মনে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার এক সহপাঠীর কথা। সহপাঠীটি অত্যন্ত মেধাবী ছিল, আমার চেয়ে শতগুণে ভালো ছাত্র ছিল সে। তার গ্রামের বাড়ি থেকে এসএসসি পাশ করে এসে ঢাকার একটা অত্যন্ত পরিচিত কলেজে এইচএসসিতে মেধা তালিকায় স্থান দখল করা রেজাল্টের মাধ্যমে পরবর্তীতে আমার সাথে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হয়েছিল। প্রথম দিককার ক্লাসের পর তাকে দেখতাম পকেট থেকে ছোট ছোট হাতে কাটা কয়েকটা কাগজের একটা স্ট্যাপল করা তাড়া নিয়ে মনোযোগের সাথে কী যেন পড়ছে। জানতে চাইলে সে আমাকে দেখাল। কাগজগুলোর প্রতিটিতে পাঁচটি করে ইংরেজি শব্দ এবং পাশে তার বাংলা অর্থ লেখা। জানা গেল এগুলো সে অভিধান থেকে টুকে নিয়ে এসেছে। অভিধানের প্রতিটি শব্দ ধরে ধরে প্রতি পৃষ্ঠায় সারিবদ্ধ আকারে টুকে রাখা পাঁচটি করে শব্দ সে প্রতিদিন মুখস্ত করে। এই তরিকায় সে একদিন অভিধানের সকল ইংরেজি শব্দের অর্থ জেনে ফেলবে এবং এই ভাষায় বিশাল বুৎপত্তি অর্জন করবে এটাই তার প্রত্যাশা। দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন একদিন সে আক্ষেপ করে আমাকে বলল (অবশ্যই তার আঞ্চলিক ভাষায়), “দ্যাখ, এতো বড় একটা ইউনিভার্সিটি, এইখানে আমাদের রেজিস্ট্রেশন কার্ডের কী অবস্থা!” আমি মাথা নেড়ে তার বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করলাম। রেজিস্ট্রেশন কার্ডের বেহাল দশা নিয়ে মানসিকভাবে আমিও ক্ষুব্ধ ছিলাম। সস্তা নিউজপ্রিন্টের সবুজ কাগজে সীল দিয়ে রেজিস্ট্রেশন নম্বর লেখা। এখন (২০০২ সালে) সব কিছু যেখানে সহজেই উন্নত মানের কাগজে কম্পিউটারে প্রিন্টিং হচ্ছে সেখানে মান্ধাতার আমলের এই ব্যবস্থা দৃষ্টিতে আসলেই বিসদৃশ ঠেকে। কাগজটিরও অতি জীর্ণ দশা, ওটাকে পাওয়া মাত্রই নীলক্ষেত থেকে লেমিনেটিং করে না ফেললে এতোদিনে ওটার অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যেতো। যাই হোক, আমাকে সম্মতিসূচক মাথা নাড়তে দেখে সহপাঠী বন্ধুটি দ্বিগুণ উৎসাহে বলে উঠল, “কোথায় ইংরেজি ভাষায় কার্ড ছাপবে, তা না রেজিস্ট্রশন কার্ড করছে বাংলায়। এইটা কিছু হইল?”
