গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ
উপজেলা পরিষদ চত্বরের
অদূরে একটি কুটিবাড়ি ব্রিজের পাশেই
মোয়াজ্জেম হোসেন নামের এক ব্যক্তির বাড়ি।
তার স্ত্রীর নাম বেলী বেগম। ছেলে বেলাল
হোসেন বাধ্যগত পুত্র। বাড়ির সবাই বেকার।
তাদের নিজের কোন পেশা ছিল
বা আছে বলে এলাকার লোকজন জানে না।
তবে আশপাশের বাড়ির লোকজন তাদের সন্দেহের
চোখে দেখতেন। তারা বলেন, মেয়াজ্জেম হোসেনের
বাড়ি থেকে মাঝে মধ্যে মেয়েদের চিৎকার
শুনতে পাওয়া যায়। আবার থেমে থেমে মারপিট ও
কান্নাকাটি। তারপর দিনরাত বিভিন্ন
স্থান থেকে আসা মাস্তানদের আনাগোনা।
তার মধ্যে পুলিশ ও পোশাকধারী লোকজনের
যাতায়াত ছিল। এ কারণে এলাকার লোকজন
বিষয়টি নিয়ে ভয়ে বেশি দূর এগোয়নি। কিন্তু ২০০০
সালের এপ্রিল মাসে ওই বাড়ি থেকে ডলি নামের
এক মেয়ে পালিয়ে এসে চালায় যৌন নির্যাতনের
কাহিনী ফাঁস করে দেয়। ওই কিশোরীর
মুখে নির্যাতনের বর্ণনা শুনে এলাকার
লোকজনের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়।
এলাকার লোকজন জানতে পারে যে বাড়ির মালিক
মোয়াজ্জেম ও তার
স্ত্রী বেলী বাড়িতে নারী ব্যবসা করতো।
তারা বিভিন্ন স্থান থেকে কিশোরী মেয়েদের
ফুঁসলিয়ে নিয়ে আসতো। চাকরি দেয়ার কথা বলে,
এমনকি বিয়ে ও টাকার প্রলোভন
দেখিয়ে কিশোরী মেয়েদের নিয়ে আসতো বাড়িতে।
তারপর বাড়িতে আটকে রেখে তাদের দিয়ে দেহ
ব্যবসা চালানো হতো। ডলির এসব কাহিনীর পর
ওইদিন বিক্ষুব্ধ লোকজন মোয়াজ্জেম হোসেনের
মিনি পতিতালযে হামলা চালিয়ে ব্যাপক
ভাঙচুর করে। গোবিন্দগঞ্জ পুলিশের রিপোর্ট
থেকে জানা যায়, গাইবান্ধা জেলার
সাঘাটা উপজেলার
বোনারপাড়া দলদলিয়া এলাচের ঘাট
গুচ্ছগ্রামের এক কিশোরী মেয়ে দু’বছর
আগে তার বাড়ি থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ
হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান
মেলেনি। সমপ্রতি সাঘাটা উপজেলার ফল
ব্যবসায়ী ফজলু মিয়া (৩৮) ফেরি করে ফল
বিক্রি করতে যান গোবিন্দগঞ্জে কুঠিবাড়িতে।
ফজলু মিয়া প্রতিবেশী হিসেবে আগে থেকেই ওই
কিশোরীকে চিনতেন। মোয়াজ্জেম হোসেনের
বাড়িতে তিনি দেখতে পান তাকে। তারপর
সাঘাটায় ফিরে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া ওই কিশোরীর
মা ও বাবাকে জানান।
খবর পেয়ে শনিবার বিকালে কিশোরীর মা ফজলু
মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে আসেন
গোবিন্দগঞ্জে। ঘটনার বর্ণনা করেন
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ
আবুল কালাম আজাদ ও ভাইস চেয়ারম্যান
মোহাম্মদ হোসেন ফকুর কাছে। তারপর পুলিশের
সহায়তায় হানা দেয়া হয় ওই কুঠিবাড়ির
মোয়াজ্জেমের বাড়িতে। দু’বছর পর
বন্দিদশা থেকে উদ্ধার করা হয় কিশোরীকে।
বাবা-মাকে কাছে পেয়ে মেয়ে কিশোরী তার
সর্বনাশের কথা খুলে বলে। তার উপর পৈশাচিক
