somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাগজের ফেরিওয়ালা
যদি ভালো ইনসানই না হতে পারি, তবে এই রক্ত-মাংস-রূহ-মস্তিষ্কের মূল্য কী? আমি উড়ার স্বপ্ন দেখি না, উড়তে তো মাছিও পারে! আমি মাটির আদম, মাটিতেই মরতে চাই, আমার বুকে লাগিয়ে দিও কদম ফুলের গাছ।

মোস্তাকিমের পথে (পর্ব ৭)

১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“...ইবরাহীম (আ) কে তার বংশীয় লোকেরা বলল যে সূর্যের উপাসনা করো, চাঁদের উপাসনা করো, আগুনের উপাসনা করো, রাজার উপাসনা করো। ইবরাহীম (আ) সূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, চাঁদের দিকে তাকিয়ে দেখলেন। প্রতিদিন তা উদিত হয়, আবার ডুবে যায়। কখনও কখনও তো গ্রহণও লাগে। না, এরা আমার সৃষ্টিকর্তা হতে পারে না।আগুনের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, বাতাসের কাছে কত অসহায় সে। না, এ আমার সৃষ্টিকর্তা হতে পারে না। রাজার দিকে তাকিয়ে দেখলেন। অসুখ বিসুখে রাজা কাতর হয়, চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। আর মৃত্যুর থাবাকে সে পারেনা মোকাবেলা করতে। না, এরা কেউ আমার সৃষ্টিকর্তা নয়। আমার সৃষ্টিকর্তা তো তিনি, যিনি এ সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা। চাঁদ, সূর্য, আগুন, বাতাস, পানি, জন্ম, মৃত্যু সব, সবকিছুর মালিক যিনি, সেই রাজাধিরাজ, বাদশাহর বাদশাহ, সেই মহান অধিপতি।”
ফাতেমা বেগম থামলেন। বিনু শুনছিল তার কথা। সে বলল, আচ্ছা দাদি, মানুষ কেন শিরক করে?
ফাতেমা বেগম বললেন, মানুষ যে বড্ড বোকা। তাই সে সৃষ্টিকর্তাকে চিনতে ভুল করে। খোদাকে ভুলে সে পরে যায় দুনিয়াবি মোহে, সে লেগে যায় অন্য কাউকে খুশি করার আশে, সে লেগে যায় অন্য কাউকে সন্তুষ্ট করার আশে।
*****
কোন ড্রেসটা পড়ে যাবো? নীলটা, কালোটা, হলুদটা নাকি লালটা? কোনটা পড়ে গেলে আমাকে বেশী সুন্দর দেখাবে? লালটা পড়ি। উম, না। কালোটা ঠিক আছে। এটাই পড়ি। কিন্তু, ধ্যাত! আমার একটা ভালো ড্রেসও নেই। কালই মার্কেট যাবো। হলুদটা পড়ব? উম, ভালোই তো। তাইনা? আবিদ তো বলে আমি যে ড্রেসই পড়ি না কেন, তাতেই আমাকে সুন্দর দেখায়। কিন্তু ও তো আমার সব ব্যপারেই একটু বাড়িয়েই বলে। ফরহাদের কী আর আমাকে তেমন ভালো লাগবে? সুন্দর লাগবে? ওহ গড! নীলটা পড়ি। হুম, এটাই ভালো হবে, এটাই ফাইনাল। এমনভাবে সেজে যাবো, ফরহাদ চোখই ফেরাতে পারবে না। বোকার মতো হা করে তাকিয়ে থাকবে।
নুসরাত আয়নায় দাঁড়িয়ে ড্রেস সিলেক্ট করল। তারপর ড্রেস পরে এসে ভালো করে সেজে নিল। সে খুব এক্সাইটেড। আজ সে ফরহাদের সাথে লাঞ্চ করবে রেস্টুরেন্টে। সে রেডি হয়ে গাড়িতে বসল। আজ তার সবকিছু ভালো লাগছে, কোন কিছুই বোরিং নয়। আকাশ ভালো লাগছে, ইটের অট্টালিকাগুলো ভালো লাগছে, নর্দমায় ফেসে যাওয়া রিক্সা ভালো লাগছে, গার্লস স্কুলের দিকে ক্ষুধার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা বখাটেদের ভালো লাগছে, ট্রাফিক জ্যাম ভালো লাগছে, উচ্চস্বরে হর্ন বাজানো বাসকে ভালো লাগছে, সব ভালো লাগছে।
*****
নুসরাত তাকিয়ে আছে ফরহাদের দিকে।
নুসরাতঃ আপনি কী আনইজি ফিল করছেন?
ফরহাদঃ হ্যাঁ, একটু একটু। এর আগে কখনও কোন মেয়ের সাথে রেস্টুরেন্টে এভাবে আসিনি তো।
নুসরাতঃ বলেছিলাম না, আমি আপনার স্বভাব বদলে দেব।
ফরহাদঃ হ্যাঁ।
নুসরাতঃ এটা তো কেবল শুরু।
ফরহাদঃ তাই?
নুসরাতঃ আচ্ছা, আমাকে কেমন লাগছে?
ফরহাদঃ কেমন আবার লাগবে? ঠিকঠাক।
নুসরাতঃ ব্যস, এটুকুই।
ফরহাদঃ তো?
নুসরাতঃ আর কোন কমপ্লিমেন্ট করবেন না?
ফরহাদঃ আর কী বলব?