এইবার আমি মাথা নাড়ানো থামাতে বাধ্য হলাম। বন্ধুটি কার্ডের খারাপ হাল বলতে বোঝাতে চাইছে বাংলা ভাষা ব্যবহারের বিষয়টি! এবার তার সাথে তর্কে জড়ালাম। আমার বক্তব্য ছিল, কেবল ভাষা একটা বিষয়ের উৎকৃষ্টতা, নিকৃষ্টতা নির্ধারণ করতে পারে না; তার ওপর অপ্রয়োজনে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার অন্ধ ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রকাশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অন্যান্য কর্মচারী যেহেতু বাংলা ভাষাভাষী সেক্ষেত্রে ইংরেজির ব্যবহারের কোনো প্রাসঙ্গিকতাই নেই। ক্ষেত্র বিশেষে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজি ভাষায় কার্ড করা যেতে পারে। সহপাঠীটি আমার যুক্তি কিংবা চিন্তাভাবনার ধারে-কাছে না গিয়েও মুখব্যাদান করে দুয়েকটা ফালতু শব্দ উচ্চারণ করে আমার সামনে থেকে বিদায় নিল। ঐ ছেলেটির ইংরেজি উচ্চারণ ছিল ভয়াবহ রকমের করুণ এবং হাস্যকর। অভিধান মুখস্ত করার যে প্রচেষ্টা সে হাতে নিয়েছিল তার ভবিষ্যত কী হলো সেটা আর আমার জানা হয় নি, কিন্তু উচ্চারণ, ভাষাজ্ঞান কোনো দিক থেকেই তার ইংরেজি কথাবার্তা কানে নেয়ার মতো ছিল না। আজকের ‘মহানায়ক’ অনন্ত জলিলের ইংরেজি উচ্চারণ শুনলে সেই সহপাঠীর উচ্চারণের কথা মনে পড়ে যায়। অনন্ত যে স্টাইলে ইংরেজি উচ্চারণ করে সেটা তার সীমাবদ্ধতার জন্যই সে করে, এর সাথে উপনিবেশ-বিরোধী মানসিকতার কোনো সম্পর্ক নেই, নিজের জ্ঞান এবং গরিমা জাহির করার উদ্দেশ্যেই সেটা সে করে থাকে। কিন্তু তার উচ্চারণের সীমাবদ্ধতার কারণে তা শ্রোতার কর্ণকুহরে প্রবেশ করে হাসির খোরাক যোগায়। আমার বন্ধুটির বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। ভাষা-বিষয়ক তার যে দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় আমি পেয়েছি সেটাকে শ্রদ্ধা জানানোর কোনো কারণ নেই।
ব্রাত্য রাইসু ‘অনন্ত জলিলের উচ্চারণ নিয়া যারা হাসতেছেন…’ শীর্ষক লেখায় বলেছেন : “‘স্মার্ট হইতে চাই তাই ইংরাজি বলি’–এরে যদি হীনম্মন্যতার মাপকাঠি দিয়া ধরতে হয় তাইলে বলতে হয়, যারা ভুল-সঠিক বিবেচনা না কইরা ইংরেজি বলার চেষ্টা করে তারা বরং যারা সঠিক ইংরেজি সঠিক উচ্চারণেই বলতে হবের চেষ্টা করে তাদের চাইতে কম হীনম্মন্য। সো এই সরল সূত্র মোতাবেক, জলিলরে নিয়া যারা হাসে তারা জলিলের চাইতে অধিক হীনম্মন্য।” এই লেখা থেকে মনে হতে পারে যে, যারা হাস্যকর উচ্চারণে ইংরেজি বলে থাকেন তারা হীনমন্যতার বোধ উত্তীর্ণ হয়েই এই কাজ করেন। রাইসুর লেখার ধরন ভালো, প্রকাশভঙ্গি দেখে সেটাকে প্রগতিশীল রচনা বলেই মনে হয়, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হয়তো মেনে নিতে ইচ্ছে করে বক্তব্যগুলো। কিন্তু সামান্য তলিয়ে দেখলেই এর সারগর্ভশূন্যতার বিষয়টি ধরা পড়ে যায়।
