অফিস প্রচন্ড একঘেয়ে। তাও যেন থিতু হয়ে এসেছি।বলা যায় আমার বসার জায়গাটাই আমাকে টেনে ধরে রাখে। এমন জায়গা ক’টাই বা আছে ঢাকায়? দক্ষিণের বড় জানালা, তার বাইরে আম আর নাম না জানা দুটো গাছ, বৃষ্টির ঝাপটা…অফিস দূরে থাক, কারো বাসায় কি আর আছে এমন? মনে হয় না!
থিতু হওয়ার আরো কারণ ক্লান্তিটা, আর বিকেলটা। ক্লান্ত শরীরে মন এদিক-অদিক যাওয়ার বেশি সুযোগ পায় না। এই আমি কিছুদিন আগেও ভূতের মত সারারাত জাগতাম, অকারণেই। আর এখন এগারোটা বাজতে না বাজতেই হাই তুলতে থাকি। ঘুমাই সাড়ে বারোটার মধ্যেই! রাত জাগলে অস্বস্তি বাড়ে। সেই সাদা-কালো হাতের নাচন বাড়ে। ফাঁকা থেকে ফাঁকাতর হতে থাকে সবকিছু। কান্না পায়। এই মহানন্দায় আবার আগের মত কাঁদার জায়গা নেই। মহা বিপদ!
বিকেলটা…অনেক আদরমাখা। প্রতিদিন একই পথে বাসায় ফিরি, কিন্তু প্রতিদিনই যেন নতুন…কেন জানি! আধা পথ পায়ে হেঁটে আর বাকি আধা রিক্সায়। ইদানিং আর হুড তুলি না। কি হবে? আকাশটা দেখা হয়। মহানন্দায় তো রাত-দিন সব এক! আসতে আসতে চিন্তার তালগোল পেকে যায়। ভালো লাগে। খারাপও লাগে। বাসায় থালে ছটফট করতে থাকি এরকম সময়গুলোয়। কিন্তু এই যাত্রাক্ষণটুকুতে করি না। শান্তভাবে হাসি, সবাইকে দেখি, সবকিছুকে দেখি। একদিন কেঁদেছি রিক্সায়…হুড ফেলে…শান্তভাবেই! ওইযে, অফিসের প্রথম সপ্তাহে। বকা খেয়ে!!
আজ বড়মামাকে খুব মনে পড়ছিল।যখন সবকিছুতে দম আটকে আসতে থাকতো, মামা কোথা থেকে যেন উদয় হতেন! আমার বিশাল নাকটা আদর করে টেনে দিতেন। নাক-টানা খাবো বলেই যেন দরজাটা আমিই ঘটা করে খুলতে যেতাম! সব আদর আর চাপা কষ্ট নিয়ে মামা চলে গেলেন আজ ঠিক ১৫ মাস হলো। মামাকে স্বপ্নে দেখেছিলাম একদিন। নাক টেনে দেয়নি, হেসেছিলেন কেবল…
আজকাল সবকিছুই হারিয়ে ফেলছি। বুঝতে পারছি না এতে দোষ কার! তবে বেশিক্ষণ এটা নিয়ে ভাবতেও মন চায় না। এ রোগ পুরোনো, হয়তো প্রতিকারও নেই! হারাতেই থাকবো। তার চেয়ে বরং আমিও চড়ুই পাখির মতই হয়ে যায়! প্রতি লাফে কষ্ট নাশ!!!
১২টা ৪৩ বাজে। ঘুমে আধাবোজা চোখ। দেয়াল-কেবিনেট থেকে লাল পকেটবুকটা বের করি। কিছু পাতা উলটে কমলা কালিতে লিখলাম –
“২২ মে, ২০১১,
শুভ জন্মদিন ”