somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নব জীবন

১৯ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



লোকটি দেখতে শান্ত-সৌম্য, সূদর্শন। ঋষি ঋষিভাব আছে। পাড়ায় কবে এসেছে জানি না। আমাকে দেখলেই মধুর একটা হাসি দেন। এই হাসিতে যে কেউ তার ভক্ত হয়ে যাবে। এমনিতেই লম্বা স্বাস্থবান লোকের আর্কষন ক্ষমতা বেশী। এই লোকটিরও স্বাস্থ্য এবং উচ্চতা জাঁদরেলের আর্মি অফিসারদের মতো। এরকম একজন লোকের সাথে খাতির থাকা গর্বের বিষয়। কিন্তু আমি চেষ্টা করি ভদ্রলোককে এড়িয়ে চলতে। তার কথাবার্তা শুনলে কেমন যেন অস্বস্থি লাগে।
এই যেমন সাপ্তাহিক বাজারের দিন একগাদা বাজার করে ক্লান্ত শরীরে বাসায় পৌঁছেছি। পরে শুনি লবন আনা হয়নি। আবার ছুটলাম। একটা ডিপার্টমেন্ট ষ্টোর থেকে লবন নিলাম। তারপর কনকনে ঠান্ডা একটা কোক দিতে বললাম। কোকের ছিপি খুলে যেই মুখে দিয়েছি, পেছন থেকে কে যেন বলল, কি সুমন কোক খাচ্ছ? ভাবলাম আমার বয়েসী পরিচিত কেউ। পেছনে তাকিয়ে দেখি সেই ভদ্রলোক। মাহফুজ সাহেব। ভদ্রলোকের বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। কিন্তু কন্ঠস্বর যুবকের মতো।
মাহফুজ সাহেব বললেন, কোক খাচ্ছ। খাও। তবে এটা আমেরিকার প্রোডাক্ট। আমেরিকার প্রোডাক্ট খেয়ে বাংলাদেশে চাকরি চাও?
আমি কিছু বললাম না।
তোমাদের ঘাম ঝরানো কোটি কোটি টাকা এই প্রোডাক্ট বেঁচে তারা নিয়ে যায়। তোমরা আবার দেশে শিল্পায়ন চাও, বেকারত্ব ঘুচাতে চাও।
অস্বস্থিতে আমার গা শিরশির করতে লাগল। কিছু কিছু লোক আছে অকাজের জ্ঞান দানে ওস্তাদ। প্রয়োজনীয় কিছু জানতে চাইলে কিছুই বলতে পারে না। আমি তাড়াতাড়ি কোক শেষ করে কেটে পড়তে চাচ্ছিলাম।
মাহফুজ সাহেব বললেন, কোক না খেয়ে ডাব খেতে পার না?
আমি বিনীত ভঙ্গিতে বললাম, আঙ্কেল পনেরো টাকায় তো ডাব পাওয়া যাবে না। আর ডাবের পানি তো কোকের মতো ঠান্ডা না।
শিশুর অজ্ঞতা দেখলে মানুষ যেমন স্নেহের ভঙ্গিতে হাসে, তিনিও তেমনভাবে হাসলেন। আামি দোকানদারের পাওনা মিটিয়ে দিয়ে দ্রুত চলে এলাম।
আমি চেষ্টা করি সবসময় তাকে এড়িয়ে চলতে। কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ তার সাথে এমন সময়ে দেখা হয়ে যায় যখন মনটা এমনিতেই ভালো থাকে। যেমন সকালবেলা। সেদিন মর্নিংওয়াক শেষে পত্রিকা স্ট্যান্ডে গিয়ে দাড়িয়েছি। সবগুলো পত্রিকার হেডলাইন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। সব পত্রিকায় হট নিউজ- আইএস ফ্রান্সে হামলা করেছে। বিশ্বব্যাপি নিন্দার ঝড় উঠেছে।
মাহফুজ সাহেব যে আমার পেছনে দাড়িয়ে আছেন এবং আমার পত্রিকা পড়া দেখছেন তা ক্ষুনাক্ষরেও বুঝতে পারিনি। আমাকে দেখে সেই চেনা হাসি হাসলেন। তারপর বললেন, প্যারিসের কাহিনী পড়ছ?