তিনি আরো লিখেছেন: “বাংলাদেশের শিক্ষিত বাবা-মায়ের শিক্ষিত সন্তানেরা ইংরেজি ও বাংলা শুদ্ধ উচ্চারণে বলতে চায় সে প্রায় অনেক দিন হইয়া গেল। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতো উপনিবেশিত মানসিকতার শিক্ষকরাও এই রকমই করতে শিখাইয়া আসছেন। ভাষার শুদ্ধতা উচ্চ শ্রেণীর রুচিবোধ দিয়া গইড়া ওঠে। পুরানা পয়সাঅলারা ভাষার শুদ্ধতা দিয়া নতুন পয়সাঅলাদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক দূরত্ব বজায় রাখতে বহুত সক্ষম হয়। সো ভাষার শুদ্ধতা বড়লোক ও বড়লোকদের ধামাধরাদের একটা জরুরি আইটেম।”
একথা সত্যি যে, যারা নিজেদের সর্বসাধ্য দ্বারা শুদ্ধ ইংরেজি উচ্চারণের সক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা চালায় এবং অন্য যাদের উচ্চারণ ‘অশুদ্ধ’ তাদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে সেইসব শ্রেণীভুক্ত ব্যক্তিবর্গকে সমর্থন করা কিংবা তাদের সাথে তাল মেলানো কোনো সমর্থনযোগ্য কাজ নয়। তাদের চিন্তাভাবনা যে ঔপনিবেশিক কাঠামোর ছাঁচে তৈরি সে বিষয়েও কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু যারা এভাবে হাস্যকর উচ্চারণে ইংরেজি বলে থাকে, তারা সবাই কি ঔপনিবেশিক চিন্তাকাঠামোর বিপরীতে অবস্থান করে? অন্য সবার কথা আপাতত বাদ রেখে বিশেষ করে জলিলের অবস্থানটা এক্ষেত্রে কোথায়? এ ব্যাপারে রাইসু কী বলেন, দেখা যাক: “জলিল কেন ইংরেজি কামান দাগাইতে গেল, এই আপত্তি যাদের তাদের কাছে জিজ্ঞাসা, ঢাকাই বাংলা ফিল্মের বর্তমান রক্ষাকর্তা অনন্ত জলিলরে আপনারা কী কারণে নিজেদের শ্রেণীর ধইরা নিছিলেন। সে তো আপনাদের হীনম্মন্যতা দিয়া নিজেরে তৈরি করে নাই।”
রাইসুর মতে জলিল তাহলে বর্তমান বাংলা সিনেমার ‘রক্ষাকর্তা’? এবং এই রক্ষাকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তিনি উপনিবেশবাদ-বিরোধী মানসিকতায় ভরপুর হয়ে ইংরেজি ভাষাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হাস্যকর উচ্চারণ সহযোগে বাংলা ছবিকে জাতে তোলার প্রচেষ্টায় রত! এ বিষয়ে কল্লোল মোস্তফা বলছেন: “গার্মেন্টস মালিক এম এ জলিল অনন্ত নাকি এমনি একজন “দেবদূত” প্রযোজক কাম নায়ক যার কাধে চড়ে বাংলা সিনেমার হলিউড যাত্রা হবে! কাহিনী, সংলাপ, অভিনয়, চলচ্চিত্র দর্শন, কারিগরী মান ইত্যাদির সার্বিক পরিবর্তন এবং নিজস্ব দক্ষতা, মতাদর্শ ও বৈশিষ্ট্যের বিকাশের প্রয়োজনীয়তাকে তোয়াক্কা না করে চেন্নাইয়ের ক্যামেরা ম্যান, ইউনিভার্সাল স্টুডিও’র স্পোশাল ইফেক্টস, ব্যয়বহুল গ্রাফিক্স, চিকন কোমরের দেশি-বিদেশী নায়িকা, আইটেম গার্ল, রাশিয়ান- ইতালিয়ান ভিলেন, থাইল্যান্ড মালয়েশিয়ায় শুটিং করা নাচ-গান, চকচকে ইমেজ এইসব ব্যবহার করে বাংলা সিনেমার “বৃত্ত ভাঙা” কিংবা বাংলা সিনেমাকে “জাতে তোলা” যাদের খায়েশ তারা তাতে খুশী হতেই পারে ... ” কল্লোল এ বিষয়ে আরো কিছু কথা বলেছেন, প্রাসঙ্গিক না হওয়ায় এখানে সেটা উল্লেখ করলাম না।
