
একটা বিশাল আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত আকার দেয়া খুবই কঠিন, বিশেষ করে আমার জন্যে। তারপরেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাবলাম কিছু কথা বলা উচিত। দেশের আভ্যন্তরীন বা আঞ্চলিক রাজনীতিতে ক্রমাগত বড় বড় ভূমিকম্প আসছে। এতোটাই যে, কোনটা মূল আর কোনটা আফটার শক, বোঝাই দায়। এই ভূমিকম্প সৃষ্টির মূল দায় আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের। কেন এই কথা বললাম? সেটা বোঝার জন্য একটু পেছন ফিরে দেখা দরকার।
হাসিনার গত ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনে ভারত বিনা পরিশ্রমে নিয়মিত হালুয়া-রুটি খেতে খেতে বেশ মোটাতাজা হয়ে উঠেছিল। দিন ভালোই যাচ্ছিল তাদের। কিন্তু হঠাৎ বিনামেঘে বজ্রপাতের মতো দেশের ছাত্র-জনতা হাসিনাকে লাথি মেরে দেশ থেকেই বের করে দিলো। শুধু হাসিনাই না, তার ঘটি-বাটি-কাথা-কম্বলসহ তাকে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য করলো। ঠিক এই পয়েন্টেই শুরু হলো ভারতের ভাণুমতির খেল। যেই ভারত গত ১৬ বছর ফেয়ার এন্ড ইনক্লুসিভ ইলেকশান, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ইত্যোকার বিষয় নিয়ে টু-শব্দও উচ্চারণ করে নাই, তাদের হঠাৎ করেই সব সেন্সরগুলো সজাগ হয়ে উঠলো। এখন তারা ফেয়ার এন্ড ইনক্লুসিভ ইলেকশান, গণতন্ত্র, মানবাধিকার শব্দগুলো এমনভাবে বলে যেন এটাই তাদের মূল ধ্যান-জ্ঞান।
দুধ দেয়া গরু যখন তাদের কাছে গিয়ে দুধ দেয়া বন্ধ করে দিলো, তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেলো। '২৪ এর ৫ই অগাষ্টের পর থেকে ভারত বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য হেন কোন কাজ নাই, যা করে নাই। ক্রমাগত বাংলাদেশের নামে মিথ্যা প্রচারণা, ব্যবসা-বানিজ্যে বাধা সৃষ্টি, বাংলাদেশের যারা চিকিৎসা সেবা নিতে ভারত যেতো, তাদের সেবা বন্ধ করে দেয়া, সীমান্তে অস্থিরতা তৈরী করা, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরী করা, তাদের আশ্রয়ে থাকা হাসিনাসহ আওয়ামী নেতা-কর্মীদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করা, ভারতে থাকা বাংলাদেশর মিশনগুলোতে হামলা এবং হামলার হুমকি............কোনটা রেখে কোনটা বলবো?
ভারত কখনওই তাদের কোন প্রতিবেশীর সাথে ন্যয্য আর সমতাভিত্তিক আচরণ করে নাই। আর হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের সাথে তো তাদের সম্পর্ক ছিলো প্রভু-ভৃত্যের। এখন যখনই বাংলাদেশ জবাব দেয়া শুরু করেছে, তাদের আচরণ হয়ে উঠেছে উন্মাদের মতো। এখন তারা শিলিগুড়ি চিকেন নেককে ''চিকেন ব্রেস্ট'' বানানোর হুমকি দিচ্ছে। ফেনী করিডোর কাট-অফ করে চট্টগ্রামকে আলাদা করে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। শুধু হুমকি দিয়েই বসে নাই তারা। আসামের ধুবড়ি সংলগ্ন বামুনী, বিহারের কিশোনগন্জ আর উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া এলাকায় গড়ে তুলেছে নয়া তিনটা সামরিক ঘাটি; আর মিজোরামের আইজলের কাছে একটা প্রক্রিয়াধীন আছে যার সম্ভাব্য স্থান পারভা ও শিলছড়ি যা কিনা চট্টগ্রাম সীমান্তের একদম কাছে। তাছাড়া ত্রিপুরাতে এক ব্যাটালিয়ান সেনা মোতায়েনের খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
এই প্রস্তুতি বোঝায় ভারত এখন কেবল রাজনৈতিক না, সামরিক বিকল্পও বিবেচনা করছে। ভারত এখন বাংলাদেশের ভেতরে অস্থিরতা সৃষ্টি আর বৈদেশিক নীতি দূর্বল করার স্ট্র্যাটেজি নিয়েছে। বাংলাদেশে উগ্রবাদ বাড়ছে, তাই ভারতের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, এই বয়ান তৈরী করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য। বর্তমান সরকার তুরস্ক, চীন আর পাকিস্তানের সাথে বিভিন্ন এমওইউ করছে ঠিকই তবে নতুন নির্বাচিত সরকার আসার আগেই সবগুলো পাকাপোক্ত চুক্তি করে ফেলা জরুরী। আরও জরুরী পাক-সৌদির প্যাক্টের অংশীদার হওয়া। চীন সবসময়েই সরাসরি এই ধরনের চুক্তি থেকে দূরে থাকে, তবে তারা যেভাবে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক রাখে, সেটা বাংলাদেশ ফলো করতে পারে। তাছাড়া পাকিস্তান যেভাবে চীন আর আমেরিকার সাথে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে চলে, সেই মডেল নিয়েও বাংলাদেশের চিন্তা-ভাবনা করা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, এই সরকারের হাতে সময় অত্যন্ত কম। অলসতা আর দীর্ঘসূত্রিতার মাধ্যমে তারা প্রচুর মুল্যবান সময় নষ্ট করেছে; এখন সময় বাকী কয়েকটা দিন গা-ঝাড়া দিয়ে উঠে পাকাপোক্ত কিছু করে যাওয়া।
মজার ব্যাপার হলো, ভারতের গোদি মিডিয়া সেভেন সিস্টিারর্স নিয়ে ইউনুসের ব্যবসা সংক্রান্ত বয়ানকে বিকৃতি করাসহ বিভিন্নভাবে প্রভোক করছে যেন বাংলাদেশ সেসব নিয়ে কথা বলে। সেই ফাদে পা দিয়েছে হাসনাত। তবে এসব আবেগী কথা, বাংলাদেশের সেভেন সিস্টিারর্স নিয়ে কিছু করার সক্ষমতাই নাই। এটা সবাই জানে। কিন্তু এসবকে সিরিয়াসলী নেয়ার ভান করে ভারত যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা সন্দেহজনক। ভারত কি করবে বা করতে পারে সেধরনের সব বিষয়গুলোই এই সরকারের মাথায় রাখতে হবে। এটাই স্ট্র্যাটেজিক থিঙ্কিং এর বেইজ লাইন।
ধরে নেয়া যেতে পারে যে, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি সরকার গঠন করবে। তবে বিএনপি যে ভারতের কাছে দাসখত দিয়ে ক্ষমতায় আসবে, তাতে কোনই সন্দেহ নাই। তার প্রচুর নমুনা আছে। এই নিয়ে আমি বেশ কিছু পোষ্ট লিখেছিলাম আগে, তাই আপাততঃ বিস্তারিততে যাচ্ছি না, যদিও ভবিষ্যতে এটা নিয়ে আরো লেখার ইচ্ছা আছে। আপনারা যারা বিএনপিকে ভোট দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন; হালুয়া-রুটি খাওয়াদের না, সাধারন ভোটারদের বলছি..........ভারতের প্রেসক্রিপশানে বিএনপি'র মাধ্যমে রিফাইন্ড আওয়ামী লীগকে পূনর্বাসিত করবেন নাকি নাকি দেশপ্রেমিক সরকার আনবেন। সেটার ভাবনা এখন থেকেই শুরু করেন। আজ থেকে দশ বছর পরের জেনারেশান যখন আপনাদের জিজ্ঞেস করবে............দেশ গড়ার এতো ভালো একটা সুযোগ পেয়েও তোমরা আবার ভারতের খপ্পরে গিয়ে পড়লা কেনো? কি জবাব দিবেন? ভাবনা-চিন্তা করার এখনই সময়!!!
মোদির ভারত এখন আর বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ না, বরঞ্চ মোদির ধন-তন্ত্রের দেশ। কি কইলাম বুঝলেন তো, নাকি ভাইঙ্গা বলতে হবে? বিএনপি সেইটা আকড়িয়ে ধরেই এখন ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছে। তাদেরকে আসতে দিবেন কি দিবেন না, এইটা আপনাদের বিবেচনা। মনে রাখবেন, আপনাদের ভুল সিদ্ধান্তের কারনে বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে, আগামী ৫০ বছরেও দেশ এই ভয়ঙ্কর চক্র থেকে বের হতে পারবে না। বাংলাদেশ যদি সিকিম হয়ে যায়, তাহলে আপনাদের সন্তানেরা কোনদিন আপনাদের ক্ষমা করবে না। কারন, আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকাকালীন যেই ভুল ভারত করেছে তার পুনরাবৃত্তি তারা আর করবে না। অখন্ড ভারতের দ্রুত বাস্তবায়নই আমরা দেখবো।
আমার এই বিরক্তিকর লেখাটা এতোদূর পর্যন্ত যখন পড়েছেনই, একটা গল্প শোনাই। কুট্টি গল্প।
গ্রামের রাস্তায় হাটতে হাটতে দুই পথিক ক্লান্ত হয়ে এক গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছে। স্বাভাবিক কথোপকথনের এক পর্যায়ে দুই পথিকের আলাপ গড়ালো অর্থনৈতিক অবস্থার দিকে।
১ম পথিকঃ ভাই, আমি অত্যান্ত গরিব একজন মানুষ।
২য় পথিকঃ কতো গরিব?
১ম পথিকঃ এমনই গরিব যে, যখন শার্ট কিননের টাইম আসে, তখন লুঙ্গি ফাইট্টা যায়; আর যখন লুঙ্গি কিননের টাইম আসে, তখন শার্ট ফাইট্টা যায়!!!
২য় পথিকঃ তইলে দুইটা একলগে কিনইন্যা ক্যারে?
১ম পথিকঃ ভাইরে.........তখন গোয়া ফাইট্টা যায়!!!!
আমাদের বাংলা ভাষাটা খুবই সমৃদ্ধ। এই রকমের পরিস্থিতির একটা কেতাবী বাগধারা আছে.........শ্যাম রাখি, নাকি কূল রাখি!!!! আর চলতি ভাষায় একটা কথা আছে.........মাইনকার চিপা। অথবা একে শণির দশাও বলতে পারেন। বিএনপি'র এখন সেই দশাই চলতেছে!!!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



