প্রতিবছর কোরবানির ঈদে দূরদূরান্ত থেকে হাটগুলোতে গরু আসে। গরুগুলো আসে ট্রাকভর্তি হয়ে, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। গরুগুলোকে দাঁড় করিয়ে আনার কারণ, এতে করে ট্রাকে অনেকখানি স্পেস ফ্রি করা যায়। সেই ফ্রি স্পেসে আরো গরু গাদাগাদি করে দাঁড় করানো যায়। ফলে ফলে ট্রান্সপোর্ট ফির অনেকখানি সেভিংস করা সম্ভব হয়। গরুকে বসিয়ে আনলে এই সেভিংস করা সম্ভব হয় না। এই সেভিংস করতে গিয়ে আমরা অবলা প্রাণিগুলোকে এইভাবে কষ্ট দেই। ওদের কষ্ট হলে হোক, নিজের পকেটের দুটো পয়সা তো বেঁচে গেলো - এই যুক্তি দিয়ে আমরা আত্মতৃপ্ত হই।
হাটে আসার পরের ঘটনাও মোটামুটি সেইম। গরুগুলোকে জায়গামতো লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এখানে দাঁড় করিয়ে রাখার কারণ, গরু বসে থাকলে তার সাইজ ঠিকমতো বোঝা যায় না। সঠিক সাইজ বুঝার জন্য গরুকে দাঁড় করিয়ে রাখা অনিবার্য। এজন্য ক্লান্ত হয়ে গরু বসে পড়লে তার লেজ মুচরিয়ে, লাঠি দিয়ে বাড়ি মেরে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়। এই প্রাণিগুলো যে এতোদূর থেকে এসেছে, ওদের উপর দিয়ে যে এতো ধকল গেছে, ওদেরও যে একটু বিশ্রামের প্রয়োজন আছে - এই বিষয়গুলো আমাদের মাথাতেই থাকে না। আমরা এসেছি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে। এতোকিছু মাথায় রাখার সময় কই আমাদের?
কোরবানি আমাদের সবাইকে আত্মত্যাগের শিক্ষা দেয়। কিন্তু আমরা যদি একটু ভালো করে লক্ষ্য করি, তাহলে আমরা কোরবানির মাধ্যমে এই অবলা প্রাণিগুলোর আত্মত্যাগের বিষয়টাও বুঝতে পারবো। তাদের এই আত্মত্যাগের ফলে কিছুটা সম্মান তাদেরও প্রাপ্য। আমরাও অতি মহৎপ্রাণ ইন্ডিভিজ্যুয়াল। আমরা এই প্রাণিগুলোকে তাদের প্রাপ্য সম্মানটা প্রদান করি। অকারণে গরুর লেজ ধরে টানি। অকারণে গরুর "পাছায়" থাপ্পড় মেরে পৈশাচিক আনন্দ লাভ করি। আদর্শগত দিক থেকে আমরা যে শ্রেষ্ট, সেটা আবারও প্রমাণিত হয়।
এই কোরবানির ঈদে নিজেদের ভেতরকার পশুত্বকে ত্যাগ করতে শিখি এবং প্রতিটি প্রাণকে সম্মান দিতে শিখি। আল্লাহর সৃষ্টি প্রতিটি প্রাণই মহামূল্যবান। এই প্রাণগুলোকে সম্মান দিলে আমরা নিজেরা কি খুব অসম্মানিত হয়ে যাবো?
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:১৭