সে বহুবছর আগের কথা। আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। বিড়ি কেনার পয়সা জোগাতে নানা ফিকির করি।
এক শীতের সকালে ৫টাকা আয়ের একটা সুযোগ এলো। ৫ টাকা অনেক টাকা। দুই প্যাকেট আজিজ বিড়ি পাওয়া যেত। প্রতি প্যাকেটে ২৫টা করে বিড়ি। অন্তত সাড়ে চারদিনের খোরাক কামাইয়ের সুযোগ। কিন্তু আয়ের পথটা একটু অবমাননাকর।
আমার পেছন ফেরার পথ নাই। টাকা আমার লাগবে। আমি লজ্বা শরমের মাথা খেয়ে রাজি হয়ে গেলাম। পাশের বাড়ির ছাগীকে পাঁঠা বাড়ি নিয়ে যেতে হবে। পাঁঠার বিল ২০ টাকা। আমার কমিশন ৫ টাকা।
৫ টাকা আয়ের পথে একটাই সমস্যা, বান্ধবীর বাড়ির সামনে দিয়ে পাঁঠা বাড়ি যেতে হয়। কত কত দিন বান্ধবীকে দেখার জন্য তার বাড়ির সামনে দিয়ে বিকেলে সাইকেল নিয়ে ঘুরেছি। দেখা হয় নাই। অমনই একটা ব্যর্থ দিন হোক, কায়নোমনে আল্লাহর দরবারে আর্জি জানালাম, “আল্লাহ বান্ধবীর সাথে যেন ছাগীর দড়ি ধরার কালে দেখা না হয়”।
আর্জি নামঞ্জুর হলো। ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে ডাকতে থাকা ছাগীর দড়ি ধরে পাঁঠা বাড়ি যাওয়ার দৃশ্য বাড়ির সামনের বারান্দায় বসে বান্ধবী অবলোকন করে অশেষ বিনোদন হাসিল করলো, “তার খিলখিল হাঁসি” সাক্ষ্য দিয়ে গেল।
পাঁঠা বাড়ির আঙ্গিনায় যেতে পাঁঠার মালিকের সহকারী(তার স্ত্রী) আমার হাত থেকে ছাগীটাকে নিয়ে একটা খুঁটির সাথে বাঁধতে বাঁধতে বলল “আগেই বলে নিচ্ছে পাঁঠা কিন্তু ২৫ টাকা, পরে ক্যাচাল করতে পারব না”।
কিছু দিন আগের ভিজিট ২০ টাকা এবারের মত বহাল রাখার জন্য অনেক কথা খরচ করার পরও তাকে মানানো গেল না। তিনি অনেক রঙ্গ রসের কথা বললেন কিন্তু ২৫ টাকার নীচে পাঁঠা ছাড়লেন না।
অগত্য বললাম “২০ টাকার যতটুকু হয় ততটুকু দেন”। কাজ হলো না, ছাগির গলার দড়ি খুলে আমার হাতে দিয়ে হাঁসতে হাঁসতে বলল “পাঁঠা বাড়িত দামা দামী চলে না, তোর ২০ টাকা নিয়ে তুই বাড়িত যা ছ্যাড়া”। হতাশার চরম সীমায় পৌছে গেলাম।
কাজ শেষ করে গেলে কমিশনের ৫টাকা আদায়ের জন্য চাপ দেওয়া যাবে বিবেচনায় ছাগীর দড়ির সাথে অগ্রীম ২৫টাকা দিতে বাধ্য হলাম। পাঁঠা অপারেটরের বদ্ধমুল ধারনা তৈরী হয়েছে যে, আমার থেকে অগ্রিম টাকা না নিলে কাজের শেষে আমি ঝামেলা করবো।
এক মিনিটের কম সময়ে পাঁঠা ২৫টাকা আয় করে ফেললো। আমার চোখ চকচক করে উঠলো। সেই থেকে আমার মনের কোনে আরো একটা শখ তার জায়গা করে নিল
“একদিন একটা পাঁঠার খামার দেব”।
আমি পাঁঠার খামার দিতে পারি নাই বলে ছাগী গুলো আজ বড় অসহায়। দেশ আজ ছাগল সংকটের দ্বারপ্রান্তে।