somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামাজিক ব্যবসা নিয়ে লেখা, (২য় পর্ব)

২৭ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(গালিগালাজ মডারেট করা হয়, যুক্তিসংগত বক্তব্য মডারেট করা হয় না, যাদের মডারেটেড ব্লগ ভালো লাগে না, দয়া করে পড়বেন না অথবা মন্তব্য করবেন না)

......
দাদনদার ও ঋণদাতার মধ্যে তফাত আছে। দাদন যিনি দেন তিনি টাকা ধার দেয়ার সময় উৎপাদিত দ্রব্যের দাম নির্দিষ্ট করে সেটি কিনে নিয়ে তার দেয়া টাকার সাথে সমন্বয় করেন। এতে দাদনদারের দুই দিকে লাভ হয়। একদিকে সে সূদের লাভ পায়, অন্য দিকে বাজারদরের চেয়ে কম দামে উৎপাদিত দ্রব্য বা ফসল কিনে নিয়ে সে আরো লাভ করে। ড. ইউনুস জোবরা গ্রামে তার এই অভিজ্ঞতার কথা নিজেই সবিস্তারে লিখেছেন। তিনি তার ক্রিয়েটিংএ ওয়ার্ল্ড উইদাউট পোভার্টি বইয়ে গ্রামীন ড্যানোন এর শক্তি দই উৎপাদনের কারখানার সবিস্তার বর্ননা দিয়ে এটিকে একটি সোশাল বিজনেস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি এটাও বলেছেন যে ব্যবসাগুলি সোশাল বিজনেস হিসেবে চলবে, তারা তাদের অন্য কোন ব্যবসা যেটি সোশাল বিজনেস নয়, সেটিকে তাদের সহযোগী করাতে পারবে না। ড্যানোন তার দই উৎপাদন শুরু করার পর দেখলো যে দই তৈরীর প্রধান উপাদান দুধের দাম বাড়ে কমে। কমে গেলে তাদের কোন অসুবিধা নাই। বাড়লে অসুবিধা কারন তাতে তারা দইয়ের দাম বাড়াতে বাধ্য হবে অথবা ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এই সমস্যার সমাধান করলেন ড. ইউনুস। তিনি বগুড়াতে গ্রামীন ব্যাংককে দুধ উৎপাদনকারীদের গরু কেনার জন্য ঋণ দিতে বললেন। শর্ত হলো দুধ বেচতে হবে ড্যানোনের কাছে এবং সারা বছর একই দামে। এটা কি নৈতিক কাজ হলো? দাদনদারী ব্যবসায়ীদের মতো একদিকে ঋণ এর সূদও গুনবেন আবার কমদামে দুধ বেচবেন ড্যানোনের কাছে। শুধু তাই নয়, এতে করে ড্যানোন তার অন্যান্য কোন প্রতিদ্বন্দী কোম্পানীর চেয়ে এগিয়ে থাকল ব্যবসা সুবিধাতে। যদি আরেকজন দই উৎপাদনকারী সেখানে দই প্রস্তুত করতে চান, তখন তার জন্য সারাবছর একই দামে দুধ কেনার জন্য কেউতো দাদনের ব্যবসা করবে না, করার অনুমতিও পাবে না, কারন সেটা করতে গেলে তার সরকারের কাছ থেকে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়ার অনুমতি নিয়ে আরেকটা গ্রামীন ব্যাংক খুলতে হবে। তিনি তার বইয়ের ১৫৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেন “দুধ ক্রেতাদের সাথে প্রতিযোগিতা এড়াতে এই ক্ষুদ্রঋণ এর মাধ্যমে দুধের মাইক্রোফার্ম গড়ে তোলা হয়েছে।” আপনারা ড্যানোন এর কর্মপদ্ধতি দেখলে বুঝবেন, কিভাবে সুকৌশলে পূঁজিবাদী শোষকদের হাত গ্রামের