আওয়ামী (মুসলিম) লীগের প্রতিষ্ঠাতা মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। রাজনীতিবিদ মানে যেখানে প্রবঞ্চক, মিথ্যুক ও লোভী সেখানে এই রেড মাওলানা ছিলেন সম্পূর্ণ উলটো।
অত্যাচারী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যেমন ছিলেন বজ্রকণ্ঠী ঠিক তেমনই যখন মুসলিম লীগ পাকিস্তানী পাঞ্জাবীদের পদলেহী হয়ে যায় তখন তিনিই প্রথম পূর্ব পাকিস্তানের গণমানুষের অধিকার আদায়ের জন্য ১৯৫০ সালে গড়ে তোলেন আওয়ামী মুসলিম লীগ যা পরে বাংলাদেশে বসবাসকারী অমুসলিম জনগণকে ইনক্লুড করার নিমিত্তে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে দেন তাঁর রাজনীতিক শিষ্য শেখ মুজিবুর রহমান।
মাওপন্থী ভাবধারার এই লোক তার কম্যুনিস্ট চিন্তাধারার জন্য 'লাল মৌলভী' বা Red Moulana নামে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু ভাসানী বামপন্থী বলে কখনোই ইসলামবিদ্বেষী বা তেমন ছিলেন না। ব্যক্তি জীবনে তিনি প্র্যাক্টিসিং মুসলিম ছিলেন এবং অমুসলিম ও সমাজের আপাত 'অচ্ছুৎ' লোকদের সাথে সমানে ওঠাবসা ছিলো। তিনি সম্ভবত একমাত্র পলিটিশিয়ান ছিলেন যিনি দেশ-বিদেশের রাষ্ট্রনায়কদের সাথে এক টেবিলে যেমন ডিয়ার করতে পারতেন তেমনই নিজে হাতে রান্না করে মেথর-ডোম ইত্যাদি গোত্রের লোকদেরও আপ্যায়ন করতে পারতেন। তিনি একজন সফল সংগঠক ছিলেন।
১৯৫৭ সালে কাগমারীতে তিনিই প্রথম পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের 'ওয়ালাকুমুসসালাম' বলে পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতার ঐতিহাসিক ডাক দেন।
১৯৭৬ সালে আজকের এই দিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি ৯৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তার জানাজার নামাজ উপমহাদেশে অন্যতম বৃহৎ যা তাঁর তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তাকে তুলে ধরে।
আজীবন আপসহীন, সাম্রাজ্যবাদ-আধিপত্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম আর জাতীয়তাবাদী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মহান সাধক মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। উপ মহাদেশের তথা স্বাধীন বাংলাদেশর নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর মজলুম জননেতা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধা। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহ্ তাঁকে জান্নাত-উল-ফেরদৌস দান করুক।