somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৫ অগাস্টের ভাবনা

১৭ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া প্রতিবছর অসংখ্য আপত্তিকর কীর্তিকলাপের মধ্যে বছরের এই বিশেষ দিনে একটা ন্যাক্কারজনক কাজ করে থাকেন: বিশালকায় কেক কেটে সাড়ম্বরে মিথ্যে জন্মদিন পালন করা। ১৫ অগাস্ট তার প্রকৃত জন্মদিন হলে আপত্তির কিছু ছিল না, যদিও বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র দেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ বর্ষীয়ান রাজনৈতিক ব্যক্তির গোলাপি পোশাকে শোভিত হয়ে আড়ম্বরপূর্ণভাবে কেক কেটে জন্মদিন পালন কোনো প্রশংসাযোগ্য অনুসরণীয় কর্ম নয়; কিন্তু স্বাধীন রাষ্ট্রে কারো জন্মদিন পালনের অধিকার কোনোমতেই খর্ব করা যায় না। সমস্যা হলো, এটি তার প্রকৃত জন্মতারিখ কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে; রেকর্ডপত্র অনুযায়ী তার রয়েছে ৪/৫টি জন্মতারিখ। কিন্তু তিনি পালনের জন্য বেছে নিয়েছেন এই বিশেষ দিবসটিকেই; তার উদ্দেশ্যও এক্ষেত্রে পরিষ্কার, শেখ মুজিবের সপরিবার হত্যাকাণ্ডের দিবসটিকে হেয় করার, তার তাৎপর্যকে খর্ব করার মনোবাসনা পূরণ। আমরা শেখ মুজিবের রাজনৈতিক আদর্শের যতো সমালোচনাই করি অথবা রাষ্ট্র/সরকার প্রধান হিসেবে তার কর্মকাণ্ডের যতো বিরোধিতাই করি না কেন, সপরিবারে তার হত্যাকাণ্ডটি ছিল অঘটন-সঙ্কুল এই বাংলাদেশের নিকৃষ্টতম একটি রাজনৈতিক ঘটনা- একথা স্বীকার করতেই হবে। এই হত্যাকাণ্ডের সুবিধাভোগী হিসেবে পরবর্তী পর্যায়ে যারা ক্ষমতাসীন হয়েছিল তারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে পারে নি, কোনোভাবেই শেখ মুজিবের আমল থেকে উৎকৃষ্ট শাসন তারা দেশবাসীকে উপহার দিতে পারে নি; শুধু তা-ই নয়, এরমধ্যেই যথেষ্ট ঘোলাটে হয়ে যাওয়া রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে তারা টেনে নিয়ে গেছে আরো অন্ধকারের দিকে। এটাই স্বাভাবিক- বিদেশি স্বার্থের ক্রীড়নক হিসেবে যারা এভাবে সম্পূর্ণ অবৈধ পথে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে তাদের কাছ থেকে এর ব্যতিক্রম কিছু আশা করা যায় না। এই সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর সরাসরি প্রধানতম প্রতিনিধি হিসেবেই বর্তমানে খালেদা জিয়া ১৫ অগাস্টের এই দিনটিকে সাড়ম্বরে তার 'রাজনৈতিক' জন্মদিন হিসেবে পালন করছেন।

এ বিষয়ে শেখ মুজিবের দল আওয়ামী লীগের ভূমিকাও অত্যন্ত নিম্ন মানের। খালেদা জিয়ার এভাবে জন্মদিন পালনে ক্ষুব্ধ হয়ে এবং তাকে এই কাজ থেকে বিরত রাখার কোনো কার্যকর পথ না পেয়ে তারা এখন অন্য লোকজনদের যেকোনো প্রকার উৎসব পালনের ওপরই খড়গহস্ত হয়েছে। তাদের মুখপাত্র উদ্ধত ভঙ্গিতে ঘোষণা করছেন, "পনের অগাস্ট কোনো শিশুর জন্মদিন হতে পারে না"!!! এই অদ্ভুত ঘোষণার শানে নযুল যে তাদের ফ্যাসিবাদী চিন্তাভাবনার মূলে প্রোথিত তাতে সন্দেহ নেই। খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনের প্রতি অক্ষম আক্রোশের বশবর্তী হয়েই তাদের এই লম্ফঝম্পমূলক প্রতিক্রিয়া। কিন্তু যাদের সত্যিই ১৫ অগাস্ট জন্মদিন তাদের কী হবে? তাদের কেউ যদি ঘটা করে জন্মোৎসব পালন করতে চান তাহলে রাষ্ট্র কি তাকে বাধা দেবে? উদাহরণস্বরূপ, আমার ভগ্নিপতির জন্মদিন ১৫ অগাস্ট। তিনি যদিও কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এই দিবস উদযাপন করেন না কিন্তু এটিই তার প্রকৃত জন্মতারিখ এবং এই দিবস পালনে তার অধিকারকে রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃতি দিতেই হবে, তিনি তা পালন করুন আর না-ই করুন। এদিকে শোকের মাসের অজুহাত তুলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আদিবাসী দিবস পালনে সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তাদের কাছে এই শোক পালন শুধু ১৫ অগাস্টেই সীমাবদ্ধ নেই, সমগ্র মাসব্যাপী তারা তা পালনের উদ্যোগ নিয়েছে! এবং এভাবে এই উদ্যোগ নিতে গিয়ে তারা সাধারণ মানুষের, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিশেষ উৎসব কিংবা অন্য কোনো ধরনের আনন্দ উৎযাপনের ওপর চড়াও হয়েছে! রাষ্ট্রীয় শাসক গোষ্ঠী কর্তৃক এই আচরণের চরিত্র যে অবশ্যম্ভাবীরূপে ফ্যাসিবাদী সে বিষয়ে যেকোনো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষই একমত হবেন।