কৃষকের মাটির ব্যাংক থেকে টাকা শূষে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ড্যানোন একটি বহুজাতিক কোম্পানী যাদের প্রধান বাজার হলো ইউরোপ ও আমেরিকাতে। তাদের সবচাইতে জনপ্রিয় পন্য হলো ইভিয়ান নামে একটি মিনারেল ওয়াটার যেটি পৃথিবীর সবচাইতে দামী পানিগুলির একটি। এদের রয়েছে ইউরোপব্যাপি দুধ ও দুধ থেকে তৈরী নানা রকম পণ্যের ব্যবসা। ড. ইউনুসের সাথে কথা বলে মুগ্ধ হয়ে তারা বাংলাদেশে গ্রামীণ ড্যানোন দই এর কারখানা স্থাপন করেছে। মনে রাখবেন, এরা নিজের দেশে কোন সামাজিক ব্যবসা করে না, কিন্তু বাংলাদেশে সামাজিক ব্যবসা করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার মানে তারা নিজেদের মালিকানায় একটি নতুন কারখানা নতুন দেশে স্থাপন করলো এই শর্তে যে তারা কোন লাভ নেবে না, কেবল তারা তাদের বিনিয়োগ ফেরত নেবে। এভাবে তারা নতুন একটি কারখানার মালিক হলো এবং নতুন একটি বাজারে প্রবেশ করল, সামাজিক ব্যবসার হাত ধরে। এতে তাদের প্রাথমিক যে লাভটি হলো সেটি বাজার সম্প্রসারন এবং দ্বিতীয়টি হলো তারা এই বাজারে প্রাইমারী মুভার বা ফার্স্ট মুভার হওয়ার সুযোগটিও নিল। এখন পনের বছর পর পুরো বাজারটি দখল করার পর যদি তারা তাদের এই সামাজিক ব্যবসাটিকে ড. ইউনুসের ওয়েবসাইটের বক্তব্য অনুযায়ী প্রচলিত ব্যবসায় রুপান্তরীত করে, তবে ভেবে দেখুন তাদের কি পরিমান লাভ হবে। বাজার পুরোটা থাকবে তাদের দখলে এবং বাংলাদেশে সাধারন দই প্রস্তুতকারকরা তখন না পারবে তাদের সাথে দামে, না পারবে গুণগতমানে। ড্যানোন তার উৎপাদনের তিন বছরে প্রতিদিন ২২০০০ পাউন্ড দই উৎপাদন করবে বলে ড. ইউনুস তার লেখায় বলেছেন। কারখানাটি সেটা করছে বলে আমার বিশ্বাস। তার মানে সাধারন দই বিক্রেতার ২২০০০ পাউন্ড দই কম বিক্রি হচ্ছে, যে বাজারটি নিয়ে নিয়েছে ড্যানোন। এরা কোথায় কারখানাটি করেছে? বগুড়ায়। কেন? কারন সেটাই দেশের দইয়ের সবচেয়ে বড় ন্যাচারাল এরিয়া অব প্রডাকশন। বাজার যদি নিতেই হয়, তবে সেটি মূল বাজারেই নিতে হবে। এবার আসি মুনাফা প্রসংগে। ড্যানোন ১% মুনাফা নেয় যেটাকে বলা হয়েছে সিম্বলিক বা টোকেন প্রফিট। তার মানে ২২০০০ পাউন্ড এর ১% হলো ২২০ পাউন্ডের দাম। যদি একপাউন্ড এর দাম হয় ৬০ টাকা তাহলে ২২০ পাউন্ডের দাম ১৩২০০ টাকা। এটা হলো গ্রস আয়। এর শতকরা ৮০% ধরলাম ব্যয়। তাহলে ২৬৪০ টাকা প্রতিদিন আয়। তার মানে ৩৬৫ দিনে আয় ৯,৬৩০০০ টাকা। পাঠকের কাছে মনে হচ্ছে যে এটা কোন টাকা নাকি? আসলেই তো এটা কোন টাকা না। কিন্তু চিন্তা করুন ৯৬৩,০০০ টাকা হলো ১% মাত্র। মোট লাভ তার মানে ৯৬৩,০০০,০০ অর্থাৎ নয় কেটি তেষট্টি লক্ষ টাকা। বাংলাদেশে আছে কোন দই বিক্রেতা