somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘শিশু যা হতে চায়, তা-ই হতে দিন’

২০ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন শিশু বড় হয়ে যা হতে চায়, তাকে তা-ই হতে দিতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলেছেন, বাবা-মায়ের প্রত্যাশা পূরণে শিশুদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা উচিত নয়।

আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আত্মহত্যা প্রতিরোধমূলক সংগঠন ব্রাইটার টুমরো আয়োজিত ‘শিশুদের স্বপ্নের পৃথিবী’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তাঁরা এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক গোলাম রহমান বলেন, ‘আজকে ইন্টারনেট, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন এসব প্রযুক্তি কিন্তু আমাদের জীবনকে একটা নতুন জগতে নিয়ে গেছে। এটা যে প্রযুক্তির প্রভাব, তা অস্বীকার করা যাবে না। ছেলেমেয়েদের ল্যাপটপ, মোবাইল দিতে হবে, উপায় নেই। কিন্তু ল্যাপটপ-মোবাইল ফোনে তারা কী করছে, এ ব্যাপারে নজর রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘যদি সত্যিকার অর্থে নিজেদের আধুনিক মনে করতে হয়, তাহলে প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে। তার মানে এই নয় যে, শিশুদের একেবারে ছেড়ে দিতে হবে। একটা বয়স পর্যন্ত শিশুদের দিকনির্দেশনা দেওয়ার দরকার আছে। তাদের গাইড করতে হবে, তাদের দেখভাল করতে হবে। মানসিক বিকাশে তাদের কথা বলার সুযোগ দিতে হবে, মতপ্রকাশের অধিকারের সুযোগ দিতে হবে, ভালো-মন্দ কী, তাদের বোঝাতে হবে।’ তিনি বলেন, একজন শিশুকে শ্রেণিতে প্রথম হতেই হবে, মা-বাবার এমন প্রত্যাশা থাকা উচিত নয়।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিশুরা চায় একটি পরিবার, শিশুরা চায় বন্ধুত্ব, শিশুরা চায় সবার ভালোবাসা। শিশুকে নিঃসঙ্গ করা যাবে না। শিশুর নিঃসঙ্গতা কাটানোর জন্য বন্ধু তৈরি করার সুযোগ দিতে হবে। অভিভাবকদের উদ্দেশে চিকিৎসক হেলাল বলেন, ‘আপনারা এমন রুটিন তৈরি করবেন না, যেখানে মা বলবেন, সকাল সাতটায় ওঠো, ব্রাশ করো, আটটায় স্কুলে যাও, একটায় বাসায় ফেরো, দুইটায় হুজুরের কাছে পড়তে যাও, তিনটায় আরবি পড়, চারটায় সাঁতার কাটো, পাঁচটায় নামাজ আদায় করো, ছয়টার বাসার শিক্ষকের কাছে পড়ো, সাতটায় আমার কাছে পড়ো, ১০টায় ঘুমাতে যাও।’
শিশুদের ওপর মানসিক চাপের প্রভাব খুব খারাপ মন্তব্য করে হেলাল বলেন, মা-বাবার মধ্যে দ্বন্দ্ব, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, এগুলো শিশুকে সবচেয়ে বেশি মানসিক চাপের মধ্যে ফেলে।
এভারেস্ট বিজয়ী প্রথম নারী নিশাত মজুমদার বলেন, শিশু যা হতে চায়, তাকে তা-ই হতে দিতে হবে। আজকের শিশুরা বিভিন্নভাবে বিষণ্নতায় ভুগছে। শিশুরা খেলতে পারছে না। শুধু স্কুলের বই পড়ছে। মানসিক বিকাশের বই পড়তে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, শুধু বলা হচ্ছে, তুমি পড় আর পড়। স্কুলে প্রথম হতে হবে দ্বিতীয় হতে হবে। শিশুরা ইঁদুর দৌড়ের মধ্যে আছে। এ জন্য ওদের মন ভালো থাকে না।’
আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আত্মহত্যা প্রতিরোধমূলক সংগঠন ‘ব্রাইটার টুমরো’ আয়োজিত ‘শিশুদের স্বপ্নের পৃথিবী’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তারা । ছবি : প্রথম আলোনিজের ছেলেবেলার বিষণ্নতার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে নিশাত বলেন, ‘ছোটবেলায় আমারও কোনো কিছু ভালো লাগত না। শুধু পড়ছি আর স্কুলে যাচ্ছি। যখন থেকে পাহাড় আর প্রকৃতির কাছে যাওয়া শুরু করলাম, তখন থেকে বিষণ্নতা থেকে দূরে সরে এলাম। এখন আমার চিন্তাভাবনা কেবল প্রকৃতি আর পাহাড়কেন্দ্রিক। আমি প্রকৃতিকে দেখার সুযোগ পাচ্ছি, যে কারণে আমি খারাপ চিন্তা থেকে দূরে আসতে পেরেছি।’
নিশাত মজুমদার বলেন, ‘অভিভাবকদের প্রতি আমার দাবি বা অনুরোধ থাকবে, আপনারা আপনাদের শিশুদের মনের কথাটা বোঝার চেষ্টা করুন। তারা কী চায়, তারা আসলে কী হতে চায়, তারা কী স্বপ্ন দেখে, তারা নিজেদের কোথায় দেখতে চায়, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। যখন সে জায়গাটা খুঁজে পাবে, তখন সে কখনো অন্য কাজ করতে পারবে না। কোনো শিশু যদি সাকিব আল হাসান হতে চায়, তাকে তা-ই হতে দিন।’
শিশুদের স্বপ্নের পৃথিবীকে ভেঙে না দেওয়ার আহ্বান জানান ব্রাইটার টুমরোর আহ্বায়ক জয়শ্রী জামান। অনুষ্ঠান শেষে উৎস বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০৫
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×