জি।
আরে আইএস তো আমেরিকার সৃষ্টি। তাদের প্রয়োজনেই তারা সৃষ্টি করে। আবার ধ্বংস করে। কিন্তু আমেরিকা এটা করে কতদিন টিকবে? তাদের ধ্বংস চলে আসছে।
আমি জবাব দিলাম না। প্রায়ই লক্ষ করেছি-আমজনতা আমেরিকার বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারলে খুবই আনন্দ পায়। ব্যাপারটা অনেকটা বড়লোককে গালি দেয়ার মতো। কিন্তু মাহফুজ সাহেব তো আমজনতা না। আমেরিকার বিরুদ্ধে তার এত ক্ষোভ কেন? আমি পত্রিকা কিনে চলে যাবার জন্য পা বাড়ালাম।
মাহফুজ সাহেব ডাকলেন, সুমন চলে যাচ্ছ? চল আমার বাসা থেকে ঘুরে আসবে।
আজ থাক। আরেকদিন যাব।
বলেই আমি চলে এলাম। মানুষের চরিত্র এমন -কেউ আমাদের প্রতি আগ্রহী হলে আমরাও তার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠি। ভদ্রলোকের আঁতেল মার্কা কথাবার্তা ভালো না লাগলেও তার প্রতি আমি আগ্রহী হয়ে উঠলাম।
আবার দেখা হলে দ্বিতীয়বার যখন বাসায় যেতে বলল, আমি ইতস্তত করে রাজি হয়ে গেলাম।
বাসায় গিয়ে বেশ অবাক হলাম। সাদামাটা দুটো রুম। আসবাবপত্র তেমন কিছুই নেই। সিঙ্গেল একটা ষ্টীলের খাট। বিছানায় বেড কভারের পরিবর্তে শীতল পাটি বিছানো। ভদ্রলোকের দৈহিক আভিজাত্য দেখে ভেবেছিলাম বিশাল কোনো ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকেন। যার অপূর্ব সুন্দরী একজন স্ত্রী আছে। তিনি ফ্ল্যাটে ঢোকা মাত্র তার আদুরে টিনএজ মেয়ে- ড্যাডি ড্যাডি বলে ছুটে আসবে। কিন্তু কিসের কি? ঘরে লোকজন নেই। যে জিনিস আমার মনোযোগ কাড়ল- প্রচুর বই। মেঝে থেকে সিলিং পর্যন্ত স্তুপ স্তুপ বই আর বই। বই রাখার জন্য কোনো সেলফও নেই। কেন কে জানে? ভদ্রলোক যে বই পড়েন তার কথাবার্তা শুনেই বুঝেছি। কিন্তু এত বই পড়েন বুঝতে পারিনি।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, বাসায় আর কেই নেই?
না। কে আবার থাকবে?
আপনার স্ত্রী, ছেলেমেয়ে।
বিয়েই করিনি।
ওহ!
তুমি এত অবাককন্ঠে ওহ বললে! শোনো বিয়ে না করা তেমন কোনো ব্যাপার না।
আমি কিছু বললাম না।
সবাইকে সংসার ধর্ম পালন করতে হবে এর কোনো মানে নেই। একেকজন মানুষ একেক বিষয়ের প্রতি ভালোবাসা থাকে। কারো সংগীতের প্রতি ভালোবাসতে থাকে, কারো অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা থাকে, কারো শিল্প সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা থাকে। তোমরা ভালোবাসা বলতে তো শুধু নারীর প্রতি ভালোবাসা বোঝ? এটা ঠিক না।
আমি তর্ক না করে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কি করেন?
কিছুই না।
কিছইু না!
