গত কয়েকদিনে দুইটা নিউজ খুব চোখে পড়ল। একটা নটরডেমের এক ছেলে প্রেমের কারনে আত্নহত্যা করেছে, আরেকটা হচ্ছে হচ্ছে ড্যাফোডিল ভার্সিটির সোনিয়া নামের এক মেয়ে তার প্রেমিককে দিয়ে স্বামীকে কৌশলে হত্যা করিয়েছে। সূত্র
এইটাইপ ঘটনা আসলে নতুন না। সাম্প্রতিককালে এরকম ইমোশনাল ডিসঅর্ডার , প্রতারণা বা ট্রাপে ফালানো প্রায়শই হচ্ছে। আসলে আমাদের সমাজ মোরালি যে কতটা নষ্ট হয়ে গেছে এসব তারই উদাহরন। নৈতিক দিক দিয়ে ক্রমশ ক্ষয়িঞ্চু একটা সমাজ আস্তে আস্তে তার ধ্বংশের প্রান্তে চলে এসেছে।
কি অদ্ভূদ একটা ‘প্রজন্ম’ আমরা পেয়েছি। ডি-জুস প্রজন্মের পর এবার এসেছে থ্রি-জি প্রজন্ম। এই প্রজন্ম চলে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে, মানে ভাইবার-ফেসবুক-স্কাইপে। সাথে আছে ওয়াটস্যাপ,ইমো,লাইম। ডিজুস প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের এক সাথে দুই-তিন নৌকায় পা দিতে সীম বদলাতে হত। এখন থ্রি জি প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের তা লাগে না। একজনের সাথে ভাইবার, আরেকজনের সাথে ফেসবুক, আরেকজনের সাথে ওয়াটস্যাপ- এভাবে সহজেই চালিয়ে নিতে পারছে এরা। নিদারুন দক্ষতায় অন্যদের সাথে প্রতারণা করে নিজেদের মাঝে ‘কনফিডেন্ট’ গ্রো করে নিচ্ছে। এ কনফিডেন্ট সৃষ্টিশীল কিছু করার নয়। এ কনফিডেন্ট হচ্ছে মিথ্যা বলতে পারার কনফিডেন্ট। আসলে যে তারা নিজেদের সাথেই, নিজেদের পটেনশিয়ালের সাথেই প্রতারণা করে চলেছে এটা তাদের বোঝাবে কে??
এই ঈদে আমার দেখা সেরা নাটকটি ছিল ‘রুমডেট’। অনেকেই নাটকটিকে আপত্তিকর বলছেন। কিন্ত তাদের বোঝা উচিত বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এরচেয়েও ভয়াবহ। যদিও আমার মনে হয়েছে অজানা কারনে নির্মাতা নাটকটি কাটছাট করেছেন, কিন্ত তারপরেও যেটুকু মেসেজ দিতে পেরেছেন সেটাই কম কি। অর্ধ-উলংগ হয়ে ইন্ডিয়ানদের অনুকরনে ‘ম্যাজিক মামণি’ নাচার ‘সাহস’ এর চেয়ে আমাদের প্রজন্মের নোংরা চেহারাটা দেখানোর সাহসটাকেই আমি পজিটিভলি এগিয়ে রাখব।
নাটকটায় এক পর্যায়ে প্লে-বয় এশ-কে তার এক বান্ধবী বলে, আমাকে কি আর ১৫-২০ টা মেয়ের মত পেয়েছো যে বিছানায় যাব?
দুঃখজনক হলেও সত্য, এসব কথা বলার পরেও বেশির ভাগ মেয়েই শেষ পর্যন্ত এইসব প্লে বয়দের বিছানাতেই যায়। জেনে শুনেই যায়। এমনটা কেন হয়? কেন এই মানসিকতা?
