কেন জানি আমার গ্রামের সবাইকে আমি খুব মিস করি। তারা কেউ কখনও আমায় মিস করে কিনা জানি না, তবে প্রতিদিনের চলার পথে আমি মিস করি। পুরি, সিঙ্গারা খেতে গেলে রাজা ভাইয়ের দোকান, আড্ডা মারতে গেলে পিয়ার ভাইয়ের দোকান, জামাকাপড় কিনতে গেলে রহমান ভাইয়ের দোকান, চা খেতে গেলে রবিনের দোকান, বিকালে অবসর পেলে কাংশা ব্রিজ।
বিকেলে হাটতে বের হলে মনে হয় এই বুঝি যাচ্ছি প্রবীর বা বংশীদা বা দেবা দের বাড়ি। রাস্তার মোর আসলে মনে হয় এই বুঝি জীবনের মামা বাড়ির দিকে যাচ্ছি একটু পরেই দেখা হবে ঝণটুর সাথে আর বলেবে-“কাকা কেমন আছেন?”। কিংবা হাটতে হাটতে চলে যাব বট তলায়। কিংবা খালের পারে বসে মাছ ধরা দেখবো।
মনে পরে ২০০৪ এর বর্ষায় তখন কলেজে পড়ি। আমার পাশের বাসার এক দাদা প্রায় প্রতিদিন বরশি দিয়ে রুই মাছ ধরে আনত, তাও আবার দুই একটা নয় ৮-১০ টা। একদিন আমারও শখ হল মাছ ধরার, জানের দোস্ত রাসেল কে সঙ্গে নিয়ে পাউরুটি কিনে গেলাম মাছ ধরতে, শুনেছি রুই মাছে পাউরুটি ভাল খায়। ১-২ ঘণ্টা বসে থাকার পর যখন কোন মাছ ধরা তো দুরের কথা বরশিতে ঠোকর পর্যন্ত দিল না, দুই বন্ধু মিলে পাউরুটি খেয়ে বরশি হাতে বাড়ি ফিরে এলাম।
এরকম হাজারো স্মৃতি মনে হলে চোখে জল আসে, শুধু ভাবি আর কি সেই দিন আসবে? আমরা ক্রমশ যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি। ঢাকার খুব কাছাকাছি অবস্থান করায় নগরায়নের সুফল না পেলেও কুফল গুলো আমরা পাচ্ছি।আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। আন্তরিকতা কমছে।
সেদিন বাড়িতে গিয়ে শুনি “মইজা” ভাই নাকি অভাবে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করছে!! কেন তার মুখে এক মুঠো খাবার তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা কি আমরা সবাই মিলে করতে পারতাম না!! পারতাম না তার জীবন টা বাঁচাতে? সিঙ্গাইর পৌরসভার মেয়রের কাছেও কি কোন জরুরী ফান্ড নাই যা থেকে আমরা তাকে সহযোগিতা করতে পারতাম। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন সিঙ্গাইরে পুকুর বলতে ৩ টা ছিল- ছিওর পুকুর, পচার পুকুর আর মইজার ডাঙ্গা। সে সব আজ শুধুই স্মৃতি। যে মানুষটির পুকুরে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন গোছল করতো, ইচ্ছা মত পানি ব্যবহার করতো লোকটি কোন বাঁধা দিত না, যখন অন্য পুকুরের মালিকরা কাঁটা দিয়ে বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করতো সেই লোকটি সবার সামনে না খেয়ে মারা গেল, আমরা পাষাণরা কেউ তাকে বাঁচাতে পারলাম না।
এই স্মৃতি গুলো মনে করে আজ ঘুম আসছে না। ভাবছি... এমনটা কেন হল। আগেই তো ভাল ছিলাম...
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৪:২৯