somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা, শুধুই তোমার জন্য

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভোরের কমলা আলোর বন্যায় ভেসে যাচ্ছে ঘর, দুয়ার, প্রান্তর। সাথে যোগ হয়েছে মৃদুমন্দ হাওয়া। সবে ঘুম ভেঙ্গেছে। ঘুম ঘুম ভাব কাটেনি তখনো। ঘুমের ঘোরে দেখছি আকাশের নক্ষত্ররাজি মোমবাতি হয়ে নেমে এসেছে মাটিতে, রাস্তায়। অন্ধকার সরিয়ে দেয়া সেই আলোরগুচ্ছ ঘিরে লাল-সবুজের তারুণ্য।

কে যেন পরছে। ইথারে ভেসে আসছে ‘তমাল’ নামের কোন এক যুবকের “রিলেভেন্ট” হয়ে ওঠার গল্প। যে পরছে, তার গলা ধরে এসেছে। কাঁদছে নাকি? কি আশ্চর্য! কেন সবকিছু ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে? কেন আমি ঠিকঠাক দেখতে পাচ্ছি না? তবে কি আমিও আর্দ্র হয়ে উঠছি?

২০০৮ সালে আমাদের এখানে, সিঙ্গাপুরে বিজয় দিবস উপলক্ষে তাজউদ্দিন আহমেদের উপর তৈরী একটা ডুকুমেন্টরি দেখতে গিয়েছিলাম। সিনেমা (ডুকুমেন্টরি) শুরুর আগে এখানকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রকৌশলী মুস্তাফিজ বর্ননা করছিলেন ৭১ এর সেই উত্তাল দিনগুলোর। সেসময় উনার নাকি কেবলি মনে হত “রিলেভেন্ট আছি তো?” এই ‘রিলেভেন্ট’ থাকতে গিয়েই PHD ডিগ্রী করতে বিদেশ যাবার বদলে উনার মুক্তিযোদ্ধা হয়ে ওঠা। ৭১ পার করেছি সেই ৪২ বছর আগে। তবে, রিলেভেন্ট থাকার প্রয়োজনীয়তা এখনো আছে, থাকবে - সেই সময়ের মতই।

কেন দুর্বল প্রসিকিউশন টিম দিয়ে মামলা পরিচালনা করা হল?
কেন কামাল হোসেন, রফিকুল হক, আমিরুল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদের মত ঘাগু আইনজ্ঞদের কাজে লাগানো হল না?
কেন মামলা শুরু কিংবা রায় হয়ে যাবার পরও আইন সংশোধন করতে হচ্ছে, কেন এই কাজ আরো আগে করা হয়নি?
কেন অসম্ভব তারাহুড়া করে জাতীয় ইতিহাসের সবচে গুরুত্বপুর্ন মামলাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলা হল?
কিভাবে একজন প্রমানিত খুনি আইনের ফাঁক গলে সর্বোচ্চ সাজা পাচ্ছে না?
এসবই আজ প্রশ্ন।

বর্তমান সরকার যদি মনে করে এই ফুঁসে ওঠা তারুন্যই হবে জীয়ন কাঠি, তাদের পুলসেরাত পার হবার চাবি;
যদি মনে করে সবুজের এই ভেলায় ভর করে তারা হয়ে উঠবে অমর, অজেয়;
সরকার যদি মনে করে এই স্রোতের বিরুদ্ধবাদীরা হারিয়ে যাবে লহমায়, ফুতকারে মিলিয়ে যাবে শূন্যে,
তাহলে তাদের জন্য দু’টি কথা।

৭২ এর ১০ই জানুয়ারি, স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন কেউ কি ভেবেছিল কি মর্মন্তুদ পরিনতি অপেক্ষা করছে এ দেশের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতার?
সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দেশের অবিসংবাদী নেতায় পরিনত হওয়া মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল কি জানতেন তার ললাটের লিখন?

গেল বছর আমার সাথে দেখা হয়েছিল বিডিআর বিদ্রোহে ‘শহীদ’ হওয়া এক আর্মি জেনারেলের সন্তানের সাথে। ও আমাকে বলেছিল “আংকেল, ৭৫এ বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহীদ হবার সময় বা তার অব্যবহিত পরে কেউ কি ভেবেছিল, জানে বেঁচে যাওয়া তার দু’জন মাত্র সন্তান এমন অমিত হয়ে উঠবে? আমাদের ৬০টি (কমবেশি) শহীদ পরিবারে এমন অন্তত ২০০ জন বেঁচে আছি এখনো। কোন একদিন হয়ত আমরাও ......।“

সুতরাং কেউ যদি ভেবে থাকেন, ‘এইতো অমরাবতীর পথ খুলে গেল বলে’, তারা দিবাস্বপ্ন দেখছেন।

আর বিরোধীদল? জেনে রাখুন, এ দেশে ঝমঝমিয়ে ট্রেন আসতে ২০ বছর সময় লাগে।
একবার এসেছিল ১৯৫২ সালে।
তারপর ১৯৭১ এ।
তারপর ১৯৯০ এ।
এবার এসেছে ২০১৩ সালে।

ডায়েরী বের করে লিখে রাখুন, এবারের ট্রেন মিস করেছেনতো অপেক্ষা করতে হবে অন্ততপক্ষে আরো ২০ বছর। ২০ বছর পরেও যে এমন আরেকটা ট্রেন আসবে, তারইবা গ্যারান্টি কি?

কেন ৭২ থেকে ৭৫ এর মধ্যে বিচার হয়নি সেটা একটা প্রশ্ন।
সাধারন ক্ষমা সবার জন্য ঘোষনা করা হয়েছিল কি হয়নি, সে দ্বন্দ্ব এখনো অনেকের মনে।
সবই মানা গেল। তাই বলে, একটা ভুলকে শুদ্ধ করা যাবেনা এ ক্যামন কথা?

এদেশে নিয়ম মেনে কবে কি হয়েছিল?
আর তাই, শীর্ষ যুদ্ধোপরাধীদের বিচার করতে গিয়ে যদি নিয়মের খানিকটা ব্যত্যয় ঘটেও থাকে, যদি ঘটাতে হয়ও – হোক না তাই। তবু আমার হৃদয় বলবে, “বিচার চাই”।

নৌকার যে মাঝি, হাল ধরবার দায়িত্ত্ব তারি। সুতরাং যেনে রাখবেন, আপনার ঘর সাফসুতোরা করার দায়িত্ত্বও আপনারি। সেটা যদি না হয়, তবে আজকের শেল কাল বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে। আসবেই।

রাজনীতি রাজার নীতি না হয়ে হয়ে উঠবে গণপ্রজাতন্ত্রের প্রজাদের নীতি।
অরুনোদয়ের অগ্নিসাক্ষী হয়ে আমরা বেঁচে রইব।
বেঁচে থাকব অতন্দ্র প্রহরী হয়ে।

সর্বদাই ‘রিলেভেন্ট’ থাকব মা, তোমার জন্য। শুধুই তোমার জন্য।

============================================

সাইফুল্লাহ
সিঙ্গাপুর থেকে

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=স্মৃতির মায়ায় জড়িয়ে আছে মন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০৯


ঘাস লতা পাতা আমার গাঁয়ের মেঠো পথ, ধানের ক্ষেত
জংলী গাছ জড়ানো লতাবতী - আহা নিউরণে পাই স্মৃতির সংকেত,
রান্নাবাটির খেলাঘরে ফুলের পাপড়িতে তরকারী রান্না
এখন স্মৃতিগুলো পড়লে মনে, বুক ফুঁড়ে বেরোয় কান্না।

ফিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×