somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অংক শেখা

১৯ শে মে, ২০২৩ সকাল ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনে আমি প্রথম আয় করেছি বাবার মাথার পাকনা চুল তুলে দিয়ে ৷ প্রতি চারটা এক টাকা ৷ একটা তুলতাম আর বলতাম যথাক্রমে এক দুই তিন চার ৷
.
বাবা চোখ বন্ধ করলে একটা কাঁচা চুল তুলে লুকিয়ে রেখে নিচ থেকে ফেলে দেওয়া একটা পাকনা নিয়ে ছয়, সাত, আটটা, দুই টাকা ইনকাম হয়ে গেছে ৷
.
শর্ত আছে কালো চুল তুললে একটা পেনাল্টি ৷ এতো ঘন কালো চুলের ভিত্রে থেকে পাকনা চুলের খোঁজ করা ছিলো অনেকটা চিরুনি অভিযানের মতো ৷
.
একদিন বাবা ঘুম থেকে উঠে বললো, মেঝেতে এতো কালো চুল কেনো? তারপর থেকে পাকনা চুলের রেইট্ কমে প্রতি দশটা তুললে এক টাকা হয়ে গেছে ৷ ব্যবসায় খুব মন্দা দেখা দিয়েছিলো ৷
.
হাত তুলে মোনাজাত করতাম যাতে বাবার সব চুলে পেকে যায় আর আমি ইচ্ছামতো তুলে একদিন লাখপতি হয়ে যাবো ৷ স্বপ্ন দেখতাম, বাবার সব চুল পেকে গেছে আর আমি একে একে সব তুলে আব্বুকে ডাব্বু করে দিয়েছি ৷ সেই টাকা হিসেব রাখার দায়িত্ব দিয়েছি ভাইকে ৷ ওখান থেকে সে কয়েক হাজার টাকা সরিয়ে রেখেছে ৷ আর আমি সুপার ম্যান মার্কা গামছাটা গলায় প্যাঁচিয়ে শর্ট প্যান্ট যেটা টাইট হয়ে গেছে সেটা ফুল প্যান্টের উপর পরিধান করে উত্তম মধ্যম দিচ্ছি ৷
.
অতপর বড় ভাই রেসলারে তার প্রিয় কেইনের মুখোশটি ডয়ার থেকে বের করলো, খপ্ করে গলায় ধরে আমাকে উপ্রে তুলে আছাড় মারতে যাবে এমন সময় বললাম, স্যার, উপ্রে থেকে আপনার মাথায় পাকনা চুল দেখতে পাচ্ছি কিছু ৷ আমি ফ্রি তুলে দিবো একদম ৷ আমাকে এবার ছেড়ে দে প্লিজ ভাইয়া ৷
.
আরেকটু বড় হলে দেখলাম স্কুলের শেষ দিকে আমারও চুলে পাক ধরেছে ৷ এখন তো মহা মুসিবত ৷ আমাকে বিয়ে করতে হবে ৷ বাবারগুলো না হয় আমি তুলে দিতাম, আমারগুলো তুলে দেওয়ার জন্য আমারও একটা ছেলে দরকার ৷ একদিন পত্র লিখলাম, জরুরী প্রয়োজনে বিয়ে করার আবেদন পত্র ৷ বাংলা দ্বিতীয় পত্রের চিঠিপত্র বিভাগ খুলে, সবিনয় নিবেদন এই যে বাবা আমার জরুরী পাকা চুল তোলার জন্য বিয়ে করা প্রয়োজন আর বিনীত নিবেদন এই যে অনুমতি দিয়ে বাধিত করবেন ৷ ইতি,
.
সেই চিঠি মনে হয় ডাক বাক্সে থেকে গেছে ৷ তবুও এখনো চিঠি শেষে মেয়ের নাম কেনো ইতি লিখতে হবে সেটা মাথায় থেকে গেলো ৷
.
হাতে লেখা পত্রের যুগে, সবচেয়ে বেশী প্রেমপত্র পাওয়া মেয়ের রহস্যের খোঁজ করতে গিয়ে সেদিন বুঝলাম মেয়েটির নাম ছিলো ইতি ৷ ইতি, তোমার স্বামী ৷ ওমর সানী ৷ সালমান শাহ ৷ তবুও ভালো ছিলো ৷ একদিন ইতি ভাব কমে চুপসে গেছে, যখন ইতির কাছে পত্র এলো, ইতি, প্রিয় এলাকাবাসী ৷ মারেম্মা ৷
.
এভাবে হাজারো মজার রঙ্গ নিয়ে আমাদের বেড়ে উঠা ৷ সেদিন এক মেয়ে বললো, সে তার বাবাকে রাতে পাখা দিয়ে বাতাস করে টাকা ইনকাম করতো ৷ প্রতি বিশ বার বালান দিয়ে এক টাকা ৷ অবাক হলাম ৷ এখন আর অবাক হয় না ৷ শুধু বসকে বাতাস করে টাকা রোজগার এখন রোজ দিব্যি দেখে চলছি ৷
.
সেদিকে যাবো না, সেদিন বাবা বলে কিরে তোর তো অনেক চুল পাকছে ৷ বিয়ে করবি কবে? বললাম, 'বন্ধুর বাবার এখনো চুল ই পাকেনি ৷'
.
অনেক বছর পরও দেখি বাবা আয়না দেখে দেখে পাকা চুল তুলছে ৷ বললাম, পাকা চুল তোলার কারিগররা সব ভাতে মরে গেছে ৷ না খেতে পেয়ে ৷ আগে কি সুন্দর আয় করতাম ৷ বাবা বললো, 'আসলে বেপার হলো, তুই অংকে কাঁচা ছিলি তাই ছোট বেলায় পাকা চুল তুলতে দিয়ে তোকে যোগ বিয়োগ গণনা শিখাতাম ৷'
.
এখন তো মনে হচ্ছে অংকের শিক্ষক হিসেবে বাবাকে আমার মজুরি দেওয়া উচিত ৷
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×