যার বাৎসরিক লাভ প্রায় দশকোটি টাকা? তার মানে তারা এখনই দেশের সবচেয়ে বড় দই বিক্রেতা। ১৫ বছর পর এই কোম্পানীটির মোট বিক্রয় কত হবে? এর মোট আয় কত হবে? আর এই না নেয়া লাভ যদি কোম্পানীতে থাকে তবে এর মোট আর্থিক সম্পদ থাকবে ১৫০ কোটি টাকার। ধরে নিলাম এর পর এরা ড্যানোনের অন্য ব্যবসাগুলিও এখানে চালু করবে এই টাকা দিয়ে। তাহলে হিসাব করুন সামাজিক ব্যবসার নামে মোট কত মূলধন অর্জিত হলো এবং পনের বছর পর যদি ড্যানোন মনে করে সামাজিক ব্যবসার লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে, এবার এটিকে প্রচলিত ব্যবসায় রুপান্তরীত করা যাবে, তাহলে তাদের কি আমরা না করতে পারব?
ড. ইউনুস নিজেই জানেন, এই না করাটা কত শক্ত। তিনি তার বইয়ে বলেছেন টেলিনরের সাথে তার একধরনের সমঝোতা ছিল, যে তারা এক পর্যায়ে গ্রামীন ফোনের শেয়ার গ্রামীন টেলিকমের কাছে ছেড়ে দিয়ে বা হস্তান্তর করে, তাদেও মালিকানা ৩৫% এর নিচে নিয়ে আসবে এবং অধিকাংশ শেয়ার থাকবে গ্রামীন টেলিকমের হাতে। তারা সেটা করেনি এবং তিনি এটি তার বইয়ের মধ্যে লিখেছেন যে তিনি এই বিষয়টি নিয়ে অনেক চেষ্টা করেছেন এবং দুঃখ পেয়েছেন। তার বইয়ের ৯৩-৯৪ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন “আমার শুরু থেকেই ইচ্ছা ছিল গ্রামীন ফোনকে একটি সামাজিক ব্যবসায় পরিনত করার এবং গ্রামীন টেলিকম তৈরী করা হয়েছিল গরীব মানুষের পক্ষ হতে এই শেয়ারগুলিকে ব্যবস্থাপনা করার জন্য। কিন্ত এখন আমি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছি। টেলিনর এখন শেয়ার বেচতে নারাজ। এমনকি যখন আমরা নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার উৎসব করছ , নরওয়েজিয়ান প্রেস এ বিষয়ে দ্বন্দ নিয়ে লেখালেখি করেছে। মেমোরান্ডামে এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি ছিল এমনকি অংশীদারিত্বের স্বাক্ষরিত দলিলেও এটি লেখা ছিল। এখন টেলিনর এই দলিলকে সম্মান দেখাচ্ছে না। বলছে এটি আইনগতভাবে বলবত করা সম্ভব না।....এখন আলোচনা চলছে সমঝোতার জন্য। আমি আশাবাদী একদিন গ্রামীনফোনকে সামাজিক ব্যবসায় পরিনত করার স্বপ্ন সফল হবে।”
তার মানে সাদারা কথা দিলে কথা রাখে না। অথবা ড. ইউনুস ঠকেছেন। আমি প্রথমটাই বিশ্বাস করি। কারন একজন নোবেল বিজয়ী নিশ্চয়ই এতো বোকা নন যে তিনি ঠকে যাবেন। আমার প্রশ্ন হলো ড. ইউনুস তার পদচ্যুতি ঠেকাতে কোর্টে গেলেন, বিশ্ব জনমত এক করে ফেলে সিনেটর, কংগ্রেসম্যান দিয়ে আমাদের ধমক লাগালেন আর গরীব মানুষের সাথে বেইমানী করা, চুক্তি লংঘনকারীদের চুক্তি মানতে বাধ্য করার জন্য কোর্টে গেলেন না কেন? গরীব মানুষের স্বার্থ কি তার পদের চেয়ে কম দামী?
