somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নেতা

১৪ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শাহজাহান সাহেব ফজরের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হলেন। চারদিক ঘন অন্ধকার। এতক্ষনে আকাশ হালকা ফর্সা হয়ে যাবার কথা। তিনি আকাশের দিকে তাকালেন। আকাশের অবস্থা ভালো না। বৃষ্টি নামতে পারে। তিনি ইতস্তত করছেন। হাঁটতে যাবেন? একদিন না হাঁটলে সারাটা দিন কেমন অস্বস্তিতে কাটে। তিনি ধীর পায়ে পার্কের দিকে হাঁটতে শুরু করলেন।
গলিটা বেশ নির্জন। কোনো দোকানপাট খুলে নাই। কিছুক্ষন আগেও দু‘একজন মুসল্লি রাস্তায় ছিল। এখন যার যার ঘরে ঢুকে গেছে। দু’একটা কুকুর রাস্তায় কুন্ডলি পাকিয়ে শুয়ে আছে।
শাহজাহান সাহেব হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলেন। বিদ্যুৎ চমকানী শুরু হয়েছে। গলির মাথায় আসতেই বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি নামল। তিনি প্রায় দৌড়ে চা-সিগারেটের একটা ছোট্ট দোকানে ঢুকলেন। দোকানটা সবেমাত্র খুলেছে। বিশ-একুশ বছরের একটি ছেলে দোকানের জিনিসপত্র ঝাড়পোছ করছে। তিনি ঢুকতেই লম্বা টুলটা পরিষ্কার করে দিল।
স্যার বসেন।
শাহজাহান সাহেব বসলেন। শ্রাবণ মাসের বৃষ্টি। সহজে থামবে বলে মনে হচ্ছে না।
ছেলেটা বিশাল এক কেটলিতে চা পাতি চড়াল। তারপর পাখির পালকের একটা হাত ঝাড়– নিয়ে জিনিসপত্র ঝাড়তে লাগল। জিনিসপত্র তেমন নাই। মুড়ি, চানাচুর, বিস্কুট ও চকলেটের কিছু বৈয়াম, হরেকরকম সাবান, গুড়ো সাবান, সিগারেট আরও কি কি যেন।
স্যার চা দেই।
খালি পেটে তিনি চা খান না। তারপরও বললেন, দাও। সাথে দুটো বিস্কুট দিও।
তুমুল বেগে বৃষ্টি নেমেছে। তিনি চা খেতে খেতে বৃষ্টি দেখতে লাগলেন। হঠাৎ বৃষ্টির ঝাপটা দোকানের ভেতর আসতে লাগল। তিনি পা উঠিয়ে বসলেন। এই বয়সে বৃষ্টির পানি গায়ে লাগলে ঠান্ডা লাগতে পারে। ছেলেটি দোকানের ঝাঁপ ফেলে দিল। বিরক্তমুখে বলল, এইবার অসময়েই বৃষ্টি শুরু হল।
তিনি কিছু বললেন না। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। সাথে গুড়–ম গুড়–ম শব্দ। হঠাৎ প্রচন্ড শব্দে বজ্রপাত হল। কানে তালা লাগার অবস্থা। সাথে সাথে বিদ্যুৎ চলে গেল। ভোরবেলাই রাতের অন্ধকার নেমে এল। ছেলেটি হাতড়ে হাতড়ে মোমবাতি জ্বালাল। ষ্টোভ থেকে শো শো শব্দ হচ্ছে। সে চুলার জ¦াল কমিয়ে দিল। বৃষ্টি না থামা পর্যন্ত কাষ্টমার আসবে না।
শাহজাহান সাহেব লক্ষ করলেন দোকানে একটা ছোট সাইনবোর্ড ঝুলছে।
‘বাকিয়া চাহিয়া লজ্জ¦া পাবেন না’।
অভিনব উপস্থাপন। তিনি মনে মনে হাসলেন। বেশিরভাগ দোকানে লেখা থাকে-‘বাকি চাহিয়া লজ্জ¦া দিবেন না’। তবে কোনো কোনো মুদি দোকানে তিনি ছন্দের আকারেও লেখা দেখেছেন।
‘নগদ বিক্রি পেটে ভাত,
বাকী দিলে মাথায় হাত’।
কিংবা ‘যদি চান ভালোবাসা
না করিবেন বাকীর আশা
বাকীতে বন্ধু নষ্ট
বাকী দেয়া বড়ই কষ্ট’।

