somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথমে ভারত থেকে আমদানী! বর্তমানে দেশে তৈরি নকল হিজড়ায় সয়লাব রাজধানী!

২৪ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমে ভারত থেকে আমদানী! বর্তমানে দেশে তৈরি নকল হিজড়ায় সয়লাব রাজধানী!

এমএবি সুজন

অ‌বৈধ অস্ত্রসহ হ‌রেকপ‌দের মাদক ব্যবসা বি‌শেষত ইয়াবা ও দেহ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নি‌তে প্রস্তুত রাজধানীর ৫ শীর্ষ হিজড়া গুরু নকল হিজড়াচক্র পাঁচ এ পাঁচ পাঞ্জাতন যথাঃ ক‌চি, স্বপ্না, নাজমা, স‌জিব ও পিং‌কি পুরুষ থে‌কে হিজড়া এক ভয়ংকর অপরাধী সি‌ন্ডি‌কেট। হিজড়ার ছদ্মবেশে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান দাপিয়ে বেড়াচ্ছে যতসব হিজড়া নামধারী অপরাধীরা। ছদ্দ‌বে‌শে বহুরূপী তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে তারা চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, পতিতাবৃত্তিসহ ভয়ংকর সব অপরাধ সংঘটিত করছে। আর এদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে শূন্য থেকে কোটিপতি বনে গেছে কিছু হিজড়া গুরু। রাজধানীতে ছোট-বড় মিলিয়ে এখন অন্তত ৪০ জন হিজড়া গুরু রয়েছে। তাদের মধ্যে স্বপ্না, কচি, পিংকি, সজিব ও নাজমার বিরুদ্ধে হিজড়া আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। পুরুষ জীবন ছেড়ে অপারেশনের মাধ্যমে হিজড়া হয়ে অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। বনানী, গুলশান, খিলক্ষেত, তুরাগ, বাড্ডাসহ বিভিন্ন থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, মারামারিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অসংখ্য মামলা ও জিডি রয়েছে এ গুরুদের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট সূত্র ও স্থানীয় বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় উত্তরা, গুলশান, ভাটারা, তেজগাঁও, রমনা, শেরেবাংলা নগরসহ বিভিন্ন থানা এলাকায় বাসাবাড়ি, দোকান, ব্যবসা কেন্দ্র এমনকি অফিসেও হানা দিচ্ছে ওই গুরুদের শিষ্যরা। তারা আগেভাগেই ধার্য করে দিচ্ছে চাঁদার টাকা। নির্ধারিত সময়ে টাকা না দিলে তুলকালাম কাণ্ড ঘটাচ্ছে। শুধু তাই নয়, টাকা না পেয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল, নগ্ননৃত্য প্রদর্শন, ভাংচুর, মারধর করাসহ নানা অশ্লীল কাণ্ডে মেতে ওঠে তারা। এছাড়া বিভিন্ন ট্রাফিক সিগনাল, পাবলিক পরিবহন ও পার্কে হিজড়াদের উৎপাত বেড়েছে। এরা চাঁদা নেয়ার পাশাপাশি ছিনতাইও করে। কচুক্ষেত, কাকলী, ফার্মগেট, নাখালপাড়া, তেজগাঁও, বিজয় সরণি, পীরেরবাগ, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর-১০, আগারগাঁও, সেনপাড়া, মিরপুর-৬, দুয়ারিপাড়া, মিরপুর ১ ও ২, গাবতলী, কল্যাণপুর, তালতলা, শ্যামলী ও আসাদগেট, পুরাতন এয়ারপোর্ট, রুপনগর, মিরপুর ১১, ১৩ ও ১৪সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ নকল নামধারী হিজড়াদের অত্যাচারে এখন অতিষ্ঠ। র‌বিবার বেলা ১টা। ফার্মগেট থেকে ৬ নম্বর পরিবহনের একটি বাসে ওঠে দুই হিজড়া। তারা প্রত্যেক যাত্রীর কাছে টাকা চাইতে শুরু করে। ঝাঁজালো স্বরে বলতে থাকে- দে ভাই, টাকা দে। সামনে নেমে যাব, তাড়াতাড়ি দে। ১০ টাকা, ২০ টাকা, যার কাছে যা পারে হাতিয়ে নেয় তারা। এদিন চালকের আসনের পেছনে এক নারীর কাছে টাকা চায় তাদের একজন। ওই নারী তার ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে ৫ টাকার নোট খুঁজছিলেন। এমন সময় এক হিজড়া তার ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে বলে- সিগনালে নেমে পড়ব, তাড়াতাড়ি দে বলেই ৫শ’ টাকার একটি নোট টেনে নিয়ে নেমে যায়। জানা যায়, এ এলাকায় হিজড়া সজিবের শিষ্যরা এমন জবরদস্তি করছে। মহাখালী এলাকার আলামিন নামে এক ব্যক্তি জানান, গত ২০ ডিসেম্বর তার ভাগ্নির বিয়ে ছিল। বিয়ের অনুষ্ঠানে একদল হিজড়া হাজির হয়। তারা ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে বসে। পরে তাদের ২০ হাজার টাকা দিয়ে বিদায় দেয়া হয়। তেজগাঁওয়ের আজিজুর রহমান জানান, ২২ ফেব্রুয়ারি তার এক চাচাতো বোনের মেয়ে হয়। খবর পেয়ে হিজড়ারা গিয়ে হাজির হয় তাদের বাসায়। পরে তাদের ১০ হাজার টাকা দিয়ে বিদায় দেয়া হয়। তবে প্রকৃত হিজড়ারা বলছেন, তারা কোনো মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন না। তারা মানুষের কাছে চেয়েচিন্তে খান। নকল হিজড়া এবং অপরাধীরাই এমন জবরদস্তি চালায় বলে তাদের দাবি। এদি‌কে রাজধানীর ভয়ংকর পাঁচ গুরু যেমনঃ রমনা থানার মগবাজার, বনানী থানার কড়াইল বস্তি, তুরাগের হরিরামপুর, খিলক্ষেতের বরুয়া এবং কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় নামধারী হিজড়াদের অনেকেরই বসবাস। অপরাধীদের মদদদাতা গুরুদের একজনের নাম কচি। কচির আসল নাম ইব্রাহিম। তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল। বর্তমানে সে থাকে তুরাগের কামারপাড়া। কচির বিরুদ্ধে ইয়াবা, হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। হিজড়া সেজে নিজের বাহিনী দিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত করে সে এখন শূন্য থেকে কোটিপতি। উত্তরায় তিনটি বাড়ি ও নগদ কয়েক কোটি টাকার মালিক কচি। তার অধীনে কাজ করে ৪৫-৫০ জন। তুরাগের কামারপাড়া, রাজাবাড়ী, ধউর, রানাভোলা এবং বাউনিয়া এলাকায় থাকে ১০টি গ্রুপ। তাদের প্রধান হচ্ছে এই কচি। সবাই তাকে গুরু মা বলে ডাকে। কচির বিরুদ্ধে হামলা, গুলিবর্ষণসহ নানা অপকর্মের ঘটনায় তুরাগ, গাজীপুর, উত্তরা পশ্চিম, খিলক্ষেত, বাড্ডাসহ কয়েকটি থানায় অন্তত ১৭টি মামলা রয়েছে। আরেক গুরুর নাম স্বপ্না। স্বপ্নার বসবাস মগবাজারে। তার অধীনে রয়েছে ৩৫-৪০ জন। অভিযোগ আছে, এ শিষ্যদের অধিকাংশই পুরুষ। স্বপ্নার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। সেখানে সে অঢেল সম্পত্তির মালিক। স্বপ্নার আসল নাম খাইরুল। তার দুই স্ত্রী রয়েছে। কড়াইল বস্তিতে স্বপ্নার রয়েছে বিশাল বাহিনী। স্বপ্না ও কচি যৌথ সিন্ডিকেট করে রাজধানীর একাংশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করছে। মহাখালী সাততলা বস্তিতে রয়েছে স্বপ্নার মাদক স্পট। খিলক্ষেত এলাকার হিজড়াদের দলনেতা নাজমা। তার অধীনে রয়েছে ৪০ জন। ৩০ বছর আগে পুরুষাঙ্গ কেটে হিজড়া হয় সে। এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে বেশ পরিচিতি রয়েছে তার। প্রায় অর্ধকোটি টাকা বিভিন্ন গার্মেন্ট ব্যবসায়ীর কাছে তার সুদে