এদিকে শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করার পর যে সমস্ত আওয়ামী লীগ নেতা দৌড়ে গিয়ে খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভায় শপথ গ্রহণ করেছিলেন, পরবর্তী এক যুগ শেখ মুজিবের নাম ভুলেও উচ্চারণের চিন্তা যারা করেন নি, তারাই আজকে এই জাতীয় শোক দিবস পালনের প্রধানতম হোতা! প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশে যারা এভাবে ঘাপটি মেরে বসেছিলেন, শেখ মুজিবের সাথে কোনোপ্রকার রাজনৈতিক সম্পর্ককে ভুলে যাওয়ার চেষ্টায় রত ছিলেন- অনুকূল পরিস্থিতিতে সুযোগ বুঝে রাষ্ট্রীয় অর্থানুকূল্যে এবং যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার সদ্ব্যবহারে, সাড়ে তিন বছর ধরে অর্জিত ঘুষ-দুর্নীতির টাকায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে মাইক ফাটাচ্ছেন, সামিয়ানা টাঙিয়ে একবেলা ফকির খাওয়ানোর বন্দোবস্ত করছেন, তাদের সমস্ত তৎপরতা ভিডিওতে রেকর্ড করে অধিকতর রাষ্ট্রানুকূল্য এবং ভাগ-বাটোয়ারার অংশলাভের চিন্তায় হন্তদন্ত হচ্ছেন; অন্যদের যেকোনো প্রকার উৎসব পালনের ওপর হুমকি-ধামকি, নিষেধাজ্ঞা আরোপেও পিছপা হচ্ছেন না। চরম রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে কারো জন্য সমস্যার সৃষ্টি হলে এই সমস্ত নেতার কর্মকাণ্ডের ওপর একবার নজর বোলালেই তার জন্য কাজটি জলের মতো সহজ হয়ে যাবে।

সুতরাং আজকের এই দিনে খালেদা জিয়ার মিথ্যে জন্মদিন পালন যেমন নিন্দনীয় এবং প্রতিবাদযোগ্য বিষয়, তেমনি রাষ্ট্র কর্তৃক ন্যায়সঙ্গত যেকোনো অনুষ্ঠান-উৎসব উদযাপনের ওপর হস্তক্ষেপ এবং হুমকি প্রদানেরও প্রতিরোধ হওয়া দরকার। যারা রাজনৈতিকভাবে মূর্খ এবং ফ্যাসিবাদী চিন্তাভাবনার অধীন, তারা না জানতেই পারে যে এভাবে শেখ মুজিবের মর্যাদাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা সম্ভব নয়, জনগণের মতামতকে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়া অবশ্যম্ভাবী; কিন্তু গণতান্ত্রিক চিন্তা এবং কর্মকাণ্ডের চর্চার মাধ্যমে এই শিক্ষা যারা নিজেদের চরিত্রের অন্তর্গত করেছেন তাদের এই বিষয়ে উদাসীন থাকার সুযোগ নেই। সুতরাং ১৫ অগাস্টে রাজনৈতিক প্রচারণা এবং ডামাডোলের অন্তরালে এই কথাগুলোকে হারিয়ে যেতে না দিয়ে তার প্রচার এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে যুক্তিভিত্তিক চিন্তাভাবনা ও সঙ্গতিপূর্ণ আচরণের চর্চা হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×