়ালা ভারী চাল্লু মাল। এ গলি ও গলি করে এগিয়ে যাচ্ছে। পটকা ভাই খুব করে খেয়াল রাখছেন রিকশাচালক কোন ট্রাফিক রুলস ভাঙ্গছে কিনা। হুট করে পটকা ভাই চেঁচিয়ে উঠলেন “এই মামা এই এই থামান...”

রিকশাওয়ালা কিছুটা চমকে গিয়ে রিকশা থামিয়ে দিলেন “জ্বে মামা কি হইছে? পটকা ভাই ভীষন রেগে গেলেন। এই মাত্র রিকশাচালক একটা নিয়ম অমান্য করেছে। তাকে এখন নিয়ম পালন করতে বাধ্য করা হবে।
-মামা তুমি সাইনবোর্ড খেয়াল করো নাই?
-কি সাইনবোর্ড?
-একটু আগে একটা সাইনবোর্ডে লেখা ছিলো
-আমি বাবা ফড়ালেখা পারিনা। কি লেখা আছিলো?
-“সামনেই গার্লস কলেজ, ধীরে চলুন”- অথচ আপনি রিকশা স্লো করেননি। জোরে টেনে চলে এসেছেন।

পটকা ভাইয়ের কথা শুনে রিকশাচালক হতভম্ব হয়ে গেলেন। কি বলে ঠাহর করতে পারছেন না। পটকা ভাই ধমকে উঠলেন “রিকশা ঘুরান মামা, আবার ঘুইরা আসেন ওইখান দিয়া। আস্তে চালাইবেন। আমাদের সবাইর ট্রাফিক রুলস মেনে চলা উচিত”
রিকশা পুনরায় সে পথ দিয়ে চলছে। বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে রিকশা নয় যেন এক অলস কচ্ছপ হেঁটে যাচ্ছে। পটকা ভাই খুশী আইন প্রনোয়নকারীদের উপর। আইন থেকে যদি ভালো কিছু হয় তবে আইনই ভালো। ফোন বেজে উঠলো-
-পটু তুমি কোথায়?
-আমি প্রায় চলে এসেছি। আর বইলো না রিকশাওয়ালারাতো আইন মাইনা চলে না। তাদের আইন শিখাইতে গিয়ে হুমড়ি খাবার অবস্থা। বাহ!
-কি বাহ?
-তেমন কিছু না

পটকা ভাইর আইন মেনে চলা গুণের পাশাপাশি আরেকটা গুণ আছে। তিনি ভীষন সরল মানুষ। পাশ দিয়ে সুন্দরী মেয়ে হেঁটে গেলে নিজের উচ্ছ্বাস লুকাতে পারেন না। এমনকি রেখা আপুর সাথে কথা বলবার সময়ও “বাহ” বলে উঠেন। রাস্তায় সুন্দরীদের নিয়ে পটকা ভাই এর থিউরী হল “শহরের সব সুন্দরীরা হচ্ছে রিয়েলিটি শো এর প্রতিযোগী, আর শহরের সব উঠতি যুবক হচ্ছে সে রিয়েলিটি শো এর বিচারক”। অতএব ভালো মন্দ বলাই যায়। তবে ভালো মন্দ নিন্দুকের মত বলে বিচারক থেকে বখাটে হয়ে যাওয়া তার কাছে এক ধরনের অপরাধ।

