পকেটে আছে মাত্র দশ টাকা। এই
টাকা নিয়েই রাহাত
বেরিয়ে পরে রাস্তায়। খালার
বাসায় যাবে। হন্টনসহ
গাড়ীপথে যেতে ত্রিশ
টাকা লাগবে। কিন্তু রাহাতের
কাছে আছে ভাড়ার তিন ভাগের এক
ভাগ টাকা। ইচ্ছে করলেই ধার
নিতে পারত রুমমেট রাকিবের কাছ
থেকে। প্রায়ই রাহাত তার কাছ
থেকে ধার নেয়। কিন্তু আজ নিল না।
ভাবল আজ একটি নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন
করবে। তাই প্রথমেই কোন
ভিখারিকে টাকাটা দিয়ে দিতে
হবে। গাড়ীর হেল্পার
ভারা নিতে আসলে বলবে টাকা নাই।
যা সত্য তা। শার্ট, প্যান্ট পরা স্মার্ট
যুবক
একটি ছেলে বলবে ভারা
নাই,হেল্পার এই
কথাশুনে কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে
ভাবতেই
মজা লাগছে রাহাতের। হয়ত
ধমকা ধমকি করবে,অথবা ক্রুদ্ধ
দৃষ্টিতে তাকাবে।
যদি ধমকাধমকি করে তবে সে
হেল্পারের
চোখের দিকে শান্ত
ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকবে। মানুষ
কখনো কারো চোখের
দিকে তাকিয়ে খুব বেশি রাগ
করতে পারে না, ধীরে ধীরে রাগ
কমে যায়। ছোটবেলায় ওর বাবা যখন
ওকে রাগ করত, ও তখন ওর বাবার
চোখের দিকে তাকিয়ে থাকত।
বাবা বলত"আবার চোখের
দিকে তাকায়,নিচের
দিকে তাকা"। একটু পরেই ওর
বাবা হেসে ফেলত,বলত চোখের
দিকে তাকিয়ে থাকিস কেন।
যাহোক রাহাত বাসে উঠল।
খালি সিট পেল জানালার কাছে।
কিছুদূর যেতেই একটি মেয়ে ঐ
বাসে উঠল। মুখটি পরিচিত মনে হচ্ছে,
কিন্তু সে মনে করতে পারছে না।
অবশেষে মনে করার চেষ্টা বাদ দিল।
মেয়েটি দেখতে মাঝারি ধরনের
রুপবতী। প্রথম দেখায় অনেকের
ভালো নাও লাগতে পারে।
তবে রাহাতের ভালো লাগল। এ
ভাললাগা সাময়িক। এ যান্ত্রিক
শহুরে জীবনে তার প্রতিদিনই
কাউকে না কাউকে ভাল লাগে।
আচ্ছা এ ভাললাগা স্থায়ী হয়
না কেন? এ প্রশ্নের অনেক উত্তরই
রাহাতের মাথায় কিলবিল করে।
কোন উত্তরই যুতসই মনে হয় না।
তবে একটা উত্তর তার
মনে ধরে,"মানুষের মন হয়ত একজনের মধ্য
সীমাবদ্ধ হওয়ার জন্য না"। যদিও
এটি মনে ধরার মত কোন উত্তর না।
তারপরও তার কাছে এটাই ভাল
লাগে।
রাহাতের মনে আরো নতুন একটি আনন্দ
যোগ হয়। মেয়েটি পাশে বসেছে এ
জন্য না,সমবয়সী একটি মেয়ের
সামনে সমবয়সী একটি ছেলে বলবে
ভাড়া নাই ,
মেয়েটির এবং হেল্পারের দুইজনের
প্রতিক্রিয়া একসাথে দেখা যাবে।
ভাবতেই ভাল লাগে।
অাচ্ছা মেয়েটি যদি তার
ভাড়া দিয়ে দিতে চায়
তবে সে কী করবে? রাহাত
ভাবতে থাকে। একটু
পরে মেয়েটি রাহাতকে অবাক
করে দিয়ে বলে, রাহাত ভাই না!
