somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অর্ফিয়াস ও ইউরিডিসি, একটি প্রেমগাঁথা...

০৭ ই অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবীর আদিমতম সঙ্গীতকার ছিলেন দেবতারা, দেবতাদের পরেই ছিল কয়েকজন মরণশীল মানুষ যারা সঙ্গীতকলায় পারদর্শিতা দেখিয়ে প্রায় দেবতুল্য হয়ে উঠেছিল । এদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম ছিলেন অর্ফিয়াস, মায়ের দিক দিয়ে অবশ্য দেবত্বের কিছুটা অংশীদার ছিল সে; তার মা ছিল মিউজদের একজন, পিতা ছিল থ্রেস দেশীয় রাজকুমার । গ্রীকের লোকদের মধ্যে থ্রেসীয়রা ছিল সর্বাধিক গীতপ্রিয় । দেবতারা ছাড়া অর্ফিয়াসের আর কোনো প্রতিদ্বন্দী ছিল না কোথাও, তার বাঁশী এবং গানের অসাধ্য কোনো কাজ ছিল না; কোনো মানুষ বা অন্য কিছুর সাধ্য ছিল না তাকে দমাতে পারে । অর্ফিয়াস বাঁশী বাজাতে বাজাতে যেতেন, আর জড় ও জীব সবাই তার পেছন পেছন যেত । তিনি পাহাড়ের পাথর সরাতে পারতেন, নদীর গতিপথ পর্যন্ত পাল্টে দিতে পারতেন ।


অর্ফিয়াস ও ইউরোডিসি এর বিয়ে >> সঙ্গীতের থেকেও অর্ফিয়াস বেশি বিখ্যাত তার বিয়ের জন্যে, ইউরিডিসি এর সাথে সেই বিয়োগান্তক বিয়ের কাহিনী তাকে অমর করেছে । ইউরোডিসি নামের মেয়েটির সাথে কোথায় দেখা হয়েছিল অর্ফিয়াসের, রোমান কবি ভার্জিল এর কাহিনীতে তার কোনো স্পষ্ট বর্ণনা নেই । তাদের বিয়ে হলো, একটি প্রেমের সার্থক পরিণতী ঘটল ।


হ্যা, বিয়ে হল ঠিকই; কিন্তু দাম্পত্যসুখ টিকলো না বেশি দিন । বিয়ের রাতে কনে ইউরোডিসি সখীদের সাথে বাগানে হাঁটছিল, এক সাপ কামড়ে দিল তাকে এবং সে মারা গেল । অর্ফিয়াসের দুঃখের সীমা রইল না, পত্নী বিয়োগের ব্যথা অসহ্য বোধ হল তার । সে স্থির করলো, পাতালে মৃত্যুপূরীতে যাবে সে এবং গানের সুরে মৃত্যুপুরীর রাজাকে ভুলিয়ে ইউরোডিসিকে ফিরিয়ে আনবে ।


পাতালপূরীর ভয়াল যাত্রায় পা রাখলো অর্ফিয়াস, রোমান কবি ওভিড এর মতে; প্রেমের জন্য মর্ত্যের আর কোন মানুষ এতটা বিপদসংকুল পথে যাত্রা করেনি আর কখনো । অর্ফিয়াস বাঁশিতে সুর তুললেন, সেই সুরে সমগ্র চরাচর স্তব্ধ হয়ে গেল । তিন মাথাওয়ালা প্রহরী-কুকুর পথ ছেড়ে দিল পাতালের; ইক্সিয়নের নিরন্তর ঘূর্ণ্যমান চাকা থেমে গেল, সিসিফাস তার পাথর ঠেলার কর্ম ভুলে বসে পড়লো পাথরের উপর; ট্যাটটালাস ভুলে গেল তার অনিবারণযোগ্য তৃঞ্চার কথা । গান শুনে এই প্রথম পাতালের ভয়ংকর পিশাচদের চোখেও জল এল, হেডিসের রাজা প্লুটো ও তার পত্নী পার্সিফনী মুগ্ধ হয়ে শুনলেন অর্ফিয়াসের গান । অর্ফিয়াসের কন্ঠস্বর শুনলে তার আবেদন কেউ অগ্রাহ্য করতে পারত না; প্লুটো ডেকে পাঠালেন ইউরিডিসিকে, প্রত্যর্পণ করলেন অর্ফিয়াসের হাতে । কিন্তু দিলেন একটি শর্ত >> ইউরিডিসি তার পেছন পেছন আসবে, কিন্তু উপরের পৃথিবীতে না পৌছা পর্যন্ত অর্ফিয়াস পেছন ফিরে তাকাতে পারবে না ইউরিডিসির দিকে ।


