somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শান্তির সন্ধানে

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
শান্তির সন্ধানে



ইসলাম হচ্ছে সেই শান্তিপ্রিয় ধর্ম, যার উল্লেখ মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআনে রয়েছে এবং যা ইসলামের পবিত্র নবী (সা.)-এর মহান ব্যবহারিক জীবনাচরণ দ্বারা সমর্থিত। তার বিপরীত এবং বিরোধী কোনো কিছুই ইসলাম নয়। অতএব ইসলামের আসল শিক্ষা এবং তাদের সেসব মনগড়া ব্যাখ্যাকৃত মত ও আচরণের মধ্যে আমাদেরকে সুস্পষ্ট পার্থক্য করতে হবে, যারা ইসলামের নামের বিকৃতি ঘটাচ্ছে। গত বুধবার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘নাইজেরিয়ায় মসজিদে বোমা, নিহত ৫০।’

খুবই দুঃখজনক যে, এ যুগে এক বৃহৎ জনসমষ্টি ইসলামের সৌন্দর্যকে শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। যার ফলে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা সংঘটিত হচ্ছে এবং প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ।

ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা থেকে যারা দূরে তাদের দ্বারাই মূলত এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে থাকে। অথচ ইসলাম হচ্ছে হীরকসদৃশ স্বচ্ছ, সুন্দর এক শান্তি। যেকোনো আঙ্গিক থেকেই এটাকে দেখা হোক না কেন, এটা হচ্ছে অবিমিশ্র শান্তি, খাঁটি শান্তি এবং শান্তি ভিন্ন আর কিছুই নয়। কীভাবে ইসলাম ‘একটি শান্তির ধর্ম’? ধর্মের সার্বিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইসলামের যথার্থ নামটিই হচ্ছে অনুপম, ধর্মটির এমন একটি নাম দেওয়া হয়েছে, আক্ষরিকভাবেই যার অর্থ হচ্ছে ‘শান্তি’। এর আরেকটি অর্থও রয়েছে, যা হচ্ছে, খোদার ইচ্ছা ও আদেশের ওপর পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ।

যে ব্যক্তি প্রকৃতঅর্থেই ইসলামে বিশ্বাস করে, তাকে মুসলমান বলে। খাঁটি মুসলমানের একটি সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা দান করেছেন ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি (সা.) বলেছেন, ‘একজন মুসলমান হচ্ছে সে ব্যক্তি, যার হাত এবং যার জিহ্বা থেকে সব মানুষই সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ’ (সুনান নিসাই, খণ্ড-৮, কিতাবুল ইমান)।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজকের দিনে ইসলাম ‘সন্ত্রাস ও রক্তপাতের ধর্ম’ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে এবং এক বৃহৎসংখ্যক জনগোষ্ঠী এটাকে প্রকৃতপক্ষে এমন এক ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করে, যে ধর্ম মানুষে মানুষে এবং জাতিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক ঘৃণার বিস্তার ঘটায়। প্রকৃত ঘটনা হলো, ইসলাম হচ্ছে শান্তির সবচে বড় সমর্থক এবং পবিত্র নবী মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সব যুগের শান্তির সর্বশ্রেষ্ঠ সমর্থক, সমগ্র মানবজাতির জন্য শান্তির বাণী বিস্তারকারী।

ইসলাম যে প্রকৃতপক্ষেই শান্তির বার্তা, ঘৃণা, সন্ত্রাস, হিংস্রতা অথবা রক্তপাতের বার্তা হওয়ার চেয়ে বহু যোজন দূরে, তা এই আয়াতই স্পষ্ট যে, ‘ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫৬)। এ আয়াতে বলা হয়, সমগ্র বিশ্বের সব মানুষই তাদের নিজ ধর্ম পছন্দ করতে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন, তারা যে ধর্মই পছন্দ করবে, যে ধর্মের আজ্ঞানুবর্তী হয়ে তারা সুখী হবে, সে ধর্মই তারা প্রতিপালন করবে। পৃথিবীর বুকে এমন ব্যক্তি নেই, যেকোনোভাবে কাউকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করবে অথবা সেজন্য শক্তি প্রয়োগ করবে। পবিত্র কোরআনই এ ঘোষণা দেয় যে, বিশ্বাসের স্বাধীনতা হচ্ছে সব মানুষের মৌলিক অধিকার। পছন্দমাফিক যেকোনো ধর্মেই তারা বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে এবং তাদের পছন্দ মোতাবেক তারা যেকোনো ধর্মেরই আজ্ঞাবাহী সদস্য হতে পারে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেন, ‘এবং বল, এটা হচ্ছে তোমার প্রভুর কাছ থেকে আগত সত্য, সে কারণে যে চায়, এতে বিশ্বাস করুক এবং যে চায়, অবিশ্বাস করুক’ (১৮: ২৯)। ইসলাম হচ্ছে এক সুস্পষ্ট সত্য, যারা এতে বিশ্বাস করতে পছন্দ করে, তাদেরকে তা করতে দাও এবং যারা এতে বিশ্বাস করতে চায় না, তাদেরকে সেটা অগ্রাহ্য করতে দাও। ধর্মের বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এটাকে পছন্দ করার ব্যাপারে মানুষকে স্বাধীনতা দান করা হয়েছে। ইসলামের এমন কোনো অস্ত্র নেই, যা দিয়ে কোনো মানুষকে জবরদস্তি করে ধর্মান্তরিত করা যায়।’