কোনো ধরনের ঔপনিবেশিক মানসিকতা কিংবা হীনমন্যতা থেকে মুক্ত হয়ে নয়, নিজস্ব সীমাবদ্ধতার কারণেই জলিল সাহেবের এই বিচিত্র ঢঙের ইংরেজি উচ্চারণ। বাংলাদেশে জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে গুরুজন হিসেবে কাউকে চিহ্নিত করতে চাইলে সর্বপ্রথম যার কথা মনে আসে তিনি প্রয়াত অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বিচারে নয়, জ্ঞান এবং পড়াশোনার বিস্তৃতি বিবেচনায় তিনি এদেশে জ্ঞানের জগতে অনন্য স্থান অধিকার করে আছেন। বাংলাদেশে বর্তমানে সুপরিচিত বহু বিদ্বৎ ব্যক্তিবর্গ তাদের আলোকায়নের জন্য তার কাছে বহুলাংশে কৃতজ্ঞ। এই অধ্যাপক রাজ্জাক প্রমিত বাংলায় কথা বলতে অক্ষম ছিলেন এমনটি ধারণা করার কোনো কারণ নেই। কিন্তু তিনি কথা বলা ও বক্তব্য প্রদানের ক্ষেত্রে কথ্য রীতিই ব্যবহার করতেন নির্দ্বিধায়। প্রমিত বাংলা বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল মোটামুটি এরকম- ভাগিরথী নদীর তীরে বসবাসকারীদের মুখের ভাষাকে একটি মান হিসেবে ধরে নিয়ে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ইংরেজ ভাষাপণ্ডিতগণ ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মতো করে আধুনিক যে প্রমিত বাংলার জন্ম দিয়েছিলেন, আমাদের সে ভাষা ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা নেই। পূর্ব বাংলা তথা বর্তমান বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ প্রজা, ভূমিদাস এবং অন্ত্যজ শ্রেণীর সন্তান- তাদের আদি ও অকৃত্রিম কথ্য ভাষাকে অচ্ছুৎ বিবেচনায় তাকে পরিত্যাগ করে ইংরেজ পণ্ডিতদের সৃষ্ট ভাষাকে আদরের সাথে গ্রহণ করে নেয়া ঔপনিবেশিক মানসিকতা-প্রসূত ধারণা (যদ্যপি আমার গুরু: আহমদ ছফা) । অর্থাৎ প্রমিত বাংলায় কথা বলা অথবা বক্তব্য প্রকাশে সক্ষম হওয়ার পরও তিনি সজ্ঞানে সেই ভাষাকে মুখের ভাষায় ব্যবহার করতে অস্বীকার করেছিলেন। এটা সম্ভব হয়েছিল ঔপনিবেশিক কাঠামোর বাইরে চিন্তা করতে পারার সক্ষমতা অর্জনের কারণেই। আমার মতে এটাই উপনিবেশবাদ-বিরোধী যথার্থ আচরণ। এ ধরনের দৃষ্টান্ত আরো দেয়া যায়, কিন্তু তার প্রয়োজন বোধ করি হবে না।
অনন্ত জলিল যে সেই ধারায় পড়েন না, এটা কল্লোলের লেখা থেকে যে অংশ উদ্ধৃত করেছি তা থেকেই স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। জলিলের সিনেমার কলাকুশলীর একটা অংশ আসে মুম্বাই-চেন্নাই থেকে, শিল্পী ভাড়া করে নিয়ে আসা হয় মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড থেকে, দৃশ্য ধারণ হয় বিদেশি লোকেশনে। বিষয়বস্তু থেকে শুরু করে উপস্থাপনার ধরন- কোনোটিতেই বাংলার সংস্কৃতির কোনো প্রতিফলন নেই, শুধু ভাষাগত হিসেবে বাংলা সিনেমার ক্যাটাগরিভুক্ত হওয়া ছাড়া। টেকনোলজির দিক থেকে নাহয় পার্শ্ব অথবা দূরবর্তী কোনো দেশের সাহায্য নেয়ার প্রয়োজন মেনে নেয়া যায়, কিন্তু বিষয়বস্তু অথবা উপস্থাপনার দিক থেকে সেই সিনেমা কি প্রকৃত অবস্থায় বাংলাদেশ, এদেশীয় কিংবা ভাষাভিত্তিক, শেকড়-সংলগ্ন