আলম সাহেব ফুরফুরে মেজাজে অফিসে ঢুকলেন। আজ সকালের নাস্তাটা তার মনের মতো হয়েছে। গরম গরম পরোটা, কবুতর ভুনা, ডিমভাজি। তিনি তার ডেস্কে বসে আগুন গরম এক কাপ কফি খেলেন। কফি শেষ করে কাজ নিয়ে বসলেন। তিনি কাজ করেন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ক্রেডিট ডিভিশনে। টানা দু’ঘন্টা কাজ করলেন। কাজ মোটামুটি গুছিয়ে এনেছেন, এমন সময় ‘কার্ড সেকশনের’ সাদেক সাহেব সামনে এসে দাড়ালেন। বললেন,
আলম সাহেব খবর শুনেছেন?
কোন খবর?
আগামী শুক্র ও শনিবার ব্যাংক খোলা।
আলম সাহেব অবাক হয়ে বললেন, কেন?
সামনে তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন না? প্রার্থীরা যাতে শেষ সময়ও জামানতের টাকা জমা দিতে পারে, তাই ব্যাংক খোলা রাখতে বলেছে।।
শুনে আলম সাহেবের রাগ লাগছে। ব্যাংকাররা দুটো দিন নিজের দিকে তাকানোর সুযোগ পায়। চুল-নখ কাটা থেকে শুরু করে শপিং, ডাক্তারের কাছে যাওয়া, সামাজিক মেলামেশা, ঘুরতে যাওয়া সবকিছু এ দুটো দিনে সারতে হয়। এর মধ্যে যদি ছুটি বাতিল হয়! সপ্তাহের অন্য পাঁচদিন তো দৌঁড়ের উপর থাকতে হয়।
তিনি মুখ বিকৃত করে বললেন, ব্যাংকারদের ছুটির উপর যত হামলা আসে! ঈদে মানুষ টাকা তুলতে পারেনি, দাও ঈদের আগের দিনও ব্যাংক খুলে। গরুর চামড়া কেনতে দালালরা টাকা তুলবে-দাও ব্যাংক খুলে। মনে হয় ব্যাংকাররা মানুষ না! রোবট!!
সাদেক সাহেব বললেন, ঠিক বলেছেন। ব্যাংকাররা ছুটি কাটাবে এটা মনে হয় অনেকে সহ্য করতে পারে না।
আলম সাহেব বললেন, পত্রিকার কথাই ধরেন না। পরপর ছুটি পাওয়া গেলে ফলাও করে হেডলাইন আসে- সাতদিনের ছুটির ফাঁদে দেশ। যেন চাকরিজীবিদের সাতদিন ছুটি কাটানো মহাঅপরাধ। নাহ, চাকরি করে আর পোষাবে না।
আলম সাহেব অনেকদিন থেকেই নিজে ব্যবসা করার চিন্তা করছেন। ভাবছেন এতে করে তিনি স্বাধীন ও আরো স্বচ্ছল জীবনযাপন করতে পারবেন। চাকরি ছাড়ি ছাড়ি করতে করতে তিনি একদিন হুট করে ম্যানেজারের কাছে রিজাইন লেটার দিয়ে দিলেন।
দুই
পাঁচ বছর পরের কথা। আলম সাহেব দিলকুশায় তার অফিসে বসে আছেন। ঝকঝকে তকতকে অফিস। পাঁচ বছরে তিনি মোটামুটি তার বায়িং হাউস ব্যবসাটা দাড় করিয়ে ফেলেছেন। মার্কেটিং বিভাগের ম্যানেজার তার চেম্বারে ঢুকলেন। বিনীত ভঙ্গিতে বললেন,
স্যার, ডেনমার্কের শিপমেন্টটা করা সম্ভব হয়নি।
আলম সাহেব রিভলভিং চেয়ারে হেলান দিয়ে বসেছিলেন। খবরটা শুনে তিনি টানটান হয়ে বসলেন।
কঠোর মুখে বললেন, কেন?
ঢাকা-চট্টগ্রামের রাস্তায় জ্যাম। কাভার্ড ভ্যান সময়মতো চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাতে পারেনি।
আমাদের হাতে তো এখনও চারদিন সময় আছে।
ম্যানেজার সাহেব কাঁচুমাঁচু মুখে বললেন, স্যার সময় নাই। ছুটির ফাঁদে পড়ে গেছি। ১৫ই আগষ্ট সরকারী ছুটি। ১৬ ই আগষ্ট শবে কদর। ১৭ ও ১৮ তারিখ সাপ্তাহিক ছুটি।
আলম সাহেব মনে মনে একটা কুৎসিত গালি দিলেন। যন্ত্রনায় তার মুখ বিকৃত হয়ে গেছে। তীব্র ক্ষোভের সাথে বললেন, এই দেশে ব্যবসা করব কিভাবে? বছরে এত ছুটি! উন্নত দেশে এত ছুটি কাটায়? সপ্তাহে দু’দিন ছুটি রাখার মানে কি?