somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুন্দরবনের পরাজয়কে অভিনন্দন!

২৮ শে নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়ই যে আমি এবং পরে আমার কিছু বন্ধু আমার সাথে যোগ দিয়ে সুন্দরবনকে নিয়ে এসএম্এস বানিজ্যের যে খেলা শুরু হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে লিখেছিলাম। কিছু মানুষ আমাদের দেশপ্রেম নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন। কিছু পত্রিকা সরাসরি প্রচারণায় নেমে পড়েছিল সুন্দরবনকে জেতাতে হবে এই লক্ষ্যে। আমাদের কথায় যুক্তিগুলোকে সরাসরি উপেক্ষা করে তারা নেমেছিলেন কোটি মানুষের আবেগ নিয়ে প্রতারণা করে কিছু মানুষের ব্যবসাকে সফল করার লক্ষ্যে। এখন তো সুন্দরবন হেরে গেছে । কেন হারলো সেটার কোন ব্যাখ্যা নেই। তারা অবশ্য বলেছেন যে সুন্দরবন আশানুরুপ ভোট পায়নি। আশা কত ছিল? আশা ছিল বাংলাদেশ থেকে ১০০ কোটি এসএম এস হবে। পাঁচ কোটি মোবাইল গ্রাহক বিশটা করে এসএমএস করবেন। এমন আশা ব্যক্ত করেছিলেন আমাদের পরিবেশ মন্ত্রী। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভোট দিয়েছিলেন। দেশের পুলিশ বাহিনী নেমে পড়েছিল প্রচারণায়। প্রতিযোগিতা শেষ হবার পর আমরা জেনেছি যে সরকার নাকি এক কোটি আশি বা নব্বই লাখ টাকা বরাদ্দ করেছিলেন স্ন্দুরবনকে ভোট দিতে প্রচারণা চালানোর জন্য।
সরকার যখন কোন টাকা বরাদ্দ দেবেন তখন সেই কাজের জন্য যথাসম্ভব যোগ্য মানুষদের নিয়োগ দেবেন। এরজন্য টেন্ডার করা উচিত ছিল। সংশোধিত পিপিপি অনুযায়ী মোট প্রাক্কলিত ব্যয় দুই কোটি টাকার উপরে গেলে অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের জন্য টেন্ডার করতে হয়। সরকার কেন যেন ঠিক দুই কোটি টাকার কিছু কম বরাদ্দ দিলেন। যাতে অনভিজ্ঞদের টাকা বরাদ্দ করা যায় সেই জন্য? সুন্দরবনকে নিয়ে প্রচারনার জন্য পুলিশ নেমে পড়ল। পুলিশের নাকি মহা সমস্যা। অপরাধ নিয়ে কিছু বলতে গেলে তারা বলেন তাদের টাকা নেই, পোষাক নেই, অস্ত্র নেই, গাড়ী নেই, লোকবল নেই। এত হাহাকারের মধ্যে থাকা আমাদের পুলিশ বাহিনী শেরাটনের কাছে একটা ডিজিটাল বোর্ড লাগিয়ে দিল, সুন্দরবনকে ভোট দিন, এই কথা বলতে, যেটা ব্যানারে ছাপলে খরচ হতো ্ওই ডিজিটাল বোর্ড এর চেয়ে বহুগুন কম। সেখানে আবার লেখা উঠছিল আর মাত্র দুদিন বাকি, একদিন বাকি। আপানার নিশ্চয়ই দেখেছেন শহরে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ এরি মধ্যে কিছু ডিজিটাল বোর্ড আগেই লাগিয়েছিল। যেখানে হাস্যকর বানান ভুলে নানা রকম ট্রাফিক উপদেশ দেয়া হয়, গাড়ী চালকদের। যার মধ্যে একটি হলো মাছ যেমন পানিতে আকাবাকা চলে তেমন করে রাস্তায় গাড়ী চালাবেন না। যাই হোক সেই বোর্ডগুলি থাকতে আলাদা করে আবার কেন একটা বোর্ড ঝুলাতে হলো পরীবাগের ওভার ব্রীজে?
