কয়েক দিন ধরে নারীর প্রতি অনাচার নিয়ে বাংলার
সমাজতাত্ত্বিকেরা বেশ সরব।এই অনাচার কি এখনই প্রথম,
নাকি এটা যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন সভ্যতায় বিরাজমান?চলুন
কিছু তথ্য উপাত্তের মাধ্যমে জেনে নেই যুগে যুগে নারীর
প্রতি অনাচারের কিছু গল্প।
তত্ত্বকথার তোপ দেগে দিলেই হলো না।
শ্রোতার মনে ছড়িয়ে পড়তে হলে সত্যকে
প্রকাশ করতে হবে সহজ ‘কথা ও কাহিনী’ বা
আখ্যানের মাধ্যমে।চলুন আজ জেনে নেই আমার এই দেশ
তথা গঙ্গা অববাহিকার প্রারম্ভিক এক তেতো
উপয়াখ্যান।
স্থান : গাঙ্গেয় অববাহিকা | উত্তর ও পূর্ব অঞ্চল
সময় : ৩ য় থেকে ৫ম খৃষ্টাব্দ
পুরাকালে বৃহস্পতি নামে এক প্রবল তেজসম্পন্ন
ঋষি ছিলেন। বৃহস্পতির দাদা ছিলেন ঋষি
উতাথ্য ও উতাথ্যের প্রিয়তমা পত্নী মমতা।
একদিন উতাথ্যের অনুপস্থিতিতে মমতাকে
দেখে বৃহস্পতির মনে কামনার জন্ম হয়। মমতা
নিষেধ করলেও বৃহস্পতি নিজের কামনা সংবরণ
করতে ব্যর্থ হন ও মমতাকে ধর্ষণ করেন। কালে
কালে মমতার গর্ভে বৃহস্পতির ঔরসে এক জন্মান্ধ
শিশুপুত্রের জন্ম হয়। তাই তার নাম রাখা হয়
দীর্ঘতামস। দীর্ঘতামস তার পিতা বৃহস্পতির
মতই তেজোসম্পন্ন ও শ্রুতিধর ছিলেন। তিনি
অনেক জ্ঞান অর্জন করেন ও অনেকগুলি
ঋগ্বেদীয় সূত্রের প্রণয়ন করেন।
যুবক দীর্ঘতামসের সঙ্গে এক পরমাসুন্দরী ব্রাহ্মণ
কন্যা প্রদ্বেষীর বিয়ে হয় এবং তাদের অনেক
গুলি পুত্রসন্তান লাভ হয় ‚ তাদের মধ্যে সবচেয়ে
বড় পুত্রটির নাম গৌতম। জন্মান্ধ ঋষি দীর্ঘতামস
নিয়ম প্রণয়ন করেন যে একজন নারী কেবলমাত্র
একজন পুরুষের সঙ্গেই লিপ্ত হবেন। কিন্তু
প্রদ্বেষী এই নিয়ম মানতে রাজি ছিলেন না
‚ তিনি দীর্ঘতামসের ওপর প্রচণ্ড রেগে যান ও
পুত্র গৌতমকে বলেন স্বামীকে গঙ্গায়
ভাসিয়ে দিয়ে আসতে। একটা কাষ্ঠখণ্ডে
বাঁধা অবস্থায় বৃদ্ধ ঋষি নদীর স্রোতে ভেসে
চলেন।
ভাসতে ভাসতে কত না দেশ – গ্রাম শহর –
রাজত্ব পেরিয়ে শেষে বৃদ্ধ দীর্ঘতামসের
ভেলা গিয়ে থামে পূর্বদেশের প্রবল
পরাক্রান্ত রাজা অজেয় বলির রাজত্বের
সীমায়। বেদজ্ঞানী পুণ্যবংশজাত মহর্ষি
দীর্ঘতামসকে উদ্ধার করে সসম্মানে রাজগৃহে
নিয়ে যান মহারাজা বলি। এবং তারপর
নিজের বংশধারায় পূত ও উন্নত রক্তধারার
মিশ্রণ ঘটানোর জন্য বলি রাজা নিজের
রাণী সুদেষ্ণাকে ঋষি দীর্ঘতামসের
অঙ্কশায়িনী হতে আদেশ দেন। সুদেষ্ণার গর্ভে
ও দীর্ঘতামসের ঔরসে ৬ পুত্রের জন্ম হয় – অঙ্গ
‚ বঙ্গ ‚ কলিঙ্গ ‚ পুন্ড ‚সূক্ষ্ম ও ঔড্র ! এই ৬ পুত্র ও
তাহাদের বংশধরদের বাসস্থানগুলো
পরবর্তীকালে তাহাদেরই নামাঙ্কিত
হয়েছিল।
(সূত্র : মহাভারত | আদিপর্ব)