সমাজের ছেলেরা আজন্মই খারাপ ছিল। কিন্ত মেয়েদের অধঃপতন এই ডিজুস- থ্রি-জি যুগে যেন একটু বেশিই হয়েছে।
আর ১৫-২০ টা মেয়েই বা কেন এসব প্লে-বয়দের বিছানায় যাবে? মেয়েরা কি তাদের নিজেদের সম্মান দিতে পারছে না? কেন নিজেদের এত সহজেই ছেলেদের ক্রীড়ানকে পরিণত করছে? আসলে তারা থ্রি জি যুগে টেকনোলজী গুলোকে পুরপুরি নেগেটিভ ভাবে ইউজ করছে। ভাইবার, ওয়াটস্যাপ, স্কাইপে, ফেসবুক ইত্যাদি ইত্যাদি দিয়ে তারা নিজেদের চারপাশে একটা ভার্চুয়াল জগত তৈরী করে ফেলেছে, যে জগতে কোনো কিছুতেই কোনো অপরাধ হয় না। মিথ্যা বলে-প্রতারণা করে, নোংরামী-ফাজলামি করে কোনো ক্ষতি হয় না। এসব করতে করতে কখন যে তারা বাস্তব জীবনেও সেসবের প্রয়োগ ঘটানো শুরু করে দেয় তা হয়ত তারা নিজেরাও বুঝতে পারে না।
প্লে-বয়দের বিছানায় নিজেদের সমার্পন তাদের কাছে ফেসবুকে লাইক পাওয়ার জন্য একটু ‘সেক্সি’ লুকের ছবি আপলোডের মতনই সহজ ব্যাপার হয়ে যায় যেন। যুগের পোলা মাইয়ারা নিজেদের ‘সেক্সি’ প্রমাণের জন্য সব কিছু করতেই যেন প্রস্তত।বুঝি না, যার সাথে সেক্স করব তার কাছে সেক্সি লাগলেই তো হলো? তাহলে কি সবার সাথে সেক্স করার জন্যই এই ‘সেক্সি’ লুকের প্রচেষ্টা?
আমাদের প্রজন্মের প্রেম ভালোবাসা আবেগ অনূভূতি আর বুকের মাঝে নেই। আবেগ অনূভূতি সব চলে গেছে দুই রানের চিপায় আর প্রেম ভালোবাসা গলার কাছে। খুব সহজেই ‘আই লাভ ইউ’, ‘আই মিস ইউ’, বলে ফেলতে পারে। বিছানায় চলে যেতেও সময় লাগে না। আবার বোরড হয়ে গেলে মোবাইল সেটের মতই সব বদলানো হয়ে যায়। এদেরকেই অন্তঃসার শূন্য বলা হয়, কারন এরা যা বলে তা আসে গলা থেকে, হৃদয় থেকে না।
অনেকেই নিজেকে শো করাটা একটা অসুস্থ্য পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ফেসবুক এর মাধ্যমে বাংগালী নিজেদের যেভাবে শো-আপ করে তা আর কোনো দেশের মানুষ করে কিনা সন্দেহ। বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড হলেই একদম স্বামী স্ত্রীর মতন ছবি টবি তুলে এদের ফেসবুকে দিতে হবে।
আমার এক পরিচিত আত্নীয়ের কথা বলি। তার নতুন বয়ফ্রেন্ড নর্থ সাউথে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। তাতেই সে নিজেকে ‘ইঞ্জিনিয়ারের বউ’ বলে পরিচয় দেয়! আসলে এরা “বয়ফ্রেন্ড” আর ‘হাজবেন্ড’ এর মাঝে খুব কমই পার্থক্য রেখে থাকে। তাইতো বিয়ের পর কোনো কিছু আর নতুন মনে হয় না। অস্থির এই প্রজন্ম যে ভাইবার-ওয়াটসএপ-ফেসবুকের মধ্যমে প্রতি মুহুর্তে স্টিমুলেশন নিয়ে অভ্যস্ত। তাই এদের বোরড হতে বেশি সময় লাগে না।
আর এর ফলাফল আমরা সহজেই দেখতে পারি, যে কোনো কাজী অফিসে গেলেই দেখতে পারবেন কি পরিমাণ ডিভোর্স এই যুগে হচ্ছে। যেকোনো সময়ের চেয়ে দেশে এখন অনেক বেশি বিয়ে ব্যর্থতায় পরিণত হচ্ছে।
ড্যাফোডিলের সোনিয়ার কাহিনীতে আসি। তার একটা বয়ফ্রেন্ড ছিল রুবেল নাম। তারপরেও সে পরিবারের পছন্দে আরেকজনকে বিয়ে করল। এবার রুবেলকে টাকা দিল তার স্বামীকে মেরে ফেলার জন্য। রুবেল ছিনতাইকারীর বেশে হত্যা করল স্বামীকে।
এখানে বেচারা স্বামী কি দোষটা করল যে তাকে জীবন দিতে হবে?? সংসার করতে না চাইলে তালাক দিয়ে দিলেই হয়, মেয়েদের সেই অধিকার আইনে আছে। কিন্ত তা না করে বিনা কারনে স্বামীকে হত্যা করানো- আসলেই কিছু বলার ভাষা নাই।
ছেলেদের পৈশাচিকতা সমাজে সুপরিচিত। আমার এক বান্ধবী একবার বলেছিল, যার সাথেই বিয়ে হোক তাকে আগে থেকে বলে রাখব, “হাতে মারো, কিন্ত জানে মেরো না।”
যে যুগ পড়ছে, আসলে ছেলেদেরও বিয়ের আগে মেয়েকে বলে নিতে হবে, “অন্য কাউরে ভালো লাগলে চলে যাইও, কিন্ত আমারে জানে মেরো না!”
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:০১