somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্প- “হলুদিয়া পাখি, কোথায় তোমার আঁখি?”

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়ে পাখিটা আমাকে অপছন্দ করে না। হাত বাড়ালে হাতে আসে, কাঁধে ও কোলে বসে থাকে। মুখের কাছে নিয়ে এলে ঠোঁটে ঠোকর দেয়।

বারান্দার গ্রিলের ওপারে আকাশ। সে আকাশে স্বাধীনতা ও মুক্তি। কিন্তু আমার হাত থেকে উড়ে বারান্দার গ্রিলে গিয়ে বসে ওপারের স্বাধীনতা দেখতে যায় না। আমার সাথে কথা শেষ হলে- খুলে রাখা দরজা দিয়ে খাঁচায় ডুকে- হয় দোলনায় দোল খায় অথবা হাঁড়ির ভেতর কুন্ডলী পাকিয়ে বসে।

ছেলে পাখিটা আমাকে মোটা দাগে অপছন্দ করে। সে কখনো আমার হাতে কাঁধে কোলে বসে না। ধরতে গেলে ঠোকর দেয়। ঠোকর খেয়েই তাকে গোসল করাতে হয়। মনে হয় ওর হিংসার তীব্রতা আমাকে ছুঁয়ে যায়।

বারান্দায় আমার হাতে বসে মেয়ে পাখিটা গল্প করছে। ছেলে পাখিটা খাঁচা থেকে বের হয়ে সোজা বারান্দার গ্রিলের উপর বসলো। ওকে আমার বিশ্বাস নাই। ও উড়ে যেতে পারে। কিন্তু এখন ওর থাকা বা না থাকা পুরোটাই ওর উপর নির্ভর করছে।

মেয়ে পাখিটা আমার হাত থেকে খাঁচার উপর নামলো। ছেলে পাখিটা তখন উড়ে এসে মেয়ে পাখিটার পাশে বসে প্রায় আড়াই মিনিট অনেক কথা বলল। তারপর দু’জনেরর কিছু কথা হলো। এক পর্যায়ে ছেলে পাখিটা বিরক্ত হয়ে মেয়ে পাখিটাকে একটা ঠোকর দিল। মেয়ে পাখিটা খাঁচার ভেতর ডুকে গেল।

তারপর দুজনের অনেক কথা হলো। একজন খাঁচার ভেতর আরেকজন খাঁচার বাহিরে। খাঁচার দরজা খোলা। আমি উপভোগ করছি। ছেলে পাখিটাকে ধরতে চেষ্টা করছি না। বল এখন ওর কোর্টে। আমি ধরতে গেলেই ওর মনের “উড়ে যাওয়া, না যাওয়ার” দ্বন্দ্ব কেটে যাবে। ও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবে।ও উড়ে যাবে।

ছেলে পাখিটা উড়ে আবার বারান্দার গ্রিলের উপর গিয়ে বসলো। সে উত্তেজিত। অস্থির পাঁয়চারী সহকারে অনেক কথা বলল। তারপর মুখ ঘুরিয়ে নিল।

একটা ছোট লাফের পর পাখা দুইটা ঝাপটানো দূরত্বে মুক্তি তাকে আলিঙ্গনের অপেক্ষায়! সে নিশ্চুপ, স্থির। নিঃস্পলক চেয়ে আছে বাহিরের দিকে। ঝড় বয়ে যাচ্ছে ওর মনে। অদেখা বনের গন্ধ ওর নাকে লাগছে। অসার সাহস ও মুক্তির আকাংখার দ্বন্দ্বে ও চোখ দুটি বন্ধ করলো আলতো করে। চোখ দুটি খুলতে কি একটু বেশিই সময় নিল? হতে পারে। হয়তো তার ভেতরকার দ্বন্দ্বের ভারই ছিল দেরির কারণ। আমার মন তখন মেয়ে পাখিটার আসন্ন একাকীত্বের গন্ধে উতলা।

শ্বাসরুদ্ধকর একটা মিনিট পর ছেলে পাখিটি আবার মুখ ঘুরালো। সোজা উড়ে খাঁচার ভেতর ডুকে পড়লো। মেয়ে পাখিটা তখন দোলনায় বসে দোল খাচ্ছিল। তার পাশে বসে কিছু একটা বলতেই মেয়ে পাখিটা দোলনা থেকে উড়ে গিয়ে হাঁড়ির ভেতর ডুকে পড়লো। বুঝলাম ছেলে পাখিটা যে বিষয়ে কথা বলতে চায়, মেয়ে পাখিটা সে বিষয়ে একটি কথাও উচ্চারন করতে আগ্রহী নয়।

স্তব্ধ হয়ে বিশ্বাস হারানো, আশা হারানো চেহারায় ছেলে পাখিটা এখন দোলনায় একা। মেয়ে পাখিটা হাঁড়িতে। কিচির মিচির অনেক শব্দ করে ছেলে পাখিটা অনেক কথা বলতে বলতে হঠাৎই খাঁচা থেকে বের হয়ে আবার গ্রিলের উপর গিয়ে বসলো।

খেলাটার শেষ পর্যন্ত দেখার লোভে আমি খাঁচার দরজা বন্ধ করিনি। বুঝতে পারলাম একসাথে উড়ে যাওয়ার জন্য মেয়ে পাখিটাকে রাজি করাতে পারে নাই। শেষে মেয়ে পাখিটাকে হুমকি দিয়েছে “যদি তুই না যাস তো তুই থাক, আমি একাই চললাম”।

গ্রিলের ওপারে বিশাল আকাশ আর যেখানে খুশি সেখানে উড়ে বেড়ানোর স্বাধীনতা। ছেলে পাখিটা অপেক্ষা করছে, আশা করছে, মেয়ে পাখিটা এখনই খাঁচা থেকে বের হয়ে ওর পাশে এসে বসবে। তারপর দুইজন এক সাথে উড়ে গিয়ে বসবে রাস্তার ওপারের রেইনট্রি গাছের ডালে। দুজন ঘর বাঁধবে খড় কুটো দিয়ে, সেই গাছের ডালে।

দুজনের মধ্যে আরেক দফা বাক্য বিনিময় শেষে দুইজনই এখন চুপচাপ। বুঝলাম দুজনার ভেতর চুড়ান্তপত্র বিনিময় হওয়ার পরের নিস্তব্ধ সময়টুকুর সাক্ষি হচ্ছি। মিনিটখানিক পর- ছেলে পাখিটা মুখ ফেরালো খাঁচার দিকে। উড়ে কোথাও না থেমে খাঁচার ভিতর ডুকে সোজা হাঁড়ির উপর গিয়ে বসলো।

মেয়ে পাখিটার গলার কাছে মুখ রেখে কি যেন বলল! তখন মেয়ে পাখিটা ঠোঁট দিয়ে ছেলে পাখিটার মাথার পালক গুলোতে বিলি কেটে দিতে থাকলো।

খাঁচার দরজাটা বন্ধ করে আমি পালাইলাম। তাদের এমন অন্তরঙ্গ মুহূর্তে নিজেকে অনধিকার চর্চাকারী মনে হলো।

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:১২
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×