কোনো সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে? (আমি বাঙালি জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বাস্তবতার প্রেক্ষিতে এবং অনন্ত জলিলের অবস্থান বোঝাতে এটা উল্লেখ করলাম) । কোন ধরনের চিন্তাভাবনার প্রতিফলন এর মাধ্যমে দেখা যায়, তা আশা করি বোদ্ধা দর্শক শ্রেণী ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারেন। অনেকে বলছেন বলিউডি ছবি থেকে এদেশীয় দর্শকদের দৃষ্টি ফেরানোর জন্যই জলিলের এই তৎপরতা। তাদের কথায় মনে হয় ‘সার্চ’, ‘স্পিড’, ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ এই ছবিগুলো দেখে এদেশে হিন্দি সিনেমার দর্শকবৃন্দ জলিল-প্রেমে এমনই হাবুডুবু খেতে থাকবেন যে তাদের মন ও মস্তিষ্ক থেকে শাহরুখ-সালমান-ক্যাটরিনা-দীপিকা-কারিনা-শিলা-মুন্নী-ছাম্মাক ছাল্লো-চিকনী চামেলি সমুদয় এক নিমিষে বিদায় নেবে, দর্শক সব ভুলে জলিলাভিনীত বাংলা সিনেমা দেখার জন্যই হলগুলোতে ভিড় করবেন! তাদের বাসাবাড়িতে কেবল টিভি থেকে সনি, জি সিনেমা উধাও হয়ে যাবে, তাদের টিভি এবং কম্পিউটারের পর্দা হয়ে উঠবে শুধুই জলিল, জলিলময়! যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেই এরূপ অলীক সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ নেবে- তাতেই বা কার কী উপকার হবে? বলিউডি চলচ্চিত্রের আগ্রাসন থেকে ‘মুক্ত’ হয়ে এদেশীয় দর্শকরা কি জলিল প্রযোজিত-অভিনীত ছবি থেকে সত্যিকারের উন্নত কোনো বস্তুর স্বাদ লাভ করবেন?
যারা জলিলের হাস্যকর কথাবার্তা এবং উচ্চারণ নিয়ে নানা স্থানে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ এবং হাসি-তামাশা করছেন, তাদের সমর্থনের উদ্দেশ্যে এই লেখা নয়। এই মহানায়ক চলচ্চিত্রে, ভিজুয়াল মিডিয়ায় এই জাতীয় কর্মকাণ্ডের প্রদর্শনী করবেন এবং তা নিয়ে সমাজের কোনো অংশেই কোনো রকম মাতামাতি হবে না, মজা নেয়ানেয়ি চলবে না- বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতে সেটা একটা অবাস্তব চিন্তা। তবে তাদের কর্মকাণ্ডকে ‘হালাল’ মনে করা, তাকে সমর্থন যোগানো অবশ্যই ঔপনিবেশিক চিন্তাপ্রসূত কাজ। জলিলের মুখনিসৃত ‘আর ইউ পোম গানা’, ‘ইউ ইটিং ফুড ইন বাংলাদেশ’ জাতীয় বাণী এবং অন্যান্য কথাবার্তা ও কর্মকাণ্ড নিয়ে যারা প্রাসঙ্গিক সমালোচনা না করে রঙ্গতামাশায় নিজেদেরকে প্রবলভাবে ভাসিয়ে দিচ্ছে তাদের মানসিকতা উচ্চস্তরের নয়, কোনো রকম দেশপ্রেমবোধে উজ্জীবিত হওয়া আচরণও তারা প্রদর্শন করছে না। কিন্তু এই তৎপরতার বিরোধিতা করতে গিয়ে যুক্তিপূর্ণ আলোচনার পরিবর্তে জাতীয়তাবাদী আবেগের আবরণে জলিলকে শতাব্দের মহানায়ক হিসেবে উচ্চাসনে বসিয়ে বাংলা সিনেমার রক্ষাকর্তা রূপে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টার যে অন্তঃসারশূন্যতা সেটাকে তুলে ধরার চিন্তা থেকেই এই লেখার উৎপত্তি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