পুলিশের নাকি লোকবল নেই। তাহলে শহরের কয়েক হাজার পুলিশকে টি এস সি তে জড়ো করে ভোটাভুটি করার নাখাস্তা বুদ্ধি কার মাথা থেকে এল? দেশের পুলিশের কাজ কি এরকম কাজে সরাসরি অংশ নেয়া, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট করাম প্রচারণা করা, নাকি যারা এগুলো করে তাদের নিরাপত্তা দেয়া? এধরনের কাজ তারা তাদের রাজারবাগ পুলিশ লাইনেও করেছে। পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিজে এই কাজের নেতৃত্ব দিয়েছেন। যেন সুন্দরবনকে জেতানো পুলিশের মহান দায়িত্ব। পুলিশ দিনে দুপুরে এই কাজ করেছে সরকারী কাজ বাদ দিয়ে। এটা কি বিধিসম্মত। একটি বিদেশী সংস্থার আর্থিক লাভ জড়িত ছিল এই পুরো আয়োজনে। কারন প্রতিটি এসএমএস থেকে টাকা পাবে নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন নামের এই বিদেশী প্রতারক সংস্থাটি। সেই বিদেশী প্রতারকের আর্থিক লাভের জন্য পুলিশ এর কাজ করা কি নৈতিক? কালকে কি পুলিশ চাইলে ইউনিলিভারের ক্লোজ আপ ওয়ানের জন্য ভোট সংগ্রহ করতে পারবে কিংবা মীর আক্কেলে আমাদের দেশের কোন প্রতিযোগী থাকলে তার জন্য প্রচারণা চালাতে পারবে?
এখন কিছু মানুষ রেগে গেছেন। তারা বলছেন, আরে ভাই, সুন্দরবন জিতলে তো দেশের লাভ হতো। সুন্দরবন জিতলে নাকি পর্যটকরা দলে দলে দেশে আসতেন এবং দেশ বৈদেশিক মুদ্রায় সয়লাব হয়ে যেত। প্রথম আলোর প্রথম পাতায় পত্রিকাটি ২৩ নভেম্বর লিখেছে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে একটি নৌপথে গত ছয় মাস ধরে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ টি মালবাহী নৌযান চলাচল করে। এতে করে উচ্চ শব্দ, হর্ণের হুংকার, তেল ও বর্জ্য দিয়ে বনের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে এবং প্রাণী জগতে বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। মাত্র ত্রিশটি জাহাজ চলছে যেগুলো মালবাহী। মালবাহী জাহাজে মানুষ কম থাকে। এবার চিন্তা করুন তো দলে দলে পর্যটক আসছেন এবং তারা সুন্দরবন দেখতে যাচ্ছেন। মাত্র ২৫ টি জাহাজে কি তাদের হবে? একটি জাহাজে কি পরিমান মানুষ থাকবে? তারা তো জংগলে ঢুকবেন। তখন কি হবে? ফলে সুন্দরবন জিতলে বনটাই বিলীন হবার সম্ভাবনা ছিল। কেবল ত্ইা নয় বণ্য প্রানীকে বিরক্ত করলে তাদের প্রজণন কমে যায়। বিশেষ করে বাঘের বেলায় এটি বেশী। তাই বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী বাঘের বারোটা বাজানোর এই আয়োজনে এত উৎসাহ কেন ছিল আমাদের পুলিশের এবং সরকারের? কেন প্রথম আলো এখন বুঝতে পারল মাত্র কয়েকটা জাহাজ চললে যে বনের বারোটা বাজে, সেই বনে বছরে লাখ লাখ পর্যটক ঢুকলে কি হতে পারে? কিছু মানুষ আমাকে এখন ইকো ট্যুরিজম নিয়ে জ্ঞান দিতে শুরু করবেন। সব বনে ইকো ট্যুরিজম করতে হয় না। শরীরের সব ছিদ্র দিয়ে যেমন আমরা খাই না, তেমনি সব জায়গায় পর্যটক প্রবেশ করানোর বুদ্ধি এক ধরনের অবিমৃষ্যকারীতা, ইকো ট্যুরিজম না। সবকিছু বেচে পয়সা কামাতে হয় না, কিছু জায়গার কেবল ছবি বেচতে হয়। সুন্দরবন হলো সেইরকম বন, যার ছবি দেখবে মানুষ বেশী, যাবে সেখানে কম।