প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টির সময় মানুষ পাশের মানুষের প্রতি বেশ আগ্রহী হয়ে উঠে। তিনিও ছেলেটির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠলেন। আন্তরিক ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলেন, সারাদিন বেচাকেনা কেমন?
দিন চলে যায় স্যার। ছোটোমোডো দোকান।
লোকজন বাকী খায়?
খায় না আবার? বাকীর জ্বালায় দোকান বন্ধ হওয়ার অবস্থা। স্যার মুড়ি দেব?
মুড়িও আছে?
জি।
ছেলেটি চা-মুড়ি দিল। শাহজাহান সাহেব আয়েশ করে চা মুড়ি খাচ্ছেন। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি ছেলেটি সম্পর্কে যা জানলেন-তার নাম নাসির। বাড়ি লালমনিরহাট। বাবা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক। বাবা-মা ছাড়াও বাড়িতে ছোট একবোন আছে। ক্লাশ এইটে পড়ছে। সে নিজেও বিএ পাশ। ঢাকায় এসেছে চাকরির খোঁজে। কোন ব্যবস্থা করতে না পেরে এই দোকান নিয়ে বসেছে।
বৃষ্টির ঝাপটা কমে এসেছে। হয়তো বাতাস ঘুরে গেছে। নাসির ঝাঁপ তুলে দিল। বৃষ্টি বেশ জোরেসোরেই হচ্ছে। টিনেরচাল হলে প্রচন্ড ঝমঝমানী শব্দ শোনা যেত। এখন রাস্তা থেকে শোনা যাচ্ছে। তিনি মুড়ি চাবাতে চাবাতে বৃষ্টি দেখতে লাগলেন। রাস্তায় আটকা না পড়লে আজকাল বৃষ্টি দেখা হয় না। বিদ্যুৎ চলে এসেছে। নাসির আগরবাতি জালিয়ে ক্যাশের এককোনায় গেঁথে দিল। তারপর ক্যাশবাক্সে হাত দিয়ে সেলাম করে তার ছোট্ট গদিতে চুপচাপ বসে রইল। দোকানদারদের এই ভক্তি তার ভালো লাগে। রোজগারে যত অনিশ্চয়তা, ভক্তি তত বেশি।
ছাতা মাথায় একলোক দৌড়ে দোকানে ঢুকল। ছাতা থাকলেও সে এমনভাবে ভিজেছে মনে হয়, বৃষ্টিতে ভেজারপর সে ছাতা খুলেছে। নাসির একটা বসার টুল এগিয়ে দিয়ে বলল, ভাই গামছা দিব? ধোয়া গামছা আছে। লোকটি গামছা দিয়ে মাথা মুছে এককাপ চা খেল। তারপর বেরিয়ে গেল। জামা-কাপড় ভেজা বলে হয়তো বসল না। নাসির ভেজা গামছা দোকানের পেছনে মেলে দিল। সেখানে একট বিছানা গুটাটো।
শাহজাহান সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, দোকানে শোও?
জি স্যার।
এত ছোট্ট জায়গায় ঘুমানো যায়?
নাসির হাসিমুখে বলল, টানটান হয়ে শুয়ে থাকি। একঘুমেই রাত পার।
ছেলেটির সন্তুষ্টভাব তার ভালো লাগল। যেকোন পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট থাকা আজকাল দেখা যায় না।
