somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বরেন্দ্রভূম থেকে জাহাঙ্গীরনগরঃ বাংলার চিত্রকলার ইতিহাস (ষষ্ঠ পর্বঃ কালীঘাটের পটশৈলী)

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চিত্র ১ঃ কালীর পট, কালীঘাট পটশৈলী

গ্রামবাংলার পটচিত্র পরম্পরা ধরে এসে পড়তে হয় কালীঘাটের পটে। বাংলার আদি ও ঐতিহ্যবাহী চিত্রাঙ্কনরীতি নিয়ে আমরা যখনই কথা বলতে যাই, তখন নিজস্ব এক শিল্প অভিব্যক্তির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে নিজের স্পষ্ট অবস্থান তৈরি করে নেয়া কালীঘাটের পটের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করতেই হয়। রেখার নিরবচ্ছিন্ন প্রবহমানতার সাহায্যে রূপের গড়নকে ফুটিয়ে তুলে, স্বচ্ছ বর্ণের সুমিত বিন্যাসে সেই গড়নকে পরিপূর্ণতা দিয়ে রূপনির্মিতিতে কালীঘাটের পটুয়ারা এমন এক নতুন চিত্রাদর্শ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন যা সাধারণভাবে বলা চলে 'আধুনিক' শিল্পকলার লক্ষণাক্রান্ত। বিশেষ করে চিত্রপটকে বহুকিছু দিয়ে ভারাক্রান্ত না করে কোন একটি নির্ধারিত বস্তু বা ঘটনাকে বলিষ্ঠভাবে 'চৌকশ' পটে ফুটিয়ে তুলে তাঁরা এই আধুনিক মননেরই পরিচয় দিয়েছেন। গ্রামের পটচিত্রের পাশাপাশি ধরলে কালীঘাটের পটের নাগরিক চরিত্র সহজেই চোখে পড়বে।


চিত্র ২ঃ ধর্মীয় পট

কালীঘাটের পটের প্রারম্ভ ও বিস্তৃতি ঠিক কোন সময়ে - সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোন ধারণায় উপনীত হওয়া যে মুশকিল, শিল্প ঐতিহাসিকরা এ বিষয়ে মোটামুটি একমত। তবে সকলেই সাধারণভাবে মনে করেন যে উনিশ শতকের গোড়ার দিকে এই পটশৈলীর উদ্ভব ঘটেছিল আর তার বিকাশ অব্যাহত ছিল ঐ শতাব্দীর শেষ অব্দি। বিশ শতকের প্রথমদিকেও এই চিত্রধারা প্রবহমান ছিল; এবং তার অবলুপ্তি ১৯২০ থেকে ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে। এই শৈলী কাদের হাতে কিভাবে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল - সে সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য আহরণ করেছেন এ যুগের গবেষকেরা। অশোক মিত্র, তার 'ভারতীয় চিত্রকলা'র দ্বিতীয় খণ্ডে এ সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
সতের শতকে কালীঘাটের মন্দির হবার একশ' বছরের মধ্যে কোলকাতা শহরের নামডাক শুরু হয়। ব্যবসার সঙ্গে তীর্থেরও যশ ছড়ায়। তিথিতে তিথিতে হাজারো লোকের নিয়মিত সমাগম শুরু হয়। আয়োজন ঘটে দোকানপাটের, তাতে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয় ঘরের আত্মীয়স্বজনকে উপহার দেবার মতন খেলনা, ছবি আর পুতুলের পসরা। খেলনা, পুতুলের মতই সস্তা ছবি আঁকার তাগিদ আসে। নতুন সুযোগ বুঝে এগিয়ে আসেন পটুয়ারা।


