সদরঘাট,
সদরঘাট বুড়িগঙ্গা নদীর কিনারে। সকাল বিকালে ভদ্রলোকেরা এখানে হেঁটে বেড়াতেন। প্রবাহিত নদী আমার কাছে খুব আকর্ষণীয় ছিলো। আমাদের গ্রামে ছোট্র নদীর মতোই একটি বড় খাল আছে। প্রায় সারাবছর আমরা সেখানেই গোসল করতাম। শীতের শেষের দিকে বর্ষার পুর্ব পর্যন্ত খালে পানি কমে যেতো। তখন গোসল করতে হতো নিকটবর্তী একটি বড় পুকুরে। এ খালটি কোননো নদীর সাথে যুক্ত নয় বলে তাতে কোন স্রোত ছিলো না। তাই বুড়িগঙ্গা নদীর স্রোত আমাকে আকর্ষণ করতো। কিন্তু সদরঘাটে যাওয়ার সৌভাগ্য খুব কমই ঘটতো। যেদিন ছোট মামা দয়া করে নিয়ে যেতেন সেদিন বুড়িগঙ্গার তীরে বাঁধানো রাস্তাটি খুবই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ছিলো। রাস্তাটি বাকল্যান্ড রোড নামে বিখ্যাত ছিলো। পশ্চিমে লালবাগ থেকে পুর্বে সুত্রাপুর বাজার পর্যন্ত এ রাস্তায় ছেলেদের দৌড়াতে দেখেছি। মাঝে মাঝে ভিড় হতো কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই ভ্রমণকারীদের সংখ্যা খুব বেশী হতো না। বয়স্ক ভ্রমণকারীদের মধ্যে হিন্দুর সংখ্যাই বেশী ছিলো। রাস্তার কিনারে দোকানপাট খুবই কম ছিলো।
বাকল্যান্ড রোডের নীচে পানি ও রোডের মাঝখানে আজকাল যে ভয়ানক অবর্জনা ও বহু ধরনের জিনিস বেচাকেনা হতে দেখা যায় , সেকালে এ সব কিছুই ছিলো না কিছু কিছু নৌকা বাঁধা থাকতো। তাতে লোকেরা এপার ওপার যাতায়াত করতো।
সদরঘাট সবচেয়ে চমৎকার মনে হতো বর্ষাকালে। ফুটফুটে পরিস্কার পানি রোডের কাছাকাছি পর্যন্ত এসে যেতো। তখন স্রোত বেশ প্রবল থাকতো। নদীটা তখন বেশ প্রশস্ত মনে হতো। বর্ষাকালের সদরঘাটের এ আকর্ষণের কথা এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে। আমরা ঢাকায় সাধারণত বর্ষাকলেই বেড়াতে আসতাম । ঐ সময়ই আম্মার জন্য নৌকায় ভৈরব আসা সহজ ছিলো। একেবারে নৌকা বাড়ির উঠানের কাছে পৌঁছতে পারতো। ঘর থেকে বেরিয়ে উঠান পার হয়েই নৌকায় উঠা যেতো। শীতকালে এ সুবিধা থাকতো না। তখন পাল্কিতে চড়ে প্রায় ২ কোলোমিটার দুরে মেঘনা নদীতে গিয়ে নৌকায় উঠতে হতো।