somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার পৃথিলার লাল টিপ

০৯ ই জুন, ২০১৭ ভোর ৪:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মেয়েটা একভাবে হেলান দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,অদ্ভূদ বিষন্ন ভরা কিন্তু তাতে মায়ার প্রলেপ দেওয়া,তাতে শূণ্যতা ছাড়া আমার তৃষ্ণার্ত দৃষ্টিতে কিছুই ধরা দেয়না।
অসুখে মুখটা শুকিয়ে গেলেও খুব পবিত্র লাগে আমার কাছে।
-পৃথিলা!
-হু
-আচ্ছা তুমি কিছু খাবে?
-না ইচ্ছে করছে না, আচ্ছা তুমি কি নীরার অসুখ কবিতাটা পড়েছে?
নাহ পড়িনি কেন?
ওখানে একটা লাইন আছে
নীরার অসুখ হলে কলকাতার সবাই জেনে যায়। আমার অসুখ হলে কেবল তুমিই রয়ে গেলে।
পৃথিলা ঘাড় কাত করে হাসছে, নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে, পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্লভ বস্তু দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার আজ।
-এই শোনো আমার জন্য টিপ এনেছো?
-হুম এনেছি।
-ক‌ই দাও।
-থাক এখন, এখন একটু ঘুমিয়ে নাও, তোমাকে অনেক ক্লান্ত লাগছে।
-না, তুমি খালি ধানাই পানাই করো। আবার ভুলে গেছো, না?
-আসলে পৃথিলা…..
-আচ্ছা থাক, কপালটা খালিই থাক। এমনিতে এখন টিপ কোথায় পরতাম, কপাল তো এখন আড়াল হয়ে গেছে, ব্যান্ডেজে।
-হু
-আচ্ছা, আচ্ছা বাদল তুমি এরকম চুপ হয়ে যাও কেন আমার কথাতে।
এই প্রসঙ্গ আসলেই তুমি চুপ হয়ে যাও।
-পৃথিলা আমার নিজেকে অপরাধী মনে হয়। তোমার এই অবস্থার জন্য আমিই দায়ী।
-আচ্ছা শোনো রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কবিতা পড়েছে?
-এই যে এবার কথা কে ঘোরাচ্ছে?
-আমার খিদে লেগেছে বাদল। আচ্ছা আমাকে এখান থেকে কবে রিলিজ দেবে বলোতো? খুব বিরক্ত লাগে এখানে। সবকিছু কেমন সাদা সাদা।
মনে হয় মারা গেছি আমি, কাফন কাফন লাগে এই পর্দা বেডশিটকে।
-এসব কি বলো তুমি!
-বলছিতো ভাললাগেনা,আমাকে যেভাবে পারো তাড়াতাড়ি নিয়ে যাও এখান থেকে।
-দেখি ডাক্তারের সাথে কথা বলি।
-আচ্ছা

ডাক্তারের সাথে কথা বলে ব্যাবস্থা করলাম ওকে রিলিজের।ডাক্তারের নিষেধ সত্ত্বেও রিলিজ করতে বললাম পৃথিলার। আমার পৃথিলার কষ্ট যে স‌ইতে পারিনা আমি।

ওকে বাড়িতে নিয়ে গেলাম, ওর বাবাও ছিলো সাথে। ওকে নিয়ে ঘরে ঢুকতেই কেদে উঠলো ওর মা।
ওকে ধরে ঘরে নিয়ে গেলাম। কথা দিলাম পরদিন আসবো। আসার সময় পৃথিলা আমাকে ওর লাল টিপের কথা মনে করিয়ে দিলো।
আমি নিয়ে আসবো বলে কথা দিলাম।

