somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাত্রলীগের লুঙ্গির নিচে ছিল শিবির, এখন শিবিরের লুঙ্গির নিচে ঘাপটি মেরে আছে গায়ে বোমা বাঁধা সশস্ত্র জঙ্গিরা

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ: চোখে যা দেখেছো, কানে যা শুনেছো, সেগুলো সঠিক নয়, সেসব ভুলে যাও।" - জর্জ অরওয়েল

অনেকদিন ধরে একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। এতদিন নাকি ভারতের পরামর্শে হাসিনা সরকার ও প্রথম আলো মিলে জঙ্গি গল্পগুলো বানিয়েছে। হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলার মতো স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনও নাকি সাজানো নাটক।

যারা এই জঙ্গি হামলার ঘটনাগুলোকে সাজানো নাটক বলছে, এই চরম মিথ্যা বলার দুঃসাহস তারা কোথায় পেল এবং এটা বলার কারণ কী? উত্তর হল, জঙ্গি গল্পগুলো বানানো প্রমাণের মাধ্যমে সহিংস ইসলামপন্থি শক্তিগুলোকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গ্রহণযোগ্য করে তোলা হচ্ছে। এভাবে বাংলাদেশে পাকিস্তানের আদলে জঙ্গিবাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে।

জামাতকে আমরা জানি ধর্মব্যবসায়ী রাজনৈতিক দল হিসেবে। ৭১-এ গণহত্যাকারী, ধর্ষক, লুটেরা, অগ্নিসংযোগকারী। হানাদার বাহিনীর দোসর ও যুদ্ধাপরাধী। জামাতের কৌশলগুলোর মধ্যে ধর্মের নামে নিজেদের ঘৃণ্য মতবাদ চাপিয়ে দেওয়া অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধকে ভারতের ষড়যন্ত্র হিসেবে প্রচার ও বাঙালি সংস্কৃতিকে লক্ষ্য করে ঘৃণা ছড়িয়ে দেওয়া তাদের প্রধান কাজ। জামাতের রাজনীতি আশরাফ বা অভিজাত ইসলামপন্থি রাজনীতি। ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিতরা তাদের ফুট-সোলজার, কিন্তু উচ্চ পদগুলোতে কোট-প্যান্ট-টাই পড়া সফল পেশাজীবী ইসলামপন্থিদের দখলে।

অপরদিকে আমার দেশের হেফাজতকেন্দ্রিক রাজনীতি শাহবাগ আন্দোলন ও যুদ্ধাপরাধী বিচারের পাল্টা বয়ানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এটিও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, তবে এর ন্যারেটিভটি তৈরি হয়েছে ইমান বনাম নাস্তিকতা - এই বিরোধের ধর্মীয় আবেগকে রাজনৈতিক কৌশলে রূপান্তরের মাধ্যমে। এই মিথ্যা উৎপাদন করে তারা হেফাজত-শাহবাগ মুখোমুখি দাড় করিয়েছিল। আওয়ামী দুঃশাসনের সময়ে হেফাজতের ছোট ছোট অনেক নিরীহ ছেলের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে তৈরি হয়েছিল তাদের রাজনীতি। এই বয়ানের সঙ্গে আরও ঘৃণা ও অপপ্রচার মিশিয়ে পিনাকি-ইলিয়াসরা দেশে মবতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে।

রাজাকার-আলবদরের সঙ্গে মাহমুদুর-পিনাকি-ইলিয়াসের অপপ্রচার, ঘৃণা এবং মবসন্ত্রাস যুক্ত হয়ে এমন এক ফ্রাঙ্কেনস্টাইন তৈরি হয়েছে, যা থেকে জঙ্গিগোষ্ঠিগুলোকে আলাদা রাখাটা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। জামাত এবং হেফাজতের শক্তিকে আওয়ামী লীগ যে কোনো সময় প্রতিহত করতে পারে, এই ভয়টা জামাতের ছিল। জামাত জানে তারা মানুষের কাছে জনপ্রিয় নয়, মানুষ তাদের ঘৃনা করে। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই জঙ্গিগোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা করা ছাড়া তাদের উপায় ছিল না।

