ছেলেবেলায় আমাদের বাড়িগুলো বাড়ি ছিল
মায়ের মমতার মত তারা আমাদের আগলে রাখত
বাড়িগুলোর মাটির মেঝেতে পাটি পেতে শুয়ে
আমরা চলে যেতাম স্বপ্নরাজ্যে, যেখানে
রাজার কুমারী কন্যা সিথানে দাড়িয়ে পালকের
পাখায় তাড়িয়ে দিতো আমাদের যাবতীয় ক্লান্তি
বাড়ির টিনের ছাদে বর্ষার অবিরাম গান
আমাদের সপ্তসুরে বাধতে চাইলে, মাজা পুকুরের
ব্যাঙ পাঠাত স্নানের নিমন্ত্রণ, আমরা নেমে যেতাম
অনন্তকালের স্নানে। পুকুরের জল ছুঁয়ে বেড়ে
উঠা নেবু-গাছগুলো তাদের নির্লজ্জতা দেখিয়ে
লোভ জাগাত, শরীরে খিধে জেগে উঠলে
অসমাপ্ত স্নান শেষে ফিরতাম, চাটাইয়ে
সাজানো মাটির সানকিতে আমাদের মায়েরা
ঢেলে দিতো বকুল ফুলের মত ধবধবে সাদা ভাত
শর্ষে ইলিশ আর কাঁচা লঙ্কায় পূর্ণ উদরে আমরা
ছেলেবেলার বাড়ি দাপিয়ে বেড়াতাম।
বাড়ির লেপা উঠানে ক্রমাগত পায়ের ছাপ
এঁকে এঁকে আমরা বড় হয়ে উঠলে দেখতাম
বাড়িগুলো আর বাড়ি নয় তারা হয়ে উঠেছে
ইট, কাঠ, কংক্রিটের তথাকথিত বাসা-
কৃত্রিম ঝর্ণা কিংবা বাতটাবের জলে আমাদের
ছেলেবেলার বাড়ি গুমরে মরে, ক্লান্ত দেহ
মেঝেতে আশ্রয়ের খোঁজে লুটিয়ে পড়লে
সারা শরীরে অনুভূত হয় অযাচিত ইটের ধর্ষণ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১২ বিকাল ৪:১৫