এবার আসি ভোটের সংখ্যায়। আমরা আগেই বলেছিলাম যে এই প্রতিযোগিতার ভন্ড আয়োজক সংস্থা ভোটের সংখ্যা বলে না। ফলে যে ভোটের সংখ্যা গোপন থাকে সেই ভোটের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন থাকাই স্বাভাবিক। সুন্দরবন মোট কতগুলি ভোট পেয়েছে এবং অন্যান্য প্রতিদ্বন্দীরা কতটি ভোট পেয়েছে সেটা বলতে কোন সময় লাগা উচিত নয় বরং ভোট গুনেই যদি এই স্থান ঘোষণা করা হয়ে থাকে, তবে ধরে নিতে হবে প্রতিটি ভোট এর হিসাব করা হয়েছে, ফলাফল ঘোষণার আগেই। তাহলে ভোটের সংখ্যা নিয়ে এই লুকোচুরির কারন কি? কারন হলো এই ভন্ড ওয়েবার এবং তার সহযোগীরা গতবারের মতো এবারো বলেছে এবং আরো বলবে যে তাদের কোন লাভ হয়নি। ভোটের সংখ্যা বলে দিলে আপনি আন্দাজ করতে পারবেন যে কি পরিমান আয় হতে পারে। এটা বুঝলে লস এর হিসাব দেয়া কঠিন । তাই তারা ভোটের সংখ্যা বলে না, স্পন্সরশীপের অর্থ লুকিয়ে রাখে। তবে মালদ্বীপের কাছে তারা পাঁচ লাখ ডলার এর সুবিধা চেয়েছিল এটা মালদ্বীপ সরকারীভাবে বলেছে। এটাকে সাধারন মান ধরে নিলে বলতে হয় অন্তত ২৮ টি প্রতিযোগীর কাছ থেকে এক কোটি চল্লিশ লাখ ডলার এমনিতেই তারা আদায় করেছে হয়তো। টাকার অংকে এটি প্রায় একশ পনের কোটি টাকার মতো। এর বাইরে আছে স্পন্সরশীপ ও এস এম এস থেকে পাওয়া আয়। কিন্তু আগেরবারো তারা বলেছিল তাদের কোন লাভ হয় নাই, এবারো তারা বলছে তাদের কোন লাভ হয় নাই।
আমাদের দেশে সুন্দরবনকে ভোটাভুটির জন্য স্পন্সর যোগাড় করা হয়েছিল। একটি বেসরকারী ব্যাংক টাকা দিয়েছে বলে আমরা জেনেছি। আমাদের এখানে যারা এগুলো করলেন, তারা কি তাদের এই মহৎ চাঁদাবাজী করে সংগৃহিত আয়ের হিসাব দেবেন? তাদের কি কোন লাভ হয় নি? শুনেছি বিটিআরসি প্রতি এস এম এস এ টাকা পেয়েছে। বিটিআরসি কি বলবে কত টাকা তারা পেল? তার মানে সুন্দরবন হারলেও কিছু মানুষের আয় ঠিকই হয়েছে আর বৃহত্তর জনগণ প্রতি ভোটের জন্য ২ টাকা ত্রিশ পয়সা করে দিয়েছেন। যারা বিশটি ভোট দিয়েছেন তাদের খসেছে ছেচল্লিশ টাকা। শুনেছি মানননীয় প্রধানমন্ত্রীও ভোট দিয়েছেন। তাহলে তারো পকেট থেকে গেছে ছেচল্লিশ টাকা আর এর মধ্য থেকে তের টাকা ষাট পয়সা গেছে ভন্ড প্রতারকের হাতে। এবার আরেকটি প্রশ্ন। দেশ থেকে টাকা বিদেশে পাঠাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি লাগে। এই প্রতারকরা কোটি টাকা কোন পথে নিয়ে যাবে কিংবা যাচ্ছে?
