মত প্রকাশের স্বাধীনতা বনাম আমাদের চিন্তার সংকীর্ণতা বনাম ধর্মীয় অনুভূতি। - একটি ভাইরাল বিষয় নিয়ে আলোচনা
হঠাত করেই সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্লাউজ বিহীন শাড়ী পরিহিতা এক নারী ছাত্রীকে নিয়ে তর্ক বিতর্ক, ধর্ম-অধর্ম, সমাজ-স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে কথার ঝড় চলছে।
ভাবলাম এ সুযোগে, এ বিষয় সংক্রান্ত আমার নিজের পুরনো একটু অনুভূতি বা কস্টের জায়গা বলে ফেলি, কেউ হয়ত একমত হবেন বা দ্বিমত করবেন। তবে আমার কস্ট-টা কোথায় সেটা প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন।
আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমরা 'কুরআন-হাদিসের আলোকে ইসলাম' আর 'হুজুগে মুসলিম' বা ব্যক্তি ইসলামী চেতনার সূক্ষ্ম পার্থক্য বুঝতে বরাবর ব্যার্থ !!!!
..................... সমালোচনা - গীবত করা বা কোন মহিলার এমন ছবি (বা যে কোন ছবি) তার অনুমতি ছাড়া পাবলিকলি দেখানো কোন ইসলামে আছে আমার জানা নেই।
আমরা কেন এগুলো শেয়ার করছি?
কারো সমালোচনায় মশগুল হচ্ছি কেন?
বড় জোর এটাকে সামাজিক বা ধর্মীয় ইস্যু হিসাবে আলোচনা বা পরামর্শ দেয়া যেতে পারতো।
কিন্তু সেটা করার জন্যও সেই ব্যক্তির যথাযথ যোগ্যতা ও পড়াশোনা থাকতে হবে। আমরা সবাই কেন মুফতি সাহেব হয়ে বা জজ সাহেব হয়ে বসে আছি সাজা দেয়ার জন্য। এখানেই আমার আজীবনের আফসোস রয়ে গিয়েছে।
আমার মতে, এই আমরা ''হুজুগে মুসলিমরাই'' ইসলামকে আজ হাঁসির পাত্র বানিয়ে ছাড়ছি। সমালোচনা কি? কিভাবে করতে হয়? কারা করার উপযুক্ত? আমরা ক'জন জানি ?
আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। নিজের পাপের হিসাব নেই, নিজের আহল-পরিবারের খবর নেই, শুধু অন্যের পাপ ধরতে ব্যস্ত। এই জাতি না পড়ে কুরআন না জানে ইসলাম। বছরে দুইটা ইদ পালন করে নিজেকে সব চেয়ে বড় মুসলমান মনে করা শুরু করে।
এবার জলজ্যান্ত একটা উদাহরণ দেই, এই ঘটনা পড়লে আপনারা ইনশাআল্লাহ! ''ইসলাম আর ব্যক্তি ইমোশন'' যে দুটো এক বিষয় না সেটা সহজে অনুমান করতে পারবেন। বরঞ্চ অনেক সময় এই ইমোশন ইসলামের বড় ক্ষতি করে।
(আল্লাহ ভালো জানেন হয়ত আমার উদাহরণ বা ব্যাখ্যা ভুলও হতে পারে)
.....................