দেয়া আছে। সায়দাবাদ, খিলক্ষেত ও গাজীপুর বোর্ডবাজার এলাকায় তার ৩টি বাড়ি ছাড়াও একাধিক প্লট রয়েছে। বটতলা ক-১৮৩/৫নং মায়ের দোয়া নাজমা ভিলায় থাকে এই নাজমা হিজড়া। এটি তার নিজের বাড়ি। মগবাজার, তেজগাঁও, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট এলাকার নিয়ন্ত্রণ ছিল হায়দার হিজড়ার হাতে। প্রতিপক্ষের হাতে হায়দার খুন হওয়ার পর এখন এসব এলাকার আধিপত্য চলে গেছে তারই শিষ্য সজিবের হাতে। সজিব তার দলে কিছু পুরুষকে কৃত্রিমভাবে হিজড়া বানিয়ে রেখেছে। তাদের কেউ কেউ লিঙ্গ কেটে হিজড়া হয়েছে। আর কোনো কোনো পুরুষকে লম্বা চুল রেখে শাড়ি পড়িয়ে রাখারও অভিযোগ রয়েছে। সজিবের শিষ্যরা ফার্মগেট-কারওয়ান বাজার এলাকার বাসে বীর দর্পে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। কুড়িল বিশ্বরোড, শাহজাদপুর, খিলক্ষেত, নতুন বাজার, কাওলা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে পিংকি হিজড়া। পিংকি নিজেও পুরুষ থেকে অপারেশনের মাধ্যমে হিজড়া হয়েছে। তার রয়েছে দুই শতাধিক শিষ্য। অপরাধী শিষ্যদের আয়ের টাকায় বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক এখন পিংকি। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে। এরা ছাড়াও রাজধানীকে কয়েকটি এলাকায় ভাগ করে একেকটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। উত্তরা এলাকার নিয়ন্ত্রণে রাহেলা, মিরপুরে আনুরি ও শাহজাদি এবং পুরান ঢাকায় মেজবা গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এ ব্যাপারে পিংকি হিজড়া বলেন, ‘আমি অপরাধী হলে আইনের লোকজন আমাকে সাজা দিক।’ সে বলে, সব হিজড়া এভাবেই আয় করে। আমি এর বাইরে কিছু করাচ্ছি না। সজিব হিজড়া বলে, আমার লোকজন জোরজবরদস্তি করে না। আমার অধীনের এলাকা দখল করতে প্রতিপক্ষের লোকজন আমার বিরোধিতা করছে। স্বপ্না, কচি ও নাজমা তাদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আইনশৃংখলা বাহিনীর একাধিক সূত্রমতে, হিজড়াদের মধ্যে যেসব গোলাগুলির ঘটনা ঘটে তাতে এটা নিশ্চিত, তাদের অনেকের হাতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। ঝুমা নামে এক হিজড়া জানায়, তার নাম ছিল সুমন। তাকে ফাঁদে ফেলে হিজড়া বানানো হয়েছে। স্বপ্না হিজড়ার এক শিষ্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলে, ১০ বছর আগে স্বপ্না তাকে বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে হিজড়া বানিয়েছে। জুলেখা নামে আরেক হিজড়াও একই অভিযোগ করে।
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য পল্লী বানিয়ে পুরস্কার পাওয়া জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, হিজড়াদের অবহেলার দায় এড়াতে পারেন না সমাজ ও রাষ্ট্র। বেঁচে থাকার ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাও তাদের নেই। নেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। তাই অনেক হিজড়া বাধ্য হয়ে নানা অপ্রীতিকর কাজে জড়ান। যদি সুস্থ মানুষ হিজড়া সেজে অপরাধে জড়ান, তাহলে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, হিজড়াদের মধ্যে কেউ কেউ নানা অপরাধে জড়াচ্ছেন। কেউ অপরাধ করলে অবশ্যই প্রচলিত আইনে তার শাস্তি হবে।