তাই কোনো একক দল নয়, ছাতাসংগঠন হিসেবে জামাতের শক্তিবৃদ্ধি হল। তাদের ভেতরে আল-কায়েদা শাখাও সক্রিয়। এতদিন ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করে শিবির গোপনে সংগঠিত হয়েছে। জুলাই-পরবর্তী সময়ে সাদেক কাইয়ুম, সার্জিস আলমসহ একাধিক ব্যক্তি নিজেরাই স্বীকার করেছেন, কীভাবে তারা পরিচয় গোপন রেখে ভিন্ন ব্যানারে সক্রিয় ছিলেন।

প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপে ছিল সহিংস ইসলামপন্থি শক্তিগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা। এই প্রক্রিয়ায় হেফাজত অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর সবচেয়ে ভয়ংকর ধাপ। এধাপে চরমপন্থী ও সশস্ত্র জঙ্গিদের যুক্ত করে ভয় ও সন্ত্রাসের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ৫ আগস্টের পরে সক্রিয় জঙ্গিদের বড় একটি অংশ জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদের একজন হারুন ইজহার, যিনি প্রকাশ্যেই সহিংস ইসলামপন্থি রাজনীতিতে যুক্ত। তার মাধ্যমে আল-কায়েদা ও টিটিপির নেটওয়ার্ক বাংলাদেশে সক্রিয় হয়। এভাবে পাকিস্তান ও পরাশক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি হয়েছে সশস্ত্র জঙ্গি কাঠামোর উগ্র ইসলামপন্থি রাজনীতি।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জঙ্গিদের অন্তর্ভুক্তি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর জন্যও প্রয়োজন। পরাশক্তির "ওয়ার অন টেরর" কৌশল টিকিয়ে রাখতে হলে "জঙ্গি মুসলিম, সহিংস ইসলাম এবং ব্যর্থ রাষ্ট্র" এই ছবিগুলো দরকার। ফলে একদিকে স্থানীয়ভাবে জঙ্গিদের ব্যবহার করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা হবে, অন্যদিকে সেই সহিংসতা সাম্রাজ্যবাদীদের ইসলামবিরোধী যুদ্ধবয়ানকে বৈধতা দেবে। ভয়, সন্ত্রাস ও অস্থিতিশীলতা দুই পক্ষেরই প্রয়োজন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৪৮
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৭৩

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৪



গত কয়েকদিন আমি চিনি ছাড়া চা খাচ্ছি।
সারাদিনে মাত্র দুই কাপ চা। আগে চা খেতাম কমপক্ষে ৮ থেকে দশ কাপ। সবচেয়ে বড় কথা চা যেমন-তেমন, সিগারেট খাচ্ছি না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তান ও চীন কি ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধ বাধাতে চায়?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩১



ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধে পাকিস্তান ও চীনের লাভ আছে। যুদ্ধে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ্য হলে ভারত বিরোধীতায় তারা সহজে বাংলাদেশীদের তাদের পাশে পাবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার অযুহাতে এখানে তারা সামরিক ঘাটি স্থাপনের সুবিধার... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রচুর ব্লগিং করুন, কিন্তু......

লিখেছেন জটিল ভাই, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৫৯

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাত্রলীগের লুঙ্গির নিচে ছিল শিবির, এখন শিবিরের লুঙ্গির নিচে ঘাপটি মেরে আছে গায়ে বোমা বাঁধা সশস্ত্র জঙ্গিরা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৫


"তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ: চোখে যা দেখেছো, কানে যা শুনেছো, সেগুলো সঠিক নয়, সেসব ভুলে যাও।" - জর্জ অরওয়েল

অনেকদিন ধরে একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। এতদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×