চিত্র ৩ঃ যশোদা-কৃষ্ণ

কালীঘাটের এই চিত্রকরেরা ছিল জাতিতে পটুয়া অর্থাৎ আদিতে সূত্রধর। এই শিল্পীরা এসেছিলেন মূলত দক্ষিণ - পশ্চিম বাংলা থেকে। বিশেষ করে 'পটুয়া' আর 'চিত্রকর' - এই দুই পদবি থেকে অনুমান করা যায় যে কালীঘাটের পটুয়াদের আদি নিবাস ছিল প্রধানত দক্ষিণ - চব্বিশ পরগনা ও মেদিনীপুর। কাঠের কাজ ও মন্দির ইত্যাদি নির্মাণ ছিল পূর্বপুরুষের জাত ব্যবসা, তারপর আসে মাটির প্রতিমা গড়া। মাটির প্রতিমা গড়ারও আছে মৌসুম। যখন মাটির প্রতিমা গড়ার সময় ফুরিয়ে যেত, যখন আর কোন বায়নাপত্র থাকতো না - বছরের সেই সময়টুকু তাঁদের হাত গুটিয়েই বসে থাকতে হত। অথচ কালীঘাটে তীর্থদর্শনে পুন্যার্থী আগমনের তো কোন সময় অসময় নেই। সেই থেকে শুরু কাঠের ও মাটির খেলনা ও পটচিত্র অংকনের। তবে, কালীঘাটে যারা কাজ করে গেছেন তারা কেবল পরম্পরাগত পটুয়াই ছিলেন এমনটা নয়, জীবিকার সন্ধানে অন্যান্য সম্প্রদায়ের শিল্পীরাও যে একত্রিত হয়েছিলেন কালীঘাটে - সেও স্বীকৃত সত্য। এইভাবে, নাগরিক পরিবেশে, গ্রাম সমাজবন্ধনের বাইরে এসে নানা সম্প্রদায়ের শিল্পীর পারস্পারিক মেলামেশার ফলে জন্ম নেয় কালীঘাটের শৈলী।


চিত্র ৪ঃ রাধা কৃষ্ণ

কালীঘাটের মন্দির ঘিরেই যেহেতু এই পটশৈলীর বিকাশ, স্বভাবতই পটচিত্রের প্রাথমিক বিষয়বস্তু হিসেবে চিত্রকরদের তুলিতে ধরা পড়েছে কালী ও অন্যান্য দেবদেবীর প্রতিকৃতি। তারপর, দিন ও সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সমকালীন জীবনের চিত্রও বিষয় হয়ে ধরা দিয়েছে তাঁদের পটে। যে তুলিতে প্রতিমার অঙ্গ সংস্কার হয় সে তুলিতে পট আঁকা বিলক্ষণ চলে, কিন্তু প্রতিমা যে দামে বিক্রি হয় সে দামে পট বিক্রি করা সম্ভব হয় না। পটের দাম অগত্যা এক পয়সা - দু' পয়সা বড়জোর দু' আনা পর্যন্ত রাখা সম্ভব হয়। ফলে পটে খুঁটিনাটি বিষয় বিষদভাবে আঁকার মজুরি পোষালো না, একটা ছবি যত তাড়াতাড়ি সারা যায় - সে চেষ্টা করা হল। সুতরাং এক আধটি মূল ডিজাইন, ফর্ম, বা চিত্রপ্রতিমা পেলে তারই পুনরাবৃত্তি চলল। সেই পুনরাবৃত্তিতেও খুঁটিনাটি, খুচখুচে কাজ যথাসম্ভব বাদ দিয়ে, যাতে সহজে একেকটি ছবি হতে পারে, তার চেষ্টায় এল প্রতিমারঞ্জনের তুলিসুলভ চওড়া, সাপটা, বাঁকা টান আর মোটা বুরুশে অবহেলায় লাগানো সমান উজ্জ্বল রঙ। অল্প সময়ের মধ্যে ছবি এঁকে শেষ করার তাগিদে জন্ম নিল পটচিত্র অঙ্কনের সরলীকৃত রীতি। এইসকল পট ও পুতুলের চাহিদা ছিল শহর ও গ্রামের সাধারণ গরীব মানুষের মধ্যেই - যথেষ্ট পরিমাণে।


