মাত্র কিছুদিন আগেই এমন একটা সময় ছিল যখন ফেসবুকে, ব্লগে অন হলেই আসিফ মহিউদ্দীন-বিষয়ক নেতিবাচক পোস্ট, গবেষণা (!), স্যাটায়ার, মিথ্যাচার, দোষারোপ এগুলো বন্যার মতো একটার পর একটা আসতে থাকত। তাদের মধ্যে কে কাকে কতোটা ছাড়িয়ে যাবে তার প্রতিযোগিতা লক্ষ করেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি যে কারো বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী; কিন্তু মত প্রকাশের নামে, মজা নেয়ার নামে, শত্রুতার নামে তখন আসিফ-বিরোধী কুৎসার যে যূথবদ্ধ প্রয়াস চলত নিরন্তর, তা দেখে বিস্ময়ে বিমূঢ় এবং এই মানুষগুলোর অফুরন্ত অবসর দেখে ঈর্ষান্বিতও হয়েছি। আমাদের নাগরিক জীবনে আমরা সবাই প্রচণ্ড ব্যস্ত, কারো দিকে কারো তাকানোর ফুরসতমাত্র নেই, কারো বিপদে কেউ এগিয়ে আসে না, সড়ক দুর্ঘটনায় রাস্তায় পড়ে একজন মানুষ যন্ত্রণায় কাতরালে পথচারী কৌতুহলবশে কয়েক মুহূর্ত থমকে সে দৃশ্য অবলোকন করে আবার আপন কাজের উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করে। এহেন নির্লিপ্ত নগরে একজন ব্যক্তিবিশেষের পেছনে এতো অঢেল সময় ব্যয় করবার সামর্থ্য হয় যাদের, মনে মনে তাদের ঈর্ষা না করে পারা যায় না। ব্যক্তিগতভাবে এবং কাজের ক্ষেত্রে আসিফ সমালোচনাযোগ্য ব্যক্তি হতেই পারে, তার সব বিষয়ে আমার মতের মিল হয় না, কিন্তু তাই বলে তার বিরুদ্ধে অহর্নিশ লেগে থেকে কুরুচিপূর্ণ মিথ্যাচার ও স্যাটায়ার এবং বিভিন্ন পোস্ট দেয়া আমার কর্মকাণ্ডের আওতা-বহির্ভূত হিসেবেই মনে করি। কেবল আসিফ নয়, সকলের ক্ষেত্রে আমার এই নীতি প্রযোজ্য। যখন আমি বক্তব্য প্রকাশের প্রয়োজনে কাউকে আক্রমণের টার্গেট করা প্রয়োজন মনে করি, তখন সেটি করি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে, অথবা তারা যেই স্বার্থ অথবা চিন্তার প্রতিনিধিত্ব করে সেই স্বার্থ-চিন্তাকে।
ইদানিং দেখছি অনলাইনে এই রকম নোংরা খেলা শুরু হয়েছে বাকী বিল্লাহ-কে নিয়ে। ব্যক্তিগতভাবে যারা তাকে চেনেন তারাই ভালো বলতে পারবেন মানুষ হিসেবে বাকী বিল্লাহ কেমন। তবে তিনি রাজনীতির মানুষ, তার রাজনীতির লাইনে আস্থা নেই এমন বহু লোককে আমি তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমার পক্ষে কারো উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা এভাবে সম্ভব হতো না। বাকী বিল্লাহ যে রাজনৈতিক লাইন অনুসরণ করেন সেটা হয়তো আমার চিন্তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাছাড়া তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সমালোচনাও যে কারো দ্বারা হতেই পারে। কিন্তু বর্তমানে যা শুরু হয়েছে সেটা হাস্যকরভাবে করুণ এই অর্থে যে এর নেতৃত্ব দিচ্ছে যেই নিকটি, তার সামান্যতম কোনো ক্রেডিবিলিটি পাবলিকস্ফিয়ারে নাই। ব্যক্তিবিশেষের নামে কুৎসিত ভাষায় অনর্গল শতভাগ নির্লজ্জ মিথ্যাচার করে যাওয়াই তার একমাত্র কাজ বলে মনে হয়। নিজের লেখাকে যে "বালছাল" বলে অভিহিত করে, তার লেখা সময় নষ্ট করে যদি কেউ পড়ে থাকেন তাহলে চক্ষু বোলানোর অধিক কালক্ষেপণ না করাই শ্রেয় বলে আমার অভিমত। কিন্তু স্যাটায়ার এক জিনিস, আর মিথ্যাচার আরেক বিষয়। কাউকে নিয়ে স্যাটায়ার করলেও তার মধ্যে ন্যূনতম রুচিবোধ কাম্য। সেই সাথে থাকতে হয় সত্য বিষয়কে রসের মোড়কে উপভোগ্য করে উপস্থাপনের দক্ষতা। কিছুটা অতিরঞ্জনও থাকতে পারে। কিন্তু একজন ব্যক্তি সম্পর্কে বিদ্বেষ এবং গালাগালিপূর্ণ নিকৃষ্ট শ্রেণীর মিথ্যা প্রচারণা নিম্নতম পর্যায়ের রুচিবোধেরও অন্তর্গত নয়। যে এই কাজটি করছে- আসল পরিচয় প্রকাশের সৎ সাহস তার নাই, যদিও সে এই দেশে বাস করে না। বাকী বিল্লাহই তার একমাত্র টার্গেট নয়। অতীতেও সে ব্যক্তিবিশেষকে নিয়ে এবং অনেক রাজনৈতিক ঘটনা নিয়েও এই ধরনের প্রচারণা করেছে। তার কোনোটির মধ্যে সত্যের লেশমাত্রও ছিল না। এবারও সেটি থাকার কোনো কারণ নেই। আমি বরং বাকী বিল্লাহ-কে ধৈর্য নিয়ে এমন একটা মিথ্যা প্রচারণার পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট জবাব দিতে হলো দেখে অবাক হয়েছি। একটা কথা বলে রাখি, তার সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক না থাকলেও তার রাজনৈতিক জীবন আমার একেবারে অজানা নয়।