এবার আসি ড্যানোনের শুভংকরের ফাঁকিতে। ড্যানোন এখানে মাত্র ১% লাভ নেয় এটা ঠিক। তবে ফ্রান্সে তারা একটি তহবিল গঠন করেছে, যার নাম এসআইসিএভি বা সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানী উইথ ভ্যারিয়েবল ক্যাপিটাল, ড্যানোন কমিউনিটিজ। এর ৯০% বিনিয়োগ হয় লাভজনক ব্যবসায় এবং ১০% বিনিয়োগ হয় সামাজিক ব্যবসায়, যার মধ্যে আছে বাংলাদেশের ড্যানোন দই। এই তহবিলটি ফরাসী স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত এবং যে কোন মিউচুয়াল ফান্ড বা ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের মতো এটি কেনা বেচা হয়। এবার মজাটা বোঝেন। শেয়ারের দাম বাড়া কমা কেবল ডিভিডেন্ড এর উপর নির্ভও করে না। শেয়ার প্রতি মোট সম্পদ বাড়লেও শেয়ারের দাম বাড়তে পারে। তারমানে বাংলাদেশে ড্যানোনের সম্পদ বাড়লে এই শেয়ারের মোট সম্পদ ঠিকই বাড়বে এবং সেকেন্ডারী মার্কেটে কেনা বেচা করে ঠিকই লাভ তোলা যাবে। তাহলে লাভ নিলাম না ঠিকই কিন্তু আবার নিলামও। আবার দেখেন মজা, ক্ষতি যদি হয়, শেয়ার মার্কেটে থাকার কারনে সেই ক্ষতির দায়টাও সহজেই দিয়ে দেয়া যাবে সাধারন বিনিয়োগকারীকে। তখন শেয়ারের দাম কমবে। অর্থাৎ ড্যানোন দই কাগজে কলমে লাভচনক না হলেও, এটিকে ব্যালান্সশীটে রেখে এর সম্পদের সুবিধা ঠিকই নিচ্ছে ফ্রান্সের কোন সাধারন বিনিয়োগকারী অথবা প্রতিষ্ঠান। এই তহবিলটি ১০০ মিলিয়ন ইউরো বাজার থেকে সংগ্রহ করেছে যার অর্থমূল্য প্রায় একহাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০০ কোটি ড্যানোন গ্রুপের। (পৃষ্ঠা ১৭২, ক্রিয়েটিংএ ওয়ার্ল্ড উইদাউট পোভার্টি) এ যেন মসজিদের জন্য টাকা তুলে মসজিদের সংস্কারের নামে সামনে ব্যক্তিগত দোকান বানানোর মতো এক প্রক্রিয়া।
কর ও রেগুলেটরী ইস্যু নিয়ে ড. ইউনুস যা বলেছেন তার বইটিতে সেটিতে মহা ঘাপলা আছে। তিনি এখন যে সমস্যাটির মধ্যে আছেন তার সূত্রপাত কিন্তু কর অব্যাহতি বিষয়ক তহবিল স্থানান্তর নিয়ে। তিনি কর দিতে খুব একটা পছন্দ করেন না। তাই তিনি প্রস্তাব করেছেন যে, সরকারগুলিকে বের করতে হবে যে সামাজিক ব্যবসাগুলিতে তারা কিভাবে করারোপ করবে। তারপর তিনি বলেছেন যে সরকারগুলি যদি মনে করে যে তাদের করসুবিধা দেয়া যায়, তবে তারা সেটি দেবে। একথা বলার পর তিনি কর সুবিধা দেয়ার পক্ষে ওকালতি করেছেন। তিনি বলেছেন যে কর সুবিধা দেয়া যুক্তিসংগত