দুর্ভাগ্যক্রমে কতিপয় মুসলমানসহ কিছু লোক মনে করে, শিরচ্ছেদ-ই একজন ধর্ম ত্যাগীর শাস্তি হওয়া উচিত। মহানবী (সা.)-এর আচারিত বাস্তব নমুনা সম্পূর্ণভাবেই এর বিপরীত। পবিত্র কোরআনের কোথাও এর উল্লেখ নেই যে, হত্যা করাই হচ্ছে ধর্ম ত্যাগের শাস্তি। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা হচ্ছে-‘ওইসব লোক, যারা ইমান আনার পর কুফরি করে, তার পর আবার ইমান আনে, অতঃপর পুনরায় কুফরি করে এবং কুফরি বেড়ে যায়, আল্লাহ তাদেরকে কখনোই ক্ষমা করবেন না অথবা তাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করবেন না’ (৪: ১০৯)। ধর্ম ত্যাগের শাস্তি যদি মৃত্যুদন্ডই হতো, তবে কীভাবে একজন লোক, যে ধর্ম ত্যাগ করেছে, সে দ্বিতীয়বার ইসলামের ছায়াতলে প্রত্যাবর্তন করতে পারত? পবিত্র কোরআন পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে যে, একজন মুসলমান, যেকোনো কারণে ধর্ম ত্যাগ করে, পুনরায় তার পূর্ব ধর্মে ফিরে যেতে পারে, যদি সে তেমনিটি চায়। ফেরত আসার পথ অবলম্বন করার উপায়টি সর্বদাই উন্মুক্ত আছে। ধর্ম ত্যাগের জন্য যেভাবে পার্থিব কোনো শাস্তির ব্যবস্থা নেই, তেমনিভাবে জোর করে ইসলাম গ্রহণ করানো এবং তাতে তাকে সারা জীবন আটক করে রাখার বাধ্যবাধকতার কোনো উপাদানও ইসলামে নেই।

ইসলামের বিধানমতে, ধর্ম হচ্ছে নিজ পছন্দের একটি বিষয়। মানুষ যদি ইসলামের সত্যতা যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারে এবং এর শিক্ষার ব্যাপারে সন্তুষ্টচিত্ত থাকে, তবে ইসলামে যোগদানের জন্য তাদেরকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানানো হবে। কিন্তু ইসলাম গ্রহণে যদি তারা মনস্থির না করে, তাতে তাদের ওপর কোনোই জবরদস্তি নেই। এমনকি ইসলাম গ্রহণের পরও চাইলে তারা এটাকে ত্যাগ করতে পারে। সর্ব শক্তিমান খোদা পরকালে এটাকে তার নিজ হাতে গ্রহণ করবেন, কিন্তু ধর্ম ত্যাগের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করার কোনো অধিকার ইহজগতে কারোরই নেই।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইসলাম কি মুসলমানদের অন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রতি ঘৃণা করতে নাকি সম্মান ও দয়া প্রদর্শন করতে শিক্ষা দেয়? ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে সর্বদাই প্রত্যেক সৎকর্ম ও মহৎ উদ্দেশ্যের আহ্বানে যোগদান করা, সে আহ্বান যদি কোনো ইহুদি, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ অথবা যেকোনো ধর্মের অনুসারী, এমনকি নাস্তিকের পক্ষ থেকেও আসে, ইসলাম মুসলমানদের এ ধরনের লোকদের আহ্বানে সাড়া দেওয়া এবং তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করারও আবশ্যকতা বোধ করে। তাদের উচিত কেবল সেই কারণটির প্রতিই তাকানো, যেজন্য তাদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে, কে আহ্বান করছে, সেদিকে নয়। ইসলাম সোনালি এক নীতিনির্ধারণ করেছে, যা সব মানুষই অনুসরণ করতে সক্ষম এবং তা থেকে সবাই উপকৃত হতে পারে।


ইসলাম এ শিক্ষা দান করে যে, সব আচরণের ভিত্তি সর্বদাই ন্যায়বিচারের ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত। যেভাবে পবিত্র কোরআন বর্ণনা করে, ‘হে যারা ইমান এনেছো, আল্লাহর ব্যাপারে স্থির-সংকল্প হও, সাক্ষ্যদানে নিরপেক্ষতা বজায় রাখো এবং মানুষের শত্রুতা যেন তোমাদের ন্যায়বিচারহীন কোনো কাজে প্ররোচিত না করে। সর্বদাই ন্যায়পরায়ণ হও, সেটাই হচ্ছে সততার অধিকতর নিকটবর্তী এবং আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা যা করো, সে বিষয়ে আল্লাহ অবশ্যই অবগত আছেন’ (৫ : ৮)। এ কথা বিষয়টিকে পর্যাপ্তভাবে খোলাসা করেছে যে, ইসলামের প্রকৃত অনুসারীদের ওপর এটা নির্ধারিত করা হয়েছে, শত্রুদের সঙ্গেও তারা ন্যায্যতার নিরিখে আচরণ করবে। এমন একটি ধর্ম, যা ঐক্য ও সহযোগিতার অনুপম শিক্ষার বিস্তার ঘটায়, সেই ধর্মের এমন কোনো সম্ভাবনা আছে কি, সে অন্য লোকদের বিরুদ্ধে কখনো সহিংসতা অথবা ঘৃণার বিস্তার ঘটাবে?

তাই আসুন, যার ওপর ইসলামের ভিত্তি তথা পবিত্র কোরআন অধ্যয়ন করি আর আমরা যদি গভীর মনোযোগের সঙ্গে এটি অধ্যয়ন করি; তাহলে এর মাঝে কেবলই ভালোবাসা, শান্তি, ঐক্য আর চিরস্থায়ী মুক্তির সন্ধান খুঁজে পাব।

ছবি: গুগল

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×