হুমায়ন সরদার ওরফে মাহাবুব। আগে রাজধানীর মগবাজারে রিকশা চালাত। ঘটনাক্রমে নকল হিজড়া বানানোর ওস্তাদ হিসেবে পরিচিত সাভারের মনু হিজড়ার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। রিকশা চালানো ছেড়ে দিয়ে পাল্টে ফেলে জীবনের হিসাব-নিকাশ। নাজমা নাম ধারণ করে বেছে নেয় মনু চক্রের অন্য সদস্যদের পেশা। সেও পুরুষ মানুষদের ধরে এনে নকল হিজড়া বানানো শুরু করে। সাড়ে তিন বছর আগে খিলক্ষেত থেকে রতন নামের এক হিন্দু ছেলের পুরুষাঙ্গ ছিন্ন করে হিজড়া বানায় মাহবুব ওরফে নাজমা। হায়দার নামে এক যুবক কারওয়ান বাজারে মিস্ত্রির কাজ করত। তাকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে হিজড়া বানায় মাহবুব। হায়দার এখন মাদক ব্যবসায়ী। এই নকল হিজড়া বানানোর কারখানাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর আশপাশ এলাকা এখন ছেয়ে গেছে নকল হিজড়ায়। তাদের প্রধান পেশা প্রতারণা, ছিনতাই, অস্ত্র চোরাচালান আর মাদক ব্যবসা। রাজধানীসহ সাভার ও কেরানীগঞ্জে সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে তারা। একাধিক সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, এই চক্রের প্রলোভনে পড়ে অনেকে এই পথ বেছে নিচ্ছে। সাধারণত হিজড়াদের কেউ ঘাটাতে চান না বলে এই ছদ্মবেশ ধরা বা নকল হিজড়া সাজার সুবাদে তারা পাচ্ছে সাধারণ মানুষের আর প্রশাসনের সহানূভূতি। এ ছাড়া পুলিশ-র‌্যাবও রাস্তাঘাটে হিজড়াদের তল্লাশি করে না। ছোটখাটো অপরাধ করলে হিজড়ারা গ্রেপ্তারও হয় না খুব একটা। আর এই সুযোগটাকেই তারা ব্যবহার করছে। আর এসব সুবিধাকে পুঁজি করেই গড়ে উঠেছে নকল হিজড়াদের একাধিক সংঘবদ্ধ চক্র। এই চক্রের প্রায় সবাই বিবাহিত এবং তাদের স্ত্রী সন্তানও রয়েছে। নকল হিজড়া চক্রের বড় নেতা হচ্ছে চারজন। মেসবাহ, পিংকি, রমজান ও জাহাঙ্গীর। এদের সবারই স্ত্রী ও সন্তান আছে। অনেকের ঢাকায় নিজস্ব বাড়িও আছে। হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড হেলথ ফাউন্ডেশন (এইচআরএইচএফ) নামের একটি মানবাধিকার সংগঠনও নকল হিজড়াদের ব্যাপারে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে একই তথ্য পেয়েছে বলে জানা গেছে। হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড হেলথ ফাউন্ডেশন (এইচআরএইচএফ) সংগঠনটির এক তদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, সারা দেশে কয়েক সহস্রাধিক হিজড়া থাকার কথা উল্লেখ করা হলেও প্রকৃত হিজড়ার সংখ্যা খুবই কম। নগরীতে বড়জোর ৫০০ জন জন্মগত হিজড়া আছে, বাকিরা নকল ও এক ধরনের মানসিক প্রতিবন্ধী। অপারেশনের মাধ্যমে তারা হিজড়ায় রূপান্তরিত হয়েছে। আবার কেউ শুধু পোশাক পাল্টে হিজড়া সেজেছে। সাভারের ছদ্মবেশী মনু হিজড়ার নিয়ন্ত্রণে একাধিক কৃত্রিম হিজড়া বানানোর কারখানা আছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়। এরা নানা প্রলোভন ও কৌশলে ভোলাভালা নিরীহ ছেলেদের ধরে নিয়ে হিজড়া বানাচ্ছে। এদের দিয়ে করানো হচ্ছে চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। ধরা পড়লে হিজড়া পরিচয়ে মানুষের সহানুভূতি পাওয়া যায়, এটাই তাদের