somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাধীনতার ৫০ বছরে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কতটুকু হারালাম?

০৬ ই মে, ২০২১ সকাল ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এই তো তিনদিন আগে ৩রা মে বিশ্বজুড়ে সবাই উদযাপন করলাম বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস। অথচ আমাদের দেশে বাক ও ব্যাক্তিস্বাধীনতার পাশাপাশি গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও কেড়ে নিয়েছে সরকার।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস এর করা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এ বছর আরো একধাপ পিছিয়ে এখন ১৫২ তম (মোট ১৮০টি দেশের মধ্যে)

চলুন ফেসবুকে হ্যাশট্যাগ দিয়ে বলি, থ্যাঙ্ক ইউ পিএম!

ইউটিউবে সাবটাইটেল অন করে ভিডিও দেখুন



আমাদের গণমাধ্যমের উপর ভয়ের ছায়া এমন ভাবে জেঁকে বসেছে যে গুলশানে এক তরুণী আত্নহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডির নামে মামলা হবার পরেও সব গণমাধ্যম অভিযুক্তের পরিচয় গোপন রেখে নিউজ করেছে।

অর্থাৎ আমাদের সংবাদমাধ্যম এখন শুধু ফ্যাসিবাদি সরকার নয়, তার সহযোগীদেরও ভয় পাওয়া শুরু করেছে।
এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে আমরা কেন এত নিচের দিকে অবস্থান করছি।



২০১৩ সাল থেকেই পতনের ধারায় থাকলেও ২০১৮ সাল থেকে সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দ্রুত অবনতি ঘটে।

২০১৮ সাল!
মানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন এবং নৈশভোটের বছর। এই সময় থেকে গণমাধ্যম এবং বিরোধী মতের উপর পুরোদস্তর আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে চড়াও হবার মাধ্যমে এই সরকারের পুর্ণ ফ্যাসিস্ট রুপান্তর ঘটে।

চলুন দেখে আসি, গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ করার জন্য এই সরকার কি কি করেছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনঃ
গণমাধ্যমকে সেলফ সেন্সরশিপে বাধ্য করার জন্য যে অস্ত্রগুলো শেখ হাসিনার সরকার ব্যবহার করেছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।

গেল বছর, অর্থাৎ ২০২০ সালে এই আইনের আওতায় করা মোট ১৯৮টি মামলার মধ্যে ৪১টি মামলাই ছিল পেশাদার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। যাতে আসামী করা হয় মোট ৭৫ জনকে

করোনা মহামারী মোকাবেলায় সরকারের নানা পদক্ষেপের সমালোচনা করে কার্টুন এঁকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার শিকার হয়েছিলেন কার্টুনিস্ট কিশোর।

একই মামলায় জেলে থেকে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুকে আপন করে নিয়েছেন লেখক মুশতাক।

যুবলীগ নেত্রী শামীমা নুর পাপিয়া, যে অসহায় মেয়েদের ৫ তারকা হোটেলে নিয়ে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করত, সেই পাপিয়া কান্ড নিয়ে নিউজ করার কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জড়িয়েছেন সাংবাদিক কাজল। সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর এবং যুব মহিলা লীগের দুই নেত্রী আলাদা ভাবে সাংবাদিক কাজলের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনটি মামলা দায়ের করেন। তার পরপরই ঢাকায় তার অফিস থেকে বের হবার পর নিরুদ্দেশ হয়ে যান সাংবাদিক কাজল।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ পাবলিশ করে বলে, ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সাংবাদিক কাজলকে অনুসরণ করা হচ্ছে, তার মটরসাইকেলেও ট্যাম্পারিং করা হয়। মনে হচ্ছে তিনি গুমের শিকার হয়েছেন।

টানা ৫৩ দিন নিরুদ্দেশ থাকার পর খোঁজ মেলে কাজলের। পুলিশ দাবী করে তাঁকে যশোহরের বেনাপোল সীমান্ত থেকে 'আটক' করা হয়েছে।

তার নিরুদ্দেশ থাকা সময়ের বিষয়ে দি ডেইলি স্টার পত্রিকায় সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, “মনে হচ্ছিল যেন একটি কবরের ভেতরে আছি, খুব ছোট একটা জায়গা, ছিল না কোনো জানালা"

কিন্তু কারা তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, কেন বা কোথায় তাকে আটকে রেখেছিল, তা তিনি প্রকাশ করতে চাননি৷

ডেইলি স্টারের সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, "সাংবাদিক কাজলের এর বাইরেও আরো অনেক কিছু বলার ছিল কিন্তু তিনি তা বলতে চান না"

বুঝতে পারেন কতটা ট্রমার শিকার হলে মানুষ এমন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে?

তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনই শেখ হাসিনা সরকারের একমাত্র অস্ত্র না। গণমাধ্যম সহ বিরোধী মতের কন্ঠরোধ করতে তারা আদিম ও বর্বর টেকনিকেরও প্রয়োগ করেছে

গুম, খুন, এবং নির্যাতন

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মোদি আসার প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ কর্মসুচীতে হামলা ও সংঘর্ষের নিউজ কভার করতে গিয়ে হেলমেট বাহিনীর হামলার শিকার হন ডেইলি স্টার, প্রথম আলো, বিডি নিউজ ২৪, দেশ রুপান্তর সহ মোট ৯টি পত্রিকার সাংবাদিকেরা।
সুত্রঃ প্রথম আলো