হবে কারন সামাজিক ব্যবসা করদাতাদের গরীবের প্রতি দায় লাঘব করবে। এবার যদি কর সুবিধা পেয়ে সামাজিক ব্যবসাগুলি একই ধরনের প্রচলিত ব্যবসাগুলির চেয়ে বেশী প্রতিযোগিতামূলক হয়, সেটা কি অসাম্য হবে না? তিনি বলেছেন যদি এমনটি হয় তবে প্রচলিত ব্যবসাগুলি সামাজিক হয়ে যাবে। তিনি বলেছেন যদি সামাজিক ব্যবসার সাথে না পারো তবে তার সাথে যোগ দাও। এটা কি যুক্তিসংগত? বগুড়ার দই বিক্রেতা যদি ড্যানোনের সাথে টিকে থাকতে না পাওে, সে কি কাল সামাজিক ব্যবসা শুরু করতে পারবে? পারবে কি ঝালমুড়ি বিক্রেতা রুচির ঝালমুড়ির সাথে টিকে থাকতে, যেখানে তারা বিজ্ঞাপন করে হাতে বানানো ঝালমুড়িতে অসুখ বিসুখ হবার কথা বলে ক্রেতাকে ভয় দেখায়? অথচ সাধারন ঝালমুড়ি বিক্রেতাকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিতে শেখালেই তো হয়ে যেত। তাতে তো আর প্যাকেট ঝালমুড়ির বিক্রি বাড়বে না। তাই প্যাকেট খাও আর সাধারন ঝালমুড়িকে বিদায় করে দাও। এটাই তো পূঁজির আগ্রাসন।
সামাজিক ব্যবসা থেকে সংগৃহিত বিশাল পূঁজি কি হবে? তিনি বলেছেন এটি দিয়ে আরো নতুন নতুন সামাজিক ব্যবসা তৈরী হবে। এই ব্যবসার মালিক কিন্তু থাকবেন একই মালিকেরা। অর্থাৎ বহুজাতিক কোম্পানীগুলির পাশাপাশি এই একই কোম্পানীগুলি সামাজিক বহুজাতিক ব্যবসা গড়ে তুলবে। যেমন ড্যানোন করেছে দই। এভাবে তারা নতুন নতুন বাজাওে অনুপ্রবেশ করবে। যেহেতু সামাজিক ব্যবসা নাম দিয়ে তারা ঢুকেছে, তারা নানা রকম সুযোগসুবিধার জন্য আবদার করবে। কর দিতে চাইবে না। নানা রকম অগ্রাধিকার চাইবে। তারা সত্তর বছর বয়সেও ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী থাকতে চাইবে। প্রয়োজনে আইন বদলাতে বলবে। প্রয়োজনে ফরাসী কিংবা মার্কিন প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়ে ধমক লাগাবে। এভাবে গরীব এর উপকারের নামে তাদের নিজেদের পূঁজির বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে, বিরাট বিরাট কারখানা তৈরী করে, আঞ্চলিক বা কুটির শিল্পগুলিকে শেষ কওে ফেলা হবে। তারপর আমরা কেবল চাকুরী করব। আমরা কেবল হবো খুচরা বিক্রেতা। আমরা হবো সস্তা শ্রমের বাজার। আমরা হবো পূঁজিবাদের অ্যানিম্যাল ফার্ম। আমাদের বলা হবে বগুড়ার দইয়ে পুষ্টি নেই, ওটা আছে শক্তি দইয়ে। গ্রামে গ্রামে ফেরী কওে দই বেচবেন গ্রামীনের মহিলারা। একে বলা হবে নারীর ক্ষমতায়ন। অথচ রবীন্দ্রনাথের গল্পের সেই দইওয়ালার দেখা আর পাবেনা বাংলাদেশের মানুষ। এরই নাম তো উন্নয়ন। এই উন্নয়নকে প্রত্যাখ্যান করেছিল চীন ও জাপান। তাদের দারিদ্র দুর করতে তথাকথিত ক্ষুদ্র ঋণ এর দরকার হয়নি।