যুদ্ধের এক ময়দান । কাফিরদের সাথে মুসলিমদের ভীষন যুদ্ধ চলছে।
হযরত আলী (রাঃ) জনৈক বিপুল বলশালী শত্রুর সাথে যুদ্ধে মত্ত রয়েছে। বহুক্ষন যুদ্ধ চলার পর তাকে কাবু করেন ভূপাতিত করলেন এবং তাকে আঘাত হানার জন্য তার জুলফিকার (তলোয়ার) উত্তোলন করলেন । কিন্তু আঘাত হানার আগেই ভূপাতিত শত্রুটি হযরত আলী (রাঃ) এর চেহারা মুবারকে থুথু নিক্ষেপ করলো।
ক্রোধে হযরত আলী (রাঃ) এর চেহরা রক্তবর্ণ হয়ে উঠলো। মনে হলো এই বুঝি তাঁর তরবারি শত্গুন বেশী শক্তি নিয়ে শত্রুকে ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলে।কিন্তু তা হলো না। যে তরবারি আঘাত হানারজন্য উর্ধে উত্তোলিত হয়েছিল এবং যা বিদ্যুত গতিতে শত্রুর দেহ লক্ষ্যে ছুটে যাচ্ছিল, তা থেমে গেল। শুধু থেমে গেল নয়, ধীরে ধীরে নীচে নেমে এল। পানি যেমন আগুনকে শীতল করে দেয় , তেমনিভাবে আলী (রাঃ) এর ক্রোধে লাল হয়ে যাওয়া মুখমন্ডলও শান্ত হয়ে পড়লো।
হযরত আলী (রাঃ) এর এই আচরনে শত্রুটি বিষ্ময় বিমূঢ়। যে তরবারি এসে তার দেহকে খন্ড-বিখন্ড করে ফেলার কথা, তা আবার কোষবদ্ধ হলো কোন কারনে? বিষ্ময়ের ঘোরে শত্রুর মুখ থেকে কিছুক্ষন কথা সরল না।এমন ঘটনা সে দেখেনি,শোনেও নি কোন দিন।ধীরে ধীরে শত্রুটি মুখ খুলল। বলল," আমার মতো মহাশত্রুকে তরবারির নীচে পেয়েও তরবারি কোষবদ্ধ কেন করলেন?"
হযরত আলী (রাঃ) বললেন," আমরা নিজের জন্য কিংবা নিজের কোন খেয়াল খুশী চরিতার্থের জন্য যুদ্ধ করিনা। আমরা আল্লাহর পথে আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য যুদ্ধ করি। কিন্তু আপনি যখন আমার মুখে থুথু নিক্ষেপ করলেন তখন জিহাদের চেয়ে প্রতিশোধ গ্রহনের ক্রোধ আমার কাছে বড় হয়ে উঠলো।
এ অবস্থায় আপনাকে হত্যা করলে সেটা আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য হতোনা। বরং তা আমার প্রতিশোধ গ্রহন হতো। আমি আমার জন্য হত্যা করতে চাইনি বলেই উত্তালিত তরবারি ফিরিয়ে নিয়েছি। ব্যক্তি স্বার্থ এসে আমাকে জিহাদের পূণ্য থেকে বঞ্চিত করুক , তা আমি চাইনি।" (সঠিক সূত্র জানিনা তবে সাহাবা জীবনী থেকে নেওয়া)
----------------
আমরা কখন, কোথায়, কিভাবে শুরু করতে হয় আর কখন-ই বা ফুলস্টপ দিতে হয় সেটা শিখিনি।
আফসোস! আমার বড্ড আফসোস!
মুসলমানের কি আলোচনা বা লেখালেখির আর কোন টপিক নেই। শুধু মানুষের সমালোচনা আর কটাক্ষ করাই কি আজ মুসলিমের অন্যতম ধর্মীয় দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অফটপিকঃ
ইসলাম আমাদের ইচ্ছা স্বাধীনতা দেয়ার পাশাপাশি আবার কুরআন হাদিসে নিজেকে ও অন্যকে ভালো রাখার জন্য কিছু গাইড লাইন দিয়েছে। যা মানলে ভালো না মানলে খারাপ। এ জন্য আমরা কেউ কেউ এসব নিজের সাধ্যানুযায়ী মেনে চলার চেষ্টা করি আবার কেউ কেউ না জানার কারণে বা না বোঝার কারণে মানিনা। যাই হোক, অন্যায় কিছু ঘটলে; এ জন্য মহান আল্লাহ বিচার করবেন, সাধারণ মানুষ না, অথবা ইসলামী আইন মেনে কাজী বিচার করবেন। সমস্যা হচ্ছে সাধারণ মানুষ এ সব ক্ষেত্রে কি ভূমিকা পালন করবেন সেটা তারা একেবারেই জানেন না। আমার কাছে এটাই একটা বড় সমস্যা।
আব্দুল্লাহ ইথার। সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২২।