
বছর পনেরো–বিশ আগেও জীবনের গতি ছিল অন্যরকম। মোবাইল ফোন তখনও সবার হাতে ছিল না, ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম ছিল অজানা নাম।
যখনই সময় পেত, বন্ধুরা বসত আড্ডা দিতে, চা খেতে খেতে কতো রকমের আলাপ, উত্তাপ কিংবা শিহরণ। সেই আড্ডার জায়গা হয়তো রেল স্টেশনের পাশে, ক্লাবে, কারও ঘরের বারান্দায়, মাঠের কোনে, কোনো এক ব্রিজের রেলিংয়ে বা পাড়ার দোকানে। কেউ রাজনীতি নিয়ে উত্তপ্ত, কেউ ক্রিকেট বা ফুটবল নিয়ে ঝগড়া করছে — তবুও সেই ঝগড়া শেষে হাসি টাই থাকত বড়। মানুষ তখন মানুষের খবর রাখত, মুখোমুখি কথা বলত, কারও দুঃখ শুনলে পাশে দাঁড়াত।
এখন সবই আছে — স্মার্টফোন, নেটওয়ার্ক, ভিডিও কল, স্মার্টওয়াচ। কিন্তু মানুষ টা, মানুষগুলো যেন একটু নিঃশব্দ হয়ে গেছে। বন্ধুত্ব এখন ফলো রিকুয়েস্টে, ভালোবাসা রিয়্যাকশনে, আর মন খারাপ মানে নিঃশব্দে স্ক্রল করা। একটা “Seen” কথার চেয়ে বেশি কিছু বলে না, তবুও ভেতরে ভেতরে কেমন যেন শূন্য লাগে।
ভেবেছিলাম প্রযুক্তি জীবনকে সহজ করবে — করেছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই সহজতার ভেতর কোথাও যেন একটু কঠোরতা ঢুকে পড়েছে।
আমরা এখন মুখ খুলে বলার চেয়ে পোস্ট দেই, শুনে বোঝার চেয়ে তর্ক করি, আর কাছের মানুষটার মুখের দিকে তাকানোর সময়টাই যেন হারিয়ে ফেলেছি।
মাঝে মাঝে ভাবি — আমরা কি সত্যিই বদলে গেছি, নাকি কেবল বদলের দৌড়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি? সময় আমাদের গতি দিয়েছে, কিন্তু শান্তিটা কেড়ে নিয়েছে।
আজকের মানুষ কাজ জানে, হিসাব জানে, কিন্তু হৃদয়ের দাম জানে না। কিংবা, জানলেও ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা। তার আগেই আরেকটা কিছু চলে আসে।
সেই মানুষ টা, যে আগে ঝড়ের রাতে বন্ধুর বাড়ি পৌঁছে যেত শুধু পাশে থাকার জন্য — সে এখন একটা “Take care” লিখে দায় সারছে।
সারতে বাধ্য হচ্ছে, হয়তো।
সময় এগিয়েছে, ঠিকই, কিন্তু মানুষ টা যদি একটু থেমে নিজের দিকে তাকাত, দেখত—সব ব্যস্ততার মাঝেও একটা শূন্যতা ক্রমে বড় হয়ে উঠছে।
তবুও আশার জায়গাটা এখনো ফুরায়নি। কারণ যতদিন আমরা কারও কাঁধে মাথা রেখে নীরব থাকতে পারি, যতদিন কারও মন খারাপ হলে আমরা “চলো, একটু হাঁটি” বলতে পারি, প্রাণ খুলে কথা বলতে পারি, ততদিন মানুষ টা পুরোপুরি বদলে যায় নি।

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


