somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি সম্ভাবনার মৃত্যু

১০ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পলাশ সাহার ট্র্যাজেডি: একটি অসম প্রেম, এক আসমান ব্যবধান এবং কিছু নির্মম বাস্তবতা

পলাশ সাহার মা ও ভাইয়ের সাক্ষাৎকার শুনে মন ভার হয়ে আসে। জানা যায়, তিনি বিয়ে করেছিলেন এক অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে—মাত্র এইচএসসি পাস করেছে, অনার্সে ভর্তি হয়েছে কিনা তাও নিশ্চিত করে বলতে পারেন না তার ভাই। আর পলাশ সাহা নিজে ৩৭তম বিসিএসের পুলিশ ক্যাডার, মাস্টার্স শেষ করে এর আগেও চাকরি করেছেন। এই দুইজন মানুষের বয়স, মানসিকতা, অভিজ্ঞতা এবং জীবনের বাস্তবতা যেন আকাশ-পাতাল দূরত্বে।

এই বয়সে মেয়েরা অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়। তারা সহজেই রেগে যায়, আবার ছোট্ট একটি আদরে গলে যায়। এটা তাদের স্বাভাবিক আচরণ। কিন্তু এত বড় একজন মানুষ—একজন এএসপি—এমন কচি বয়সের মেয়ের এসব আচরণ বুঝে ওঠা কি সহজ? তার পেশাগত দায়িত্ব, সামাজিক মর্যাদা, কাজের চাপ—এসব কিছুই ওই ছোট্ট মেয়েটির বোধের বাইরে। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মানসিক দূরত্ব তৈরি হওয়াটা ছিল সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এই বৈষম্য শুধু বয়সের নয়, শ্রেণিগতও। মেয়েটি এসেছে নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে, যেখানে অর্থনৈতিক অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। পলাশের মা নিজেও ছোট বয়সে স্বামী হারিয়ে কঠিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বড় হয়েছেন। এমন নারীরা পরবর্তীতে যখন শ্বাশুড়ি হন, অনেক সময় অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে কঠোর ও নির্মম হয়ে ওঠেন। এখানে বিষয়টি আলাদা ছিল না বলেই মনে হয়।

সব মিলিয়ে পলাশ এক চরম দুর্বিষহ সংসার জীবনের মধ্যে পড়েছিলেন। কচি বয়সী বউ, মা’র অনমনীয়তা, পরিবারিক চাপ—সব মিলে কোথাও প্রশান্তির ঠাঁই ছিল না। একজন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে একটা পক্ষের মমতা, সহানুভূতি, ভালোবাসা দরকার হয়। পলাশ সে আশ্রয় কোথাও পায়নি।

সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় যখন ভাবি, এই মেয়েটি এখন কী অনুভব করছে? মামাবাড়িতে বড় হওয়া, সদ্য সাবালিকা এক শিশু, হয়তো সে বুঝতেই পারছে না—সে কী হারিয়েছে। বুঝলেও হয়তো ভাষায় প্রকাশ করতে পারছে না। স্বামীর মর্মান্তিক বিদায় ও নিজের ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে রয়েছে সে।

পলাশ ভাই যদি অন্যভাবে মারা যেতেন—দুর্ঘটনায় বা অসুখে—তবুও হয়তো এই মেয়েটিকে আমরা দেখতে পেতাম। কিন্তু হয়তো তখন শ্বশুরবাড়ি থেকে কোনো দাবি জানাতেও পারত না। সে কারণেই হয়তো তিনি মৃত্যুর আগে লিখে গেছেন—"সব স্বর্ণ বউয়ের"।

এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—বয়স, শ্রেণি, অভিজ্ঞতা ও মানসিক পরিপক্বতার ভারসাম্যহীনতা একটি সম্পর্ককে কোথায় নিয়ে যেতে পারে। যেতে যেতে পলাশ সাহা আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে গেলেন। এটা শুধু একটি মর্মান্তিক মৃত্যুর গল্প নয়, এটি আমাদের সমাজের বহুস্তরীয় সংকটের এক নির্মম দলিল।

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:২০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতৃত্ব না ‘পূজার আসন’? বিএনপির ভেতরেই কি এক নতুন ‘ফেরাউন’ উঠে আসছে?

লিখেছেন স্পর্শ, ১৫ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ৩:১৫






নেতৃত্ব না ‘পূজার আসন’? বিএনপির ভেতরেই কি এক নতুন ‘ফেরাউন’ উঠে আসছে?

সম্প্রতি কওমি ভিশনের একটি পোস্টার সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সেখানে উঠে এসেছে বিএনপি-সংশ্লিষ্ট কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের শাহেদ জামাল- ৮১

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৫ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ৯:৫৭



শাহেদ। শাহেদ জামাল। আমার বন্ধু।
বড় ভালো ছেলে শাহেদ। অথচ তার চাকরিবাকরি নেই। চাকরিবাকরি তার দরকারও নেই। যার ঘরসংসার নেই সে চাকরি দিয়ে কি করিবে? অবশ্য টাকা এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি ভিক্ষা দিচ্ছেন মানে আপনি জাতিকে পঙ্গু করছেন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১:০৫


ভিক্ষা হলো একটি সংস্কৃত শব্দ এর অর্থ হলো চাওয়া বা প্রার্থনা করা যা ভারতীয় ধর্ম যেমন জৈনধর্ম, বৌদ্ধধর্ম ও হিন্দুধর্মে ভিক্ষাকরা বা চাওয়ার কাজকে বোঝাতে ব্যবহৃত হতো। প্রাচীনকালে ভিক্ষা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ভাল্লাগে না কোনো কিছু=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৫ ই জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩


ভাল্লেগা না কোনো কিছু
মন বসে না কাজে,
কোন সে দুঃখ জমা হলো
বুকের ভাঁজে ভাঁজে।

ভাল্লাগে না আজকে আমার
মন যে উদাস হলো,
দু'চোখ আমার নীল বেদনায়
জলে টলোমলো।

বৃষ্টি এলো বৃষ্টি গেলো,
আনমনা হই আরও,
মন জমিনে কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। পদ্মার ইলিশ বিখ্যাত গোটা পৃথিবীতে , কেন ??[/sb

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১২









Padma Hilsa- বিশেষজ্ঞদের একাংশ দাবি করেন, পদ্মার জলে পুষ্টিগুণ ভাল। সেখানে কাঁকড়া, ঝিনুক, শৈবাল ইলিশের খাবার। আর তা থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় ইলিশ। ফলে মাছের স্বাদও হয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×