কেমন আছেন? রাহাত বিস্ময়
লুকিয়ে রেখে বলে,
- ভাল নাই।
- কেন?
- ভাড়া নাই ত,তাই।
- ভাড়া নাই ! মানে কী?
- টাকা নাই ,তাই ভাড়া নাই।
মেয়েটি হাসে,
বলে "আপনিতো আচ্ছা পাগল"।
রাহাতের এই আচ্ছা পাগল কথাটি খুব
মনে ধরে। সে পাগল কিন্তু
আচ্ছা পাগল না। আচ্ছা পাগল
কথাটি খুব আদুরে টাইপ।
কাউকে বললে রাগ করবে না। কিন্তু
আচ্ছা বাদ দিয়ে শুধু পাগল বললে রাগ
করার সম্ভাবনা আছে।
মেয়েটি জিঙ্গেস করে ,
- কোথায় যাবেন?
- আন্টির বাসায়।
চট করে রাহাতের
মনে পরে মেয়েটির নাম শান্তা।
তার খালার প্রতিবেশি।প্রায়ই
আসে তার খালার বাসায়। প্রথম
পরিচয় হয় অদ্ভূতভাবে। প্রায় একবছর
আগের ঘটনা। একবছর পর শান্তার কত
পরিবর্তন। আগেরচেয়ে অনেক সুন্দর
হয়ে গেছে ও। একটু
মোটা হওয়াতে হয়ত সুন্দর লাগছে।
রাহাত প্রথম যেদিন তার খালার
বাসায় যায় সেদিনের ঘটনা।
চারতলার ডানের বাসায় কলিংবেল
টিপে।রোগামত অপরিচিত
একটি মেয়ে দরজা খোলে। রাহাত
অস্বস্থির মধ্য পরে যায়।
বলে,সরি...আমি..আসলে নতুন
তো...তা..ই....
মেয়েটি কথা থামিয়ে বলে ,কাকে
চাই?
রাহাত তার খালুর নাম বলে।
মেয়েটি বুঝতে পারে,সে রাহাতের
কথা তার খালার কাছ
থেকে শুনেছে।
- কততলায় বাসা?
- চারতলায়
- এটা কত তলা?
- আমিতো গুনে গুনেই উঠেছি,এটাই
মনে হয় চারতলা
- আপনি শিওর?
- না....মানে...
মেয়েটি খুব সুন্দর ভঙ্গিতে বলে, একটু
কষ্ট
করে নিচে গিয়ে গুনে গুনে আবার
চার তলায় উঠেন। মেয়েটির
মুখে চাপা হাসি। রাহাত তাই
করে এবং ঐ বাসায়ই এসে দেখে তার
খালা আর মেয়েটি হাসছে।
সে হাসির কারন
বুঝতে পারে এবং কিছুটা লজ্জা পায়।
আজ আবার নতুন করে সেই
পুরোনো হাসি রাহাতের
মনে এসে উকি দেয়।
রাহাতের আর অভিজ্ঞতা অর্জন হয়
না। শান্তা তার ভাড়া দিয়ে দেয়।
শান্তা তার গন্তব্যে আসার পর নামার
সময় বলে,আসি রাহাত ভাই
বিকেল পর্যন্ত বাসায় থাকলে দেখা
হবে।
রাহাত এক বছর আগের সেই হাসির মধ্যই
ঘুরপাক খায়। সে কোন কথা বলে না।
জানালা দিয়ে মাথা বের
করে শান্তাকে যতদূর দেখা যায়
তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ মনে হয় তার
মনটি একজনের মধ্য সীমাবদ্ধ
হয়ে গেছে। তবে কী তার মন শান্তার
মধ্য সীমাবদ্ধ? এ প্রশ্নের উত্তর
খুজতে খুজতে রাহাত ছুটে চলে...