হ্যাঁ।
আমি মনে মনে ভাবলাম কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম। এরকম আঁতেল আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক দেখেছি। কিন্ত সেটা বিশ্ববিদ্যালয়েই শেষ হয়ে যায়। কর্মজীবনে এসে সেই আঁতলামী গ্যাস বেলুনের মতো চুপসে যায়। উনি দেখি এখনো ধরে রেখেছেন। কিছু করেন না বলেই হয়তো ধরে রাখতে পেরেছেন।
আপনার চলে কিভাবে?
চলে যায়। বেঁচে থাকার জন্য তেমন বিশেষ কিছু লাগে না। লাগে শুধু একটা সুস্থ বডি।
ঘরভাড়া- খাওয়া দাওয়ার খরচ আছে না?
কিছু জমিজমা ছিল। বেচে সঞ্চয়পত্র কিনেছি। তার আয়েই চলে যায়। তুমি বিয়ে করেছ?
না। চাকরিই নাই বিয়ে করব কি?
চেষ্টা চালিয়ে যাও। চাকরি হলেই বিয়ে করে ফেলো। দেরি করবে না। দেরি হলে উৎসাহ চলে যায়। তখন হাজার হিসাবনিকাশ চলে আসে।
আমি মনে মনে হাসলাম। হয়তো নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন।
তবে বিয়ে না করলেও তেমন কিছু আসে যায় না। Universal truth বলতে কিছু নেই। যে যা বলে তার দৃষ্টিকোন থেকে সত্য।
আমি ভদ্রলোকের বইপত্র খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলাম। তিনি বললেন, আমার কালেকশনে দশহাজার বই আছে। তুমি পড়তে চাইলে নিতে পার। শর্ত একটাই ফেরত দিতে হবে।
আমি মাথা কাত করে সায় দিলাম এবং সেদিনের মতো চলে এলাম। যাবার আগে মাহফুজ সাহেব বললেন, আবার এসো।

আমি তার ব্যাপারটা ভালোভাবে না বুঝলেও একটা ব্যাপার বুঝলাম-এই দার্শনিক ভদ্রলোক থেকে যতদুরে থাকা যায়-ততই আমার জন্য মঙ্গল। এমনিতেই মন চায় কোনো কাজ না করতে। তার উপর যদি যুক্তি পেয়ে যায়-তাহলে সে আরও অলস হয়ে পড়বে।
তার অবস্থা চিন্তা করে মনে মনে আমি আতঙ্কবোধ করতাম। তার মতো অবস্থা যদি আমার হয়! আমি চাকরির চেষ্টায় আরও উঠে পড়ে লাগলাম। কিন্তু যে লাউ, সেই কদু। কপালে যতদিন রোজগার লেখা না থাকে তার আগে সম্ভবত চাকরি হয় না। ছ’মাস শত চেষ্টা করেও একটা চাকরি জোগার করতে পারলাম না। এই ছ’মাস তার সাথে দেখা হয়নি। তাকে যে দেখিনি তা-না। দেখা যাতে না হয় তার চেষ্টা করেছি। দুর থেকে তাকে দেখলে হয় অন্যগলিতে চলে গেছি নতুবা কোনো দোকানে ঢুকে পড়েছি।
বেকারত্বের অসহ্য যন্ত্রনায় তখন আমার দিশেহারা অবস্থা। মাঝে মাঝে পার্কে গিয়ে বসে থাকি। গাছের নিচ দিয়ে আপন মনে হাটি। জীবন যুদ্ধে দ্রুত গতিতে ছুটতে না পারলে গোপন একধরনের অপরাধবোধে ভুগতে হয়। গাছের নিচ দিয়ে হাটলে তা অনেকটা কমে। মাহফুজ সাহেবের জীবনযাপনের প্রতিও আমি একধরনের আকর্ষনবোধ করতে শুরু করলাম।
এক নির্জন দুপুরে আমি তার কাছে গেলাম। তিনি বিছানায় উপুর হয়ে বই পড়ছিলেন। আমাকে দেখে অবাক হয়ে উঠে বসলেন।
তুমি! কোথায় হাওয়া হয়েছ? আর দেখি না। চাকরি হয়েছে?