ইন্দোনেশিয়াও এটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। তাদের পর্যটন মন্ত্রনালয়কে এই আয়োজকরা পুরষ্কার বিতরনীর সকল খরচ বহন করে হোস্ট নেশন হতে চাপ দেয়। সরকার রাজী না হওয়াতে তারা কমোডো ন্যাশনাল পার্কের প্রস্তাবকারী হিসেবে মন্ত্রনালয়ের নাম কেটে দেয় এবং এটিকে বাদ দেয়ার হুমকি দেয়। তাদের মন্ত্রী জিরো ওয়াচিক এই সংগঠনের বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়ার ভাবমূর্তী নষ্ট করার চেষ্টার দায়ে মামলা করার কথাও বলেছেন। এই লিংকটি দেখুন যঃঃঢ়://িি.িঃযবলধশধৎঃধমষড়নব.পড়স/যড়সব/রহফড়হবংরধ-ঁহফবৎ-ধঃঃধপশ-নু-হব৭িড়িহফবৎং-ভড়ঁহফধঃরড়হ-ঃড়ঁৎরংস-সরহরংঃৎু/৪২৩০১২ এবং এই লিংকটি দেখুন যঃঃঢ়://িি.িঃযবলধশধৎঃধঢ়ড়ংঃ.পড়স/হবংি/২০১১/০২/০৮/শড়সড়ফড়-সধু-নব-৭ড়িহফবৎং-ষরংঃ-ধভঃবৎ-ৎর-হরীবং-ঢ়ধুসবহঃ.যঃসষ তারা ইন্দোনেশীয় সরকারের কাছে চেয়েছিল দশ মিলিয়ন বা এক কোটি ডলার। অথচ পরে তারা কমোডোসকে প্রতিযোগীতায় রেখে দেয় এবং কোন অফিসিয়াল সমর্থন না থাকলেও তাতে তারা প্রথম সাতের মধ্যেও রেখেছে। তার মানে তারা এই প্রতিযোগীতায় কোন স্বচ্ছ নিয়মকানুন অনুসরন করে নাই। আমাদের বেলায় সমর্থক কমিটি লাগে, আর অন্যদেশ নাম তুলে নিলেও তারা থেকে যায় এবং নির্বাচিতও হয়।
এরা যে ফলাফল ঘোষণা করেছে সেটি ইউটিউবে দেখা যায়। হাস্যকর এই ভিডিওটি বাংলাদেশের যে কোন টিভি চ্যানেলের জঘন্যতম ভিডিওটির চেয়েও সস্তা, আড়ম্বড়হীণ এবং ্ এই ভিডিওর শুরুতে তাদের হেড অফিসের একটি ছবি দিয়েছে যেটি আসলে কারো বাসা। সংগঠনটির কর্মকর্তারা দুবাই গিয়ে সেখানের একটি দ্বীপকে এই প্রতিযোগিতায় এনেছিলেন। দুবাই যারা গেছেন তারা জানেন সেখানে এমন কোন আহামরি কোন দ্বীপ নেই যেটি প্রাকৃতিক আশ্চর্য হতে পারে। আসলে তারা টাকার ধান্দা করছিলেন। এই কারনে তারা দেশে দেশে ঘুরছেন। মাঝে কোলকাতা থেকে কিছু ডক্টরেট দেয়া হতো। বাংলাদেশের একটি পত্রিকার সম্পাদক, একজন নামকরা গায়িকা, হালে একটি চ্যানেলের মালিক এরকম ডক্টরেট কিনে এনেছেন। সেভেন ওয়ান্ডার্স সংগঠনটি সেই রকম একটি সংগঠন যারা নিজেদের লাভের জন্য প্রচারনা চালিয়ে এরি মধ্যে স্বীকৃত কিছু প্রাকৃতিক আশ্চর্যকে প্রতিযোগিতায় নামিয়ে আমাদের সেরকম ভুয়া ডক্টরেটের লোভ দেখিছেন । এভারেস্ট, সুন্দরবন, কক্সবাজার, নায়াগ্রা কিংবা গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ, গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের জন্য কি ভোটাভুটি করে প্রমান করার দরকার আছে তাদের অভিনবত্ব বা শ্রেষ্ঠত্ব? ভোটে বাদ পড়ে গেছে বলে কি কক্সবাজার পর্যটন তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাবে? ভোটে ছিল না বলে কি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাক্ষেত্র কাশ্মীর বা তিব্বত কাল থেকে অসুন্দর হয়ে যাবে?