তার আগে ফেব্রুয়ারী মাসে নোয়াখালীতে কাদের মির্জা ও তার প্রতিপক্ষ গ্রুপের সংঘর্ষের নিউজ কভার করতে গিয়ে গুলিতে নিহত হন সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির। পুলিশ এই ঘটনাকে দুপক্ষের লড়াইয়ের মাঝে পড়ে অনিচ্ছাকৃত ক্রসফায়ার বললেও ময়না তদন্তে দেখা যায় তার ঘাড়, গলা, মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি করে ঝাঁজরা করে দেয়া হয়েছে।
সূত্রঃ প্রথম আলো

প্রিয় দর্শক, আপনারাই বলুন, দুপক্ষের লড়াইয়ে মাঝে একই ব্যাক্তির গায়ে এতগুলো গুলি অনিচ্ছাকৃত ভাবে করা হতে পারে? নাকি এটা সংবাদ সংগ্রহের দায়ে ঠান্ডা মাথায় খুন? যেখানে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য দেহের গুরুত্বপুর্ণ অংগপ্রত্যংগগুলোকে টার্গেট করে ব্রাশ ফায়ার করা হয়েছে।

টেকনাফে ইয়াবা কারবার এবং এর নেপথ্যের কারিগরদের নিয়ে নিউজ করার দায়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফাকে গ্রেফতার করে নির্যাতন চালায় ওসি প্রদীপ। হ্যাঁ, সেই ওসি প্রদীপ। দীর্ঘ ১১ মাস জেল খাটার পরেই জামিন মেলে ফরিদুল এর।
সুত্রঃ যুগান্তর


প্রিয় দর্শক, আশা করি আপনাদের মনে আছে চট্রগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সারওয়ারের এর আর্তনাদ, আমাকে আর মারবেন না, আমি আর নিউজ করব না

মনে করিয়ে দিচ্ছি সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার কথাও। যেখানে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অপরাধী গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পার করে দেয়া হয়েছে ৯টি বছর। দায় এড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, কারো বেডরুম পাহারা দেয়া সম্ভব না।

জ্বী! আমরাও বুঝি বেডরুম পাহারা দেয়া সম্ভব না। কিন্তু খুনের বিচার তো করা সম্ভব, নাকি?

তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারঃ
শুধু আইন আর হামলা দিয়ে যেহেতু সব নিউজ থামানো যায় না। তাই ২০১৪ সালে কেনা হয় Deep Packet Inspection প্রযুক্তি। যার সাহায্যে প্রয়োজন হলেই যেকোন ওয়েবসাইট সম্পুর্ণ বা আংশিক ব্লক করে দেয়া যায়।
এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দরকার হলেই ফেসবুক, হোয়াটসএপ ইত্যাদি বন্ধের পাশাপাশি বেফাঁস নিউজ আটকাতে গিয়ে নানা সময়ে ব্লক করা হয়েছে আল জাজিরা, ডেইলি স্টার, বিডি নিউজ ২৪ এর মত নামিদামি ওয়েবসাইট।

মিডিয়ার কন্ঠরোধের এত যজ্ঞের পরেও যাদের থামানো যাচ্ছে না তারা হচ্ছেন বিদেশে নির্বাসিত ব্লগার এবং সাংবাদিকেরা।
তবে তাঁদের পথেও কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছে এই সরকারের সাইবার টিম। হাজার হাজার ফেক একাউন্ট তৈরী করে তা দিয়ে রিপোর্ট করে এইসব প্রবাসী ব্লগার-সাংবাদিকদের সোশ্যাল মিডিয়া আইডি নষ্ট করে দেয়া হয়। একই সাথে ফলস কপিরাইট স্ট্রাইক এবং কমিউনিটি স্ট্রাইক দিয়ে তাঁদের পোস্ট রিমুভ করে দেয়া হয়।

এই প্রক্রিয়ায় ডক্টর পিনাকি ভট্টাচার্য্যের ব্যাক্তিগত ফেসবুক আইডি বন্ধ করে দেয়া হয়। সাংবাদিক কনক সারোয়ারের প্রথম ইউটিউব চ্যানেল থেকে জেনারেল সোহরওয়ার্দী এর সাক্ষাতকারের ভিডিও ডিলিট করে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় প্রবাস থেকে প্রকাশিত আমার দেশ ইউকে এর ওয়েবসাইট।

বুঝতেই পারছেন, আইনি এবং বেআইনী, সভ্য এবং বর্বর যত প্রক্রিয়া আছে তার সবটাই প্রয়োগ করা হয়েছে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে।

এর ফলে বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা সত্য লিখতে বা বলতে পারছেন না। আর সত্য না বলতে পারায় দিন দিন কমে যাচ্ছে পাঠক এবং দর্শকের সংখ্যা। তলানীতে ঠেকেছে বিজ্ঞাপনের আয়।

এখনকার অবস্থা দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাবার মত। সত্য লিখলে হয়ত হামলা আর মামলার শিকার হবেন। আর না লিখলে দর্শক আর পাঠকের অভাবে একসময় আপনার প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে যাবে। রোজগার হারিয়ে একে একে পথে বসবেন সবাই।

তাই ২০২১ সালের ৩রা মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে নিজেদের পেশা ও প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য রক্ষার শপথ নিন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের আন্দোলনে সব রাজনৈতিক দল আর সভ্য সমাজের সাথে এক হয়ে রাস্তায় নামুন। এটা দল ও মত পার্থক্য যাচাইয়ের সময় না, এটা টিকে থাকার প্রশ্ন।

আজকের মত বিদায় নিচ্ছি আমি অ্যাডাম নট্রিয়েল, মুখ খুলতেই মুখোশ পড়েছি। খোদা হাফিজ


সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০২১ দুপুর ২:০৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×