না।
লেগে থাক। হয়ে যাবে।
আমি চেয়ারে আরাম করে বসলাম। ভদ্রলোক যতই দেখি মনে হয় জীবনে টেনশন কি তিনি জানেন না। শান্ত নিরুদ্ধেগ মুখ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কখনও চাকরির চেষ্টা করেননি?
না।
ব্যবসা-বানিজ্য?
কোনো কিছুরই চেষ্টা করিনি। সারা জীবন পিছুটান এবং জীবনযুদ্ধে দৌড়ানো থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করেছি।
কেন?
চাকরি বা ব্যবসা করলাম, হাজার চাহিদা সৃষ্টি হল। তখন বিয়ের চিন্তা আসত। বিয়ে করতাম। তারপর সংসারের হাজার প্রয়োজনে ছুটতে হত। ছেলেমেয়ে বড় করা, স্কুলে দেয়া, মানুষ করা, এমনকি শেষ বয়সে তাদের বিয়ে দিতে ছুটোছুটি। তারপর রিটায়ার্ড। সেই রিটায়ার্ড করেও কি শান্তি আছে? আর্থিক অবস্থা ভালো থাকলে কিছুটা স্বস্থি কিন্তু নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন। আর খারাপ হলে তো কথাই নেই। ছেলেমেয়ের ঘাড়ে বসে খাও। তাদের হাজার মুখঝামটা শোন। ছোট্ট এই জীবনটাকে কী দরকার এত ক্ষত বিক্ষত করা! শেষ বয়সে গিয়ে যখন নিঃসঙ্গ থাকতেই হবে, আমি প্রথম থেকেই নিঃসঙ্গ থাকার চেষ্টা করছি।
তিনি মিষ্টি করে হাসলেন। আমিও হাসলাম। কি বলব। যার ঘরে দশ হাজার বই আছে, তার চিন্তার ভূল ধরতে যাওয়া বোকামী। আমার চোখে যেটা ভূল তার চোখে সেটা সঠিক। কারন যে যেরকম জীবনযাপন করতে চায়, তার পক্ষে হাজার যুক্তি আছে।
তিনি একটু হেসে বললেন, যাক তুমি আবার আমার দ্বারা প্রভাবিত হয়ো না। এক একজন মানুষ একেক ফিলোসফি নিয়ে চলে। আমারটা আমি চলেছি। তোমারটা তুমি চলবে।
কিছু মনে করবেন না একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি?
কর।
তরুন বয়সে আপনার কাউকে ভালো লাগেনি বা কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চাননি?
লেগেছে কিন্তু পাওয়ার জন্য চেষ্টা করিনি। আমি হলাম চেষ্টাহীন মানুষ। আবার অনেকে আমাকে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করেছে। আমি তেমন আগ্রহবোধ করিনি। তার চেয়ে মার্কসীয় বই পড়তে বেশি পছন্দ করতাম।
মার্কসীয় বই!
হ্যা। একসময় সমাজতান্ত্রিক ধ্যান ধারনার খুব ভক্ত ছিলাম। দেশে একদিন সমাজতন্ত্র আসবে এই স্বপ্ন দেখতাম।
বাম কোনো সংঘটনের সাথে যুক্ত ছিলেন?
না। নিজে নিজে পড়েই বুঝতে চাচ্ছিলাম। পরে যোগ দেব ভাবলাম। এই জ্ঞানের নেশা আমাকে এমনভাবে পেয়ে বসল, আমার বন্ধুরা যখন জীবন জীবিকার জন্য ঘোড়ার মতো ছুটছে আমি মার্কসীয় বইপত্রে বুদ হয়ে রইলাম। এসব বই বুঝতে বুঝতে জীবনের অনেকটা সময় পার হয়ে গেল।
এর মধ্যে কোনো মেয়েই আপনাকে ভালোবাসি বলেনি?