বাংলাদেশে পর্যটক আনতে হলে চাই পর্যটন মহাপরিকল্পনা। চাই পরিকল্পিত বিনিয়োগ। মালয়েশিয়ার গেনটিং বা পেনাং, সিংগাপুরের সেন্টোসায় যেভাবে পরিকল্পিত বিনিয়োগ এনে একে পর্যটনের ক্ষেত্রে পরিনত করা হয়েছে , সেভাবে চেষ্টা না করে, এস এম এস পাঠিয়ে ২৩০ কোটি টাকার খেলা করে, এই হাস্যকর পুরস্কার বা প্রতিযোগিতা আমাদের কিছুই দেবে না। আমরা কেবল কক্সবাজারে যদি পর্যটনের জন্য নানা ধরনের আয়োজন, যেমন প্যারা সেইলিং, হট এয়ার বেলুন, কেবল কার, থীম পার্ক, গলফ ক্লাব, ক্যাসিনো বা অন্যান্য পর্যটন আকর্ষন গড়ে তুলতাম, তবে অতি সহজে অনেক বেশী পর্যটক পেতাম। রাজশাহী কিংবা কক্স বাজারে চাইলে বাঞ্জি জাম্পিং এবং স্কাইডাইভিং এর ব্যবস্থাও করা সম্ভব। সম্ভব ট্রেকিং, হাইকিং, সাইক্লিং, মোটর র‌্যালী, রেসিং ট্র্যাক, স্কুবা ডাইভিং এর ব্যবস্থা করা। চাইলে সেন্ট মার্টিন বা কুতুবদিয়াকে প্রাকৃতিক সামুদ্রিক জাদুঘরে পরিনত করা সম্ভব। আন্ডার ওয়াটার অ্যাকুরিয়াম বানানো সম্ভব।
আমাদের পর্যটন শিল্পকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য যে প্রস্তুতি বা পরিকল্পনা দরকার সেটি করার জন্য সরকারের কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। কেবল একটি বিজ্ঞাপন বানিয়ে সেটি ক্রিকেট খেলার দিন দেখিয়ে খুব বাহবা নিয়েছেন সবাই। দেশের শহরে কোন পাবলিক টয়লেট নেই, ভাল যানবাহন নেই, বিদেশীদের থাকার জন্য নিরাপদ সস্তা হোটেল নেই। দেশের পুলিশ বিদেশীদের নিরাপত্তা দিতে পারেন না। কিছুদিন আগে দেশে বেড়াতে আসা বিদেশী সাংবাদিক এবং অতিথিদের ছিনতাইয়ের কবলে পড়ার খবর আমরা পত্রিকাতে পড়েছি। অথচ ভোট দিয়ে সুন্দরবনকে জেতানোর জন্য পুলিশের উৎসাহের কমতি নেই। যার যা কাজ সেটা না করে অন্য কাজে এত আগ্রহের কারন কি? বিদেশীরা যে সুন্দরবন দেখতে আসবেন, সেখানে নিরাপত্তা দেবার মুরোদ আছে পুলিশের?
বাংলাদেশে ট্যুর গাইড হবার মতো যথেষ্ট ইংরেজী জানা বা বিদেশী ভাষা জানা মানুষের অভাব আছে। দেশের অধিকাংশ হোটেল রেস্তোরায় ইংরেজী মেন্যু নাই। দেশের কোন রাস্তায় ভাল কোন রোড সাইন নাই। শহরগুলির বা পর্যটন এলাকাগুলির কোন ম্যাপ নাই, যেটা দেখে আপনি কিছু খুঁজে বের করতে পারবেন। ফুটপাথে হাটার ব্যবস্থা নাই। সুন্দরবন যদি জিতত এই খেলায় তবে পর্যটক কি তার দেশ থেকে সোজা এসে সুন্দরবনে নামত হেলিকপ্টার কিংবা প্যারাশুট দিয়ে? ঢাকা পার হয়ে সুন্দরবন পর্যন্ত কিভাবে যেতে হয় সেটা দেশের অধিকাংশ মানুষ বলতে পারবে না। সেখানে বিদেশীরা কি করত? শুধু বাঘ দেখার জন্য বিদেশীদের সুন্দরবন আসার প্রয়োজন পড়ে না। সিংগাপুরের চিড়িয়াখানাতে অসাধারন পরিবেশে রয়েল বেঙ্গল টাইগার রাখা আছে। ওটা দেখলেই চলে। মজার বিষয় হলো আমাদের দেশের চিড়িয়াখানাতে বাঘ এর চেয়ে অনেক খারাপ পরিবেশে থাকে।