চিত্র ৫ঃ বিলাসী বাবু

বিষয়বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে, পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে - কালীঘাটের পটুয়াদের প্রধান উপজীব্য ছিল ধর্ম। কেবল কালীর পট নয়, ক্রেতার চাহিদা মাথায় রেখে - দুর্গা, জগদ্ধাত্রী, গণেশজননী, শিব, শিব-পার্বতী, গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী, যশোদা- কৃষ্ণ, রাধাকৃষ্ণ, কৃষ্ণের নানান লীলা, রামসীতা, হনুমান, চৈতন্যদেব ও আরও নানা দেবদেবী ও ধর্মাবতারদের ছবি আঁকা হয়েছে কালীঘাটের পটে। সেই সঙ্গে নাগরিক জীবনের পরিবেশ ও নানা সামাজিক চিত্রও ধরা পড়েছে পটুয়াদের চিত্রে।


চিত্র ৬ঃ বারবিলাসি বাবু

উনিশ শতকের কোলকাতার জীবন প্রবাহিত হত দুই ধারায়। একদিকে ছিল সাহেব পাড়া, অন্যদিকে দেশি পাড়া। এই দুই পাড়ার অধিবাসীদের জীবনের বিলাসব্যসন স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়েছে পটে। কিছু কিছু পট, যেমন - সাহেববিবির প্রতিকৃতি, হাতিতে চেপে সাহেবের বাঘ শিকার, ঘোড়দৌড় - ইত্যাদি ছবিতে দেখা মেলে সাহেবপাড়ার জীবনের। অন্যদিকে, তখনকার উচ্চবিত্ত বাঙ্গালীর বাবু কালচারের যে চিত্র টেকচাঁদ ঠাকুরের আলালের ঘরে দুলাল, কালীপ্রসন্ন সিংহের হুতোম প্যাঁচার নকশা ইত্যাদি গ্রন্থে পাওয়া যায় তারই চাক্ষুষ নিদর্শন রেখে গেছেন কালীঘাটের পটুয়ারা। বিশেষত, তখনকার দিনে বারবিলাসিতার প্রমাণ হিসেবে অঙ্কিত হয়েছে সুন্দরী লাস্যময়ী বারবনিতাদের ছবি - যার মধ্যে সবচে সুপরিচিত হল 'গোলাপসুন্দরীর রূপ'। এই সুন্দরীদের সামনে বাবুরা কেমন ভেড়া বনে যেতেন, তারও কিছু কিছু ছবি আঁকা হয়েছে প্রতীকী তাৎপর্যে।


চিত্র ৭ঃ বনিতার মানভঞ্জনরত বাবু

বিষয়বস্তুর পর, কালীঘাটের পটের শৈলী, তথা অঙ্কন কৌশল নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। আগেই বলা হয়েছে যে কালীঘাটের ছবির উৎপত্তি দেবদেবীর মাটির প্রতিমা এবং খেলার পুতুল থেকে। কালীঘাটের পটের রেখা, আকৃতি, ডিজাইন, ফর্ম - সমস্তই মাটির প্রতিমার গড়ন থেকে এসেছে। তার রেখার বর্ণ, রঙ, তুলির টান সবই প্রতিমারঞ্জনের তুলির কাজ। ছবিতে গাড়- ফিকে, শেডিং, মডলিং ও তিনমাত্রার আভাস যে গড়নে ফুটে ওঠে সে গড়ন মাটির প্রতিমার নিশ্চল, মাটির স্বভাবে ভারী গড়ন; রক্ত মাংসের মানুষের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের গড়ন নয়। কালীঘাটের ছবিতে যে নিশ্চল স্থির স্তব্ধতা দেখি তা নিতান্ত কাদা দিয়ে তৈরি করা মূর্তি বা পুতুলের নিষ্প্রাণ নিস্তব্ধতা, প্রশান্তি নয়, অশ্রান্ত চঞ্চল প্রাণের কেন্দ্রবিন্দুর স্তব্ধতা নয়।