আকাশ পরিস্কার হয়ে এসেছে। কিন্তু বৃষ্টি কমছে না। তিনি ঘড়ি দেখলেন। সাড়ে সাতটা। আধঘন্টার মধ্যে বৃষ্টি না থামলে তিনিও বের হয়ে যাবেন। আধঘন্টার পর দেখা গেল বৃষ্টি কমেছে কিন্তু পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। ঝিরঝিরে বৃষ্টি আছেই। তিনি রাস্তায় নামলেন। আশেপাশে একটা রিক্সাও নেই। তিনি দ্রুত বাসার দিকে হাঁটতে শুরু করলেন। কিছুদুর যাবার পর আবার ঝাকিয়ে বৃষ্টি নামল। তিনি থামলেন না। ন’টায় অফিস ধরতে হবে। কিছুতেই দেরি করা যাবে না। তার পঁচিশ বছর চাকরি জীবনে কখনো দেরি করে অফিসে যাননি।
দুই
শাহজাহান সাহেব দশদিন পর পার্কে এসেছেন। পাকের ভেতর সরু রাস্তা দিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটছেন। ভোরের ফুরফুরে হাওয়া গায়ে লাগতেই তার মন চনমনিয়ে উঠল। যদিও শরীর খুব দূর্বল। সেদিন বৃষ্টিতে ভিজে জ্বরে পড়লেন। সাতদিন বিছানায় কাটাতে হল। পঁচিশ বছর বয়সে দেহ যা সহ্য করতে পারে, পঞ্চাশে তা পারে না। হাঁটা শেষে তিনি পার্ক থেকে বের হয়ে এলেন।
নাসিরের দোকানের সামনে দিয়ে যেতেই সে সালাম দিল।
স্যার ডাব খেয়ে যান।
ডাব রেখেছ?
জি স্যার। পার্ক ফেরত লোকজন খায়। খুব চাহিদা।
নাসির একটা ডাব উঠিয়ে কাটতে শুরু করল। এখনো কাটা ভালোভাবে রপ্ত করে উঠতে পারেনি।
ডাব খাওয়ার সময় সে আপনজনের মতো জিজ্ঞেস করল, স্যার এতদিন দেখিনি। পার্কে আসেননি?
বৃষ্টিতে ভিজে জ¦রের কথা বলতেই সে আফসোস করল।
ইস আমার কাছে ছাতা থাকলে দিয়ে দিতাম।
শাহজাহান বললেন, দোকানে নতুন নতুন জিনিসপত্র দেখছি!
লোকজন যে কত কিছু চায়। আচার, চিপস, রেজর। ক্যাশ টাকা নাই তাই অনেক কিছু উঠাতে পারি না।
ডাবের দাম দিতেই সে না না শুরু করল। তিনি জোর করে দিয়ে দিলেন।
তিনি প্রায় প্রতিদিন পার্কে হাঁটতে যান। ভোরের আলো না ফুটতেই নাসিরের দোকান খোলা দেখেন। ফেরার সময় তার দোকান থেকে মাঝে মাঝে ডাব খান। তার দোকানে ভীড় লেগেই আছে। ভীড় থাকা মানে দোকানে কোনো না কোনো বিশেষসত্ব আছে। তার দোকানে বিশেষসত্ব হচ্ছে- সে ভালো চা বানায়। কাষ্টমারদের সাথে ভালো ব্যবহার করে।
একদিন ফজরের নামাজ শেষে পার্কে যাবার সময় দেখলেন, নাসির মনোযোগ দিয়ে একটা বই পড়ছে। তিনি থামলেন।
নাসির কি বই পড়ছ?
সে চমকে মুখ তুলে তাকাল। তারপর হাসিমুখে বলল, স্যার একটা চাকরি গাইড।
চাকরি গাইড!
জি স্যার।
চাকরি গাইড কেন?
স্যার চাকরি করার ইচ্ছা।
তোমার এই দোকান?
দোকান পোষাচ্ছে না। এত ছোট ব্যবসা!
এখন ছোট। ধীরে ধীরে বড় করবে।
আর বড় করা! নগদ টাকাই নাই। এমএটা শেষ করে ভালো একটা চাকরিতে ঢুকে যাব।
এমএ দিচ্ছ নাকি?
স্যার ভর্তি হয়েছি।
ভোরে হাঁটতে যাবার সময় তিনি প্রায়ই দেখেন নাসির মনোযোগ দিয়ে গাইড পড়ছে।

