somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসময়ের অবেলার প্রিয়জন

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৮:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






সে ছিল মরুভূমির মতো রুক্ষ,অথবা তার থেকেও অনেক বেশী। তার ধরনটাই ছিল যতোটা কঠোর হ‌ওয়া যায়।
আমি ছিলাম সেই তুলনায় রঙিন বুদ বুদের মতো যার কিনা একটু ছোয়াতেই অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়।
আমাদের মধ্যে ব্যবধান ছিল অনেক।সেখানে বয়সের ব্যবধানটাই সবথেকে বড় ছিল,যদিও আমি সেসবে কখনোই মাথা ঘামাইনি।
তার সাথে আমার দেখা ব্যস্ত শহরের এক সন্ধ্যায়, অনেক ভিড়েও কোন এক সার্ভে ফরম ফিলাপের মাধ্যমে আমার পতনের শুরু ছিল।
বিদঘুটে রোড কনসার্টের আওয়াজেও আমি তার থেকে মনোযোগ হারাইনি।
সেদিন লাল নীল কনসার্টের আলোতে ঠিকমতো দেখাই হয়নি। অদ্ভুতভাবে সেদিন ও জানা ছিলনা এমনটা ঘটবে।
তার কথা একদম‌ই ভুলে যাওয়ার কথা ছিল আমার, কিন্তু নাহ। আমি ঠিক‌ই তাকে সোশ্যাল মিডিয়ার নীল জগতে খুজে বের করলাম, সাথে তার বন্ধুত্বের আবেদনপত্র ও জমা দিলাম ব‌ইকি! এরপর সেই চিরাচরিত নিয়মের মতোই সে আর আমি কাছাকাছি আসলাম।
সে আর আমি?
কথাটা বোধহয় ঠিক হলোনা! শুধু আমিই বললে ভাল হবে। সে আমার কাছে হলেও, কাছে হলোনা। জটিল মনস্তাত্তিক ব্যাপার মানুষের।
দিনকে দিন আমি তার নেশায় ডুবে যেতে লাগলাম, আমার পতন ছিল সুনিশ্চিত। তার টোল পড়া গালে, সাদাসিধে মানুষটাকে দেখতাম।
নৌকো বিহীন সমুদ্রে সাঁতরানো যে বিপদজনক সেটা তখন মস্তিষ্কে,আসলেও মন তা মানতে মানতে চাইলো না।
অনেক কিছুর পর ও সে আপন করলো না আমায়। হঠাৎ করেই হারিয়ে গেলো।
দিন গেল, মাস গেল আমি তার অপেক্ষায় অস্থির হতে লাগলাম। তার কাজের পাশেই কাজ নিলাম দিনে একবার তাকে দেখবো বলে।
আমার কলেজের উল্টো দিকে তার কলেজে। রোজ ঠায় দুপুরে একবার করে হলেও তার কলেজে যেতাম।
একবার, একবার যদি তাকে দেখতে পাই!
হতাশা আমাকে তীব্রভাবে গ্রাস করতে থাকে, আমি ক্ষান্ত হ‌ই। ভেবেই নেই সে শহর ছেড়েছে, আমায় ছেড়েছে।
তাকে ভুলে যাওয়ার জন্য নদীর জলে নিজেকে দেখি, শান্ত করার চেষ্টা করি মনকে।
সারাদিনে একটা ভেজাল হাসি ঝুলিয়ে রেখে, রাতে সেটাকে একপাশে ছুড়ে ফেলে আকুল হয়ে তাকে হারানোর ব্যথায় কাঁদি।
সে না আমার ছিল, না আমি ছিলাম তার।
তবুও এক গ্রীষ্মে আবার তার আগমন হয়, তাকে তখনো তীব্র আবেগের কথা ঘুণাক্ষরেও টের পেতে দেইনি।
মজার ছলে বন্ধু হিসেবে তার‌ই জন্য সঙ্গী খোজার দায়িত্ব পড়ে। সেদিন বড় নিষ্ঠুর লেগেছিলো বিধাতাকে।
মুখে হাসি টেনে হলেও বন্ধুত্বের খাতিরে তার জন্য সঙ্গী খুজতে থাকি, এদিকে আমার ডায়রীর পাতা ভারী হতে থাকে তার কল্পকথায়, আমার লেখা তাকে নিয়ে রূপকথায়।
ফলাফল!
অতি উৎসাহী এক বন্ধু তাকে সবিস্তারে সব কিছু জানায়। তাতেও তার বিকার নেই। তার কাছে আমি তার শুধুই ভাল বন্ধু, রাস্তায় পরিচিত খুব একজন ভাল বন্ধু।
বন্ধুত্বের লক্ষণ রেখা পার করার সাহস আমার ছিলনা, বলেই তার প্রতি নিজের অবাধ্য মনের প্রেমটুকু আর নিবেদন করা হলোনা।

তার সাথে গত দেড় বছরে দেখা হয়েছে মাত্র পাঁচবার। এই পাচবারে সে আমাকে সবমিলিয়ে চারটি ঘন্টা সময় দিয়েছে।