পরদিন গেলাম আগের থেকে ভালো লাগছে পৃথিলাকে।ব্যান্ডেজটা নেই কপালে। টিপটা নিয়ে ওর কপালে পড়িয়ে দিলাম,বললাম যাও আয়নাতে দেখে এসো কেমন লাগছে।
আমার একটা ফোন আসাতে আমি বারান্দায় কথা বলতে চলে গেলাম।
ফিরে এসে দেখি পৃথিলা কাঁদছে,পৃথিবীর একবুক কষ্ট নিয়ে আমার পৃথিলার চোখ ভিজে যাচ্ছে।
আমার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো
ভুলটা করলাম কি করে আমি?
ওর কাছে গিয়ে পাজাকোলে করে ওকে তুলে আয়নার কাছে নিয়ে গেলাম।
পৃথিলা শিশুর মতো আমার কলার ধরে থাকলো শক্ত করে।
আয়নায় নিজেকে দেখে হেসে ফেললো, ওমা তুমি দেখছি টিপ একপাশে দিয়েছো। টিপটাও দিতে জানেনা দেখছি ছেলেটা।
-অনেক কিছুই তো জানেনা ছেলেটা পৃথিলা। সেদিন যদি জানতো যে..
-আবার ওই কথা বলছো কেন, এই দেখো আমাদের দুজনকে সুন্দর লাগছে না। ইস, এই সিনে ব্যাকগ্রাউন্ডে একটা গান বাজতো! এই তোমার ফোনে গান আছে না? ওই গানটা আছে?
প্রথমত আমি তোমাকে চাই..
আমার ফোনটা তো ভেঙ্গে গেছে।
-আমি আর গান শুনিনা পৃথিলা।
-কেন?
-চুপ করে র‌ইলাম।আবার সেদিনের কথাটা মনে পড়লো, পৃথিলা আমাকে মানা করতো রাস্তায় গান শুনতে হেডফোন দিয়ে। আমি শুনতাম না, আমার কাছে পৃথিলার কথা তখন গুরুত্বহীন। একদিন সেভাবেই গান শুনতে শুনতে রাস্তা পার হচ্ছিলাম।
পৃথিলার ডাকটা শুনতেই পারিনি।
হঠাৎ ধাক্কা খেয়ে ফুটপাতে পড়ে গেলাম, অনেক জোরে গাড়িটা পৃথিলাকে ধাক্কা মেরে পৃথিলার পায়ের উপর দিয়ে চলে গেল আমার চোখের সামনে দিয়েই।
হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার অপারেশন করলো, কিন্তু হাটুর নিচ থেকে দুটো পা ই কেটে বাদ দিতে হলো।
পৃথিলা আমাকে মানা করেছিলো, কেউ যেন না জানে, যে আমাকে বাঁচাতে গিয়েই ওর এই অবস্থা,হয়েছে।

আমার চুপ করা দেখে পৃথিলা চুপ করে গেছে।
পৃথিলাও জানে, নরম ঘাসে পা ডুবিয়ে চলা হবেনা আর ওর, আলতায় রাঙিয়ে দেয়া হবেনা কোনদিন আর পা দুটো,পা ঝুলিয়ে লেকের পাড়টায় আর কখনো আর আমার হাত ধরে বসে সন্ধ্যার আকাশ দেখা হবেনা।

-‌এ যাহ!
তোমার শার্টের কলার দেখছি ভিজে গেছে। এ বাবা! আমি কাঁদতে কাঁদতে বোকার মতো শার্টের কলার ভিজিয়ে দিয়েছি।

আসলে রঙহীন নোনাজলে শুধু ওর একার না আমার জলেও ভিজে গেছিলো শার্টের কলার, এক হয়ে গেছিলো দুটো মানুষের কষ্টের রং ।

-পৃথিলা, একটা গান শোনাও না আমাকে!
-আচ্ছা।
আমাকে একটু বারান্দায় নিয়ে যাবে? গোধূলীর রঙে রাঙা বিকেল বেলার আকাশটা দেখিনি অনেকদিন। আজ একটু দেখবো।

আমি ওকে নিয়ে যেতে লাগলাম, লাগবেনা আমার যান্ত্রিক গান, যার নেশায় আমি পৃথিলার এতো বড় ক্ষতি করেছি। আমার কাছে আমার পৃথিলা আছে, ওই আমার গান, ওই আমার বিকেলের আকাশ,আমি ওর ওই কপালে বেঠিক লাল টিপের মতো জায়গা চাই ওর জীবনে। জানিনা পৃথিলা আমায় ক্ষমা করেছে কিনা। আমি চাইনা পৃথিলা আমায় ভালবাসুক, কিন্তু পৃথিলার সাথেই স্বপ্নটা ভাগাভাগি করে দেখতে চাই।
লাল টিপ ওর কপালে ঠিক করে পড়ানো শিখতে চাই।
বাইরের বিকেলের নরম আলোয় বড় সুন্দর লাগছে আমার পৃথিলাকে।
শক্ত করে ধরে রাখা আমার শার্টের কলারে পৃথিলা খুজলো আশ্রয় আর
আমি?
ওর লাল টিপে খুজলাম
একটু না পাওয়া শান্তি!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৭ ভোর ৪:৩২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×