somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হয়তো অনেক দিন পর

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





শহরটা বৃষ্টিতে ধুয়ে বড় ভেজা ভেজা লাগছে,বড় ভাল্লাগে রাতের এই সাধারণ শহরকে। ভয়ংকর রকমের সুন্দর, ঠিক সুন্দরবনের মতো।ভীষণ সুন্দর আর অসুন্দর পাশাপাশি অবস্থান করে।
সুন্দরবনেও ভয়ানক বিপদ ওত পেতে থাকে, এই শহরেও থাকে। তবে পার্থক্য একটাই,শহরের জানোয়ার গুলোর মুখ কেমন যেন মানুষের মতো। মাঝেমধ্যে চিনতেই ভুল হয়ে যায়,কতজন আবার কাছের সম্পর্কের ডোরে বাধা।
সাংবাদিকতার পরেও, রাস্তায় একটু হেটে বেড়াতে ইচ্ছে করছিলো। অফিসের ড্রাইভারকে বললাম একখানে নামিয়ে দিতে।
ফুটপাতে কতদিন পর হাটছি কে জানে! রিকশায় একজোড়া যুগলকে দেখা গেল, খড়মড়ে রাস্তায় পড়ে যাবার ভয়ে দুজন দুজনকে ধরে রেখেছে।সুন্দর একটা দৃশ্য, দেখে মনে হলো শক্ত করে ধরে রাখা আঙ্গুলের ফাকে জমিয়ে রাখা ভালবাসা একসাথে ওদের বেধে রাখছে।
আমারো এমন একটা দিন আসতে পারতো, হয়তো আমার আঙ্গুলের ফাকে তার ও আঙ্গুল রাখার কথা ছিল। হয়তো এভাবেই হুড তুলে, একসাথে আসা হতো।
বুক চিরে ঠান্ডা একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। এমন কি হ‌ওয়ার ছিলো?
হয়তো না,ভাগ্য হয়তো বিপরীতে ছিলো।
মাথাটা শূণ্য লাগে, মনে হয় হাতটা যদি কেউ রাখতো একটু মাথায়! ‌স্নেহ কি বোধহয় ভুলেই গেছি, ভালবাসার সংজ্ঞাটা আবছা ভাবে মনে করার চেষ্টা করি।
কবে যে ভার্সিটির সিড়ির নিচে, নীল খামে কবে যেন কে একটু ভালবাসা দিয়েছিলো।
হয়তো মানবতার মোহে পড়ে,কিছু করুণা দয়া নামক শব্দগুলো ভালবাসার কভারে মুড়ে দিয়েছিলো।
ভাঙা পরিবারের একটা মেয়ে হয়ে কিই বা আশা করতে পারি। মা বাবার মনোমালিন্য ঝগড়া একটা সময়ে ভয়ানক পর্যায়ে চলে গিয়েছিলো। নানির সাথে থেকে বড় হয়েছি, সেই নানিও গত হয়েছে বহুদিন। খালা মামার ওদিক মাড়ানো হয়না বহুদিন। চাচা ফুপুদের কথা তো মনেই পড়েনা।
মরে যাওয়ার আগেও নানি বলতো, তুই কি আর বিয়ে শাদী করবিনা অপু?
আমি হেসে বলতাম, আমার নাম অপরাজিতা। এতো সহজে কি আমি বাধা পড়বো বলো? আর তোমার মেয়েকে তো দেখেছোই, কিভাবে সংসারটা নষ্ট হলো।
আমার মা কে আলাদা হবার পর আর বলতে ইচ্ছা হয় না। কানাডা চলে গিয়েছিলো তেরবছরের আমাকে রেখেই। কোনদিন খোজ নেবার প্রয়োজন বোধ করেনি। হয়তো মেয়ের তালিকা থেকেই বাদ দিয়ে দিয়েছে। আমিও তার প্রতি আর টান অনুভব করিনা।
বাবা ও নতুন সংসারে ব্যস্ত তাই ওমুখোও আর যাইনি। যে যার মতো আলাদা হয়ে খড়কুটো ধরে বাচার চেষ্টা করছি।
ফুটপাতে এক অশীতিপর বৃদ্ধাকে শুয়ে থাকতে দেখলাম।
ছোট্ট একটুরো চাদরে তার শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। ভেজা ফুটপাতে মানুষটার কষ্ট হচ্ছে বড়।
এগিয়ে গেলাম ভালমতো দেখার জন্য এগিয়ে গেলাম। আমাকে দেখে লজ্জা পেলেন উনি।
জিজ্ঞেস করলাম নানু আপনি এখানে কেন? কেউ নেই আপনার?
-না গো, আমার কেউ নাই। পোলারা থুইয়া গেছে, মার বয়স অইসে বোঝা বাড়াইবো কেন আর!
-একা থাকেন তাহলে ?
-না, আমার স্বামী আছে, সারাদিন ভিক্ষা করে যা পাই তা দিয়ে চ‌ইলা যায় দুইজনার। আমিও যাই মাঝে ম‌ইধ্যে,আইজ শরীলটা ভালা আছিল না তাই যাইনাই ।
-ও আচ্ছা,নানু এটা রাখেন। হাতব্যাগ হাতড়ে একটা পাচশো টাকার নোট পেলাম। সেটাই বৃদ্ধাকে ধরিয়ে দিলাম।
-আল্লাহ তুমার ভালা ক‌রব‌ইন বলে বৃদ্ধা আমার মাথায় হাত রাখে।

আমি চমকে উঠি, অনভ্যাসবশত অপ্রস্তুত হয়ে যাই। বিদায় জানিয়ে তাকে,রিকশা খুঁজি।
আকাশে বিজলী চমকাচ্ছে, এতোদিন পর কেউ হাত রাখলো। অনেকদিন পর, আপন করে কেউ মাথায় একটু স্নেহের হাত রেখেছিলো।
একটু ভাবলাম কেউ তো নেই আমার, খুব কি ক্ষতি হবে ওই বয়স্ক মানুষ দুটোকে বিশ্বাস করলে।
হলে হোক!
আমি ওই ফুটপাতে আমি ঘুরে হাটতে লাগলাম, যেখানে একজন বৃদ্ধা কুচকে যাওয়া ময়লা হাতে স্নেহ মেখে অকৃত্রিম ভালবাসা নিয়ে অপেক্ষা করছে স্বামীর জন্য।
সম্ভবত এরা আমার অপরিচিতজন, কিন্তু পরিচিত পরিবার হয়ে আমার সাথে থাকলে বোধহয় খুব একটা ক্ষতি হবেনা। অন্তত কাজ শেষে কেউ তো থাকবে একজন, মাথায় হাত রেখে সান্ত্বনা দেওয়ার!

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:১৫
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×