তার যে হৃদয় ছিলনা তা নয়, তার হৃদয়টা ঠিক অতলে ছিল, যার নাগাল আমি কখনোই পাইনি। তবুও বুঝতাম তার ও কিছু ব্যাথা আছে, আমার থেকেও অনেক বেশী ক্ষতবিক্ষত হয়েছে সে।তার মুখেও ভুলবশত দেখতে পাওয়া যেত না পাওয়ার হাসিটা। কষ্ট আড়াল করার, দীর্ণ হাসি!
নিজের দুর্বলতা ঢাকার জন্য‌ই হোক, অথবা কষ্টেই হোক সে একটা শক্ত পাথরের অবয়ব তার মুখের আদলে করে নিয়েছিলো। বাইরের দুনিয়াতে তাকে সবাই একজন মাথা গরম, চরম রুক্ষ মেজাজের ছেলে হিসেবেই জানতো। আমিও অন্তত তাই জানতাম হয়তো।

বয়সের কারণেই হোক কিংবা তার রাগী চোখের কারণেই তার জন্য আমার শ্রদ্ধা কাজ করতো। সেই চোখে আমার জন্য একটুকুও নোংরামির আচ ও দেখিনি। তার চোখে সবসময় রাগ দেখেছি, কিন্তু তার ও পাশাপাশি ভরসা দেখতে পেতাম আমি।

তাকে এতোটাই ভয় পেতাম, তাকে লেখা দুইশত আশিটি চিরকুট দেয়াই হয়নি, তাকে বলার সাহস হয়নি তার হাত দুটো ধরে একবার বড় হাটতে মন চায়, তার সাথে সমুদ্র দর্শনের আজন্মের সাধ টুকুও কখনো পূরণ হয়নি।
তাকে বলাই হয়নি একটা উল্টা পাল্টা মেয়েকে সে গুছিয়ে দিয়েছে নিজের অজান্তেই। সাইকেলের হ্যান্ডেল ছেড়ে মেয়েটা রান্না করে হাত পুড়োতে শিখেছিলো তার‌ই জন্য।

সে বারবার‌ই মজা করে বলতো কোন‌একদিন সে হারাবে, আমি খুজবো তাকে অলিতে গলিতে পাগলের মতো।
অবশেষে সে একদিন হারিয়েই গেলো,টুপ করে আমার ভালবাসার মানুষটা হারিয়ে গেল এতো বড় একটা শহরে। শহরের অলিতে গলিতে খুজেও তাকে পাইনি আমি আর। শহরে অসংখ্য মানুষ ছিল, তার মতো কেউ ছিলনা। আমার সে, একজন‌ই ছিল,একদম একজন‌ই।
তাকে ধরে রাখার কোন অধিকার ছিলনা আমার, আমি তার কেউ ছিলাম না। তাকে আজন্ম‌ই জীবনভর ভালবেসে যাওয়ার অধিকার টুকু আমার ছিল। তার কোন স্মৃতিই আমার কাছে ছিলনা,ছিল কেবল তার দেয়া চারটি ঘন্টা, হলুদ হয়ে যাওয়া প্রথমদিনের সেই সার্ভে ফরম আর কিছু নিছক বাজীর কাগজ।
না, সে আমায় কথা দেয়নি, চোখে চোখ রেখে সিনেমার মতো কখনো বলেনি ভালবাসি।
সে এটাই আমাকে বলেছিলো মন থেকে সৃষ্টিকর্তার কাছে চাইলে সব পাওয়া যায়।

আমি নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করেছি, আর হয়তো বাকিজীবন‌ও করবো। তার জন্যই সারাজীবনের পাপের ক্ষমা ভিক্ষা না করে, সৃষ্টিকর্তার কাছে তাকেই চেয়েছি। তাকে নিজের করে পাওয়ার মতো দুঃসাহস আমার নেই, আমি শুধু এইটুকুই প্রতিদিন চাই আমার শেষ সময়ে সে যেন আমার পাশে থাকে।
সে আমার হারিয়ে ফেলা প্রিয়জন,আজ তার জন্মদিন। ঘড়ির কাটায় তার নাম‌ই বলে চলেছে।

ধন্যবাদ তাকে, আমার জীবনে হুট করেই চলে আসার জন্য।সবকিছুর জন্য‌ই তাকে ধন্যবাদ।

শুভ জন্মদিন প্রিয়জন!!
তোমার সাথে দেখা হোক বা নাই হোক, ভাল থেকো, সুখী থেকো প্রিয়জন।

আমিও সুখে থাকবো তোমার দেয়া চারটি ঘন্টা
নিয়ে,তোমার দেখানো রঙিন জীবনকে নিয়ে।

-তোমার নির্বাক চাহনি
শত প্রশ্নের নির্ভুল উত্তর

পড়তে পারিনি আমি, রাখতে পারিনি আমি।

We are just destined to meet.


সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৮:২৭
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×