বলেছে। অন্যভাবে। তার অর্থ তখন বুঝতে পারিনি। নাবিলা নামে একটি মেয়ে আমাকে খুবই পছন্দ করত। সে প্রাযই বলত, বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকলে হবে? রুজি রোজগার কিছু করবে না? তোমার বাবার তো এমন জমিদারী নাই বসে বসে খাবে।
আমি বলতাম যেটুকু আছে আমার চলে যাবে।
শুধু তোমার চললে তো হবে না। ভবিষ্যতে তোমার বউ হবে। বাচ্চাকাচ্চা হবে। তাদের কি হবে?
তখন গায়ে শক্তি ছিল। গায়ে শক্তি থাকলে লোকে যে উত্তর দেয়, আমিও সেই উত্তর দিতাম। ‘ভবিষ্যতেরটা ভবিষ্যতে দেখা যাবে’।
তিনি চুপ করে রইলেন।
তারপর?
তারপর আর কি? নাবিলা এক ব্যাংকারকে বিয়ে করে চলে গেছে। আমি সবসময় ভাবতাম- এই তো ভালো আছি। কী দরকার অযথা কাধে বাড়তি ঝামেলা নেয়া। তারপর জীবিকার জন্য চিতাবাঘের মতো ছোটো! তখন ভাবতাম মানুষ এতো অসুখী কেন? অতিরিক্ত কাজ করে বলে।
অতিরিক্ত কোথায়? আটঘন্টা কাজ করে।
আটঘন্টাও অনেক। তুমি আটঘন্টা খেতে পার না। আটঘন্ট কোনো সিনেমা দেখতে পার না। আটঘন্টা হাটতে পার না। আটঘন্টা সাঁতার কাটতে পার না। অথচ আট ঘন্টা তোমাকে কাজ করতে হচ্ছে।
আমি বললাম, মানুষ আটঘন্টা কাজ করে বলে সভ্যতা এ পর্যায়ে এসেছে।
এসে হয়েছেটা কি? সমস্যা কমেছে? লাখ লাখ মানুষ তার তার জায়গা থেকে সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। কিন্তু নতুন নতুন সমস্যা আবার সৃষ্টি হচ্ছে। এটা প্রাচীন প্রানী হাইড্রার মতো। একটা মাথা কাটলে যার দশটা মাথা গজায়। সমস্যাও তাই। এক সমস্যা সমাধান করতে না করতেই আরেক সমস্যা। সংসারের সমস্যাও তেমনি। এসব ভেবে আর সংসারের দিকে পা বাড়ায়নি।
কিন্তু সংসার না করলে তো মানুষ জাতি টিকে থাকত না।
সবাই তো সংসার করছে। এক আধজন না করলে কোনো সমস্যা নেই।
সেক্ষেত্রে আপনার বড় কিছু নিয়ে লেগে থাকার প্রয়োজন ছিল।
মার্কস পড়ছিলাম। ভাবতাম দেখি এদেশে এটা প্রয়োগ করা যায় কিনা বা এই তত্বে দোষত্রুটি কি, নতুন কিছু বের করা যায় কিনা।
অনেকদিন তো মার্কসীয় অর্থনীতি পড়লেন। ওখান থেকে কিছু বের করতে পেরেছেন?
এই তত্ত্ব এখন বেশি শক্তিশালী মনে হয় না।
কেন?
আমিত্ববোধ মানুষের রক্তের সাথে মিশে আছে। এটা না থাকলে কোনো মানুষ এগোতে পারে না। তত্ত্বের মূল গলদ এখানেই।
আমি তার সাথে তর্কে গেলাম না। সেদিনের মতো চলে এলাম। তিনি আমার মোবাইল নাম্বার চেয়ে নিলেন। তিনদিন পরই কল এলো।
সুমন একটু আসতে পারবে। জরুরী কথা ছিল।
জরুরী কাজ আছে বলে এড়িয়ে গেলাম। তার কাছে গেলে একধরনের স্বস্তি পাই। আবার গোপন এক ধরনের অস্থিরতায় মন খচখচ করে। স্বস্তি পাই একারনে জীবন যুদ্ধে ছোটাকে তখন বড় কিছু মনে হয় না। এক ধরনের রিলিফ পাই। আবার এই রিলিফের মধ্যে অনেকক্ষন থাকলে ভেতরে ভেতরে অস্থির লাগত।
এবার তার বাসায় গিয়ে বেশ অবাক হলাম। বিশাল বিশাল তিনটা বুক শেলফ। সমস্ত বই তাতে গোছানো। রুমগুলো ঝকঝক-তকতক করছে। এককনা ধুলো নেই।
আমি অবাক হয়ে বললাম, কি ব্যাপার আঙ্কেল হঠাৎ এত গোছগাছ?
