এক।।
মেয়েটির চোখের দিকে তাকিয়ে ছেলেটি বলল, একটা কবিতা লিখে দিবি?
স্নিগ্ধার একটা লেখা আজ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। কই থেকে যেন ক্লাসের সবাই জেনে গেছে। এর মধ্যেই আনিস এসে দাবি জানাল।
- ধূর ছাই- আমি কবিতা টবিতা লিখতে পারি নাকি।
- এত বড় বড় গল্প লিখতে পারিস আর আমার জন্যে একটা কবিতা লিখতে পারবি না?
-না পারব না। দূর হ।
কৃত্তিম রাগ দেখিয়ে চলে যায় আনিস। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে ওরা। সামনে ফ্রেশারস রিসিপশন। অনেক কাজ। রাশেদের সাথে হাটতে হাটতে হলের দিকে চলে যায় আনিস।
দুই।।
ল্যাবের মধ্যে হঠাত মেয়েটির কাধে টোকা দিয়ে ছেলেটি বলল, একটা কবিতা লিখে দে।
-আরে আবার কবিতা। আর কত জ্বালাবি? স্নিগ্ধা রেগে বলল।
-তোর ইয়া বড় লেখাটা পড়লাম ভার্সিটির ম্যাগাজিনে। আনিস বলে।
-তো?
-একটা কবিতা লিখে দে ।
- দুইদিন পরপর তোর এই এক কথা। কবিতা লিখে দে কবিতা লিখে দে। তুই জানিস না আমি এসব পারি না।
-পারিস। ট্রাই করে দেখ না। আমার জন্যে।
-এসব আমার দ্বারা হবে না।
-হবে। আমার জন্যে একটু ট্রাই কর।
-তোর জন্যে ট্রাই করব কি জন্যে? তুই আমাকে কোনো দিন ট্রিট এ ডাকসিস?
লাস্ট সেমিস্টারে হাইয়েস্ট জিপিএ পেয়েছে আনিস। বন্ধুরা মিলে হারুন হোটেলে খেতে গিয়েছিল, স্নিগ্ধা ডাক পায়নি।
-তুই আমার কথা রাখলে নেক্সটবার দাওয়াত পাবি। আনিস বলে।
-লাগবে না তোর ট্রিট। দূর হ।
উদাস মনে আনিস আউড়ায়-
“প্রয়োজন নেই কবিতার স্নিগ্ধতা,
কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি,
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়,
পূর্নিমার রাত যেন ঝলসানো রুটি”
তিন।।
রাশেদ খুন হয়েছে। আনিসের প্রিয় বন্ধু রাশেদ।
রাজনীতি করত রাশেদ। এসব করতে গিয়ে স্থানীয় এক গ্রুপ এর সাথে লেগে গিয়েছিল। তাই বলে এভাবে নৃশংস ভাবে খুন হবে তা কল্পনার বাইরে। ওরা রাশেদকে ক্যাম্পাসের গেটে খুন করে মাথাটা নিয়ে গিয়েছিল। পড়ে ছিল নিথর দেহ টা।
দেহটার পাশে আনিস বসে ছিল অনেকক্ষন। পুলিস এসে সড়িয়ে দিয়েছে।
একদিন পর দূরের এক ডোবা থেকে রাশেদের ছিন্ন মাথা উদ্ধার করে পুলিশ।
চার।।
আনিস আর ক্লাসে আসে না। কেউ বলে আনিস পাগল হয়ে গেছে। কেউ বলে অসুস্থ্য। কেউ বলে সন্ত্রাসী দলের সাথে যোগ দিয়েছে।
ফোনে আনিসকে পাওয়া যায় না। প্রতিদিন নিয়ম করে ফোনে চেষ্টা করে স্নিগ্ধা। যদি কোনোদিন পাওয়া যায়। সেটা আর হয় না।
পাঁচ।।
পত্রিকায় লেখাটি পড়ল স্নিগ্ধা। ইন্টারনেটে ব্লার করা লাশের ছবিটাও চিনতে কষ্ট হল না।
ক্রসফায়ারে সন্ত্রাসী আনিস নিহত। পুলিশের ভাষ্য, অস্ত্র উদ্ধারের জন্য আনিসকে নিয়ে বের হলে আগে থেকে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা পুলিসের উপর গুলি চালায়। এসময় পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয় আনিস।
জানালার ফাক দিয়ে মেঘগুলোর দিকে তাকায় স্নিগ্ধা। জানালার কাঁচ গুলো বড্ড বেশি দূর্ভেদ্য মনে হচ্ছে।
আজ ছেলেটির জন্য কবিতা লিখতে ইচ্ছা করছে ওর। মেয়েটির সেই কবিতা কোথাও ছাপা হবে না। ভুল পথের পথিকদের জন্য লেখা কবিতা কেউ ছাপায় না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:১০