সাধ-আহ্লাদ সবই আছে। আছে প্রবল ভালোবাসার অনুভূতি। ঘরবাঁধার স্বপ্নও দেখেন তারা। কিন্তু প্রকৃতির খেয়ালে তাদের রয়েছে সীমাবদ্ধতা। শাররীকভাবে মিলিত হলেও সন্তানের মুখ দেখতে পান না তারা। তবু ঘর পাতেন। একসঙ্গে সংসার করেন। কিন্তু তাদের সংসার, ঘরবাঁধা ভিন্ন রকমের।
তাদের মধ্যে আছে বৈচিত্র্যতা। প্রত্যেক হিজড়াই একজন পুরুষ সঙ্গী খোঁজেন। পুরুষ সঙ্গীরা তাদের বন্ধু হিসেবে পরিচিত। এই বন্ধুকে ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধে রাখতে চান তারা। হিজড়াদের কাছে এই বন্ধু ‘পারিক’ নামে পরিচিত। তাদের প্রেম, বিয়ে ও সংসার সম্পর্ক এবং জীবন হচ্ছে এক গোপন ট্র্যাজেডি। তাড়িখানায় রুপালির গান-নৃত্য মুগ্ধ করে তাকে। প্রেমে পড়ে যান আরমান।
আরমান বড় সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক নেতা।আর আরমানকে ভালোবেসে পেলেন রুপালি। রুপালি স্বপ্ন দেখেন আরমানকে নিয়ে। কিন্তু নিজের দুর্বলতার কথা ভেবে সাহস পান না। শেষ পর্যন্ত আরমান প্রস্তাব দিলে তিনি বলেন, ‘আমি তো হিজড়া’। আরমান প্রথমে বিশ্বাস করেন না। তার চির চেনা পৃথিবী যেন অচেনা মনে হয়,কিন্তু রুপালীকে ভুলে যাবে কিছুতে না।পরবর্তীতে হিজড়া জেনেই রুপালির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়েন। ছুটিয়ে প্রেম করেন তারা। তাদের মধ্যে একটা চুক্তি হয়। এই চুক্তিকে ‘বিয়ে’ বলেন হিজড়ারা। কয়েকজনকে সাক্ষী রেখে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে একটি চুক্তি করা হয়। আরমানের সব ভরণ পোষণও রুপালি বহন করেন।
রুপালি আরমানকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। তাকে কোনো কষ্ট করতে দেন না। তাকে নিয়ে দেশ-বিদেশে বেড়াতে গেছেন অনেকবার। তবে আরমান অন্য কোনো নারীর কাছে যাবেন তা সহ্য হয় না রুপালির। তাই ক্রমান্বয়ে অন্যের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে এনেছেন তাকে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই রুপালির সঙ্গেই বসবাস করেন আরমান।আবার বাড়িতেও টাকা পাঠান আরমান,সব টাকা দেন রুপালি। আরমনাকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় বসবাস করেন রুপালি।
হিজড়ারা টাকা নিয়ে বাসায় ফিরে তা তুলে দেন গুরুমার হাতে। বিনিময়ে গুরুমা থাকা, খাওয়া, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। গুরুমাই অভিভাবক। তবে ঠএকজন সঙ্গী বা পারিক খোঁজেন সবাই। প্রত্যেক হিজড়াই নিজেকে নারী ভাবতে পছন্দ করেন। এজন্য একজন পুরুষ সঙ্গী খোঁজেন।রুপালীর বান্ধবী জোছনার একজন পারিক আছে। ওই পারিক অনেক ভালো,শিক্ষিত। একজন পারিকের সঙ্গে একাধিক হিজড়ার সম্পর্ক হতে পারে না। যদি কখনো এরকম হয় তাহলে কঠিন বিচার করেন গুরুমা। এ অপরাধে ওই হিজড়ার জরিমানা হয় । অন্যদিকে পারিককেও ভর্ৎসনা করা হয়। (চলবে)।
(বিঃ দ্রঃ আগের লেখা এটি ২৫ পর্বের একটা গল্প । হিজড়াদের নিয়ে চাঁদগাজী ভাই পোষ্ট দেওয়ায় আমিও পোষ্ট দিলাম । তাদের নিয়ে কাজ করার সামন্য অভিজ্ঞতা হয়েছে তবে পরিবারের বাধার কারণে গোপনে করতে হয়। তিন চার বছর আমি হিজড়ার সাথে চলে এবং খোজ নিয়ে যা জেনেছি তা লিখে রাখলাম। )
ছবির এই তিনজন হিজড়া সমাজসেবা অধিদপ্তরে চাকরী করে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:২২