দীর্ঘ শ্রমের পর, শরীরের সঙ্গে লেপটে লেগে থাকা ঘামে ভেজা, তেলচিটচিটে, দুর্গন্ধময় জামা আমরা খুলে ফেলি। পায়ে পায়ে বেরিয়ে আসি কামরা থেকে। বারান্দায় যাই। বাইরে তাকাই। দেখি গাছের সবুজ পত্রপল্লব, শাখাপ্রশাখা দুলছে বাতাসে। তড়িঘড়ি করে সে জামা টাঙ্গিয়ে দিই বারান্দায় ঝুলে থাকা নায়লনের রশিতে। প্রথমবারের চেষ্টায় ঝুলন্ত গেঞ্জির প্রোপরশন ঠিক হয় না। আমরা দু' দিক টেনেটুনে তার অনুপাত ঠিক করি। তারপর আবার গিয়ে দাঁড়াই বারান্দার গ্রিল ঘেঁষে। শীতল ধাতব গ্রিল আমাদের শরীর জুড়ে শিহরণ তোলে। আমরা কেঁপে কেঁপে উঠি। মুহূর্তের জন্য স্ত্রীর নগ্ন বুকের কথা আমাদের স্মরণে আসে। মন চায়, নিজের নগ্ন বুকে শক্ত করে স্ত্রীর নগ্ন বুক চেপে ধরতে। কিন্তু আমাদের স্ত্রীরা বারান্দার ধাতব গ্রিলের মতো শীতল হলেও, অনড় - স্থবির তো নয় যে চাইলেই নিজের মতো করে পাওয়া যায়। আমরা শিউরে উঠি ভয়ে। স্ত্রীর বরফখণ্ডের মতো শীতল যুগল স্তনের চে' ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন আর কিই বা আছে।
উপলব্ধি করি, বাতাসে একটু একটু দুলতে থাকা ময়লা জামাটার মতো আমাদের অন্তরও ময়লা, তেল চিটচিটে, দুর্গন্ধময় হয়ে গেছে। আমাদের ঐ ছেঁড়া ন্যাকড়ার মতো জামার পাশে আমাদের অন্তরটাকেও খুলে ঝুলিয়ে রাখতে পারলে ভালো হত। অস্তিত্বের অসহনীয় ভার বহন করতে করতে যার রং সবুজ থেকে বেগুনি হয়ে গেছে। আমরা অসুস্থ হয়ে গেছি। প্রতিটা সকাল নতুন ভার বইবার যন্ত্রণা নিয়ে হাজির হয়। প্রতিবার ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠে আমরা মুখোমুখি হই নতুন ক্লান্তির। কোথাও আলো নেই। সুখ আর কোন অপশন নয়। স্রেফ ভার। ওজন। দমবন্ধ হয়ে আসা একেকটা দিন আর রাত।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৮:০১