অবশেষে তাকে বলা হল, অনেক অনেক দিনের তপস্যা যেন আজ পূর্ণ হল। ওরকম আর কখনো দেখিনি,__খুব কম মেয়েই অমন হয়। যেদিন ক্লাসে প্রথম দেখেছিলাম__সেদিনই প্রেমে পড়িনি__সেদিন প্রেমের কথা মনেই হয়নি। কীভাবে আমারই অগোচরে তার জন্যে একটি আসন ক্রমে ক্রমে নীরবে পাতা রইল, তার খবর রাখিনি অনেক দিন।
ওর কাছাকাছি আসি, তার কাছে ভিড়লেই মন কেমন যেন দুর্বল হয়, আমারই অনভিজ্ঞ দৃষ্টি কত কিছুই না তার খেয়াল করে। একদিন সমস্ত দিন তার সাথে দেখা নেই, খুব ব্যস্ত ছিলাম সেদিন__এত ব্যস্ত যে ওকে নিয়ে ভাবারই অবসর পাইনি সেদিন। মনে হচ্ছিল, হলে গিয়ে এখুনিই শয্যার উপর আমার ক্লান্ত শরীরটি দিয়ে মৃত হব__বোধহয় হয়েছিলামও তাই। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি প্রথম যে বিষয়টি ভাবলাম তা হল, 'নীলার সঙ্গে গতকাল দেখা হয়নি'।
কত জনের সাথেই তো রোজ রোজ দেখা হয় না, অথচ তাদের ভুলে যাই, মনে রাখি না বলে কোনো আক্ষেপও মনে রাখি না।
বুঝলাম, না, আর নয় নীলাকে জানাব এবার। বলবো, ‘দেখ, আমি, নির্বাচন করে পণ্য পছন্দের মতো তোমাকে পছন্দ করিনি__যেমনটা ছেলেরা প্রথম নির্বাচন করে, পরে প্রেমে পড়ে। আমি তোমাকে আমার শ্রদ্ধা দিয়ে ভালোবেসেছি__আমারই অচেষ্টায় তুমি আমাকে বুঝিয়েছ তুমি ছাড়া আমার চলবে না।’ এই কথাটি বহুদিন চেষ্টা করে পারিনি বলতে, তবে আজ বললাম__একটি তপস্যা পূরণ হল।
নীলা জানাল, ‘তুমি যোগ্য হও আগে, তারপর...।’ আমি লজ্জায় মাথা তুলে ওর সামনে দাঁড়াতে পারিনি। কেউ আমাকে তীক্ষ্ণ ভাষায় মুখের উপর বলবে ‘যোগ্য হও’__আমি মেনে নিতে পারিনি।
কী যোগ্যতা সে চায়? বহু টাকার মালিক হব, নাকি রুশো, স্তাদাল, বালজাক, ফ্লোবেয়র, চেকভ__তাঁদের মতো হতে বলছে সে?
আমি আমার চলা-বলায় সকল পথ বদল করলাম, যত সব বন্ধুদের আড্ডা, মধুতে প্রাত্যহিক সময় কাটানো ছেড়ে দিয়ে ডুবে রইলাম লাইব্রেরির একটি অবহেলিত কোণে পুরো এক বছর! ওই একটি বছর আমার সকাল, আমার দুপুর, আমার রাত্রি আমারই কাছে আবদার করল একটু অবসরের। আমি দিলাম না। এনলাইটেনমেন্টের আলো আমাকে ছিঁড়েফেঁড়ে গড়ল যেন নতুন করে, আমি ডুব দিলাম ঝলসে যাওয়ার জন্য।
ঝলসেছিলাম কিনা জানি না, তবে একটি সিদ্ধান্ত বদলেছিলাম। নীলার কাছে আর কখনো আমি যাইনি, সে আজ আমার অযোগ্য!