দুজন যাত্রা করলো পৃথিবীর দিকে, হেডিসের বিশাল তোরণ পেরিয়ে চড়াই পথ ডিঙিয়ে চলল তারা । অর্ফিয়াস জানত তার স্ত্রী আসছে পেছনে কিন্তু তবু একবার পেছন দেখে নিশ্চিত হওয়ার অদম্য ইচ্ছা হল তার, ইতিমধ্যে অন্ধকার ফিকে হয়ে এসেছে, আনন্দিত মনে দিনের আলোর চত্বরে পা রাখলো অর্ফিয়াস । এবং; ফিরে তাকাল পেছনে ।
ইউরিডিসি তখনও অন্ধকার গুহা পার হয়নি; আধো আলো আধো অন্ধকারে ইউরিডিসিকে দেখল সে, হাত বাড়িয়ে দিল ধরার জন্যে । কিন্তু সেই মুহূর্তে অন্তর্হিত হল ইউরিডিসি, অন্ধকারে তলিয়ে গেল সে; অর্ফিয়াস শুধু শুনতে পেল প্রিয়তমা পত্নীর ক্ষীন কন্ঠে বলা "বিদায় ।"


অর্ফিয়াস প্রাণপণে চেষ্টা করলো ইউরোডিসিকে অনুসরন করতে, কিন্তু তার অনুমতি পেল না; মর্ত্যের মানুষকে দ্বিতীয়বার হেডিসে ঢুকতে দিতে দেবতারা রাজি হল না ।


অর্ফিয়াস এর মৃত্যু >> অর্ফিয়াস মানুষের সঙ্গ পরিত্যাগ করলো । থ্রেস এর গহীন বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে লাগল সে, তার দুঃখের একমাত্র সঙ্গী তার বাঁশিটি । তার করুণ সুরে ঝুড়ে ঝুড়ে কাঁদল বনস্থলী, পাহাড় ও প্রাণকুল । অবশেষে একদিন ঘটল আরেক দুর্ঘটনা, পথবিবাগী অর্ফিয়াস সামনে পড়ল একদল উন্মত্ত মীনাড এর । এরা রক্তপিপাসী, মত্ত ডিওনিসুস-ভক্তের দল । সর্বকারের শ্রেষ্ঠ গীতকার অর্ফিয়াসকে তারা হত্যা করল, প্রতিটি অঙ্গ আলাদা করল শরীর থেকে এবং ছিন্ন মুণ্ডি ফেলে দিল খরস্রোতা নদী হেব্রাস-এ । ভেসে ভেসে সে মস্তক চলে এল নদীর মোহনায় লেসবীয় তীরভূমিতে । মিউজরা সেটি পেয়ে দ্বীপের অভয়ারণ্যে সমাহিত করল, অর্ফিয়াসের হাড়গোড় সংগ্রহ করে তারা কবর দিল অলিম্পাস পর্বতের পাদদেশে । আজকের দিনেও, এই অরণ্যের নাইটিঙ্গেলরা পৃথিবীর অন্য যেকোনো স্থানের নাইটিঙ্গেলদের চেয়ে মধুরতর স্বরে গান গায়. . .


বিঃ দ্রঃ >> সম্পূর্ণ পোষ্টটি মোবাইল থেকে লিখিত, অনিচ্ছাকৃত ভুল-ক্রটির জন্যে ব্লগার αζρ ক্ষমাপ্রার্থি; ধন্যবাদ. . . :)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:৩০
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×