আমার কৈশোর
গ্রামে সকলের সাথেই আত্মীয়তার সম্পর্ক অনুভব করতাম। দাদাকে যারা ভাই বলতেন, তাদেরকে দাদা ডাকতাম। আব্বাকে যারা ভাই বলতেন, তাদেরকে চাচা ডাকতাম। যাদের সাথে ভাইয়ের সর্ম্পক তাদের যারা বয়সে বড় তাদেরকে ভাই সাহেব ডাকতাম। এমনিভাবেই মহিলাদেরকে চাচী, দাদী, ভাবী, বুবু(আপা) ডাকা হতো এবং বড়দের কাছ থেকে আদরও পেতাম। কিন্তু ঢাকায় মামাদের কয়েকটি বাড়ি ছাড়া আশেপাশে আর কারো বাড়িতেই যাওয়া হতো না। বিশেষ করে মামাদের বাড়ির চারপাশে হিন্দুরাই বসবাস করতো এবং তাদের সাথে আমাদের কোনো সামাজিক সম্পর্ক ছিলো না।
শহরে নানাবাড়িতে একটা বড় পাকা কুয়া ছিলো। বালতি দয়ে কুয়া থেকে পানি তুলে গোসল করে কোনো তৃপ্তি পেতাম না কুয়ার পাড়ে গোসলের সময় গ্রামে গোসলের মজার কথা মনে করে বাড়ি চলে যেতে মন চাইতো। আম্মা বেশিদিন ঢাকায় থাকা পছন্দ করতেন। কিন্তু সপ্তাহ দু সপ্তাহ পর আমার মনটা গ্রামমুখী হয়ে পড়তো। শহর ও গ্রামের মধ্যে তুলনা করে আমার কাছে গ্রামই বেশী ভালো লাগতো।
গ্রামে মনে হতো, আমার অনেক আপন মানুষ আছে, যারা আদর করে আমাকে ডাকে, গায়ে হাত বুলায়, কারো বাড়িতে গেলে দাদী চাচীদের কেউ কিছু খেতে দেয়। কিন্তু ঢাকায় আসলে মনেতো যে মামাদের তিনঘর ছাড়া আর আপন কোনো মানুষ নেই। গ্রামের সব বাড়িতেই ফলের গাছ। এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে তাকালে শুধু গাছই নজর পড়তো। ঘরবাড়ি দেখা যেতো না। গোটা গ্রামটাই যেনো দীর্ঘ একটা গাছের বাগান। ঢাকায় আসলে চারিদিকে যেদিকেই তাকাতাম শুধু দালান কোঠাই নজরে পড়তো। গাছ গাছাড়া খুব সমান্যই চোখে পড়তো। এ সব কারণেই আমার কাছে শহর থেকে গ্রাম বেশি ভাল লাগতো।