সুমন বসো। তোমাকে তো ডাকলেও পাওয়া যায় না।
তিনি আমাকে বারান্দ্রায় নিয়ে গেলেন। পাশের বাসার খোলা জানালা দেখিয়ে বললেন, সুমন ঐ বাসায় চমৎকার এক মেয়ে আছে।
তাতে কি?
তিনি চোখমুখ লাল করে বললেন, মেয়েটা আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। আমাকে খুব পছন্দ করে।
তাই!
হ্যা।
পছন্দ করলেই কী। আপনি তো বিয়েই করবেন না।
তিনি চুপ করে রইলেন। আমি বললাম, আঙ্কেল নাকি তাকে বিয়ে করে ফেলবেন। সংসার করাও খারাপ না।
তিনি গভীর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। তার চোখেমুখে চঞ্চলতার ছাপ। এরকম চঞ্চল হতে তাকে কখনো দেখিনি।
কিন্তু একটু সমস্যা আছে।
কি সমস্যা?
মেয়েটা ডিভোর্সী। সাথে ছোট্ট একটা মেয়ে আছে। স্বামীর সাথে বনিবনা হয়নি বলে ডিভোর্স হয়ে গেছে।
আমি মুখ ফসকে বলে ফেললাম, তাতে কি? রেডিমেট সব কিছু পেয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আমার দিকে তীক্ষ্মদৃষ্টিতে তাকালেন। বোঝার চেষ্টা করছেন- আমি রসিকতা করছি কিনা।
আমি সিরিয়াস মুখভঙ্গি করে বললাম, আপনি তার সাথে কথা বলেছেন?
হ্যা। তার দিক থেকে কোনো আপত্তি নেই। প্রচন্ড আগ্রহ।
আপনি কি ভাবছেন?
তিনি ঘরে এসে কিছুক্ষন চুপ করে বসে রইলেন। তারপর ইতস্তত করে বললেন, বুঝতে পারছি না কি করব? সংসারের ঝামেলা থাকবেই। ঝামেলা ছাড়া জীবন হল? পানসা...একঘেয়ে... !
তার চোখেমুখে হঠাৎ তারুন্যের আভা জ্বলজ্বল করছে। এই বয়সেও তিনি কী সুদর্শন! তরুন বয়েসে না জানি কি ছিল? সূদর্শন লম্বা-চওড়া একজন মানুষ। অথচ নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতে হচ্ছে। একটা কথা মনে পড়ল- বন্দুকের গুলি একজন মানুষকে সাথে সাথে শেষ করে দেয়। কিন্তু কোনো কোনো মতবাদ তাকে তিলে তিলে ক্ষয় করে।
তিনি উৎসুক গলায় বললেন, তুমি মেয়েটাকে দেখ। বারান্দ্রায় গিয়ে দাড়াও। ও আসবে!
