আমার প্রাথমিক শিক্ষা
আমি আমার দাদার প্রথম নাতি। দাদার চার ছেলের মধ্যে আমার আব্বাই সবার বড়। দাদা অবসর জীবনযাপন করছিলেন তাই তারই কাছে মুখে মুখে অনেক কিছু শিখি। সাধারণত বাড়ির প্রথম সন্তানের লেখাপড়া শুরু করতে একটু দেরি হয় বলে দেখা যায়। বাড়িতে আর কেউ লেখাপড়া করছে দেখলে ছোটরাও তা দেখে লেখাপড়া শুরু করেদেয়। আমার ছোট ভাই গোলাম মুয়াযযাম বয়সে আমার দুই বছরের ছোট হলেও লেখাপড়ায় মাত্র এক ক্লাস নিচে ছিলো। সে আমার পড়া দেখে দেখে স্কুলে যাওয়ার আগেই আমার সাথে সাথে পড়া শুরু করে দেয়।
ছয় বৎসর বয়স হলে একদিকে কুরআন পড়ার জন্য ফজরের পর মসজিদে যেতাম। গ্রামের ছেলেমেয়েরা সবাই মসজিদে যেয়েই ক্বারী সাহেবের নিকট কুরআন পড়া শিখত। ক্বারী সাহেব সুরা দোহা পর্যন্ত সবাইকে মুখস্থ করাতেন। যার মুখস্থ হত তার বাড়ি থেকে পিঠা তৈরি করে মসজিদের সকলকে খাওয়াবার রেওয়াজ চালু ছিলো। এ প্রথাটির মাধ্যমে সারা গ্রামের সকলেই এ কথা জানতে পারত অমুক ছেলে বা মেয়ে সুরা দোহা পর্যন্ত সকল সুরা মুখস্থ করে ফেলেছে। এটা সকলের জন্য উতসহের ব্যাপার। কুরআন শিক্ষার সাথে সাথে ক্বারী সাহেব সকলকে নামাজ ও শিক্ষা দিতেন। সবাইকে একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে নামাজে যা কিছু পড়তে হতো তা জোরে জোরে পড়তে বলতেন। যার ভুল হত তার ভুল শুদ্ধ করে দিতেন। রুকু সিজদাহ ঠিকমত হচ্ছে কিনা তাও লক্ষ্য রাখতেন।
বাড়িতে দাদার সান্নিধ্য বেশি সময় পেতাম এবং তিনি আমাদের দু ভাইকেই সুরা ইয়াসীন মুখস্থ করালেন এবং ঠিকমতো মুখস্থ হলো কিনা তা দেখার জন্য মাঝে মাঝে পড়ে শুনাতে বলতেন। যখন সঠিকভাবে মুখস্থ হয়ে গেলো তখন আমাদের দু ভাইকে বললেন, রাসুল (সাঃ) মৃতের সামনে সুরা ইয়াসীন পড়ার জন্য হুকুম করেছেন। আমি মারা গেলে তোমরা সুরা ইয়াসীন পড়বে। এখনো মনে আছে দাদার ইন্তিকালের পর দাফন করতে দেড় দিন দেরী হয়েছিল বলে দাদার লাশ যে ঘরে ছিলো সে ঘরে সুরা ইয়াসীন আমরা বহুবার পড়েছি।
এক বছরের মধ্যে নিজ নিজ কুরআন শরীফ পড়ার যোগ্যতা সৃষ্টির জন্য ৬ বৎসর বয়সে প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি করা হয়নি। সকালে ক্বারী সাহেবের কাছে এবং দুপুরে ও সন্ধ্যায় বাড়িতে দাদার কাছে কুরআন পড়া হতো। এভাবে এ বছরে নিজে নিজেই কুরআন শরীফ পড়ার যোগ্যতা অর্জন সম্ভব হলো। তাই ৭ বৎসর বয়সে প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হলাম।