এবার আমার সাধারন কিছু প্রশ্ন? যদি সোশাল বিজনেস এত ভাল কিছু হয় তবে , কেবল বাংলাদেশের টাকা দিয়ে একটা সোশাল বিজনেস কেন স্থাপন করলেন না কেন ড. ইউনুস? এই বইটি কেন বাংলায় না লিখে লিখলেন ইংরেজীতে? বাংলা অনুবাদ করেন না কেন? বাংলাদেশের প্রতি তার ভালোবাসা প্রবল বলেই আমার বিশ্বাস। তাহলে গ্রামীন ফোন ডিজ্যুস মার্কা ভাষা প্রচলনে যে কোটি কোটি টাকা খরচ করল, দেশের সংস্কৃতিকে কদলী প্রদর্শন কওে নানা রকম অসভ্য বিজ্ঞাপন করল, আপনি তাতে বাঁধা দেন নাই কেন? মহিলাদের ক্ষমতায়নের বিষয়ে তার এত বক্তব্য, ফতোয়ার বিরুদ্ধে একবারও তাকে কোথাও বলতে দেখি না কেন? আজকে তার জন্য এত মানুষ এত কথা বলছে, ১/১১ এর পরে অন্তত একটি বার দুই নেত্রীর মুক্তি চেয়ে তিনি কিছু বলেন নাই কেন? যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের, শিক্ষকদের নির্মমভাবে নির্যাতন করলো সামরিক বাহিনী, তখন তিনি এমনকি শিক্ষকদের পক্ষেও একটিবার কিছু বলেছিলেন কি?
নোবেল প্রাইজ নিঃসন্দেহে গৌরবের বিষয়। তিনি নোবেল প্রাইজ পাবার পর বলেছিলেন, আমাকে চট্টগ্রাম বন্দর দিন, আমি বাংলাদেশের চেহারা বদলে দেব। নোবেল প্রাইজ পেয়ে দেশে ফিরে দেশের বন্দর চেয়েছেন, এমন আর একজন নোবেল বিজয়ী আছেন কি? তিনি সারাজীবন সুশাসন ও আইনের কথা বলেছেন। একবার সৎ ও যোগ্য প্রার্থী চাই বলে একটি আন্দোলনও গড়ে তুলেছিলেন। নোবেল পেলে কি কেউ আইনের উর্দ্ধে চলে যান। নোবেল তো পেলেন ২০০৬ সালে। ৬০ বছর তো হয়েছে দশ বছর আগে। ২০০১ সালে। তিনি নিজেই কেন আইন মেনে উত্তরাধিকারীর হাতে ছেড়ে দিলেন না দায়িত্ব? নেতা তো উদাহরন তৈরী করবেন। তিনি তো আমাদেও পদ আঁকড়ে থাকতেই শেখালেন। বারাক ওবামাও তো শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। এখন তাহলে তাকেও ৭০ বছর হওয়া পর্যন্ত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বানিয়ে রাখলে অসুবিধা কি? আমেরিকানরা তাতে রাজী হবে না। বলবে , ওটা তাদের আইনে নেই। তারা নিজের দেশে আইন মানে, অন্যের দেশে আইন না মানাকে উৎসাহ দেয়। নইলে কেন হিলারী আর ব্লেক সহ কংগ্রেসম্যানদের এত আগ্রহ আমাদের ব্যাংক বিধি অমান্য করতে বলার জন্য?