আমি বারান্দ্রায় গিয়ে দাড়িয়ে রইলাম। অনেকক্ষন দাড়িয়ে থাকার পরও ঐ বাসার বারান্দ্রায় কেউ এসে দাড়াল না। আমি ঘরে এসে পত্রিকা পড়তে শুরু করলাম। মাহফুজ সাহেব ভেতরে ভেতরে বেশ ছটফট করছেন। একবার জানালা দিয়ে উঁকি দিচ্ছেন। একবার বারান্দ্রায় গিয়ে দাড়াচ্ছেন। আবার কখনো ধপাস করে আমার পাশে বসে পড়ছেন।
আমি যতবারই বললাম এখন উঠি কাজ আছে, উনি বললেন আরেকটু অপেক্ষা কর। আসবে। না এসে পারেই না। আজ কেন দেরি করছে বুঝছিনা। ওর অনেক কাজ। বুড়ো বাবা-মার সংসারে চলে এসেছে তো। সব একাই সামলাতে হয়। তুমি দুপুরে আমার সাথে খাবে। বাবুর্চি ছেলেটাকে তোমার খাবার দিতে বলেছি।
উনি বসে বসে উসখুস করতে লাগলেন। যেই খেতে বসব, সেই সময় বারান্দ্রার নায়িকা বারান্দ্রায় এসে দাড়ালেন। আমিও বারান্দ্রায় গিয়ে এমনভাব করতে লাগলাম যেন আকাশ দেখতে দাড়িয়েছি।
মেয়ে না বলে মহিলা বলাই ভালো। বত্রিশ তেত্রিশ বয়স হবে। ফর্সা চেহারা। মুখের মধ্যে একধরনের কাঠিন্য আছে। হয়তো জীবনের অপ্রীতিকর ধাক্কা তাকে কঠোর করে দিয়েছে।
আমি ঘরে চলে এলাম। তিনি বললেন, কেমন দেখলে?
ভালো।
তিনি উৎসুক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আর কিছু বলি কিনা। আমি নিরবে খাওয়া শুরু করলাম।
চেহারাটা খুব মায়াবী না!
হু।
ওর নাম লাবনী। দাড়াও একদিন তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেব। বাসায় এলেই তোমাকে কল করব। তুমি তো ডাকলে আবার আসো না!
উনি বাসায় এসেছিলেন নাকি?
দু’দিন এসেছিল। সেই তো রুম গোছগাছ করে দিয়ে গেছে। রুমের অবস্থা দেখে সেকি অবাক! শেলফ আনতে বলল।
এতক্ষনে পরিপাটি রুমের রহস্য বোঝা গেল। কোনো মেয়ের হাতের স্পর্শ ছাড়া কোন রুম এত পরিপাটি হতে পারে না।
খাওয়া-দাওয়া সেরে আমি চলে এলাম। তার জগত থেকে বের হয়ে এলাম। তার জগত আলাদা। আমার জগত আলাদা। আমার জগত হল-টিউশনী, চাকরি খোঁজা, বাড়ির ফাইফরমাস খাটা ইত্যাদি ইত্যাদি।
সকালবেলা বিদ্যু বিল দেয়ার জন্য ব্যাংকের দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে আছি। মাহফুজ সাহেবকে দেখলাম ব্যাংক থেকে হন্ততন্ত হয়ে বের হচ্ছেন। আমাকে দেখে অপ্রস্তত মুখে হাসলেন। বললাম, টাকা উঠালেন?
না। কিছু প্রাইজবন্ড কিনলাম।
হঠাৎ প্রাইজবন্ড?
কিছু টাকা অলস পড়ে আছে। প্রাইজবন্ড কিনে রাখলাম।
এই বলে তিনি চলে গেলেন। ভদ্রলোকের কার্যকলাপ ঠিক বুঝতে পারছি না। এই বলেন-জীবনের প্রতি তার কোন মোহ টোহ নেই। অথচ আজ প্রাইজবন্ড কিনলেন। কিছুদিন আগে দেখলাম- ফুটপাতে দাড়িয়ে এক ভ্যানওয়ালার কাছ থেকে অনেকগুলো লটারী কিনছেন। কারন জানতে চাইলে বললেন, এই এমনি কিনলাম। লটারী কি আর লাগে? একটা ক্যানসার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করবে। জাস্ট কিছু সহযোগিতা করা।
প্রায় একমাস পর মাহফুজ সাহেবের বাসায় গেলাম। তিনি বিছানায় উপুর হয়ে বই পড়ছেন। মুখ বিষন্ন।
কি খবর আঙ্কেল?
এই তো আছি কোন রকম।
বলেই তিনি বই পড়তে লাগলেন। আমার প্রতি তেমন উৎসাহ দেখালেন না।
লাবনী ম্যাডামের খবর কি?
