এই বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কাঠ মোল্লারা দাবি করছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালন করা হারাম । তাদের সাথে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্লগে যে সব তর্ক হয়েছে সেই বিষয় গুলো নিয়ে কিছু আলোকপাত করতে চাই । তাদের যুক্তির সাথে পাল্টা যুক্তি দেওয়া হচ্ছে এই লেখাটিতে ।
মোল্লার বয়ান :: এই দিনের নাম সেইন্ট ভ্যালেনটাইনের নামে রাখা হয়েছে, সে একজন খৃষ্টান , তাই হারাম
তাহোলে আর্কিমিডিসের সূত্র, নিউটনের সূত্র, পিথাগোরাসের সূত্র , আইন্সটাইনের সূত্র -- সব গুলোকে হারাম বলতে হবে কারন ঐ সূত্র গুলোর নাম রাখা হয়েছে তাদের নামে এবং তারা মুসলমান নহে ।
মোল্লার বয়ান ::: এই দিন অবিবাহিত ছেলেরা মেয়েদের প্রেম নিবেদন করে !
এটা কোন বাধ্যতা মূলক বিষয় নহে যে শুধু ছেলেরা এই দিবসে প্রেম নিবেদন করবে এবং বৎসরের ৩৬৪ দিন করবে না । এই দিনে প্রেম নিবেদন করলে মেয়েরা সেটা গ্রহন করতে বাধ্য -- এমন কোন আজগুবি অবলিগেশন কোথাও নেই ।
মোল্লার বয়ান :: এই দিন প্রেমিক যুগল যৌন লিলায় মত্ত হয় !
কোন প্রেমিক যুগলের সম্পর্ক যদি চরম পর্যায় চলে যায়, তাহোলে তারা ডেটিং যে কোন দিনই করতে পারে । ব্যপারটা এমন নহে তারা শুধু বৎসরে একবার ঐ দিন ডেটিং করে এবং বাকি ৩৬৪ দিন ডেটিং করে না ।
ভালোবাসার দিবস শুধু মাত্র প্রেমিক প্রেমিকার ডেটিং এর মধ্য সীমাবদ্ধ নহে । এই দিবস বর্তমানে সবার মধ্য ভালোবাসার যেমন বাবা মা বা ভাই বোন বা বন্ধু বান্ধব বা পাড়াপড়শী বা মানুষে মানুষে ভালোবাসার বন্ধন হিসাবে মূলত পালন হয় ।
মোল্লার বয়ান :: এই দিবস খৃষ্টান ধর্মের রিচুয়াল তাই হারাম
সেইন্ট ভ্যালেনটাইনের ঘটনাটা ঘটে যিশু খৃষ্ঠ মারা যাবার প্রায় ২৫০ শত বৎসর পরে এবং এই ব্যপারে বাইবেলে কোন নির্দেশ নেই এবং খৃষ্টানরা ধর্মীয় ভাবে গীর্জায় গিয়ে কোন রিচুয়াল করে না , তাহোলে এটা কি করে ঐ ধর্মের রিচুয়াল হোল । এখানে উল্লেখ যোগ্য হোল বর্তমানে আমাদের দেশে খৃষ্টান মহিলাদের মাথায় হিজাব পড়ার রিচুয়াল পালন করা শুরু হয়েছে অনেক মহিলাদের ভিতর কিন্তু মাওলানরা আশ্চর্য জনক কারনে দাবি করছে এটা নাকি ইসলামিক কালচার । এক কালে বেশির ভাগ খৃষ্টান মহিলারা মাথায় ভেইলিং হিজাব পড়তো কিন্তু বর্তমানে এটা শুধু মাত্র নান রা পরিধান করে । ভ্যালেনটাইন দিবস খৃষ্টানদের রিচুয়াল নেহ কিন্তু তারা সেটা তাদের রিচুয়াল বলে দাবি করে কিন্তু যেটা সত্যই খৃস্টানদের রিচুায়াল সেটাকে ইসলামিক বলে দাবি করে ।
এবার আমরা যদি ভ্যালেনটাইন দিবসের ইতিহাসটা দেখি, সেখানে অন্য রকম চিত্র দেখতে পাই । ঐ সময়ের কোন এক রাজা , সম্ভবত রোমান কোন রাজা -- যুবক সৈনিকদের বিবাহ করাকে নিষিদ্ধ করে ছিল, তার ধারনা হয়েছিল, বিবাহিত সৈনিকরা ভালো যোদ্ধা হতে পারে না, তাই । এই পরিস্থিতিতে অবিবাহিত সৈনিকদের মধ্যে ব্যপক বিরুপ ক্রীয়া হয় , তারা গোপনে তাদের প্রমিকাদের সাথে মেলে মেশা অব্যাহত রাখে, যেটা অনেকটা ব্যাভিচারের পর্যায় চলে যায় । তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাইলেও, ভয়ে কোন জাজক তাদের বিয়ে দিতে সাহস করে না । তখন সেইন্ট ভ্যালেনটাইন জীবনের ঝুকি নিয়ে গোপনে এই সমস্ত যুগলদের বিয়ে দিয়ে দিতে শুরু করে । এক সময় বিষয়টি রাজার কাছে ধরা পড়ে এবং রাজার আদেশ অমান্য করার জন্য তাকে ফাসি দিয়ে হত্যা করা হয় ।
আমাদের মোল্লারা কোন জগতে বাস করে , সেটা আল্লাহ ছাড়া কেহই জানে না । সেইন্ট ভ্যালেনটাইন যা করেছে সেটা রাজার কাছে অপরাধ হতে পারে কিন্তু বিবাহে আগ্রহি সৈন্যদের রাজার আদেশ অমান্য করে গোপনে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার কাজটি-- কি কারনে কাঠ মোল্লাদের কাছে অপরাধ , সেটা কিছুতেই বোধগোম্য হোল না ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:১৮