নোবেল তিনি পেলেন সত্য, কিন্তু তার পদ টেকাতে গোটা জাতীকে তার বিদেশী বন্ধুদের ধমক খাওয়ালেন। দেশের সরকার জনগণের প্রতিনিধি, সরকারকে ধমকানো মানে আমাদের সবাইকে ধমকানো। নোবেল প্রাইজ বিজয়ীর গ্রামীন ব্যাংক এর পদ, জাতীর সম্মান এর চেয়ে বেশী বলেই মনে হচ্ছে এখন। এই ধমকটা টেলিনরকে দিলে তো কবেই গরীবের ভাগ আদায় করে নিতাম আমরা। এই ধমকটা বি এস এফ কে দিলে তো ফেলানীর লাশের দায় মিটতো। এই ধমকটা তেল গ্যাস কোম্পানীগুলিকে দিতে পারলে তো আমরা আরেকটু বেশী ভাগ পেতাম নিজেদের খনির উৎপাদনে। এশিয়া এনার্জিকে ধমকটা দিলে ফুলবাড়ীতে লাশ পড়তো না। এই ধমকটা যুদ্ধাপরাধীদের দিলে বুঝতাম, দেশে আইনের শাসন এর প্রতি ড. ইউনুসের বিরাট অবদান। এই ধমকটা অক্সিডেন্টালকে দিলে আমরা মাগুরছড়ার ক্ষতিপূরন পেতাম।
ড. ইউনুস কেবল নিজের জন্যই ধমকটি ব্যবহার করলেন। আমাদের জাহান মনির নাবিকদেও ছাড়িয়ে আনতেও যদি এই ধমকাস্ত্র কাজে লাগতো। আমি তাকে শ্রদ্ধা করি। নোবেল বিজয় এক অসাধারন অর্জন। কিন্তু এটি ব্যক্তিগত অর্জন। গ্রামীন ব্যাংক এর অর্ধেকের দাবীদার। এটি প্রাতিষ্ঠানিক অর্জন। আর এই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ, এটি নোবেল পাওয়া না পাওয়ার সাথে কোনভাবেই সম্পর্কিত না। এটি তার সরকারীভাবে অর্জিত পদ। এই পদটিতে তিনি না থাকলে যদি গ্রামীন ব্যাংক নষ্ট হয়ে যায়, তবে বুঝকে হবে তার ব্যবস্থাপনায় মারাত্মক গলদ আছে। এত বড় একটি প্রতিষ্ঠান যদি একজন ব্যক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে তবে যেদিন তিনি থাকবেন না? তখন কি এই প্রতিষ্ঠানটিকে আমরা তার সাথে সাথে কবর দিয়ে দেব?
বারবার শুনছি সম্মানজনক সমাধান এই শব্দটি। দেশের সর্ব্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন একটি বিষয় নিয়ে বিদেশীরা যখন আমাদের সংবাদ সম্মেলন করে ধমকায়, তখন আদালত অবমাননা হয় না? সরকারের অবমাননা হয় না? সম্মান কি কেবল নোবেল বিজয়ীর একার। এই দেশের সাধারন মানুষের সম্মান নাই? মার্চ মাসে ১৯৭১ সালে আমরা দেখেছিলাম নিক্সন সরকারের নির্লজ্জতা। কিসিঞ্জারের কুৎসিত আচরন। আর স্বাধীনতার ৪০ তম বছরে দেখলাম হিলারীর ঔদ্ধত্য ও রবার্ট ব্লেকের অসদাচরণ।
গরীবি উধাও করার কথা বলেছিলেন ড. ইউনুস। ২০৩০ সালে দারিদ্রকে জাদুঘরে পাঠাবেন বলেছিলেন। মেরুদন্ডহীনতার দারিদ, চিত্তের দারিদ্র দুর করতে পেরেছেন কি? নইলে কোর্টের রায়ের অপেক্ষা না করে, বান্ধবী হিলারীর পাঠানো পেয়াদার সংবাদ সম্মেলন কেন? এই কাজের মধ্য দিয়ে প্রমানিত হলো আইন সবার জন্য সমান এই আপ্তবাক্যে নোবেল বিজয়ীর বিশ্বাস নেই। তাই সবার জন্য ৬০ এ অবসর, তার জন্য আজীবন। সবার জন্য কোর্ট, তার জন্য কোর্টের বাইরে সমাধানের চেষ্টা ও মার্কিনি ধমক। (চলবে)

















৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×