২ ঘন্টা ৪৫ মিনিটের একটা সিনেমা ১১ মিনিট দেখার পর আর দেখা গেল না, সিনেমা পরিবর্তন করতে হল কেননা বাকী সিনেমায় আর কি থাকতে পারে তা বোঝার জন্য ঐ ১১ মিনিটই যথেষ্ট ছিল।
একই ছাদের তলে দুইটি খাবারের দোকান, একটা দোকানে স্বপরিবারের জন্য মাগনা খাবার বিতরন করা হয় আরেকটা দোকানে আগে টাকা দিলে শুধুমাত্র যে টাকা দেয় তার জন্যই খাবার সরবরাহ করা হয়।
মানুষ তবুও যদি আগে টাকা নেওয়া দোকানে যায় তাহলে বুঝতে হবে খাবারের দোকান দুইটির কন্টেনের মারাত্নক ভেরিয়েশন আছে। গ্রাহক ধরে রাখতে মাগনা দোকানের মৌলিক পরিবর্তন দরকার।
ওয়েব সিরিজ মানুষ টাকা দিয়ে দেখে এর আকর্ষনীয় জীবন ঘনিষ্ট গল্প, মনোমুগ্ধকর চিত্রায়ন, আর প্রান ছোঁয়া অভিনয়ের গুনে। অশ্লিলতার ধোঁয়া তুলে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে একে নিশ্চিহৃ করা যাবে না কখনও। কারন বর্তমান এ প্রযুক্তির যুগে আইন করে, আদালতে নির্দেশ নিয়ে ইন্টারনেট ভিত্তিক কন্টেন দেখা থেকে মানুষকে কোন ক্রমেই আটকানো যায় না। অসম্ভব একটা ব্যাপার।
অশ্লিল দৃশ্য, সংলাপের অভিযোগের ক্ষেত্রে বলব নির্মাতা যদি ভাসমান পতিতাকে নিয়ে কোন ওয়েব সিরিজ বানান তবে তার মুখে কি বইয়ের প্রাঞ্জল বুলি বসবে নাকি প্রকৃতই সে যেমন খিস্তি খেউড় আওড়ায় সে ভাষাটা আসবে।? নির্মাতা যদি প্রেমিক প্রেমিকার রুম ডেটিংয়ের দৃশ্য চিত্রায়ন করে তবে তারা কি জুব্বা আর বোরকা হিজাব পড়ে শট দিবে? দুই বন্ধু যদি কোন নারীকে নিয়ে গল্প করে তাহলে কি শরৎ চন্দ্রের উপন্যাসের বুলি আওড়াবে নাকি ঐ নারীকে মাল হিসাবে সম্বোধন করবে?
তারা প্রশ্ন করে থাকে কেন এমন বিষয় নিয়েই কেন ওয়েব সিরিজ বানাতে হবে? আমার উত্তর হল সমাজে যা কিছু ঘটে সব নিয়েই নির্মাতা ওয়েব সিরিজ বানাতে পারেন। কারন পাঠ্য বইয়ে পড়ে এসেছি নাটক সমাজের দর্পন।
আর যদি এমনটা না ঘটে তাহলে তো এটা দর্শকের সাথে নির্জলা প্রতারনা ভিন্ন অন্য কিছু না। আপত্তিকর বলে মনে হয়, পরিবারের সবাইকে নিয়ে এক সাথে দেখা যায় না বলে একটা অভিযোগ পাওয়া যায়। ফালতু একটা অভিযোগ, এ অভিযোগ যিনি করেন তিনি সব কাজ পরিবারের সকলকে নিয়ে এক সাথে করেন না। তিনি জোচ্চোর, হিপোক্রেট।
আদালতের রায়ে আজ বিং থেকে বুমেরাং, সদর ঘাটের টাইগার সরানো যাবে কাল যদি অন্য একটা পেজে এটা আপলোড হয় তাহলে কি দেখা ঠেকানো যাবে? যাবে না। যেখানে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি স্বজ্ঞানে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে নিজ সিদ্ধান্তে বিনোদনের জন্য কিছু দেখতে চাই সেটা আটকানোর জন্য আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রাখা অগনতান্তিক ও সংবিধানের লঙ্ঘন বলে মনে করি।
ওয়েব সিরিজ বন্ধ করা কোন সমাধান না বরং তথাকথিত মেইন স্ট্রিম সংস্কৃত ব্যক্তিত্বদের উচিত নিজেদের কাজের মান বাড়ানো, ভাঁড়ামী করে মানুষ হাঁসানোর ব্যর্থ চেস্টা বাদ দেওয়া। আর প্রবীন নাট্য ব্যাক্তিত্বদের উচিত ক্যামেরার সামনে যাত্রার অভিনয় বাদ দেওয়া। আমরা দেখতে দেখতে ক্লান্ত।
সরকারের উচিত ওয়েব সিরিজের টাকায় ভাগ বসানো, কর আরোপ করে এমন একা একা দেখা ওয়েব সিরিজ বানানোর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে দায়িত্ব শেষ করা।
অন্যথায় কি হবে? কি আর হবে সিনেমা হল গুলো কমতে কমতে আজ একশতে নেমেছে অথচ দেশের বহু মানুষ টাকা খরচ করেই সিনেমা দেখেই বিনোদিত হয়। কিন্তু আফসোস তা দেশের সিনেমা না। এ আমলে যা বানাবো তাই দেখতে হবে বলে গোঁ ধরলে ইতিহাস হয়ে যেতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:৩৬