“দ্যাখো তুমি আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছো আমি বলছি না তা মিথ্যা, আমি বলছি এটা আংশিক সত্য” রাস্তায় রিয়েলিটি শো এর বিচারক এর কাজের বিরুদ্ধে রেখা আপুর অভিযোগে বিপক্ষে এভাবেই লড়ে যাচ্ছেন তিনি, দিনের পর দিন। আজও একই অবস্থা-
-দ্যাখো আমি যদি টের পাই, তুমি কোন মেয়ে দেখছো তবে চোখ তুলে ফেলবো। চোখ তুলে পাথর বসিয়ে দিবো।
-কিন্তু চোখ উপড়ে ফেললেই তুমি আমার চিন্তার জগৎ ধ্বংস করে দিতে পারবা না। মানুষের চিন্তার জগত চোখের জগৎ এর চেয়ে অনেক বড়, অনেক বড়।
আরেক চোট ঝগড়া। ঝগড়া করতে করতেই হবু সমন্দির অফিসে পৌছে গেলেন। বাম পা টা এখন আরও হালকা লাগছে। ডায়েটের কারনে এক পা শুকিয়ে যায় এমন খবর ইতিহাসে বোধহয় প্রথম। পটকা ভাই কাঁপছেন। তবে ভিতরের কনফিডেন্স ঠিকই আছে। লোকটা ত্যদড় কিসিমের। এখান বসে বসে অফিসারগিরি ফলাচ্ছে। রাস্তায় নেমে ঠিকই রিয়েলিটি শো এর বিচারক হয়ে যান। আসলে প্রত্যেক পুরুষই এক একজন রিয়েলিটি শো এর বিচারক। ছোট বোনের প্রেমিকের সামনেই কেবল তারা সৎ অতিমানব হয়ে যান।
-কতদিন হল?
কাঁপতে কাঁপতে পটকা ভাই উত্তর দিলেন “কিসের ভাইজান?
-তোমাদের সম্পর্কের
-জ্বি সাড়ে তিন বছর হল আমাদের বন্ধুত্বের!
-বন্ধুত্ব?
-জ্বি রেখা আমার খুব ভালো বন্ধু, ওর রেখায় রেখায় আমার নাম লেখা।
-কি বলছো এসব?
-জ্বি হ্যাঁ, আজকালতো মানুষ বিশ্বাসই করতে চায় না একটা ছেলে একটা মেয়ে ভালো বন্ধু হতে পারে। আমি আর রেখা তাদের বিশ্বাস করিয়ে ছাড়বো। একটা ছেলে একটা মেয়ে একসাথে থাকলে প্রেম ছাড়াও বন্ধুত্ব হতে পারে।
-তোমরা বন্ধু?
-জ্বি, গত বন্ধু দিবসে রেখা আমাকে উইশ করে টেক্সট পাঠিয়েছে “হ্যাপি ফ্রেন্ডশীপ ডে”। দেখবেন? মোবাইল বের করি।

এই বলে পটকা ভাই পকেট থেকে মোবাইল বের করতে উদ্যত হন। ভাইজান হাত ইশারা করে বের করতে না করলেন। রেখা আপুর কপালে ঘামের রেখা। ভাইজানও অপ্রস্তুত কি জিজ্ঞেস করবেন ভেবে পাচ্ছেন না বোধহয়। পটকা ভাই মোবাইল বের করে টেম্পল রান খেলতে শুরু করলেন। গেমটা ভালো বানিয়েছে। বড় হলে তিনিও একটা গেম বানাবেন। গেমের নাম “জাজ সাহেব রান”। এক প্রেমিক দৌড়াচ্ছে, যে রিয়েলিটি শো এর বিচারক। পিছনে দৌড়াচ্ছে তার প্রেমিকা। সামনে অনেকগুলা সুন্দরী মেয়ে। কেউ নায়িকা, কেউ মডেল, কেউ বালিকা। প্রেমিকার কাছে ধরা খেয়ে গেলেই গেম শেষ।
-তা আপনি এখন কি করতে চান?
-ইশ!
-কি হল?
-ধরা খেয়ে গেলাম।
-কে ধরলো
-এক হারামজাদা
-কেন ধরছে?
-আপনি ডাকছেন তাই। বাদ দেন।

এ পর্যায়ে ভাইজান কিছুটা রেগে যান। রেগে গিয়ে দু একটা কটু কথা বলার পর পটকা ভাইও মুখে কিছু চড়াও হন। হওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রেমিকার ভাই,বাবা তো আর না। পটকা ভাই জানেন যাকে তিনি ভাইজান ডাকছেন তিনিও ট্রাফিক আইন মেনে চলেন খুব। তিনিও প্রেম করেন চুটিয়ে। এখানে এসে খুব ভাব নেয়া হচ্ছে। বাক বিতন্ডার এক পর্যায়ে ভাইজান রেগেমেগে পটকা ভাইকে “গাধা” বলে সম্বোধন করে ফেলেন। ভাইজানের সত্য শুনে রেখা আপুর চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। কিন্তু পটকা ভাই নিজেকে সামলাতে পারলেন না। এ সত্যটা শুনলে তিনি প্রচন্ড রকম রেগে যান এবং হাত চালান। এখানেও ব্যাতিক্রম হলো না। ভাইজানের শরীরে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি চালাতে লাগলেন পটকা ভাই। এদিকে ভাইয়ের এমন মার খাওয়া দেখে রেখা আপু আর থাকতে পারলেন না।

পটকা ভাইয়ের শার্ট টেনে ধরে চিৎকার করতে থাকলেন ““প্লিজ পটু মেরো না, মেরো না পটু, প্লিজ পটু মেরো না”

পটকা ভাই সিরিজ
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৮
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×