ছাত্রলীগের পিছুটান: ব্লগারদের বড় অংশটিকে হারানোর পর আন্দোলনও স্হিমিত হতে থাকে। এই আন্দোলনে আগ্রহ হারাতে থাকে সবচেয়ে বৃহত্ শক্তি ছাত্রলীগ। কয়েকটি বৈঠকে আসেন নি ছাত্রলীগের প্রতিনিধি। এই অবস্হায় বাম ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে বসে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো তাঁদের মনঃপুত হয় নি। এসব সিদ্ধান্তের বেশ কিছু সরকারের বিপক্ষেও যায়।
২৬ মার্চের মধ্যে জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি পূরন না হওয়ায় সেদিনের সমাবেশে সরকারের সমালোচনা করে ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের ছয় দফা দাবি উপেক্ষা করে সরকার যে স্পর্ধা দেখিয়েছে তা নজিরবিহীন।’ এমন বক্তব্যে ছাত্রলীগ তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। ‘শেখ হাসিনার সরকার/ রাজাকারের পাহারাদার’ শ্লোগান নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা। ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি প্রথমবারের মত ছাত্রলীগ বর্জন করে।
এরপর আর গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেয় নি সরকারদলীয় এই ছাত্র সংগঠন। এই দূরত্ব ঘোচানোর উদ্যোগ কোনো পক্ষ থেকেই গ্রহণ করা হয় নি। যত দিন গেছে দূরত্ব তত বেড়েছে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা আসা বাদ দিলে সংগঠনের যে অংশটি অনলাইন এক্টিভিস্ট ছিল তারাও পিছু হটে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একটি বড় অংশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ছাত্রলীগের অংশটি, কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারাসহ সকল নেতাকর্মীই কার্যত সরে যান।
বাম সংগঠনগুলোর আগ্রহ হ্রাস: ছাত্রলীগ না থাকায় বাম ছাত্র সংগঠনগুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে থাকেন ইমরান এইচ সরকার। বাম সংগঠনগুলোর মধ্যে মহাজোটের অংশ আর মহাজোটের বাইরের অংশের টানাপোড়েনে তাদের ওপর একক আধিপত্য বিস্তার করতে থাকেন মুখপাত্র।
একটা সময়ের পর থেকে নিজের মতো করে কর্মসূচি ঘোষণা শুরু করেন তিনি। এসময় বড় কোনো কর্মসূচি আহ্বানের প্রয়োজনও পড়ে নি, বক্তব্য-সেমিনার নিয়ে থাকেন ইমরান। শেষ পর্যন্ত অবস্হা এমন দাঁড়ালো যে, নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ছাত্রনেতাদের মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে দায় সারতেন ইমরান।
তখন ক্ষুদে বার্তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে কেউ আসতেন, কেউ আসতেন না কর্মসূচিতে। কোনো কোনো ছাত্র সংগঠন তখনই সরে দাঁড়ায়।
হাতেগোনা সাধারণ মানুষের উপস্হিতি নিয়ে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে একই দিনে হরতাল দিয়ে বসে গণজাগরণ মঞ্চ। মহাজোটপন্থীদের পরামর্শ ছিল হরতাল না করার, কিন্তু সিপিবি-বাসদের ছাত্র সংগঠনের চাপের মুখে তারা হরতালের সিদ্ধান্তে থাকতে বাধ্য হয়। যুদ্ধাপরাধ বিচার আইন সংশোধনের পর ও কাদের মোল্লার ফাঁসির পর দুইবার গণজাগরণ মঞ্চ বন্ধ করে দেওয়ার কথা ওঠে। এ নিয়ে চাপ দিতে থাকেন মহাজোটপন্থী বামরা। কিন্তু ইমরান এইচ সরকার আন্দোলন থামিয়ে দেন নি।
বর্তমানে গণজাগরণ মঞ্চে থাকা ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গেও যে টানাপোড়েন চলছে তা বুঝা যায় তাঁদের কথায়ই। তাঁরা জানান, এক সময় বিবৃতি, সাক্ষাত্কার, টকশো ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে ইমরান এইচ সরকার যেতে থাকেন কিন্তু তারা যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন তার কোনোটাই গণজাগরণ মঞ্চের ছিল না।
তাঁরা জানান, বিশেষ দিবসগুলোকে উপলক্ষ করে ইমরান কর্মসূচি ঘোষণা করতে থাকেন। এসব দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এমনিতেই লোক সমাগম ঘটতো। যে কারণে এই শূন্যতাটা কখনোই স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয় নি
গণজাগরণ মঞ্চে গ্রুপিং কেন? পর্ব-১
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:১৯