একমাত্র পুঁজি। রাজধানীর লালবাগ-বংশাল এলাকার মেসবাহ, শ্যামপুরের আসমানী ওরফে ইকবাল, বিমানবন্দর এলাকার জহির আহমেদ সুজন ওরফে পিংকি, বাড্ডার জাহাঙ্গীর ওরফে জাহানারা, কদমতলীর পপি, কাফরুল-ক্যান্টনমেন্ট এলাকার হুমায়ন সরদার ওরফে নাজমা, মতিঝিল এলাকার বকুলী, কেরানীগঞ্জের আলো, কালি, গেণ্ডারিয়ার ববি। এদের সবার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, কেউই জন্মগত হিজড়া নয়। হিজড়া সেজে সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। রাতের অন্ধকার নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে এরা সদলে বের হয় এলাকায়। কেড়ে নেয় পথচারীদের টাকা-পয়সা। আর এদের সঙ্গে যোগসাজশ আছে এক শ্রেণীর অসৎ পুলিশেরও। আর এদের বাধা দিতে গিয়ে প্রায়ই আহত হচ্ছে আসল হিজড়ারা। নকল হিজড়ারা প্রায়ই লাঠিসোঁটা, রড, হাতুড়িসহ অন্যান্য দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালায় আসল হিজড়াদের আস্তানায়। সুন্দরী নামের এক হিজড়া জানায়, তার মতোই অসহায় ময়না ও সাথী নামের দুই হিজড়া নকল হিজড়াদের হামলার শিকার হয়ে উচ্চমহলে অভিযোগ করেও কোনো ফল পায়নি। এ ছাড়া সুইটি, স্বপ্না, নেহার, নেত্রী দিপালীসহ অনেকেই তাদের হামলার শিকার হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় তাদের দায়ের করা শতাধিক জিডিও পড়ে আছে। বাংলাদেশ হিজড়া উন্নয়ন আহ্বায়ক হিজড়া নেত্রী দিপালী এবং কেয়া নামে এক হিজড়া কালের কণ্ঠকে জানায়, নকল হিজড়াদের অপকর্মের দায়ভার এসে পড়ছে তাদের ওপর। তারা এর থেকে কোনোভাবেই পরিত্রাণ পাচ্ছে না। তারা একের পর এক হামলার শিকার হয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করলেও পুলিশ কিছুই করছে না। অনুসন্ধানে জানা যায়, হিজড়াদের সংগঠন বাঁধন-এর সভাপতি পিংকি নিজেই একজন নকল হিজড়া। তার আসল নাম জহির আহম্মেদ সুজন। বাবার নাম লাল মিয়া। তার ব্যক্তিগত গাড়ি আছে এবং কুড়িলে তার নিজের বাড়ি ও সন্তান আছে বলে অভিযোগ থাকলেও কালের কণ্ঠের কাছে পিংকি সেটা অস্বীকার করে। হিজড়াদের আরেকটি সংগঠন সুস্থ জীবন। এটির সভাপতি ববি। সে থাকে শ্যামপুর ৪ নম্বর রোড, লায়লা ভিলা কদমতলী। সেও নকল হিজড়া। বাঁধন সভাপতি পিংকি কালের কণ্ঠের কাছে স্বীকার করে বলে, সে প্রকৃত হিজড়া নয় সত্য তবে সেঙ্ পরিবর্তন করেছে। তার স্বামী আছে এবং সে ব্যবসা করে। চাঁদাবাজি বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত নয়। হিজড়া নেতা মেসবাহ সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, সে প্রকৃত হিজড়া নয়। তার বাবার নাম হেলাল উদ্দিন। ঢাকার বংশালে অবস্থিত চুড়িওয়ালা গলিতে তার নিজস্ব বাড়ির নম্বর ৩৮ আবুল হাসনাত রোড। মেসবাহ পাঁচ সন্তানের জনক। তারেক, জুয়েল ও রাজু নামে তিন ছেলে এবং জেবা ও তৃণা নামে দুই মেয়ে রয়েছে তার। মেসবার স্ত্রীর নাম নারগিস বেগম। মেসবার বড় ছেলে গবাদি মাংস বিক্রেতা। তারেকের স্ত্রীর নাম হামিদা। এই হামিদার বাবা হারুন শেখ নকল হিজড়া সেজে নাম ধারণ করেছে বেদেনা। মেসবাহ কালের কণ্ঠকে জানায়, সে প্রকৃত হিজড়া নয়। ঢাকায় তার নিজ বাড়িসহ স্ত্রী-সন্তান আছে। তবে সে কোনো চাঁদা বা অপরাধের সঙ্গে জড়িত নয় বলে জানায়। বাঁধনের সদস্য হিজড়া সুইটি কালের কণ্ঠকে বলে, আমি বাঁধন হিজড়া সংঘকে ভালো মনে করে সদস্য হয়েছিলাম। পরে জানলাম পিংকি নকল হিজড়া। তার ছেলেমেয়ে আছে। আসলে এই বাঁধনের অধিকাংশই নকল হিজড়া। বাঁধনের মতো 'সুস্থ জীবন' এনজিওরও একই হাল। প্রায় সবাই নকল। সরকারের পক্ষ থেকে এনজিও দুটিতে প্রকৃত হিজড়াদের খোঁজ নিতে কোনো কর্মকর্তা এলে ছেলেদের মেয়ে সাজিয়ে দেখানো হয়। অভিযোগ আছে, ঢাকার ধামরাইয়ে রোম আমেরিকান হাসপাতাল নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে প্রতি মাসে চার-পাঁচজনকে পুরুষাঙ্গ কেটে হিজড়া বানানো হয়। এতে জনপ্রতি খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। এ ছাড়া রাজধানীর শ্যামলীর একটি ক্লিনিকেও এভাবে হিজড়া বানানো হয়। রোম-আমেরিকান হাসপাতালের কর্ণধার ডা. গোলাম রহমান শাহজাহান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সিলেট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাস করার পর ইতালি থেকে আমি এ ব্যাপারে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছি। যাদের কিছুটা সমস্যা রয়েছে তাদেরই শুধু সেঙ্রে সমস্যা ঠিক করে দেওয়া হয়।' গত পাঁচ বছরে তার হাসপাতাল থেকে অন্তত ৩০০ জনের এ ধরনের অপারেশন করা হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। বাংলাদেশ হিজড়া উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি দিপালী হিজড়া বলে, '৮০ সালের দিকে ভারতীয় হিজড়া সিন্ডিকেট সদস্যদের এ দেশে অনুপ্রবেশ এই নতুন ধারার সৃষ্টি করেছে। এই নকল হিজড়ারা চাঁদাবাজি, মাদক পাচার, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। পুলিশের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, 'রাজধানীর বাইরে সাভার, আশুলিয়ার বাসিন্দারাও হিজড়াদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ। নারী-শিশু পাচার, অস্ত্র ও মাদক পরিবহনসহ চোরাচালানের কাজেও এদের ব্যবহার করা হচ্ছে। পুরান ঢাকার হিজড়া মেসবাহ ডাকাত শহীদের চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার এজেন্ট। সন্ত্রাসী জিসানের চাঁদাবাজি, অস্ত্র পরিবহনসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে নকল হিজড়া জাহাঙ্গীর ওরফে জাহানারা। জাহাঙ্গীরের আদি নাম রাজ্জাক। মাদক ব্যবসায় কয়েকবার গ্রেপ্তার হওয়ায় পুলিশের তালিকায় নাম চলে আসায় সে রাজ্জাক পাল্টে জাহাঙ্গীর সেজেছিল। এখন জাহানারা। হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড হেলথ ফাউন্ডেশন সেক্রেটারি আলমগীর হোসেন সেলিম বলেন, হরমোনজনিত সমস্যা ও পারিবারিক উপেক্ষা-অবহেলার কারণে অনেকে পুরোপুরি হিজড়া না হয়েও হিজড়ার মতো চলাফেরা করছে। সেটা ভিন্ন দিক। কিন্তু কাজে লাগিয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়া দুঃখজনক।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:০৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সিরাতাম মুসতাকিমের হিদায়াত হলো ফিকাহ, কোরআন ও হাদিস হলো এর সহায়ক