এই কুপরিচিত নিকের অন্তরালে যেই মানুষটি বসে আছে, সে নিজেও জানে অধিকাংশ মানুষের কাছে তার লেখার ন্যূনতম বিশ্বাসযোগ্যতা নাই। তারপরেও সে কাজটি করেছে বিতর্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে। সে হয়তো এর মধ্যে দিয়ে এক ধরনের মজা পায়। বিকারগ্রস্থতার দ্বারা কেউ আক্রান্ত হলে তার মজা পাওয়ার বিষয়গুলোও সেই প্রভাবের অধীন হয়। এছাড়া এসবের পেছনে তার অন্য উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। তার কুৎসিত মন্তব্যগুলোর ফাঁকে ফাঁকে তার রাজনীতি-সংলগ্নতাও সে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে। এবং এই রাজনীতির বিরোধিতায় বিভিন্ন মাত্রায় যারা আসেন, তাদের চরিত্রহননমূলক কথাবার্তা বলে যাওয়াই মূল্য উপজীব্য। তার একমাত্র গুণ হলো (যদি সেটাকে গুণ বলা যায়) প্রভূত আত্মবিশ্বাসের সাথে মিথ্যা তথ্য বিতরণ করে যাওয়া। এ কাজটি সে সব সময়ই করে থাকে।
ওপরে যার কথা আলোচনা করলাম, সে-ই এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যক্তি নয়। আরো বেশ কয়েকজন এ কাজে তার শরিক। বিশেষভাবে এটা শুরু হয়েছে গত ৩০ সেপ্টেম্বর একটি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কিছুসংখ্যক ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী কর্তৃক আরেকটি ছাত্র সংগঠনের কয়েকজন নারীকর্মীর প্রতি শারীরিক আক্রমণের পর। বাস্তব ক্ষেত্রে এবং অনলাইনে যারা তাদের বিভিন্ন মাত্রার রাজনৈতিক প্রচারণার জন্য বিশেষভাবে চিহ্নিত- এই ঘটনাকে উপলক্ষ করে তাদের মধ্যে বাকী বিল্লাহ-বিরোধী প্রচারণা, পোস্ট, ব্লগের বন্যা বয়ে যেতে দেখছি। এই সমালোচনাগুলো কোনো যোগ্য ব্যক্তির দ্বারা যুক্তিনিষ্ঠভাবে হলে তার গ্রহণযোগ্যতা থাকত। কিন্তু এইসব প্রচারণার বিন্দুমাত্র কোনো সত্যতা নেই- সেটা শুধু তথ্যের গ্রহণযোগ্যতার দিক দিয়ে নয়, যারা তা প্রচার করছে তাদের চরিত্রগত কারণেও। এবং যারা এই কাজগুলো করেছে তারা রাজনৈতিক চিন্তার দিক থেকে বেশ পরিচিত হওয়ায় তাদের বর্তমান বক্তব্যের প্রেক্ষিত থেকে চিন্তা করলে তাদের চরিত্রের আরেকটি বিশেষ দিক খুব স্পষ্ট হয়ে যায়: ভণ্ডামি। যেসব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি তাদের বিন্দুমাত্র সমর্থন নেই, উপরন্তু নির্লজ্জভাবে তারা এগুলোর বিরোধিতা করে আসছে এখন সেইসব আন্দোলনের প্রতি তাদের সহমর্মিতা উথলে উঠেছে! যে সব গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনের নাম শুনলেই তার ভেতরগতভাবে জ্বলে ওঠে, এখন তাদের প্রতি দেখি সমবেদনার বহিঃপ্রকাশ! অনলাইনে এই ধরনের ভণ্ডামির জন্য কোনো জবাবদিহিতার প্রয়োজন হয় না, শারীরিকভাবে কারো আক্রমণাত্মক প্রশ্নের মুখোমুখিও হতে হয় না। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছদ্মবেশের অন্তরালে নিরাপদ থেকে তারা এমনি ঘৃণার্হ কাজে মেতে ওঠে। অধিকাংশ মানুষ এই সব প্রচারণায় বিশ্বাস স্থাপন না করলেও, মুষ্ঠিমেয় স্বগোত্রীয় এসব থেকে মজা এবং পরবর্তী প্রচারণার রসদ সংগ্রহ করতে পারে। এছাড়া আরেকটি অনবগত গোষ্ঠী এসব প্রচারণায় বিশ্বাস স্থাপন করে বসতে পারে- এমন সম্ভাবনাও থেকেই যায়। আপাত দৃষ্টিতে এগুলোই এ জাতীয় প্রচারণার লক্ষ্য বলে মনে হলেও এর পেছনে আরো বড় কোনো উদ্দেশ্যও অবজ্ঞা করবার মতো বিষয় নয়। জনগণের দৃষ্টিকে বিভ্রান্ত এবং তাদের চিন্তাকে সঙ্কীর্ণ গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ রাখার চাইতে অধিক শত্রুতামূলক রাজনীতি আর নাই।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