চিত্র ৮ঃ ক্রোধান্বিত বারবনিতা ও বাবু
কালীঘাটের শৈলীর বৈশিষ্ট্য আবার কেবল তার আঙ্গিকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বহুলাংশে তার রুপাদর্শে উজ্জ্বল। তাই দেখা যায় দেবদেবী কিংবা সাধারণ মানব মানবী - সকলেরই রূপ নির্মিত হয়েছে বিশেষ এক আদর্শায়িত সৌন্দর্যবোধে। পটলচেরা চোখ, ধনুকাকৃতি ভ্রু, বাবরী করা চুল, নধর শরীর - এইগুলি হল আদর্শ সুন্দর পুরুষের লক্ষণ। নারীর ক্ষেত্রে এর সঙ্গে যুক্ত হবে সুস্পষ্ট দেহসৌষ্ঠব ও লীলায়িত ভঙ্গিমা। এই রুপাদর্শ অবশ্যই ভারতীয় পরম্পরা থেকে গৃহীত, এবং এই কারনেই হয়তো কালীঘাটের রুপাদর্শ অন্তত সাধারণ বাঙ্গালীর জীবনে সহজ স্বীকৃতি লাভ করেছিল। কেননা এই আদর্শেই লিথো আর কাঠখোদাই পদ্ধতিতে ছাপা ছবিতে রূপ পেয়েছেণ বাঙ্গালী রমণী। এমনকী, তেলরঙে আঁকা উনিশ শতকের ছবিতেও কালীঘাটের সৃষ্ট নারীরুপ মূর্ত হয়ে উঠেছে।


চিত্র ৯ঃ বনিতার মানভঞ্জনে বাবু (২)

রূপনির্মিতির আদর্শে যেমন, পটরচনার উদ্দেশ্যের বিচারেও কালীঘাটের পটুয়া তার ধর্ম থেকে দূরে সরে যান নি। গ্রাম বাংলার পটুয়াদের হাতে যেমন, কালীঘাটের পটুয়ার হাতেও তেমনিই ছবি অঙ্কিত হয়েছে সেই জ্ঞান, শিক্ষা, আনন্দ আর পুণ্যকে উদ্দেশ্য করে। দেবদেবীর পটে অঙ্কিত হয়েছে পুণ্য, বাবু- কালচারে ব্যাঙ্গচিত্রে দেয়া হয়েছে নীতিশিক্ষা। রামায়ণ ও চৈতন্যের পটে ঘটেছে জ্ঞান ও পুন্যের মিলন। কিন্তু কালীঘাটের শিল্পী গ্রামবাংলার পটুয়াদের থেকে আলাদা হয়ে পড়েছেন আনন্দ বিতরণের ক্ষেত্রে। তাঁদের পটেই যখন আঁকা হয় জোড়া পায়রা, মুখে মাছ নিয়ে বেড়াল, মুঠোয় ধরা গলদা চিংড়ি, কিংবা সাপের মাছ গেলা, তখন তাঁর মনে না পুণ্য না নীতিজ্ঞান কাজ করে। সেখানে তিনি দর্শককে দিতে চান বিশুদ্ধ এক নয়নাভিরাম আনন্দ। বিষয়কে রূপ দেন ছন্দোময় রেখার ডৌলে। কেবল গ্রামবাংলার 'লতাই পট' ছেড়ে শহরের চৌকশ পটে আঁকা ছবির কারণেই নয়, নতুন নাগরিক পরিবেশে, নতুনতর রসবোধে উদ্দীপ্ত হয়ে কালীঘাটের পটুয়া গুণগতভাবেই বদলে যান অনেকটা - হয়ে ওঠেন আধুনিক অর্থেই শিল্পী, তবে দেশী রীতির প্রতি অনুগত্য বজায় রেখেই।