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:০৮



সূরাঃ ৬ আনআম, ১৫৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১৫৩। আর এপথই আমার সিরাতাম মুসতাকিম (সরল পথ)। সুতরাং তোমরা এর অনুসরন করবে, এবং বিভিন্ন পথ অনুসরন করবে না, করলে তা’ তোমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাত্রলীগের লুঙ্গির নিচে ছিল শিবির, এখন শিবিরের লুঙ্গির নিচে ঘাপটি মেরে আছে গায়ে বোমা বাঁধা সশস্ত্র জঙ্গিরা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৫


"তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ: চোখে যা দেখেছো, কানে যা শুনেছো, সেগুলো সঠিক নয়, সেসব ভুলে যাও।" - জর্জ অরওয়েল

অনেকদিন ধরে একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। এতদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী-লীগের ছায়া দায়িত্ব নিয়ে তারেক জিয়া এখন দেশে

লিখেছেন অপলক , ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৬



সংবাদের টাইটেল অনেক কিছু বলে দেয়। ভেতরেটা না পড়লেও চলে। বস্তুত: এতদিন ধরে ভারতের গ্রীন সিগনাল পাচ্ছিলেন না, তাই তারেক জিয়া দেশে আসার সময় বারবার পিছাচ্ছিলেন। এখন চুক্তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভোটের পর, আমরা পাকীদের বুটের নীচে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩২



পাকীরা অমানুষ, অপসংস্কৃতির ধারক ও বাহক; ওরা ২টি জাতিকে ঘৃণা করে, ভারতীয় ও বাংগালীদের; ওরা মনে করে যে, বাংগালীদের কারণেই পাকিরা হিন্দুদের কাছে পরাজিত হয়েছে ১৯৭১... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফুড ফর থট!!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৫



একটা বিশাল আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত আকার দেয়া খুবই কঠিন, বিশেষ করে আমার জন্যে। তারপরেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাবলাম কিছু কথা বলা উচিত। দেশের আভ্যন্তরীন বা আঞ্চলিক রাজনীতিতে ক্রমাগত বড় বড় ভূমিকম্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

×