নুসরাতঃ আপনার হৃদয়ের কথা।
ফরহাদঃ এখানে সবাই এভাবে আমাদের দেখছে কেন?
নুসরাতঃ সবাই ভাবছে আমরা প্রেমিক প্রেমিকা।
ফরহাদ ঘাবড়ে গেল এবং ঢোক গিলল। নুসরাত হেসে দিল।
ফরহাদঃ আমার মনে হয়, আমাদের এখন এখান থেকে যাওয়া উচিত।
নুসরাতঃ এত তাড়াতাড়ি!
ফরহাদঃ আমার একটা কাজ আছে।
নুসরাতঃ আচ্ছা, তাহলে আবার কবে দেখা হবে?
ফরহাদঃ আবার দেখা করতে হবে?
নুসরাতঃ অবশ্যই। আপনি আমার ভার্সিটি আসবেন। আপনাকে একটা জিনিস দেখাবো।
ফরহাদঃ কী জিনিস?
নুসরাতঃ সেটা গেলেই দেখতে পারবেন।
ফরহাদঃ সারপ্রাইজ?
নুসরাতঃ হুম, সারপ্রাইজ।
*****
নুসরাত তার দাদীর রুমে এলো।
নুসরাতঃ দিদা, কী করছ?
ফাতেমা বেগমঃ কিছু না, আয়, ভেতরে আয়।
নুসরাত ভেতরে এলো।
ফাতেমা বেগমঃ কী বলবি?
নুসরাতঃ আচ্ছা দিদা, তুমি কাউকে ভালবেসেছ কখনও?
ফাতেমা বেগম হাসলেন, তারপর বললেন, হ্যাঁ, ভালবেসেছি।
নুসরাত বলল, কাকে বেশী ভালবেসেছ? বড় দাদাকে নাকি ছোট দাদাকে?
ফাতেমা বেগমঃ তোর বড় দাদাকে।
নুসরাতঃ তাহলে দ্বিতীয় বিয়ে কেন করলে বড় দাদার মৃত্যুর পর?
ফাতেমা বেগমঃ তোর বড় দাদা আর আমার কোন সন্তান ছিল না। তার মৃত্যুর পর আমি ভীষণ একা হয়ে যাই, নিঃসঙ্গ হয়ে যাই। একটা নারীর জন্য সারাজীবন একা থাকাটা খুব কষ্টের। নারী তো নদীর মতো হয়, সে যেভাবেই বয়ে যাক, তাকে সমুদ্র খুঁজে নিতে হয়। নইলে এই পৃথিবী তাকে নানা অপবাদে অভিযুক্ত করে।
নুসরাতঃ তুমি কী বিয়ের পর বড় দাদাকে ভুলতে পেরেছিলে?
ফাতেমা বেগমঃ না, আমি কখনও তাকে ভুলতে পারিনি।
নুসরাতঃ তবে ছোট দাদার সাথে তোমার বনিবনা হলো কী করে? কখনও ঝগড়া হয়নি এটা নিয়ে?
ফাতেমা বেগমঃ তোর ছোট দাদা আমাকে খুব ভালবাসতেন। সবসময় সব সম্পর্কের স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে এটা জরুরী নয় যে তুই তাকে কতটা ভালোবাসিস, বড়ং মাঝে মাঝে এটাও জরুরী যে সে তোকে কতটা ভালোবাসে। তোর ছোট দাদা আমাকে এতটাই ভালবাসত যে কখনও তোর বড় দাদার অভাব আমাকে বুঝতে দেয়নি।
নুসরাত তার দাদীর কোলে মাথা রাখল। তারপর বলল, মন এক আজব শহর, দিদা। এখানে কখন কীভাবে কী হয়ে যায় কেউ বলতে পারে না।
ফাতেমা বেগম নুসরাতের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, কী হয়েছে, বোন? আমাকে বল।
নুসরাত বলল, তুমি না বললে যে নারী হলো নদীর মতো। সে যেভাবেই বয়ে যাক, তাকে সমুদ্র খুঁজে নিতে হয়। আমি আমার সমুদ্রের দেখা পেয়েছি, দিদা।
ফাতেমা বেগম বললেন, কে সে? কী নাম তার?
নুসরাত বলল, ফরহাদ।
ফাতেমা বেগম বললেন, আল্লাহকে ডাক, বোন। আল্লাহ যেন নদী আর সমুদ্রের মিলন ঘটিয়ে দেন।
নুসরাত বলল, তোমার আল্লাহ চান বা না চান, ফরহাদকে আমি পাবোই।
ফাতেমা বেগম বললেন, তওবা কর। আল্লাহর ইশারা ছাড়া গাছের একটি পাতাও নড়ে না।
নুসরাত বলল, উফ দিদা! আমার আর ফরহাদের মাঝেও তুমি আল্লাহকে টেনে আনলে?
ফাতেমা বেগম বললেন, কেন? তোর আর ফরহাদের মাঝে বুঝি আল্লাহ আসতে পারেন না? যিনি তোকে সৃষ্টি করেছেন, ফরহাদকে সৃষ্টি করেছেন, সম্পর্ক সৃষ্টি করেছেন, মহব্বত সৃষ্টি করেছেন, তাঁর উপাসনা কর। তাঁর ইবাদাত কর। তবেই তো মুক্তি, তবেই তো সফলতা।
ফাতেমা বেগম দেখলেন যে নুসরাত তার কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে। তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ইয়া আল্লাহ, তুমিই রাহমানুর রাহীম। তুমিই হেদায়াত দাও।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৪৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×