চিত্র ১০ঃ চিংড়িমুখো বেড়াল

কালীঘাটের পটুয়াদের সাথে সাথে প্রায় সমসাময়িক লখনউ বা পাটনার কোম্পানি শৈলীর চিত্রকরদের মধ্যে তফাতটাও এই ক্ষেত্রে বিবেচ্য। কালীঘাটের পটে হয়তো কিছু ইঙ্গ - বঙ্গ বা বিলেতী আখ্যান, বিষয়বস্তু বা পোশাক পরিধান এসেছে, যেমন - টপহ্যাট, কোট, পাৎলুন, বিলেতী ছাতা, হ্যান্ডব্যাগ, গ্যাঁটম্যাট করে চলার ভঙ্গী ইত্যাদি। কিন্তু তা বলে সে সব দৃশ্য আঁকার সময়ে আঁকার রীতি কখনোই পাটনাই বা কোম্পানি রীতি হয়ে যায় নি। হয়েছে নিতান্ত দেশী, বাঙ্গালী। ঠিক যেমন টাহিটির মেয়ে বা টাহিটির প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি আঁকতে গিয়ে গোঁগ্যার তুলি ইউরোপীয় হয়ে গেল, প্রাচ্য হল না, যার ফলে ছবি দেখেই বোঝা গেল যে ছবিটা এক ইউরোপীয় শিল্পীর আঁকা। পাটনাই শিল্পীদের পক্ষে কোম্পানিরীতি আয়ত্ত করা সম্ভব হয়েছিল তার কারন, তারা ছিল মূলত দরবারী পেশাদার শিল্পী, তথা পরভুক। নবাব, রাজা বা ইংরেজ মনিব যেমনটি চাইতেন পেশাদার শিল্পী হুকুম তামিল করার মত করেই তাঁর পেশাদারী নৈপুণ্যে এঁকে দিতেন ঠিক তেমন ছবি। ফলে লখনউ, পাটনাই কলমে যে ছায়াতপ, গাড়- ফিকে মডলিং আসে তা নিতান্তই ইউরোপ ঘেঁষা, তাতে নিস্তেজ দিল্লী ও আউধ কলমের মিনিয়েচার রীতি ও পশ্চিমী বাস্তব ঘেঁষা রীতির মিশ্রণই সবচে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। নিজস্ব স্বকীয় রীতি বা চরিত্র বজায় রাখার কোন প্রশ্নই তাঁর পক্ষে ছিল না। কাজেই পাটনাই কলমের ছবি নিতান্ত চিনিয়ে দেয়া, গল্পবলা বর্ণনাত্মক ছবি, ইংরেজিতে যাকে বলে ইলাস্ট্রেশন। কিন্তু কালীঘাটের পটুয়ার মনিব নবাব বা ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল না। তাঁদের মনিব ছিল সাধারণ বাংলা সমাজ, যে সমাজে একদিকে বেহুলাপট অন্যদিকে গাজীর পট, একদিকে প্রতিমা মূর্তি, অন্যদিকে পীরের ঘোড়া, শিশুদের সস্তা খেলনা ও বাড়িতে দেবদেবীর পট ছিল প্রাত্যাহিক উপকরণ। ফলে বাঙ্গালী জীবনের সাথে পটুয়াদের হাতের কাজ ছিল ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। বাংলার লোকশিল্পের পরম্পরার মধ্য দিয়ে নাগরিক মন জয় করে নেবার পর, এই পটশৈলী তাঁর জার্মান থেকে ছেপে আসা নিদর্শনগুলির চাপে ক্রমশই প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলে। অসম প্রতিযোগিতায় হেরে গিয়ে কালীঘাটের পটুয়াদের বেছে নিতে হয় ক্রমশ অন্যান্য নানা পেশা। এভাবেই বিলুপ্ত হয় বাংলার পটশিল্পের শেষ সৃজনশীল ধারাটি।

ঋণস্বীকারঃ
১। বাংলার চিত্রকলা - অশোক ভট্টাচার্য
২। ভারতের চিত্রকলা (দ্বিতীয় খণ্ড) - অশোক মিত্র
৩। বাংলাপিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৪২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×