নির্যাতনের কথা বর্ণনা করে পুলিশ ও
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে। সেখান
থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বেলাল হোসেন ও তার
মা বেলী বেগমকে। তবে সটকে পড়ে নাটের গুরু
মোয়াজ্জেম হোসেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশের কাছে তাদের
অপকর্মের কথা স্বীকার
করে বলে তারা দেশের বিভিন্ন স্থান
থেকে কিশোরী মেয়েদের
ফুঁসলিয়ে নিয়ে এসে দেহব্যবসায় বাধ্য করতো।
তাদের অনেকের মধ্যে ওই কিশোরীও ছিল। তবে তার
খদ্দের কারা ছিল তাদের নাম প্রকাশ
করতে রাজি হয়নি। এ ব্যাপারে গোবিন্দগঞ্জ
থানায় মোয়াজ্জেম হোসেনসহ তিনজনের
বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তত্তাবধায়ক এর জন্য দেশে টান টান
উত্তেজনা। যেন নতুন কোন অক্টোবর বিপ্লবের
পদধ্বনি। লগি-বৈঠার জবাব দিতে কুড়াল-
খুন্তি নিয়ে তৈরী হচ্ছে প্রতিপক্ষ। সহজ
ভাষায়, রক্তের নোনা স্বাদ নিতে নিমন্ত্রণ
জানানো হচ্ছে আমাদের।
যারা রাজনীতি নামক পেশায় ফুলটাইম জীবন
কাটান তাদের অনেকের কাছে তত্তাবধায়ক
নতুন শুরুর সন্ধিক্ষণ। এ পেশা ঠিক
রাখতে চাইলে চাকরিতে আসা বাধ্যতামূলক।
এসব পেশাজীবীদের অনেকেই ভাড়ায় লোক
নামাবে, হাতে ধরিয়ে দেবে কুড়াল খুন্তি।
অন্যপক্ষের আছে জনগণের ম্যান্ডেট। তাই
তাদের হাতে থাকবে বন্দুক, কামান,
ট্যাংক। অর্থাৎ মানুষ মারার
প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী হবে।
গর্জে উঠবে পুলিশের বন্দুক, কুড়ালের
আঘাতে থেতলে যাবে কারও মস্তক।
আমরা যারা লগি-বৈঠার পশুত্বকে দলীয়
চশমায় ’উপভোগ’ করিনি তাদের হয়ত
তৈরী থাকতে হবে নতুন সব পৈশাচিকতার
স্বাক্ষী হতে। এখানেই আসে ওই কিশোরীর
প্রসঙ্গ। দুই পরিবারের দুই মহিলার কাছে ১৫
কোটি মানুষের প্রায় সবাইকে কেন জানি ওই
কিশোরী মনে হয়। জাতিকে লগি-বৈঠা দিয়ে পেটাবে,
খুন্তি-কুড়াল দিয়ে ক্ষতবিক্ষত
করবে এবং ছুড়ে ফেলবে জীবন নামক ডাস্টবিনে,
খুব কি পার্থক্য আছে ওই কিশোরীর ভাগ্যের
সাথে?বেলী নামের যে মহিলা ওই
কিশোরীকে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করতো ,তার
সাথে একজন শেখ হাসিনা অথবা খালেদা জিয়ার
খুব কি পার্থক্য আছে?
জাতি হিসাবে আমরা যা করছি তা-ও কি একবিংশ
শতাব্দীর দাসত্ব নয়? ওই কিশোরীকে কিছু
আর্থিক সহায়তা দিয়ে হয়ত পায়ের উপর দাঁড়
করানো যাবে, কিন্তু তাতে নতুন একজন ওই
কিশোরীর জন্ম কি ঠেকানো যাবে?
গোটা রাষ্ট্রকে দাসপ্রথার
আষ্টেপৃষ্টে আটকে দুটি পরিবার নিজেদের
প্রভুত্ব কায়েমের যে মধ্যযুগীয় লড়াই
করছে তার নাম আর যাই হোক
রাজনীতি হতে পারেনা। আর এ অপরাজনীতিও
আজীবন চলতে পারেনা। তাহলে আমাদের
কি একজন আব্রাহাম লিংকনের অপেক্ষায়
থাকতে হবে, যার হাত
ধরে জাতি মুক্তি পাবে হাসিনা-
খালেদা দাসপ্রথা হতে? সে সময়
হতে আমারা আজ কতদূরে?