দেশকে ভালবাসলে তাকে দৌড় প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দিয়ে প্রথম বানানোর খেলা না খেলে, তাকে দৌড়ে জেতার মতো সক্ষম জায়গায় নিয়ে যাওয়া বেশী জরুরী। আমাদের দরকার অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত উন্নয়ন। আমাদের চাই অবকাঠামো ও উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ। সেসব না করে পর্যটন দিয়ে আয় করতে চাইলে কখনো সফল হওয়া যাবে না। কারন আমাদের পাশের দেশে পর্যটনের জন্য এতসব বড় বড় জায়গা থাকতে, আমাদের দেশের ষোল কোটি মানুষের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে ট্রেন বাসে চড়ে সুন্দরবন দেখতে কেউ আসবে না কারন সুন্দরবনে যেতে চাইলে সেটাও ভারতের ভেতর থেকেই যাওয়া যায়। দুটো ভিসা করে, ঢাকা এসে আবার খুলনা যাওয়ার চাইতে কোলকাতা খেকে বন দেখতে যাওয়া বেশী সহজ।
বিদেশীদের পর্যটনে আগ্রহী করে তুলতে চাইলে যে পরিকল্পনা চাই, সেটা না করে, আমরা যোগ দিয়েছি পয়সা দিয়ে যত খুশী, যেমন খুশী ভোট দেবার অসভ্য খেলায়। এই খেলায় জেতার চাইতে হেরে যাওয়া ভালো হয়েছে। কারন যে ভোটে যার যত টাকা, তার তত ভোটের সম্ভাবনা, সেই ভোটে যারা অংশ নেয় তারা হয় নির্বোধ নয়তো দূর্নীতিবাজ। আসুন আমরা সবাই মিলে এই প্রতিযোগিতাতে সুন্দরবনের পরাজয়কে অভিনন্দন জানাই। কারন এর ফলে সুন্দরবন ও তার জীব ও উদ্ভিদবৈচিত্র আশূ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।
এবার যারা আমাদের দেশপ্রেমহীন বলে গালাগাল করেছিলেন তাদের উদ্দেশ্যে বলি, অন্ধ আবেগে আক্রান্ত হয়ে দেশপ্রেমহীন বলে গালাগাল দিয়ে আমাদের দুঃখ দিয়েছিলেন কেবল। কিন্ত দেশকে ও দেশের মানুষকে একদল প্রতারকের হাত থেকে বাঁচানোর কথা বলায় যদি আমরা দেশপ্রেমহীন হই, তবে এরকম হতে আপত্তি নেই। সপ্তাশ্চর্যের লোভ দেখিয়ে দেশের মানুষের পকেট কেটে টাকা বের করে নেবার এই ধান্দাবাজি নিয়ে কথা বলা যদি অপরাধ হয়ে থাকে তবে আমি এরকম অপরাধ আরো করতে রাজী আছি। দয়া করে আপনাদের কাছে অনুরোধ, এই ভোটাভুটিতে সরকার কত ব্যয় করলো, আমরা কত করলাম এবং স্পন্সর রা কত খরচ করলো এর একটি স্বচ্ছ হিসাব দেবেন কি? বলবেন কি যে দেশে প্রতিদিন সরকার ভর্তুকী আর খরচের হিসাব মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে সেখানে সরাসরি সিডরে আক্রান্তদের ত্রান না দিয়ে আমরা সুন্দরবনের ঢোল বাজিয়ে টাকা খরচ করে কি পেলাম। এখনো সিডর ও আইলা আক্রান্তদের পুণর্বাসন শেষ হয়নি। এখনো জলাবদ্ধতা দুর হয়নি। বাংলাদেশের পুলিশ সেখানে না গিয়ে সেজেগুজে টি এস সি তে বসে থাকে কেন? দেশের মানুষের পকেট কেটে এরকম প্রতিযোগিতা হয়তো আরো হবে, তবে এখন থেকে সাবধান। মানুষ ঠকানো এখন আর আগের মতো সহজ না। মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে তারা জানে কোথায় ভোট দিতে হয় আর কোথায় হয় না। সেটা সিটি কর্পোারেশনের নির্বাচনেই হোক আর সুন্দরবন নিয়ে জুয়াখেলাতেই হোক।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:৫৩
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×