একদিন পার্ক থেকে ফিরে ডাবখাওয়ার সময় তিনি দোকানে বসলেন।
নাসির চাকরির পরীক্ষা দিয়েছ কোথাও?
জি স্যার। কয়েক জায়গায় ইন্টারভিউ দিলাম। হচ্ছে না।
চাকার করার খুব ইচ্ছা?
জি স্যার। এই দোকান দিয়ে ঢাকা শহরে নিজেরই চলে না। তারপর...
একটা সিভি দিও তো। দেখি কি করা যায়।
নাসির উৎফুল্ল ভঙ্গিতে বলল, আচ্ছা স্যার।


তিন
একমাস পরের কথা। শাহজাহান সাহেব পার্ক থেকে হেঁটে এইমাত্র বাসায় ফিরেছেন। ছুটিরদিন বলে অনেকটা সময় পার্কে ছিলেন। হাতমুখ ধুয়ে আরাম করে সোফায় বসলেন। টিভি ছাড়লেন। তার বড় ছেলে এসে খবর দিল একছেলে তার সাথে দেখা করতে চায়। তিনি বেশ বিরক্ত হলেন। এই সাতসকালে কে এলো? কোন তদ্বির পার্টি বা চাঁদাবাজ পার্টি নাতো! গত শুক্রবার দরজা খুলতেই দেখেন-ছোকরা গোছের কিছু ছেলেপেলে দাড়িয়ে আছে। তাদের বক্তব্য হল-এলাকায় তারা ‘বর্ষবরণ’ অনুষ্ঠান করছে। তাকে বিশেষ অতিথি হতে হবে। তিনি হাসিমুখে বললেন, আর মানুষ পেলে না। আমি একজন সামান্য চাকরিজীবি। কত নেতা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পরে আছেন?
নেতা গোছের এক ছেলে বলল, স্যার আপনি সরকারী অফিসের একজন বড় কর্মকর্তা। পিডিবির ডিজিএম। আমরা আপনাকেই সিলেক্ট করেছি।
তিনি রাজি না হওয়ায় যদিও ‘বিশেষ অতিথি’ হওয়া থেকে রেহাই পেলেন কিন্তু বিশেষ অতিথির জন্য তারা যে চাদা নির্ধারণ করেছে তা পুরোপুরি দিতে হল।

তিনি শার্ট গায়ে দিয়ে দরজা খুললেন।
স্যার আসসালামালাইকুম।
ও নাসির! কি খবর তোমার?
সে তার পায়ে সেলাম করল। তার দু’হাত ভর্তি মিষ্টির প্যাকেট।
স্যার পিডিবিতে এসিস্টট্যান্ট অফিসারের চাকরিটা আমার হয়েছে। একবছর পর স্থায়ী হবে।
তিনি নাসিরকে ড্রইংরুমে এনে বসালেন।
মিষ্টি এনেছ কেন? এসব আনবে না।
নাসির হাসিমুখে বলল, স্যার আপনার ছেলেমেয়েরা খাবে। আপনি আমার যা উপকার করলেন!
শাহজাহান সাহেব বললেন, মনোযোগ দিয়ে কাজ করো। যেমন নিষ্ঠার সাথে দোকান চালাচ্ছিলে, চাকরিও সেভাবে কর। অনেকদুর যেতে পারবে।
নাসির বিনয়ীভঙ্গিতে বলল, স্যার দোয়া করবেন। আমি মনপ্রান দিয়ে খাটব। আপনি একটু দেখেন।
আচ্ছা।