সে আছে তার মতো। তিনি আবার পড়ায় মনোযোগ দিলেন।
আপনি মনে হয় পড়ায় ব্যস্ত। চলে যাই?
না-না বসো।
বসে কি হবে? আপনি তো কিছু বলছেন না।
কি বলব? আমার মতো বুড়ো মানুষের কিছু বলার আছে? বুড়োরা শুধু বকবক করতে পারে। কিছুই করতে পারে না।
এসব বলছেন কেন? আপনাকে তো সবসময় উৎসাহী থাকতে দেখি। হঠাৎ কি হল?
তিনি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন, সময়ের উৎসাহ অসময়ে শুরু হলে খুব যন্ত্রনা।
আপনি কোনো যন্ত্রনার মধ্যে আছেন?
তিনি জবাব দিলেন না। অনেকক্ষন চুপচাপ থাকার পর আফসোসের স্বরে বললেন, আহ! যদি প্রচুর টাকা থাকত বা ভালো একটা চাকরি!
আপনি তো কখনো টাকা বা চাকরির চিন্তা করেননি । হঠাৎ এসব চিন্তা?
মানুষজন বলে না-‘টাকা ছাড়া জীবনটা ফাঁকা’। সত্যি কথাই বলে।
হঠাৎ আপনার এতো টাকার প্রয়োজন হল?
তিনি চুপ করে রইলেন। তারপর একসময় বললেন, মেয়েরা খুব দ্রুত অনেক কিছু বুঝতে পারে।
তিনি আবার থামলেন। কিছু বলছেন না। আমি অধীর আগ্রহে তার দিকে তাকিয়ে আছি। একসময় আপন মনে বললেন, আমার যে আয় নিজেরই চলে না। লাবনী এবং তার মেয়েকে চালাব কিভাবে?
লাবনী ম্যাডাম এ ব্যাপারে কিছু বলেছেন?
তিনি জবাব দিলেন না। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। হঠাৎ বুঝলাম-প্রাইজবন্ড এবং লটারি কেনার উদ্দেশ্য।
আপনি তো প্রচুর পড়াশোনা করেছেন। চাকরির জন্য চেষ্টা করেন?
এই দেশে এই বয়সে আর হবে না। বিদেশ হলে একটা কথা ছিল।
তিনি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তার নতুন কোনো উপলব্ধি হল?
তিনি আর কোনো কথাই বললেন না। আমি নিঃশব্দে চলে এলাম।

সংসারে সবার কাছে একটু প্রিয় থাকতে বেকারদের অনেক অপ্রিয় কাজ করতে হয়। বড় ভাই আমেরিকা যাবে। ভিসার জন্য লাইনে দাড়াতে হবে। আমার উপর দায়িত্ব পড়ল আগে গিয়ে লাইনে দাড়ানো। পরে ভাইয়া আসবে। ভোরের আলো না ফুটতেই ভিসা অফিসে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি- অজগরের মতো লম্বা লাইন। অথচ এখনো সূর্য উঠেনি। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম-গতরাত থেকে তারা দাড়িয়ে আছে। খবরের কাগজ বিছিয়ে তারা সেখানে রাত কাটিয়েছে। কেউ নাস্তা করতে বা প্রাকৃতিক কর্ম সারতে গেলে একটা ইট রেখে তার উপর নাম লিখে যেত। আমি সবার পেছনে গিয়ে দাড়ালাম এবং একটা ইট রেখে লাইন থেকে বের হয়ে এলাম। দেখতে লাগলাম-সামনে কতজন আছে। স্তম্ভিত হয়ে দেখলাম-লাইনে সবার সামনে আমাদের মাহফুজ সাহেব। রাত জাগরনের ক্লান্তিতে মাঝে মাঝে হাই তুলছেন। কিন্তু সারামুখে টগবগে উত্তেজনা। চোখ দুটো জল্বজ্বল করছে- নব জীবনের স্বপ্নে!

গল্পটি লেখকের ‘দহনকাল’ গল্পগ্রন্থ থেকে নেয়া।






সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:১৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×