কিন্তু শাহজাহান সাহেব নাসিরকে দেখে রাখতে পারলেন না। তিনি নিজেই বদলির অর্ডার পেয়ে গেলেন। পোষ্টিং হল সিলেটে। জিএম স্যারের কাছে অনুরোধ করতেই তিনি গম্ভীর গলায় বললেন, জোনাল হেড হিসেবে আপনার পোষ্টিং হয়েছে। এ তো সৌভাগ্য! এক-দেড় বছর কাটিয়ে আসুন। তারপর নিয়ে আসব।
এরপর আর অনুরোধ চলে না। তিনি একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেললেন। বয়সকালে বদলি হওয়া মানে এক নিঃসঙ্গ যাত্রা। নিঃসঙ্গ জীবনযাপন। তখন শিকড় গজিয়ে যায়। তারও গজিয়েছে। ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনেছেন। বড় ছেলে ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ছে। ছোট মেয়ে হলিক্রসে। চাইলেই ফ্যামিলি নেয়া সম্ভব হয় না। তিনি একাই সিলেটে চলে গেলেন।
দুরে পোষ্টিং হওয়া অফিসাররা অনেকটা ঈগলের মতো। ঈগল আকাশে উড়ে। কিন্তু চোখ থাকে মাটিতে। শাহজাহান সাহেবেরও সেই দশা। তিনি সিলেটে থাকেন। সকাল-বিকেল চা বাগানে হাটাহাটি করেন। জাফলং এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে যান। শাহজালাল মাজারে নামাজ পড়েন। জালালী কবুতরের উড়াউড়ি দেখেন। কিন্তু মন পড়ে থাকে ঢাকায়।
প্রথম প্রথম নাসির ফোনে খোঁজ খবর নিত। স্যার কেমন আছেন? শরীর ভালো? ঢাকায় কবে আসবেন? ইত্যাদি। ছ’মাস পর তাও কমে গেল। তিনিও প্রায় ভুলে গিয়েছিলেন। শেষ ফোন পেলেন গতকাল। প্রায় চৌদ্দমাস পর।
স্যার আমি নাসির?
তিনি মনে মনে মনে ভাবছেন কোন নাসির। সিলেটে দু’জন নাসির আছে। জিজ্ঞেস করার আগেই ছেলেটি বলল, স্যার আমাকে চিনতে পারছেন না। ঐ যে পার্কের কাছে দোকান ছিল...
ওহ তুমি! কি খবর তোমার?
স্যার খবর ভালো না। চট্টগ্রামে ট্রান্সফার দিয়েছে।
খারাপ কি। অল্পবয়সেই তো বিভিন্ন জায়গায় ঘুরবে। মানুষজনকে আপন করে নিবে।
স্যার ঢাকাতেই থাকার ইচ্ছা। আপনি একটু দেখবেন।
শাহজাহান সাহেব পনেরো দিন পরপর ঢাকা আসেন। এবার ঢাকায় এলে আগের অফিসে দেখা করতে গেলেন। জিএম সাহেবের চেম্বারে ঢুকতেই তিনি হাসিমুখে বললেন, আসেন আসেন শাহজাহান সাহেব। আপনার সিলেট জোন কেমন চলছে?
স্যার ভালো। এখানকার অবস্থা কি?
অবস্থা আগের মতোই। সিবিএর জ¦ালায় অস্থির! আজ এই দাবী, কাল সেই দাবী।
শাহজাহান সাহেব বললেন, কি আর করা! এসব নিয়েই আমাদের চলতে হবে। তারা আমাদের দেখে, আমরা তাদের দেখি!
দু’জনেই হাসলেন। শাহজাহান সাহেব বললেন, স্যার একটা ছেলেকে একটু দেখতে হবে। ওর চট্টগ্রামে ট্যান্সফার হয়েছে।
কি নাম?
নাসির। এসিস্ট্যান্ট অফিসার।
ওহ!
শাহজাহান সাহেব ভেবেছিলেন নাম বললে সাথে সাথে চিনতে পারবেন না। এত স্টাফ। কিন্তু তিনি সাথে সাথে চিনলেন এবং মুখ কালো করে ফেললেন। থমথমে মুখে বললেন, ওকে আমি কি দেখব। সে নিজেই এখন আমাকে দেখে। ঐ যে মিছিলের শব্দ শোনা যাচ্ছে। বারান্দ্রায় গিয়ে দেখেন।
শাহজাহান সাহেব লম্বা টানা বারান্দ্রায় এসে দাড়ালেন। নিচের বরান্দ্রায় সিবিএর একটা মিছিল হচ্ছে।

‘আমাদের দাবী,আমাদের দাবী- মানতে হবে, মানতে হবে।
বেতন ভাতা বাড়াতে হবে, বাড়াতে হবে’।

মারমুখীভঙ্গিতে মিছিল এগুচ্ছে। স্লোগানের শব্দে কানের পর্দা ফেটে যাবার অবস্থা। তিনি বিস্মিত দৃষ্টিতে দেখলেন-মিছিলের সবার সামনে নাসির। হাত উঁচিয়ে স্লোগান দিচ্ছে।
শাহজাহান সাহেব জিএম সাহেবের চেম্বারে ফিরে এলেন। একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, স্যার ছেলেটা চাকরিতে ঢোকার আগে এরকম ছিল না। প্রচন্ড পরিশ্রম করে একটা দোকান চালাত।
জিএম সাহেব বললেন, সমস্যা তো এখানেই। দোকানটা সে আপন ভাবত। চাকরিটা সে আপন ভাবতে পারেনি। এরকম মনোভাব আমাদের অনেকের আছে।


শাহজাহান সাহেব চেম্বার থেকে বের হয়ে এলেন। মিছিল দোতলায় চলে এসেছে। তাকে দেখতে পেয়ে নাসির এগিয়ে এল। চালচলনে প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী এবং উদ্ধতভাব। সালাম দিয়ে হড়বড় করে বলল, স্যার একটা সুখবর আছে। ট্রান্সফার ক্যানসেল হয়েছে। শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রিয় নেতা এরফান ভাইকে ধরেছি। ক্যানসেল করবে না আবার!
ভালো।
স্যার আপনি কি ঢাকায় আসবেন? আসতে চাইলে আমাদেরকে জানাইয়েন। একদিনেই স্ট্যান্ড রিলিজ করে নিয়ে আসব।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১০:১৪
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×